লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

শরীরের বাড়তি ওজন আপনার দুশ্চিন্তা  বাড়িয়ে দিচ্ছে? জানেন কি, আপনার ঘরের কোণে পড়ে থাকা এক টুকরা লেবুর শক্তি? এই লেবু আপনার এই দুশ্চিন্তাকে নিমিষেই দূর করতে সক্ষম। আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে লেবুর প্রশংসার জুরি নেই। লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। 

ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে পরিচিত হলেও, ডাল-ভাতের স্বাদ বৃদ্ধিকারক এই লেবুর গুণ জানলে আপনিও অবাক হবেন। ওজন কমাতে লেবু

এবং সাথে রয়েছে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী উপাদান। তাই দেরি না করে চলুন  লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় বিস্তারিত জেনে নেই।

আরও পড়ুনঃ ৭ দিনে ফর্সা হওয়ার ক্রিম 

লেবুর পুষ্টি উপাদান

লেবুকে সাইট্রাস বা টকজাতীয় ফল বলা হয়ে থাকে। রুটেসি পরিবারভুক্ত চিরসবুজ সপুষ্পক ছোট প্রজাতির একটি উদ্ভিদ হলো লেবু। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘Citrus limon’। 

লেবুর প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে,

  • ক্যালোরি (kcal) ২৮
  • লিপিড ০.৩ g
  • কোলেস্টেরল ০ mg
  • সোডিয়াম ২ mg
  • পটাশিয়াম ১৩৮ mg
  • শর্করা ৯ g
  • খাদ্য আঁশ ২.৮ 
  • চিনি ২.৫ g
  • প্রোটিন ১.১ g
  • ভিটামিন সি ৫৩ mg
  • লোহা ০.৬ mg
  • পাইরিডক্সিন ০.১ mg
  • ম্যাগনেসিয়াম ৮ mg
  • ক্যালসিয়াম ২৬ mg

এই উপাদান গুলো দেখে বোঝা যায় লেবুর মধ্যে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি উপাদান। এখন জেনে নিব লেবুর স্বাস্থ্য উপকারিতা।

লেবুর স্বাস্থ্য উপকারিতা

লেবুর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। তার মধ্যে কিছু নিচে উল্লেখ করা হলো:

১। ওজন কমাতে

ওজন কমাতে লেবু হতে পারে চমৎকার একটি ম্যাজিকাল উপাদান। গরম জ্বলে লেবু পানি অথবা লেবুর ডিটক্স ওয়াটার আপনার ডায়েট কে আরও বেশী কার্যকরী করে তোলে। লেবুর এন্টি -অক্সিডেন্ট আপনার শরীরের মেটাবলিজমন কে বৃদ্ধি করে চর্বিকে কমিয়ে আনে। এছাড়াও ওজন কমাতে লেবুর উপকারিতা নিচে আর্টিকেলে আরও বিস্তারিত উল্লেখ করা হবে।

২। পেটের সমস্যায়

যাদের বদ হজম বা হজমে সমস্যা রয়েছে তারা লেবু পানি খেতে পারেন। লেবু পানি পেটের অন্ত্রে পাকরস তৈরিতে সহায়তা করে। পেট ফাপা বা বমি বমি ভাবের সময় লেবু পানি খেলে সমস্যা কমতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা রয়েছে তারা নিময় করে লেবু পানি খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। 

৩। ত্বকের যত্নে লেবু

আপনার দৈনন্দিন রূপচর্চার একটি উপাদান হিসেবে রাখতে পারেন লেবু। লেবুতে থাকা ভিটামিন-সি এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে ত্বকে কাজ করে ত্বক কে মসৃণ রাখে ত্বকে বলিরেখা পরতে দেয় না। এছাড়া সাপ্তাহিক স্ক্রাবিং ডে তে স্ক্রাবে কয়েক ফোটা লেবুর রস দিতে পারেন। লেবুর রস ত্বকের রোদে পোড়া ভাব এবং কালো দাগ দূর করে।

৪। অতিরিক্ত ভোজনে

অনেক সময় আমাদের অতি ভোজন কারণে অস্থির অনুভূতি হয় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। এই সময়ে সফট ড্রিংকস এর বিকল্প হতে পারে এক গ্লাস লেবু পানি। সফট ড্রিংকস শরীরে ক্ষতি করলেও লেবু পানি প্রাকৃতিক উপায়ে আপনার অতি ভোজনের দিনে হজমে সহায়তা করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

৫। সর্দি-জ্বর উপশমে

সিজন চেইন্জের এই সময়ে বড়দের সাথে সাথে ছোটদেরও সহজে জ্বর বা সর্দি-জ্বর হয়ে যায়। সর্দির এই সময়ে মাথা ভার সহ গলা ব্যাথা হতে পারে। এই সময়ে উপকারী পানীয় হিসেবে লেবু চা খেতে পারেন। অথবা মশসা চায়ে লেবু দিয়ে খেতে পারেন। এটি আপনার কাশি উপশমে কাজে দিবে।

