লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা


ওজন কমানো থেকে শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে লেবুর উপকারিতা সবারই কমবেশি জানা। সকালে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও খাবারে লেবুর রস দিলে স্বাদ বাড়ে। অনেকেই সকালের চা বা কফির পরিবর্তে লেবু পানি পান করতে পছন্দ করেন।

আমাদের দেশে পরিচিত ফলের মধ্যে লেবু অন্যতম। লেবু তার টক স্বাদের জন্যে বেশ আলোচিত। টক জাতীয় ফলের মধ্যে লেবুর ব্যবহার অনেক বেশি।

আমাদের দৈন্দিন জীবনের অনেক কাজেই লেবুর গুরুত্ব রয়েছে। লেবুর এমন সব উপকারিতা রয়েছে যা গবেষণার মাধ্যমে সকলের সম্মুখে এসেছে। আজকে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি তা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

লেবুর উপাদানসমূহ

লেবুতে স্বল্প পরিমাণে ফ্যাট ও প্রোটিন রয়েছে, এর বেশিরভাগ জুড়েই রয়েছে পানি, লেবুর শতকরা আটাশি (৮৮) থেকে উনআশি (৮৯) ভাগ পানি এবং শতকরা ১০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট।

আরও কিছু উপাদান রয়েছে যেমন

  • ফাইবার ২.৮ গ্রাম
  • ক্যালরি ২৯
  • ফ্যাট ০.৩ গ্রাম
  • প্রোটিন ১.১ গ্রাম
  • চিনি ২.৫ গ্রাম
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা Lemon benefits
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

লেবুতে আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক এসিড (Citric Acid) তাই লেবুতে একধরনের এসিডিক পি এইচ (Ph) থাকে। লেবুতে পি এইচের পরিমাণ থাকে দুই (২) ও তিন (৩) এর মধ্যে। অর্থাৎ লেবু পানির তুলনায় কয়েকগুণ বেশি অম্লীয়। যেহেতু লেবুর পিএইচ দুই (২) থেকে তিন (৩) এর মধ্যে পরে তাই লেবু অবশ্যই এসিডিক। অনেকেই লেবুকে ক্ষারীয় বলে থাকে, লেবু ক্ষারীয় নয় তবে লেবু বা লেবুর পানি শরীরে ক্ষারীয় প্রভাব ফেলে। 

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা – প্রকারভেদ

জাতের নামঃ সীডলেস ( লেবুতে বীজের পরিমাণ ৬ থেকে ৭) 

জাতের নামঃ বাউ লেবু ৩ / সেমি সীডলেস ( লেবুতে বীজের পরিমাণ ৬ থেকে ৭) 

জাতের নামঃ বাউ লেবু ২ / সেন্টেড এলাচি ( লেবুতে বীজের পরিমাণ ৬ থেকে ৭) 

জাতের নামঃ বারি লেবু ১ / এলাচি ( লেবুতে বীজের পরিমাণ ৬ থেকে ৭) 

জাতের নামঃ বাউ কাগজী লেবু ১ / কাগজী লেবু ( লেবুতে বীজের পরিমাণ ৬ থেকে ৭) 

উপরোক্ত প্রকারভেদ ছাড়া অঞ্চল, দেশ ভেদে লেবুর প্রকারভেদের হেরফের হতে পারে।

লেবুর উপকারিতা

১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে ভাইরাস জ্বর অসুখের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

২। কিডনি ভাল রাখে

লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড যা কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না। ফলে কিডনি ভাল থাকে। প্রতিদিন লেবু পানি খেলে কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা কমে যায়।

৩। শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকে

শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমান পানির দরকার হয়। তবে এই পরিমান পানি পান করা অনেক সময় কষ্টের হয়ে যায়। ফলে পানির সাথে লেবু মিশিয়ে পান করলে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হয়।

৪। রক্তাল্পতা রোধ করে

লেবুতে সামান্য পরিমান আয়রন রয়েছে। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের অন্যান্য খাদ্যগুলো থেকে আয়রন শোষণ করে নেই। এই আয়রন রক্তের লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে শরীরে রক্তাল্পতা বা এনিমিয়া হতে পারে না।

৫। শরীরে pH এর সমতা বজায় রাখে

শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যদিও লেবু অ্যাসিডিক, খাওয়ার পর এটি শরীরে ক্ষারীয় আচরণ করে। ফলে, লেবু খেলে অ্যাসিডের মাত্রা কমে যায় এবং pH এর সমতা বজায় থাকে, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৬। ব্যথা উপশমে সাহায্য করে

শরীরের জয়েন্টে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে যে ব্যথা হয়, তা থেকে মুক্তির একটি উপায় হলো লেবু। লেবু খাওয়ার পরে এটি শরীরে ক্ষারীয় আচরণ করে এবং জয়েন্ট থেকে ইউরিক অ্যাসিড কমিয়ে ব্যথা উপশম করে।এজন্য প্রতিদিন লেবুপানি পান করলে জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

