৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায় ও কার্যকরী ঘরোয়া উপায়

৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায়

একরাশ ঘন কালো চুল আমাদের নজর কেড়ে নেয় নিমিষেই। সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল আমাদের সবারই প্রিয়। চুলের সঠিক যত্ন বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ দুই হওয়া উচিত। চুলের যথাযথ পুষ্টির অভাব হলে চুল ও মাথার ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল আমাদের আত্নবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে কয়েকগুণ।

অবহেলার কারনে বেশিরভাগ মানুষ চুল নিয়ে সমস্যায় ভোগে। সঠিক যত্নে চুল বড় করা সম্ভব। তাই চুল লম্বা করার জন্য সঠিক সমাধান সম্পর্কে জানতে হবে। আজকের আর্টিকেলে ৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায়, উপকারী তেল ও ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

৭ দিনে চুল লম্বা করার তেলের নাম

১। নারিকেল তেল

প্রতি ১০০ গ্রাম নারিকেল তেলে ৮৯০ ক্যালরি পাওয়া যায়। তেলের ৯৯% ই ফ্যাট যার অধিকাংশ চর্বি। নারিকেল তেলের ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যের কারনে তা চুলের জন্য ক্ষতিকর নয়। এই তেল চুলের প্রোটিন ক্ষয় রোধ করে। 

তেলটি হালকা গরম করে মাথার ত্বকে মাসাজ করুন ও গোসলের পূর্বে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। ভাল হয় যদি রাতে তেল লাগান। মেয়েদের চুল লম্বা করার তেলের নাম হিসেবে এই তেল অনেক জনপ্রিয়।

২। ক্যাস্টর ওয়েল 

এই তেলে প্রোটিন, ভিটামিন ই, অমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা ব্যাবহারের ফলে চুলে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। 

৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায় Sat dine chul lomba korar upay
৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায়

৩। জলপাই তেল

এই তেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চুলের গোরা মজবুত করে। মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। তেলটি হালকা গরম করে চুলে লাগান, গোসলের পূর্বে ৩০ মিনিট রেখে দিন। চুল লম্বা করার তেল হিসেবে এটি কার্যকর।

৪। আরগান তেল 

আরগান তেল ভিটামিন ই ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা চুল ও মাথার ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধ করে। কুচকিয়ে যাওয়া চুল লম্বা করার সাথে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

এছাড়া চুল ভাঙ্গা রোধ করে ও চুল পড়া কমিয়ে দেয়। যেকোনো তেলের সাথে মিশিয়ে আরগান তেল ব্যাবহার করা যায়। ৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায় হিসেবে এটি অনেক উপকারী।

৫। বাদাম তেল

বাদাম তেল ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। কারন বাদাম তেল চুলকে মজবুত, স্বাস্থ্যকর ও চুলকে কাল করে। এই তেল চুলের পুষ্টির ঘাটতি পুরনে সাহায্য করে। 

এছাড়াও ৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায় হিসেবে নিচের তেলগুলো অনেক কার্যকরী।

৬। অলিভ ওয়েল – চুলের পুষ্টি যোগায়। কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করে। 

৭। জোজোবা তেল – মাথার চুল উৎপাদনে সাহায্য করে। 

৮। পেপারমিন্ট তেল – চুলের বৃদ্ধি ঘটায় ও রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। 

৯। রোজ মেরি তেল – মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে

১০। গ্রেপসিড তেল – এটি ময়শ্চারাইজার হিসেবে ব্যাবহার করা যায়।

১১। তিলের তেল –  চুলের পুষ্টি যোগায়, চুল মজবুত করতে সাহায্য করে। 

১২। অ্যাভোকাডো তেল – এই তেলে ভিটামিন ও ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা চুলের পুষ্টি যোগায়।

১৩। নিমের তেল – এই তেলের  অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুনের কারনে এটি পরিচিত, মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল করে। 

৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায় হেয়ার প্যাক 

১। অ্যালোভেরা জেল 

২ চামচ অ্যালোভেরা জেল নিয়মিত মাথার ত্বকে মাসাজ করতে হবে। নিয়মিত ব্যাবহার চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।

২। ক্যাস্টর ওয়েল 

প্রতিদিন গোসলের ১ ঘণ্টা পূর্বে ১ চামচ ক্যাস্টর ওয়েল মাথার ত্বকে মালিশ করতে হবে। নিয়মিত ক্যাস্টর অয়েলের ব্যাবহার চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।

৩। মধু

মধু একটি প্রাকৃতিক হিউমেক্ট্যান্ট যা চুলের বৃদ্ধির পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। 

চুল ঝরে পরার কারন

১। খুশকিযুক্ত চুল – শীতে বা সারা বছর অনেকের খুশকি হয়ে থাকে চুলে। খুশকি আমাদের মাথার ত্বকের মরা চামড়া। এগুলো পরে ধীরে ধীরে দানাদার খুশকি রুপে ত্বকে দেখা যায়।

