হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়
শ্বাসকষ্টের সমস্যা এখন সাধারণ করোনা বা হাঁপানি রোগীরা ছাড়াও অনেক কিছুর কারণে উত্থাপন হতে পারে। এ সমস্যা সম্পর্কে কথা বলে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. আরেফিন খান মন্তব্য করেন।
তিনি জানান, ঠান্ডা বা কাশি হলেও শ্বাসের সমস্যা উত্থাপিত হতে পারে। অতএব, ফুসফসে যদি সংক্রমণ হয়, তবে এর ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা উত্থাপিত হয়ে থাকে। এই জন্য হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় কী আমাদের জানতে হবে।
অন্যদিকে, ডা. খান পরামর্শ দেন, শ্বাসকষ্টের সমস্যা উঠলে আগে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আজকের আর্টিকেলে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়, শ্বাসকষ্টের ঔষধ এর নাম, শ্বাসকষ্ট থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় গুলো জানতে হবে। চিন্তা করবেন না, অনেক কারণেই শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ঠান্ডা লাগা, কাশি, ফুসফুসে সংক্রমণ এমনকি অ্যালার্জির কারণেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আপনি স্বস্তি পেতে পারেন:
১. সামনের দিকে ঝুঁকে বসুন: এতে আপনার ফুসফুসের উপর চাপ কমবে এবং শ্বাস নিতে সুবিধা হবে।
২. ধীরে ধীরে, গভীরভাবে শ্বাস নিন: দীর্ঘ ও গভীর শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন।
৩. নাকে শ্বাস নিন, মুখ দিয়ে ছাড়ুন: এতে আপনার শ্বাসনালী আরও বেশি খোলা থাকবে।
৪. ঠান্ডা বাতাসে শ্বাস নিন: যদি সম্ভব হয়, বাইরে যান বা একটি পাখা ব্যবহার করে নিজেকে ঠান্ডা বাতাসে রাখুন।
৫. পানি পান করুন: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় থাকে এবং শ্বাস নিতে সহজ হয়।
৬. লবণাক্ত পানীয় পান করুন: লবণাক্ত পানীয় শরীর থেকে হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইট পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
৭. ওষুধ: যদি আপনার শ্বাসকষ্টের জন্য কোনও প্রেসক্রিপশনের ওষুধ থাকে, তাহলে সেগুলি নিন।
চিকিৎসা সহায়তা কখন নিতে হবে
- শ্বাসকষ্টের সাথে বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা, ঘাম হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে।
- দীর্ঘক্ষণ ধরে শ্বাসকষ্ট হলে।
- শ্বাস নিতে খুব বেশি কষ্ট হলে।
- শ্বাসকষ্টের সাথে নীলচে আভা আসলে।
- যদি শিশুদের শ্বাসকষ্ট হয়।
শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায়
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় অবলম্বনের পাশাপাশি মুক্তির উপায়গুলো জানতে হবে। শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে হাঁপানি, অ্যালার্জি, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং হৃদরোগ। কারণ নির্ণয়ের উপর নির্ভর করে চিকিৎসাও ভিন্ন হবে।
তবে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ রয়েছে যা আপনি শ্বাসকষ্ট কমাতে করতে পারেন:
১. আপনার ভঙ্গি পরিবর্তন করুন: সামনের দিকে ঝুঁকে বসুন বা একটি টেবিলে হাত রেখে দাঁড়ান। এতে আপনার ফুসফুসের উপর চাপ কমবে এবং শ্বাস নিতে সহজ হবে।
২. ধীরে ধীরে, গভীরভাবে শ্বাস নিন: দীর্ঘ ও গভীর শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। নাকে শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে ছাড়ুন।
৩. ঠান্ডা বাতাস পান করুন: যদি সম্ভব হয়, বাইরে যান বা একটি পাখা ব্যবহার করে নিজেকে ঠান্ডা বাতাসে রাখুন।
৪. হাইড্রেটেড থাকুন: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। লবণাক্ত পানীয় শরীর থেকে হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইট পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
৫. ওষুধ: শ্বাসকষ্টের জন্য যদি প্রেসক্রিপশনের ওষুধ থাকে, সেগুলি নিন।
৬. ট্রিগার এড়িয়ে চলুন: যদি আপনার অ্যালার্জির কারণে শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে আপনার ট্রিগারগুলি, যেমন ধুলো, পোষা প্রাণীর লোম, বা পরাগরেণু এড়িয়ে চলুন।
