সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম, ব্যাবহার ও সতর্কতা

সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম

সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা বা সর্দি-জ্বর এক ধরনের ভাইরাসঘটিত সংক্রামক রোগ যা মানবদেহের ঊর্ধ্ব শ্বাসপথ, বিশেষ করে নাকে আক্রমণ করে। এছাড়া এই রোগে গলবিল, অস্থিগহ্বর ও স্বরযন্ত্রও আক্রান্ত হতে পারে। অল্পস্বল্প, দু-চার দিনের কি সপ্তাহখানেকের কাশি তবু ঠিক আছে।

অনেকে সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম অন্যের কাছ থেকে জেনে, সেবন করা শুরু করে দেয়। কারণ দীর্ঘস্থায়ী কাশি অনেক সময়ই বিপদের পূর্বাভাস বয়ে আনে।

চিকিৎসা-বিজ্ঞানের এই সাধারণ তথ্যানুসারে বেশিরভাগ মানুষ ঋতু পরিবর্তনের সময় ‘ঠাণ্ডা’ স্বর্দি তে পড়েন। তবে এই ঠান্ডা সর্দি ঘন ঘন হলে সাবধাণ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে স্বাস্থ্যবিষয়ক অনেক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরওজানানো হয়, ‘ঠাণ্ডা লাগা’ বা সর্দি জ্বরের পেছনে দায়ী প্রায় দুইশরও বেশি প্রজাতির ভাইরাস।

তবে ‘রাইনোভাইরাস’য়ে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। তারপরও এখন পর্যন্ত এর নিয়ামক ওষুধ নেই। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একই ঋতুতে দুবার ভোগার সম্ভাবনাও থাকে।

আরও পড়ুনঃ সর্দির ট্যাবলেট এর নাম, সেবনবিধি ও সঠিক চিকিৎসা

সর্দি কাশি হবার কারন

সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম

শীত এবং বসন্তকালে ই সর্দি জ্বর গুলো বেশি দেখা দেয়। এর সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে আছে শীতকালে মানুষ বেশিরভাগ সময় ঘরে কাটায়, এই কারণে ই হাঁচি কাশির মাধ্যমে জীবাণু ছড়ায় বেশি। যেসব ভাইরাসের আক্রমণে এই  ঠান্ডা সর্দি  হয় সেগুলো শীতকালের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বেশি সময় ধরে টিকে থাকতে পারে।

ফলে সংক্রমণের সময়সীমা যেমন দীর্ঘ হয় তেমনি, বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়। শীতকালে ভাজাপোড়া খাওয়া হয় বেশি। ফলে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থেকে শরীর বঞ্চিত হয়। শীতের অলস সময়ে মানুষ শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকতে চায়, ফলে সমস্যা আরও জটিল হয়।

তবে সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম জেনে ঔষধ সেবন না করে অবশ্যই আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত। 

সর্দি কাশির কিছু ট্যাবলেট এর নাম 

সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম এর অভাব নেই। তবে আমাদের কোন ট্যাবলেট কি কাজে লাগে সেটা জেনে সেবন করতে হবে। বাজারে সর্দি-কাশির ট্যাবলেট এর নাম৷ অনেক। সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ট্যাবলেটের মধ্যে আছেঃ

• রোবিটাসিন

• কফডেক্স

• কফিসিল

• সেরিডন

• অ্যালকোফ

• Ambrox SR 75mg

• Acorex 30mg

• Ambeet 75mg

• Ambozin SR 75mg

• Ambroxol SR 75

• Histacin Tablet (হিস্টাসিন),

• Histalex Tablet (হিস্টালেক্স),

• Fexo 60 or 120 Tablet (ফেক্সও ৬০ বা ১২০),

• Deslor Tablet,

• Antibiotic Tablet,

• Ace Plus Tablet,

• Neocilor Tablet,

• Plan Napa Tablet,

• Napa Extend or extra Tablet,

• Keto A Tablet.

 সর্দি কাশি হওয়ার কিছু উপকারিতা 

এই সর্দি হওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট উপকারিতা নেই বললেই চলে। সর্দি একটি ভাইরাল সংক্রমক রোগ যা শ্বাসযন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। এটি সাধারণত নাক, গলা এবং বুকে জ্বালাপোড়া, হাঁচি- কাশি, মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং শরীর ব্যথার কারণ হয়। সর্দি সাধারণত 7-10 দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়।

তবে,কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, সর্দি হওয়ার কিছু সম্ভাব্য উপকারিতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সর্দি হওয়ার ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে পারে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সর্দি- কাশি হওয়ার ফলে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে। তবে, এই গবেষণাগুলি এখনও প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণ রয়েছে এবং তা আরও গবেষণার প্রয়োজন।

সর্দি হওয়ার কিছু সম্ভাব্য উপকারিতা নিম্নরূপ:

১. শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

 একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সর্দি হওয়ার ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে পারে। এই গবেষণায়, সর্দি হওয়ার পরে, অংশগ্রহণকারীদের শরীরে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