২। চুল পড়াচুল ঝরে যাওয়া বা পাতলা হয়ে যাওয়া। এলোপেসিয়ার কারনে অনেকের চুল পাতলা হয়ে আসে,বিশেষ করে সামনের দিকে।

৩। রুক্ষ চুল – অতিরিক্ত শ্যাম্পু করার কারনে চুলের প্রাকৃতিক তেল চুল থেকে সরে যেতে থাকে এর ফলে চুল রুক্ষমূর্তি ধারন করে।

৪। চুলের আগা ফাটাচুল অতিরিক্ত আচড়ালে, বেশি গরম কোন কিছু ব্যবহার যেমন- হেয়ার ড্রায়ার, হেয়ার স্ট্রেইটনার, হেয়ার কার্লিং আয়রন, হিট প্রটেক্টিভ স্প্রে ব্যবহার না করলে চুলের আগা ফেটে দুমুখো চুল বের হয়ে যায়। পরে এই চুল আস্তে আস্তে ফেটে উর্ধমুখী হতে থাকে।

৫। তৈলাক্ত বা চিটচিটে চুল চুল অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয় যখন মাথার ত্বক বা তালু থেকে প্রাকৃতিক তেল নিঃসৃত হয়। এই প্রাকৃতিক তেলকে বলা হয় সিবাম (Sebum)। সিবাম সেবেসিয়াস (Sebaceous) গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত যা হঠাৎ করে অতিরিক্ত ক্ষরণ হয়ে থাকে। যার ফলে পরিমানের চেয়ে বেশি তেল নিঃসৃত হয়।

৬। উষ্কোখুষ্কো চুলচুলের মসৃণতা ধীরে ধীরে কমে গেলে চুল উষ্কোখুষ্কো হতে থাকে।

৭। ক্ষতিগ্রস্ত চুলচুলে গরম তাপযুক্ত যেকোনো পন্য ব্যবহার করলেই চুলের ক্ষতি হতে পারে। 

৮। চুলে রং করালে চুলে অপ্রাকৃতিক রং (Synthetic Color) করালে এবং নিয়মিত যত্ন না নিলে কালারে ব্যবহৃত ক্যামিক্যাল চুলের বেশ ক্ষতি করতে পারে। চুল হারাতে পারে তার স্বাভাবিক জৌলস, চুল ভেঙ্গে যেতে পারে।

৯। চুল ভেঙ্গে পরা অপুষ্টিজনিত কারনে চুলের অনেকগুলো ক্ষতির মধ্যে একটি হলো চুল আগা থেকে ফেটে মাঝখানে ভেঙ্গে যাওয়া।

১০। চুল অকালে পেকে যাওয়া – বয়স হলে চুল পাকবে এটা সত্য কথা। কিন্তু যদি বয়স হবার আগেই চুল কিছুটা পেকে যায় তাহলে বুঝতে হবে এটি চুলের সমস্যা।

চুল লম্বা করার ঘরোয়া পদ্ধতি

১। সঠিক খাবার

চুল মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। অনেকেই চুলকে নানানভাবে সাজিয়ে নানান রূপ দিতে পছন্দ করেন। আবার কেউ পছন্দ করেন চুল লম্বা রাখতে, কেউবা রাখেন ছোট। যারা লম্বা চুল রাখতে পছন্দ করেন তারা কিছু নিয়ম মেনে চললে স্বাস্থ্যবান লম্বা চুল ফিরে পেতে পারেন।

  •  ডিম- ডিম প্রোটিন এবং বায়োটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এই দুইটি উপাদান চুলের বৃদ্ধির জন্যে অবশ্য জরুরি। বায়োটিন ক্যারাটিন সমৃদ্ধ যা চুলের প্রোটিনের জন্যে অপরিহার্য।
  • পালং শাক- পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারি পুষ্টিগুণ যেমন পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন এ এবং সি যা চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। প্রতিদিন ৩০ গ্রাম পালং শাক ২০% ভিটামিন এ এর অভাব পূরন করে।
  • চর্বি বা তেলযুক্ত মাছ- তেলযুক্ত মাছে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ডি ৩, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি, প্রোটিন যা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্যে উপকারী।
  • বাদাম- বাদামে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ রয়েছে যেমন ভিটামিন বি, জিঙ্ক এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড। বাদাম চুলের বৃদ্ধি ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • সবুজ শাকসবজি- সার্বিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্যের জন্যে সবুজ শাকসবজির বিকল্প নেই। এতে থাকে অনেকগুলো ভিটামিন ও আয়রন যা চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। 

২। সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচন

চুল পরিষ্কারের জন্যে ক্ষতিকর ক্যামিক্যালমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত নয়। যদি তাতে SLS (Sodium Lauryl Sulphate), SLES (Sodium Laureth Sulfate), প্যারাবিনস, সিলিকন পদার্থ থাকে সেই শ্যাম্পু এড়িয়ে চলুন। এই উপাদানগুলো মাথার ত্বকে বাসা বাধতে পারে এবং চুলের ফলিকলগুলোকে আটকে দিতে পারে যা চুলের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। ৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায় হিসেবে সঠিক শ্যাম্পু ব্যাবহার করতে হবে।