৭। ওজন কমাতে সাহায্য করে

লেবুজলে প্রচুর পরিমাণে জলে দ্রবণীয় পেক্টিন তন্তু আছে। প্রতিদিন লেবুজল পান করলে আপনি কম খেয়েও পেট ভরা অনুভব করবেন এবং ক্ষুধা কমবে, যা ওজন কমানোর জন্য কার্যকরী।

৮। হার্ট ও ব্রেন সুস্থ রাখে

লেবুতে ভিটামিন সি ছাড়াও প্রচুর পটাসিয়াম থাকে, যা হার্ট ও ব্রেনের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং তাদের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে এটি অন্যতম উপকারী দিক।

৯। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

লেবুর মধ্যে প্রচুর পেক্টিন তন্তু রয়েছে, যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি কোলেস্টেরলের সমস্যাও কমাতে সাহায্য করে।

১০। মুখের দুর্গন্ধ দূর করে

পেঁয়াজ বা রসুনের মতো তীব্র গন্ধযুক্ত খাবার খেলে মুখ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে সেই গন্ধ বেরোতে থাকে, যা অস্বস্তিকর। এমন পরিস্থিতিতে যদি এক টুকরো লেবু খাওয়া যায় বা লেবুর জল পান করা যায়, তাহলে ওই তীব্র গন্ধ কমে যাবে এবং মুখ থেকে তাজা গন্ধ বের হবে, যা আপনাকে সতেজ অনুভব করাবে।

১১। স্কার্ভি প্রতিরোধ করে

লেবু ভিটামিন সি-তে সমৃদ্ধ হওয়ায় নিয়মিত লেবুজল পান করলে দাঁতের মাড়ি সুস্থ থাকে এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে। এতে স্কার্ভি রোগের সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে এই উপকারী দিকটাও রয়েছে।

১২। খুসকি দূর করে

একটা কাগজি লেবুর রস তার চার গুণ গরম পানিতে মিশিয়ে গোসলের আগে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। রস শুকিয়ে গেলে স্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। একদিন পরপর ৩-৪ বার লেবুর রস ব্যবহার করলে চুল ও মাথা খুসকিমুক্ত হবে। প্রয়োজন হলে আরও কয়েক দিন চালিয়ে যেতে পারেন। লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতাগুলোর মধ্যে এটিও উপকারী দিক।

১৩। ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে

লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং এতে ফ্লেভানয়েড নামে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের ফ্রি রেডিক্যালকে নিউট্রালাইজ করে এবং কোষ রক্ষা করে। এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। নিয়মিত লেবুজল পান করলে ক্যান্সারের প্রবণতা হ্রাস পায়।

লেবুর ব্যবহার 

  • সকালে সামান্য উষ্ণ গরম পানির সাথে এক চামচ আপেল সাইডার ভিনেগারের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া উত্তম। অনেকে এর সাথে হালকা মধুও মিশিয়ে নেয়, তবে মিষ্টি এড়াতে মধু বাদ দেওয়া যেতে পারে।
  • লেবু, পুদিনা পাতা, চিনি ও ঠান্ডা পানি দিয়ে দারুন স্বাদের পানীয় মহিতো (Mojito) তৈরি করা হয়। এই পানীয়র উৎপত্তি কিউবার হাভানায়। 
  • গ্রীষ্মে লেবুর শরবতের কথা মনে আসলেই আমাদের শরীরে এক ধরনের আরাম অনুভূত হয়। সামান্য লেবুর রস, ঠান্ডা পানি ও চিনি দিয়ে এই মিশ্রণ তৈরি করা হয়। 
  • গোল গোল করে লেবু ও আদা কেটে বোতলে ভরে রাতভর রেখে সকালে বের করে সারাদিনে খেলে দারুন ডিটক্সিফিকেশনের কাজ করে।

লেবু খাওয়ার অপকারিতা

১। লেবু সরাসরি খাওয়া উচিত না। কারন লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দেয়। ফলে দাঁত ক্ষয় হতে পারে।

২। যাদের গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা রয়েছে তাদের লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারন লেবু খেলে এই সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।

৩। অতিরিক্ত পরিমান লেবুপানি খেলে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। তাই পরিমিত পরিমানে লেবু পানি খাওয়া উচিত।

৪। অতিরিক্ত লেবু খেলে মুখে ঘায়ের সমস্যা হতে পারে।

৫। অতিরিক্ত লেবু খেলে পেট ফাঁপা এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা হতে পারে।

৬। অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

উপসংহার

অবশেষে এটাই বলব যে, লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিয়েছেন, অর্থ ওজন কমানোতে খরচ না করে সামান্য কিছু উপায় অবলম্বন করলেই সময় বেশি হলেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফলে আমরা পোঁছাতে পারব আশা করা যায়। একটু সময় করে আমরা যদি আমাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিই তাহলে আমরা সুস্থ থাকতে পারব সহজেই।

আরও পড়ুন-

চিয়া সিড এর উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও এর পুষ্টিগুন

Leave a Comment