২.ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস

অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সর্দি হওয়ার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে। এই গবেষণায়, সর্দি হওয়ার পরে, অংশগ্রহণকারীদের ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমেছে।

৩. দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে সর্দি হওয়ার ফলে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সর্দি হওয়ার পরে, অংশগ্রহণকারীদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমেছে।

তবে, এই গবেষণাগুলি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং আরও গবেষণার প্রয়োজন। তাই সর্দি কাশি হলেই সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম শুনেই তা সেবন করা থেকে বিরত থাকুন। 

ঘরোয়া ভাবে সুস্থ হওয়ার উপায়

সর্দি কাশি হলেই,সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম জেনেই সেই ট্যাবলেট খাওয়া থেকেও বিরত থাকুন। আগে এর ঘরোয়া ভাবে প্রতিকার করুন। নিম্নোক্ত উপায়ে আপনারা চেষ্টা করে দেখতে পারেন। 

১। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন

পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর জীবাণু বের করে দিতে সাহায্য করে। সর্দি-কাশির সময় পানিশূন্যতা এড়াতে প্রতিদিন অন্তত 8-10 গ্লাস পানি পান করুন।

২। গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন

লবণ মিশিয়ে গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে গলা ব্যথা কমে। দিনে 3-4 বার গড়গড়া করতে পারেন।

৩। গরম তরল পান করুন

গরম চা, স্যুপ, ভেষজ চা, মধু মিশিয়ে গরম পানি ইত্যাদি পান করলে কাশি কমাতে সাহায্য করে।

৪। ভাপ নিন

গরম পানিতে ভাপ নিলে কাশি ও জমা কফ ঢিলে করে বের করে দিতে সাহায্য করে। দিনে 2-3 বার ভাপ নিতে পারেন।

৫। বিশ্রাম নিন

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া সর্দি-কাশি দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।

৬। খাবার

পুষ্টিকর খাবার খান যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন: লেবু, কমলা, আঙ্গুর, আমলকী, ব্রকলি, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি খান।

সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম – ঘরোয়া প্রতিকার

১। আদা

আদা কুচি করে গরম পানিতে ফুটিয়ে চা বানিয়ে পান করতে পারেন। এছাড়াও, আদা, তুলসী, লবঙ্গ, এলাচ একসাথে ফুটিয়ে চা বানিয়ে পান করতে পারেন।

২। মধু

মধু কাশি উপসমে খুব ভালো কাজ করে। নিয়মিত ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক চামচ মধু খেতে পারেন।

৩। তুলসী

তুলসী পাতা ফুটিয়ে চা বানিয়ে পান করতে পারেন। এছাড়াও, তুলসী পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

৪। রসুন

রসুন কুচি করে গরম দুধে ফুটিয়ে পান করতে পারেন।

যদি সর্দি-কাশি দীর্ঘস্থায়ী হয় অথবা জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

পরিশেষে

এই সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম এর ট্যাবলেটগুলোতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে যা সর্দি-কাশির বিভিন্ন উপসর্গ উপশম করতে সাহায্য করে।আপনার জন্য কোন ট্যাবলেটটি সবচেয়ে ভালো হবে তা নির্ভর করবে আপনার উপসর্গগুলোর উপর।

আপনার যদি শুধু কাশি থাকে, তাহলে কাশি কমানোর ওষুধ নেওয়া উচিত। আপনার যদি সর্দি ও কাশি থাকে, তাহলে একসাথে দুটো উপসর্গ উপশম করতে সাহায্য করে এমন ওষুধ নেওয়া উচিত।

সর্দি কাশি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১.সর্দি কাশির সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি?

উত্তর: কাশি দমনকারী, যেমন ডেক্সট্রোমেথরফান, অল্প সময়ের জন্য উপশম দিতে পারে। 

২.সর্দি কমছে না কেন?

উত্তর: যদি আপনার সর্দির লক্ষণগুলি 10 দিন পরে পরিষ্কার না হয়, কিন্তু উন্নতি না করেই চলতে থাকে, তাহলে আপনার সর্দি সাইনাস সংক্রমণে রূপান্তরিত হতে পারে । 

৩. গর্ভাবস্থায় কাশির জন্য কোন ঔষধ ভালো?

উত্তর: শুষ্ক কাশির জন্য, গর্ভাবস্থায় ফোলকোডাইন বা ডেক্সট্রোমেথরফানের মতো কাশি দমনকারী নিরাপদ বলে মনে করা হয়। শুষ্ক, বিরক্তিকর কাশি সাধারণত পোস্টনাসাল ড্রিপের সাথে যুক্ত থাকে।

আরও পড়ুন-

বাচ্চাদের কাশির সিরাপ, ব্যবহারবিধি ও সতর্কতা

ঠান্ডার ওষুধের নামসমুহের তালিকা ও ব্যবহারবিধি

Leave a Comment