কালোজিরা ও রসুনের উপকারিতা
কালোজিরা ও রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে আমরা কালোজিরা ও রসুনের বিষয়ে বিস্তারিত জানব।
কালোজিরা সপুষ্ক উদ্ভিদ জাতীয় ফলের অভ্যন্তরীণ বীজ। Ranunculaceae গোত্রের উদ্ভিদ হলো কালোজিরা । এটি“Nigella seed” নামে পরিচিত এবং কালো জিরার তেলকে বলা হয়ে থাকে“Nigella Sativa Oil” । কালো জিরার আদি নিবাস হচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোতে। তবে বর্তমানে কম-বেশি প্রায় সকল দেশে কালোজিরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় । কালো বীজের নির্যাস হাজার হাজার বছর ধরে মসলা ও খাদ্য সংরক্ষণকারী হিসাবে নিযুক্ত করা হচ্ছে।
বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মাদ সাঃ বলেছেন ,তোমরা কালোজিরা ব্যাবহার করবে কেনোনা কালোজিরা মৃত্যু ব্যাতিত সকল রোগের ঔষধ হিসাবে কাজ করে ।
কালোজিরার উপকারিতা
কালোজিরাতে আছে ফসফেট,লৌহ ও ফসফরাস। এছাড়াও রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধক কেরটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এবং অম্ল রোগের প্রতিষেধক।কালিজিরাতে প্রায় শতাধিক পুষ্টি ও উপকারী উপাদান আছে। কালিজিরা দৈনিক খাওয়ার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। কালোজিরা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কালিজিরা ফুলের মধু উৎকৃষ্ট মধু হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিবেচিত, কালোজিরার তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বর্তমানে কালিজিরা ক্যাপসুলও বাজারে পাওয়া যায়। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক জাতীয় উপাদান।
১. ডায়াবেটিস সবচেয়ে বিপজ্জনক রোগ হয়ে ধরা দিয়েছে। কালোজিরার তেল ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
২. যারা ডায়েট করেন তাদের জন্য কালোজিরা খুবই উপকারি। নিয়মিত মধু ও পানির সঙ্গে কালোজিরা মিশিয়ে খাবেন। কালোজিরা ওটমিল ও টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।
৩. লেবুর রস ও কালোজিরা তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।লেবুর রস ও কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে দু’বার মুখে লাগালে ত্বকে ব্রণ ও দাগ অদৃশ্য হয়ে যাবে।
ঔষধী গুনাগুনঃ
৪. কালোজিরা তেল মাথাব্যথার জন্য একটি পুরানো প্রতিকার হিসেবে বলা হয়। এটি মাথার ত্বকের ম্যাসাজ করুন।
৫. সরিষার তেলের সঙ্গে কালোজিরার তেল গরম করে হাঁটু বা জয়েন্টগুলোতে দৈনিক ভালভাবে ম্যাসাজ করতে পারেন। এটি জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
৬. কালোজিরায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায়, প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করার ক্ষমতাসহ লিভারকে সুরক্ষিত করতে সহায়তা করে। কালোজিরা রাসায়নিকের বিষাক্ততা কমায়ইয়।লিভার ও কিডনি ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে কালোজিরা। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। এতে যেকোনও জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
৮. সর্দি-কাশিতে আরাম পেতে, কালোজিরার সঙ্গে তিন চা-চামচ মধু ও দুই চা-চামচ তুলসি পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি কমে। বুকে কফ বসে গেলে কালিজিরে বেটে, মোটা প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।
৯. হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় কালোজিরা অনেক বেশি উপকারী। কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যা দূর করে।
১০. নিয়মিত কালোজিরা দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।। এতে করে মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটে; যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
১১. নিয়মিত কালোজিরা পরিমান মত খাওালে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে কালজিরা নিয়মিত ব্যাবহার করুন।
কালজিরার ক্ষতিকর দিক নেই বললেই চলে। কালজিরা খুবই উপকারি ।তবে এক সাথে বেশি কালজিরা খাওয়া উচিতা না ।এতে পিত্ত সমসসা হতে পারে ।যাদের এলাজি আছে তাদের কালোজিরা এরিয়ে চলাই ভাল।
