ডায়াবেটিস কমানোর উপায় Diabetis-komanor-kisu-proyojon-tips

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে ডায়াবেটিস কি? ডায়াবেটিস মেলিটাসকেই আমরা সাধারণত ডায়াবেটিস বলে জানি। আমরা যখন খাবার খাই, তখন প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হতে থাকে।

ইনসুলিনের কাজ হলো, যে খাবার খাচ্ছি, সেটার অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকে আমরা ডায়াবেটিস বলছি। ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়াবেটিসের কারণে মূলত আমাদের রক্তের গ্লুকোজ বা সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসের কারণে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারেনা বা কার্যকর ভাবে তা ব্যবহার করতে পারে না। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীর বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডায়াবেটিস কি

ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার যা শরীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের সমস্যা তৈরি করে । এক্ষেত্রে শরীর অগ্নাশয়ের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ও তা ব্যবহার করতে পারে না। অনেকের ক্ষেত্রে ইনসুলিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। যে কোনো খাবার খাওয়া পর আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে রুপান্তরিত করে।

অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়, তা শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় চিনিকে গ্রহণ করার জন্যে। এই চিনি কাজ করে শরীরের জ্বালানি বা শক্তি হিসেবে। শরীরে যখন ইনসুলি্নের উৎপন্ন হয় না বা ঠিক মতো উৎপন্ন হতে পারে না তখনই এই রোগটি হয়।


আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি? কেন হয়, হলে করনীয়


ডায়াবেটিস কেন হয়

  • ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা
  •  ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা
  •  বেশী ক্ষুধা পাওয়া
  •  ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
  •  হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
  •  শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলে তা সারতে দেরি হওয়া
  •  বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা
  •  চোখে কম দেখতে শুরু করা
  •  খোশ-পাঁচড়া,ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া

ডায়াবেটিসে কাদের ঝুঁকি বেশি

বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের বাবা-মা, ভাই-বোন বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের এই রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যারা নিয়মিত হাঁটাচলা বা শারীরিক পরিশ্রম করে না, অলস, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়া নারীদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে।

যাদের হৃদরোগ রয়েছে, রক্তে কোলেস্টেরল অধিক, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

যে শিশুদের ওজন বেশি হয়ে যায়, যাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস রয়েছে, যাদের মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছিল, সেই সব শিশুর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রবল।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ

টাইপ ১ ডায়াবেটিস

এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরী হয় না। সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সে (গড় বয়স ১০-২০ বছর) এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়। সু্‌স্থ্য থাকার জন্য এ ধরনের রোগীকে ইনসুলিন নিতে হয়। 

টাইপ ২ ডায়াবেটিস

এই শ্রেণীতে থাকা রোগীর বয়স  ৩০ বছরের বেশি হয়ে থাকে। তবে ৩০ বছরের নিচে এই রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন তৈরী হয়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হয়। শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যেতে থাকে। 

অনেক সময় এই দুই ধরনের কারণ একই সাথে দেখা দিতে পারে। এই  ধরনের রোগীরা ইনসুলিন নির্ভরশীল নন। অনেক ক্ষেত্রে খাদ্যাভাসের পরিবর্তন এবং নিয়িমিত ব্যয়ামের সাহায্যে এদের চিকিৎসা করা সম্ভব। 

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস

অনেক সময় গর্ভবতী অবস্থায় প্রসূতিদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। আবার প্রসবের পর ডায়াবেটিস থাকে না। এই প্রকারের জটিলতাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়। গর্ভবতী মহিলাদের ডায়াবেটিস হলে গর্ভবতী,ভ্রুণ,প্রসূতি ও সদ্য-প্রসূত শিশু সকলের জন্যই বিপদজনক হতে পারে। বিপদ এড়ানোর জন্য গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রয়োজনে ইনসুলিনের মাধ্যমে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। এই ধরনের রোগীদের প্রসব হাসপাতালে করা প্রয়োজন।


আরও পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়


ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কিছু

 ১. নিয়মিত ব্যায়াম করা

নিয়মিত ব্যায়াম করা শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট  হাঁটবেন। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য হাঁটা অন্যতম সেরা ব্যায়াম। এটি ইনসুলিন মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ অথবা ইয়োগা করলেও উপকার পাওয়া যাবে। 

২. মিষ্টি ও শর্করা জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে 

চিনি যুক্ত এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিস ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হয়ে যেতে পারে। এসব খাবার খেলে রক্তে শর্করা এর  মাত্রা অতিরিক্ত হারে বেড়ে যেতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে এসব খাবার এড়ানো উচিত। 

 ৩. নিয়মিত পানি পান করতে হবে

পানি শরীরকে ডিহাইড্রেট করে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত চিনি বের করে আপনার কিডনিকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পরিমাণ মতো পানি করলে রক্তের শর্করার মাত্রা কমে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 

 ৪. ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া 

ফাইবার বা আশ যুক্ত খাবার রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যেমনঃ ওটমিল, বার্লি, বাদামী চাল, ভুট্টা, বাকউইট ইত্যাদি খাবারে ফাইবার থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও, গোটা শস্য খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করবে।

 ৫. স্ট্রেস লেভেল ম্যানেজ করুন 

মানসিক চাপ রক্তের সুগার লেভেলকে বৃদ্ধি করতে প্রভাবিত করে। ব্যায়াম বা মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনে রাখে। যার কারনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। আপনি যদি এমন মানুষ হন যিনি অধিকাংশ সময় তীব্র চাপের মধ্যে থাকেন তবে বিভিন্ন কৌশল ও যোগ ব্যায়াম করে চাপ কমিয়ে নিন।  

 ৬. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম 

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে রক্তে সুগার লেভেল ও ইনসুলিন মাত্রা ঠিক থাকে না। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে গ্রোথ হরমোন কমে যায়। আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম সাহায্য করে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। 

 ৭. ধূমপান পরিহার করুন 

ধূমপায়ীদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। তাই ধূমপায়ীদের জন্য ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হল ধূমপান বন্ধ করে দেয়া। ধূমপান ফুসফুস, স্তন, প্রোস্টেট এবং পাচক রোগের হৃদরোগ, Emphysema এবং ক্যান্সার সহ অনেক জটিল রোগের কারণ হতে পারে। এছাড়াও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে না চাইলে আজই ধূমপান ত্যাগ করুন।

পরিশেষে

পরিশেষে্ আমরা বলতে পারি,  ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক রোগ। যা কিনা আপনি একেবারে নিরাময় করতে পারবেন না কিন্তু আপনি চাইলে ডায়াবেটিস কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। এজন্য নিয়মিত সুগারের লেভেল দেখুন। নিয়ম মেনে ওষুধ খান। এছাড়াও আমরা ডায়াবেটিস কমানোর উপায় বেশ কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করলাম আশা করি এসব নিয়ম মেনে চললে আপনি নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন।

আরও পড়ুন-

ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।