৩। অতিরিক্ত তাপ

চুলের সৌন্দর্য বর্ধনে অনেকেই অতিরিক্ত তাপযুক্ত হেয়ার ড্রায়ার, হেয়ার স্ট্রেইটনার, কার্লিং আয়রন ব্যবহার করে থেকে যা চুলের বেশ ক্ষতি করে ফেলে, চুলের বৃদ্ধিতে দারুন সমস্যা সৃষ্টি করে। এসব ব্যবহার বন্ধ করলে চুলের বৃদ্ধি পাওয়া সহজ হবে।

৪। চুল রং না করা

চুল রং করার সময় রং দীর্ঘস্থায়ী করার জন্যে অনেক ক্যামিক্যালযুক্ত উপাদান ব্যবহার করা হয় যা পরবর্তীতে চুলের ভেঙ্গে যাওয়া, ঝরে যাওয়া, চুল পরে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। চুলে ক্যামিক্যাল ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা উচিত।

৫। তিন মাসে একবার চুল কাটা

চুলের আগায় নির্দিষ্ট সময়ের পর ফাটা হওয়া শুরু করে, এই ফাটা আস্তে আস্তে উপরের দিকে ধাবিত হয়। তাই প্রতি তিন মাসে একবার চুল ট্রিম করা উচিত, এতে চুলের বৃদ্ধি ঘটে। 

৬। চুলে নিয়মিত তেল মালিশ

২ কাপ নারিকেল তেল, ২ চা চামচ রেডির তেল (Castor Oil), ২ চামচ বাদামের তেল এবং রোদে শুকিয়ে রাখা নিম পাতা এক সাথে করে অল্প আঁচে জ্বাল দিতে হবে। নিম পাতার রং গাঢ় হলে চুলা থেকে নামিয়ে সংরক্ষন করতে হবে। প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত দুবার সময়মত তেল মাথার তালুতে মালিশ করতে হবে। এতে চুল লম্বা ও ঘন হবে। 

৭। পেয়াজের রস

থেতলে নেওয়া পেয়াজের রস আলাদা করে তেলের সাথে মিশিয়ে জ্বাল করে সংরক্ষন করে সেই তেল নিয়মিত মাথায় মালিশ করলে চুল দীর্ঘ হবে বলে আশা করা যায়। পেয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার ও পটাশিয়াম যা চুলের জন্যে স্বাস্থ্যকর।

৮। অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরায় রয়েছে অনেক রকমের সক্রিয় উপাদান ও মিনারেলস যা চুল মজবুত করনের পাশাপাশি চুল পরা রোধ ও চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ফ্যাটি এসিড, এমিনো এসিড, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ১২, সি এবং ই। এটি সরাসরি অথবা তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। ৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায় হিসেবে এটিও ব্যাবহার করা যায়।  

৯। পর্যাপ্ত ঘুম

দৈনিক ৮-৯ ঘন্টা ঘুম মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত দরকারি। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরে মেলাটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে যা চুলের বৃদ্ধির সাথে যুক্ত। নিয়ম করে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরলে এবং সকালে উঠে পরলে শরীর ও মন সার্বিক দিক থেকে ভালো থাকে। 

১০। ডায়েট মেনে চলা

ডায়েট করা মানেই না খেয়ে থাকা নয়, শরীরের বৃদ্ধিতে খাদ্যের ছয়টি উপাদানেরই প্রয়োজন রয়েছে। এই উপাদানগুলো প্রতিদিনের খাদ্যে রাখা উচিত।

পরিশেষে

চুল আমাদের সৌন্দর্যকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। চুলের যত্নে হাজার হাজার টাকা আমরা পার্লার বা স্যালনে খরচ করি অথচ এর যত্ন করার উপায় আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। পরিমিত খাবার, সঠিক সময়ের পর্যাপ্ত ঘুম, চুল সঠিক নিয়মে ধৌত করা, তেল মালিশ করলে, প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহন করলে ৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায় থেকে চুলে পাবেন সুন্দর মোলায়েম ভাব।

চুল সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। চুল লম্বা করার জন্য কি খেতে হবে?

উত্তরঃ  ফ্ল্যাক্সসিড অয়েল, চিয়া সিড আর ক্যানোলা তেল, আখরোট, তেলতেলে মাছ চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।

২। ভিটামিন ই ক্যাপসুল মাথায় দিলে কি হয়?

উত্তরঃ  নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, হেয়ার ফলিকলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, চুলে পর্যাপ্ত পুষ্টি জোগায়।

আরও পড়ুন-

১ মাসে চুল ঘন করার উপায় ও চুলের যত্নে করনীয়

Leave a Comment