আরও পড়ুনঃ কালোজিরার উপকারিতা

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় – লেবুর গুণাগুণ

প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমাতে চান অনেকে। প্রাকৃতিক উপাদানে ওজন কমানোর মধ্যে লেবু অন্যতম উপাদান। লেবুর ফ্ল্যাভনয়েড উপাদান শরীরের চর্বি ও রেজিস্ট্যান্স কমায়। ফলে রক্তে ও শরীরের চর্বি ও শর্করা মাত্রা কমে আসে। 

ব্যায়ামের সাথে সহায়ক হিসেবে লেবু আপনার ক্যালরির মাত্রা দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। ডায়েট চার্টে লেবুতে থাকা ফাইভারের কারণে আপনার ক্ষুধার মাত্রা কমায়। লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে কয়েকটি আলোচনা করা হল। 

লেবু জল খাওয়ার নিয়ম

নিয়ম না মেনে খেলে আপনি উপকার পাবেন না। তাই নিচে লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে একটি হলো লেবু জল খাওয়া। নিচো নিয়ম গুলো জেনে নেই:-

গরম জলে লেবু মধুর মিশ্রিত ড্রিংকস

সবাই লেবুকে চিপে রস বা শরবত বানিয়ে খেয়ে থাকে। এটি একটি সাধারণ পদ্ধতি লেবু খাওয়ার। কিন্তু ওজন কমানোর জন্য লেবুর এই পানি বানিয়ে খান, এভাবে কাজে দিবে। গরম জ্বলে মধু মিশিয়ে তাতে লেবুর রস মিক্স করে খেতে পারেন। অথবা গরম জল না করে নরমাল পানিতে মধু লেবু মিশিয়েও খেতে পারেন। তবে গরম জলের লেবু পানি ওজন কমাতে শরীরে বেশি কার্যকরী।

লেবুর ডিটক্স ওয়াটার

ডিটক্স ওয়াটার এমন একটি পানীয় যাতে সাধারণত ঠান্তা পানিতে উপকারী ফল,সবজি বা হার্বস টুকরো টুকরো করে পানিতে অনেকক্ষণ ডুবিয়ে রেখে এটি তৈরি হয়। লেবু এবং শসার ডিটক্স ওয়াটার শরীরের দূষিত পদার্থ দূর করে এবং মেদ দূর করে। ১ লিটার ঠান্ডা পানিতে একটি লেবু এবং একটি মাঝারি আকারের শসা স্লাইস করে কেটে নিন। সাথে একটু আদা এবং পুদিনা পাতা দিয়ে ২.৫/৩ ঘন্টা ডুবিয়ে রেখে পিংক সল্ট মিশিয়ে ডিটক্স ওয়াটার তৈরি করুন। এই ডিটক্স ওয়াটার ফ্যাট সেল গুলো নিষ্কাশন করে, খাবার হজমে সাহায্য করে এবং ব্যায়ামের পরের অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। এটি ঠান্ডা ঠান্ডা পান করার কারনে আপনি শরীরের ভিতর ফ্রেশ এবং চাঙা অনুভব করবেন।

ওয়াটার ফাস্টিং

দ্রুত ওজন কমাতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডায়েট হলো ওয়াটার ফাস্টিং। এই ওয়াটার ফাস্টিং-এ আপনাকে তরল জাতীয় খাবার ব্যতীত অন্য কোন খাবার গ্রহণ করা হতে বিরত থাকতে হবে। ওয়াটার ফাস্টিং-এ পানির সাথে বিভিন্ন ফলের জুস এবং শরবত খাওয়া হয়। ওয়াটার ফাস্টিং-এ উপকারী পানীয় হতে পারে লেবুর শরবত। এটি আপনার দেহের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এ

লেবুর মসলা পানি

আমরা সকালে উঠে অনেকেই চা অথবা কপি পান করতে পছন্দ করি। চা বা কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করি। এর পরিবর্তে আমরা লেবু আদার ন্যাচারাল পানি পান করতে পারি। এতে আমাদের দেহের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে মেদ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও লেবু আদার পানি আপনার শরীরের ডায়েটকালীন অন্যান্য সমস্যা সমাধানে কাজ করে।

আরও পড়ুনঃ মজাদার খিচুড়ি রান্নার রেসিপি ও নিয়ম প্রণালি

লেবু জল খাওয়ার সঠিক সময়

লেবু জল বা উপরের পানীয় গুলো কি যেকোনো সময়ে যখন তখন খাবেন? অবশ্যই না। প্রতিটি জিনিস নিয়ম করে খেতে হয়। ঠিক তেমনি লেবু জলও আপনাকে সঠিক সময়ে নিয়ম করে খেতে হবে। লেবু পানি আপনি যেকোনো সময় খাওয়ার আগে অথবা পরে খেতে পারবেন। তবে,আপনি লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় জল খেতে হলে একটি নির্দিষ্ট দিনের নিয়ম করুন। সপ্তাহে ৪-৫ দিন খান। 

