চিয়া সিড এর উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও এর পুষ্টিগুন

চিয়া সিড এর উপকারিতা

পুষ্টিকর খাদ্যগুলোর মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। প্রাচীনকালে একে সোনার চাইতেও মূল্যবাণ মনে করা হতো। বীজ

জাতীয় খাবারের মধ্যে চিয়া সিডে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। চিয়া সিড এর উপকারিতা হলো চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে 

কেম্পফেরল, কোয়েরসেটিন, ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফেন এসিড নামক এন্টি- অক্সিডেন্ট,

ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এই ফাইবারজাতীয় খাবার।

চিয়া বিজ সাধারণত মেক্সিকো ও আমেরিকার মরুভূমি অঞ্চলে জন্মায়। চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তোকমা দানার মতো হয়ে থাকে। আজকের আর্টিকেলে চিয়া সিড এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হল।

চিয়া সিড তিলের মতো ছোট আকারের এবং সাদা এবং কালো রঙের হয়ে থাকে। প্রাচীন অ্যাজটেক জাতি সাধারণত চিয়া সিড খেত।  

আরও পড়ুনঃ

চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ

চিয়া সিড এর উপকারিতা

১০০ গ্রাম চিয়া সিডে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১। ক্যালরি: ৪৮৬ গ্রাম

২। পানি ৬ শতাংশ

৩। ফাইবার ৩৪.৪ গ্রাম

৪। শর্করা ৪২.১ গ্রাম 

৫। প্রোটিন ১৬.৫ গ্রাম

৬। স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৩.৩৩ গ্রাম

৭। ফ্যাট ৩০.৭ গ্রাম

৮। ওমেগা-৩ ১৭.৮৩ গ্রাম

৯। ওমেগা-৬  ৫.৮৪ গ্রাম 

১০। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ২.৩১ গ্রাম 

১১। ট্রান্স ফ্যাট ০.১৪ গ্রাম 

নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা 

১। চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে ওমেগো-৩ ফ্যাটি এসিড যা ক্ষতিকর কোলেস্টরল এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে। 

২।   চিয়া সিড এর উপকারিতা হলো   শরীরে কর্মক্ষমতা এবং শক্তি বাড়ায়। 

৩। চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

৪।  চিয়া সিড এর উপকারিতা  হলো এটি    শরীরের মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার মাধ্যমে শরীরের  ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। 

৫। চিয়া সিড ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে যা ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।

৬। চিয়া সিডের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, যা হাড় মজবুদ করতে সাহায্য করে থাকে।  

 ৭।   চিয়া সিড এর উপকারিতা হলো   কোলন পরিষ্কার রাখে এবং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে। 

৮। এটি শরীর থেকে টক্সিন জাতীয় বিষক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে থাকে। 

৯। এটি গ্যাসের এবং পেটের প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে থাকে। 

১০। চিয়া সিড  ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে থাকে। 

১১। চিয়া সিড ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। 

১২। চিয়া সিড হজমে সাহায্য করে থাকে। 

১৩। এটি হাঁটু ও জয়েন্টর ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। 

১৪।   চিয়া সিড এর উপকারিতা হলো এটি  নখ, চুল এবং ত্বককে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে থাকে। 

১৫। চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে। 

১৬। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুরগীর ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি পরিমাণ প্রোটিন আছে চিয়া সিডে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারী। 

১৭। চিয়া সিডে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। যা হাড়কে শক্ত ও মজবুত রাখতে সাহায্য করে থাকে। 

চিয়া সিড এর উপকারিতা – খাওয়ার নিয়ম

 চিয়া সিডের তেমন কোন স্বাদ পাওয়া যায় না। তাই এটি সাধারণত স্মুদি, কাস্টার্ড এবং সালাদের সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো লাগে।

চিয়া সিড এর উপকারিতা হলো চিয়া সিড ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর তা খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে,  ১ গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সিড ও ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। 

অতিরিক্ত চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা

অন্ত্রের স্বাস্থ ভালো রাখার জন্য নিয়মিত ফাইবারজাতীয় খাবার খেতে হবে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ ফাইবার জাতীয় খাবার খেলে গ্যাস, পেটব্যাথা, ডায়রিয়া, হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত চিয়াসিড খেলে শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই চিয়া সিড খেলে নিয়মিত সঠিক পরিমাণে জল পান করতে হবে।

কিন্তু অতিরিক্ত ফাইবার জাতীয় খাবার খেলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয় যেমন: হজমের সমস্যা, গ্যাস, পেটব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদির মতো সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত চিয়া বীজ খেলে আমাদের শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। 

শেষকথা

চিয়া সিড অত্যান্ত পুষ্টিগুণ সর্ম্পণ খাবার। এর মধ্যে রয়েছে ফাইবার এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে অতিরিক্ত পরিমাণ সিয়া সিড খাওয়া থেকে আমাদেরকে বিরত থাকেতে হবে। 

চিয়া সিড সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর / FAQ 

১। চিয়া সিড কি দুধ দিয়ে খাওয়া যাবে?

উত্তরঃ চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। এসব উপাদানগুলো স্বাস্থ্যকে নানা উপায়ে সাহায্য করে। আপনি যখনই এই বীজের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে দেন, এর পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়। দুধের সঙ্গে চিয়া সিড খেলে এই খাবারে ফাইবারের পরিমাণ বেশি।

২। চিয়া সিড কি ডায়াবেটিস রোগী খেতে পারবে?

উত্তরঃ তবে কিছু খাবার আছে যা সব ডায়াবেটিস রোগীর জন্যই উপকারী। যারা ‘প্রিডায়াবেটিস’ বা ‘টাইপ টু ডায়াবেটিস’য়ে ভুগছেন তাদের জন্য ‘চিয়া সিডস’ বা বীজ হতে পারে আদর্শ খাবার। সাধারণ মুদিখানা বা দোকানে এই বীজ-ধরনের খাবার পাওয়া না গেলেও সুপারশপগুলোতে পাওয়া যায়। প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আর ভোজ্য আঁশ থাকে এতে।

৩। চিয়া সিডের অপকারিতা কি?

উত্তরঃ গবেষণায় জানা গেছে, চিয়া সিড প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই ভালোর কথা ভেবে বেশি বেশি না খেয়ে এটি সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত। পরিমাণের থেকে বেশি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।

আরও পড়ুন-

Leave a Comment