৭. ধূমপান ত্যাগ করুন: ধূমপান আপনার ফুসফুসের ক্ষতি করে এবং শ্বাসকষ্ট আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
৮. ওজন কমান: আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের হন, তাহলে ওজন কমানো আপনার শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা উন্নত করতে পারে।
৯. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম আপনার ফুসফুসকে শক্তিশালী করতে এবং আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
১০. স্বাস্থ্যকর খাবার খান: একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য আপনার শরীরকে শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে, যার মধ্যে আপনার ফুসফুসও রয়েছে।
মনে রাখবেন
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাবেন না।
- ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় জেনে নেওয়রি পাশাপাশি বর্জনীয় সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। শ্বাসকষ্টের সময় কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত কারণ সেগুলো আপনার শ্বাসনালীতে প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে তুলতে পারে, যার ফলে শ্বাস নিতে আরও কষ্ট হতে পারে।
এই খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ডেইরি পণ্য: দুধ, পনির, দই এবং অন্যান্য ডেইরি পণ্য কিছু লোকেদের অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কারণ এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
- অ্যালার্জেন-সমৃদ্ধ খাবার: যদি আপনার কোনও খাদ্য অ্যালার্জি থাকে, তাহলে সেই খাবারগুলি এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ। এতে বাদাম, শস্য, সয়াবিন, মাছ, শেলফিশ, ডিম এবং গম অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রায়শই উচ্চ পরিমাণে সোডিয়াম, চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে। এগুলি শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং শ্বাসকষ্টের
এছাড়াও, মশলাযুক্ত খাবার, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এগুলি শ্বাসনালীতে জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে তুলতে পারে।
শ্বাসকষ্টের ঔষধ এর নাম
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় হিসেবে ঔষধ সেবন করতে হবে। শ্বাসকষ্টের জন্য ঔষধের নাম বিভিন্ন হতে পারে এবং তা নির্ভর করে সমস্যার কারণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শে। কিছু সাধারণ শ্বাসকষ্টের ঔষধের নাম নিম্নে দেওয়া হলো:
1. ইনহেলার (ব্যাসিকালি ব্রনকোডাইলেটর আবষ্কার করা হয়েছে)
2. স্টেরয়েড থাক্সজেন (যা প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার হয়)
3. লিউকট্রাপ (অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি জ্বর এবং অক্সিজেন লেভেল বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়)
4. কর্টিকোস্টেরয়েড (যা শ্বাসের উপাত্ত বিশেষজ্ঞ কর্মকারিদের নির্দেশিত করতে পারে)
5. অ্যান্টিবায়োটিক (যখন শ্বাসকষ্ট সংক্রমণের ফলে বাক্তের ব্যবহারকারী থাকে)
6. সাবুটামল (যা সাধারণত কাশির এবং ঠাণ্ডার জন্য প্রয়োজন হয়)
এই ঔষধগুলি নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। যেকোনো নতুন ঔষধের ব্যবহার পূর্বে চিকিৎসকের সাথে পরার্ম্শ করা উচিত।
শ্বাসকষ্ট থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় এর মধ্যে চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণের উপর।
তবে, কিছু সাধারণ পদক্ষেপ রয়েছে যা আপনি শ্বাসকষ্ট কমাতে করতে পারেন:
১. আপনার ভঙ্গি পরিবর্তন করুন: সামনের দিকে ঝুঁকে বসুন বা একটি টেবিলে হাত রেখে দাঁড়ান। এতে আপনার ফুসফুসের উপর চাপ কমবে এবং শ্বাস নিতে সহজ হবে।