রসুন এর উপকারিতা
রসুন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান; রসুনে রয়েছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২),নায়াসিন (ভিটামিন বি৩),প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬ ও সেলেনিয়াম। সেলেনিয়াম ক্যানসার প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে। রসুনের মধ্যে এলিসিন নামেক এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। এটি ক্যানসারসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে কার্যকর। এই এলিসিন নামে যে কম্পাউন্ড রসুনে পাওয়া যায়, তার কারণে রসুনকে সুপারফুডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ একে অনেকটা ওষুধের মতোই তৈরি করেছে, যার দরুন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খালি পেটে রসুন খেলে উপকার বেশি। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে রসুন খুব জরুরি, তাই প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা
নিয়মিত সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যার দরুণ রক্ত বাধাগ্রস্ত হয়ে যেসব রোগ হতে পারে তা রসুনের কারনে বাধাগ্রস্থ হয়।
হার্টের সমস্যা
হার্টের সমস্যা সমাধানে রসুন খুবই উপকারী উপাদান। রসুনের আছে অ্যালিসিনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা থাকার কারণে প্রতিদিন খালি পেটে রসুন খেলে কলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়। ব্লাড প্রেসার, রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে রসুন খুব উপকারী।
ক্যান্সার প্রতিরোধে রসুন
ক্যান্সার প্রতিরোধে রসুনের গুরুত্ব হলো অপরিসীম। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি যদি প্রতিদিন রসুন খান তাহলে পেট এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ রসুন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুনের উপকারিতা
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর অনেক উপায় আছে, তার মধ্যে রসুন হল অন্যতম। মানব শরীরে এলডিএল বেড়ে যাওয়ার ফলে রক্তচাপ বাড়ে। তবে প্রতিনিয়ত খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খাওয়া যায়, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা সমাধান পাওয়া যায়।
ত্বকের যত্ন নিতে রসুন
রসুনের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ঔষধি গুণ ত্বকের জন্য খুবই ভালো। নিয়ম অনুযায়ি রসুন খেলে ত্বক ভালো থাকে, ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না। চেহারায় দাগ থাকলে, তা কমে যায়। এছাড়া দাদ রোগের জন্য রসুন খুবই উপকারী।
ওজন কমাতে রসুনের উপকারিতা
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে রসুন। তবে শুধু রসুন খেলেই যে ওজন কমবে বিষয়টা তা নয়। খালি পেটে রসুন খাওয়ার সাথে সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি। এটি করলে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায় ।
এছারা রান্নায় ও নানা ভর্তায় রসুনের উপস্থিতি থাকে। রসুনের গুণ পেতে সকালে খালি পেটে খাওয়া উত্তম । বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় কিছু ভালো ফল পাওয়া গেলেও সব ঔষধি গুণ পাওয়া যাবে না।
অ্যাজমার জন্যও রসুন উপকারী, কিন্তু ব্যাপারটা ভিন্ন, এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল সক্রিয়ভাবে কাজ করে কিন্তু অ্যালার্জিক অ্যাজমা থাকলে রসুন অ্যালার্জি বাড়াতেও পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে রসুন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
অনেকের কালোজিরা ও রসুনের উপকারিতা সম্পকে জানে না তাই রসুনে অ্যালার্জতাবলে থাকে, আর নিয়মিত এটি খেলে কোনো অসুবিধা বোধ করেনা, কিন্তু স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি ব্যক্তি এটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। অনেক ধরনের রসুন বাজারে পাবেন, তার মধ্যে দেশি এককোষী রসুন সবচেয়ে ভালো।
আরও পড়ুনঃ