গরম জলে লেবু মধু খেতে চাইলে,গরম জলে লেবু ফুটাবেন না অথবা লেবুর মধ্যে গরম জল দিবেন না। এতে লেবুর পুষ্টি গুণাগুণ নষ্ট হবে। প্রথমে জল গরম করুন। এরপর এতে মধু মিশিয়ে লেবুর রস মিক্স করুন। আপনি চাইলে পানি গরম না করেই  শরবতের মতো নরমাল পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে আপনি ব্যায়াম করার আগে গরম জলের লেবু-মধুর এই পানি আপনার শরীরকে দ্রুত ওয়ার্ম আপ হতে সহায়তা করবে এবং ক্যালরি ক্ষয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। 

লেবুর ডিটক্স ওয়াটার এর খাওয়ার ভালো সময় হলো খাওয়ার আগে অথবা খালি পেটে। দিনে এক লিটারের মতো খাওয়া যেতে পারে ডিটক্স ওয়াটার। একবার বানালে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত খেতে পারবেন এবং খাওয়ার পর পানি মিশিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া শীতের সকালে বাচ্চাদের লেবু চা,ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা করে। 

লেবুর ক্ষতিকর দিক

লেবুর যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে অনেক, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রয়েছে অনেক ঝুঁকি। তাই লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় যেমন আছে, ঠিক তার উল্টো হতে পারে। 

বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন ১২০ মি.লি. এর বেশি লেবুর রস খেতে নিষেধ করেন। এছাড়াও যাদের অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা তাদের নিয়ম করেই লেবু খাওয়া উচিত। লেবু রস অতিরিক্ত পান করলে, এতে থাকা সাইট্রিক এসিড দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করে দিতে পারে। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত লেবু খেলে বমি বমি ভাব এবং অনেক ক্ষেত্রে পেটে সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও ত্বকে লেবু ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। লেবুর রস সরাসরি কখনই ত্বকে মাখবেন না। এছাড়াও যাদের স্কিন সেনসিটিভ অথবা এলার্জি সমস্যা আছে তাদের লেবু ত্বকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই উচিত।

শেষকথা 

লেবু একটি অতি পরিচিত মুখ আমাদের রান্নার উপকরণে। এটি রান্নার স্বাদ বাড়াতে বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। তবে লেবুর পরিমিত ব্যবহারে এটি আমাদের দেহের স্বাস্থ্য উপকারে আসে। অতিরিক্ত মেদ কমাতে লেবু একটি সহায়ক ভুমিকা পালন করে। শুধু লেবু খেলেই যে আপনার মেদ কমে যাবে এমনটা সত্য নয়। অবশ্যই আপনার দৈনন্দিন ব্যায়াম এবং ডায়েট চার্টের সাথে লেবুকে রাখুন এবং নিজের ওজন কমানোর জার্নি টা আরো সহজ করুন। উপরে আর্টিকেলে লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় গুণ সহ আরও অন্যান্য দিকগুলি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১. ডিটক্স ওয়াটার কি?

উত্তর: আমাদের শরীরের ভেতরে থাকা যত সব দূষিত উপাদান বের করে দেওয়ার জন্যই ডিটক্স পানির ব্যবহার। চাইলে বাড়িতেই নানা রকম ডিটক্স পানি বানিয়ে নেওয়া যায়।

২. লেবু পানি কি প্রতিদিন খাওয়া যাবে?

উত্তর : লেবু পানি প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয়। সপ্তাহে ২/৩ দিন বাদে অথবা মাসে ১৫ দিন পান করার পর গ্যাপ দিয়ে খেতে হবে।

৩.লেবু কি গ্যাসট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি করে?

উত্তর: লেবু গ্যাসট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি না করলেও এটি নিয়ম করে খেলে আপনার গ্যাসট্রিকের সমস্যা দূর হবে। তবে অতিরিক্ত পান করলে পেটে সমস্যা থেকে গ্যাসট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।

৪. ওজন কমানোর জন্য লেবু কখন কখন খাওয়া উচিত?

উত্তর : আপনি সকালে খালি পেলে অথবা খাওয়ার আধা ঘন্টা পর খেতে পারেন। আর রাতে খাওয়ার পর মধু দিয়ে এক গ্লাস লেবু জল খেতে পারেন।

৫. লেবু খেলে কি কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে?

উত্তর : লেবু একটি টক জাতীয় ফল। এটি আমরা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে খেয়ে থাকি। এটি পরিমিত পরিমাণে খেলে কোন সমস্যা হয় না। তবে যদি সিরিয়াস কোন লক্ষণ দেখা যায় তাহলে লেবু খাওয়া বাদ দিয়ে ডাক্তারের থেকে পরামর্শ নিন।

আরও পড়ুন-

ওজন কমানোর উপায়

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

Leave a Comment