২. ধীরে ধীরে, গভীরভাবে শ্বাস নিন: দীর্ঘ ও গভীর শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। নাকে শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে ছাড়ুন।
৩. ঠান্ডা বাতাস পান করুন: যদি সম্ভব হয়, বাইরে যান বা একটি পাখা ব্যবহার করে নিজেকে ঠান্ডা বাতাসে রাখুন।
৪. হাইড্রেটেড থাকুন: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। লবণাক্ত পানীয় শরীর থেকে হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইট পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
৫. ওষুধ: শ্বাসকষ্টের জন্য যদি প্রেসক্রিপশনের ওষুধ থাকে, সেগুলি নিন।
৬. ট্রিগার এড়িয়ে চলুন: যদি আপনার অ্যালার্জির কারণে শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে আপনার ট্রিগারগুলি, যেমন ধুলো, পোষা প্রাণীর লোম, বা পরাগরেণু এড়িয়ে চলুন।
৭. ধূমপান ত্যাগ করুন: ধূমপান আপনার ফুসফুসের ক্ষতি করে এবং শ্বাসকষ্ট আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
৮. ওজন কমান: আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের হন, তাহলে ওজন কমানো আপনার শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা উন্নত করতে পারে।
৯. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম আপনার ফুসফুসকে শক্তিশালী করতে এবং আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
১০. স্বাস্থ্যকর খাবার খান: একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য আপনার শরীরকে শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে, যার মধ্যে আপনার ফুসফুসও রয়েছে।
পরিশেষে
শ্বাস কষ্ট খুবই আসস্তি কর একটি রোগ। যার জন্য হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় অবলম্বন করতে হয়। এর থেকে বাঁচতে হলে বা এটি একবার হলে সমাধান হিসেবে জীবন ধারা পরিবর্তন ও বিধি নিষেধ যথাযথ ভাবে মেনে চলতে হবে। শ্বাস কষ্টের উপসর্গ পরিলক্ষিত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের সরণাপন্ন হতে হবে।
প্রয়োজন মোতাবেক ঔষধ সেবন করতে হবে। চলাফেরা কোন গাফিলতি করা যাবে না, তবেই এর থেকে মুক্তি সম্ভব। আশা করি হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় সম্পর্কিত বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি। ধন্যবাদ।
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ
১। শ্বাসকষ্ট হলে কোন ধরনের ডাক্তার দেখাতে হবে?
উত্তরঃ কাশি বা শ্বাসকষ্টের জন্য বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, কেবল ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাতেই শ্বাসকষ্ট হয় না। হৃৎপিণ্ডের সমস্যাতেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এমনকি রক্তশূন্যতার রোগীও একপর্যায়ে শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন। এটি হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় এর মধ্যে একটি।
২। শ্বাসকষ্ট হলে কি ঔষধ সেবন করতে হবে?
উত্তরঃ শ্বাস কষ্টের তাৎক্ষনিক উপশমের জন্য কয়েক রকম ঔষধ ইনহেলারের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়, যেমন, সালবুটামল, সালমেটেরোল, এবং ফোরমোটেরোল । হাঁপানীর আক্রমণ যেন না হয় তার জন্য ব্যবহার করা হয় স্টেরয়েড ইনহেলার। সাধারনত ফ্লুটিকাস্ন ও বুডিসোনাইড স্টেরয়েড ইনহেলার হিসাবে পাওয়া যায়। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় এটি অনুসরণ করা যায়।
৩। শ্বাসকষ্ট হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয়?
উত্তরঃ অ্যালার্জি, হাঁপানি, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা, ফুসফুসের রোগ, নিউমোনিয়া, স্থূলতা, যক্ষ্মা ইত্যাদি ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। শরীরে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। রাতে ঠিক মতো ঘুম না হলেও নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এ ছাড়া কিডনির অসুখে ভুগলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।