ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক – সমূহের মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংক অন্যতম একটি ব্যাংক । বর্তমানে বাংলাদেশের সব ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংক জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে । ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম এর সুবিধা এবং ডাচ বাংলা ব্যাংক সম্পরকে আমাদের জানা উচিত।
আমাদের দেশে এই ব্যাংক আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করে। এই ব্যাংকটি নেদারল্যান্ড এবং বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । বর্তমানে সায়েম আহমেদ এর প্রধান বা চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন।
আজকে আমরা ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম ও শাখা, এই ব্যাংকের একাউন্টের ধরন, ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও এর সুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে জানবো:
আলোচনার শুরুতে সর্ব প্রথম যে প্রশ্ন মনে আসতে পারে তা হচ্ছে “সেভিংস একাউন্ট কি? “ তাই প্রথমে সেভিংস একাউন্ট সম্পর্কিত সাধারন তথ্য সমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন ।
আরও পড়ুনঃ বয়স্ক ভাতার আবেদন
১. সেভিংস একাউন্ট কি
ইংরেজী Saving এবং Account দুটি শব্দের অর্থ হলো যথাক্রমে : সঞ্চয় এবং হিসাব । তাহলে এই দুটি শব্দের একত্রে Savings Account এর অর্থ দাড়ায় সঞ্চয় হিসাব।
মানুষ তার মোট উর্পাজন থেকে একটি অংশ জমা করে রাখতে চায় যাতে সেই অর্থ সে তার প্রয়োজনের সময় বা তার বিপদের সময় ব্যবহার করতে পারে। আর এই অর্থ কে কোনো প্রকার বিনিয়োগ ছাড়া-ই সুরক্ষিত রাখার কাজটি করে এই একাউন্ট।
অর্থাৎ সহজ ভাষায় বলা যায়, ব্যাংক যে একাউন্টে কোনো ব্যাক্তি কে নিরাপদে তার সঞ্চিত টাকা বিনা বিনিয়োগে জমা রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় তখন সেই একাউন্ট কে সেভিংস একাউন্ট বলে।
লিকুইড ইনভেস্টমেন্ট পদ্ধতিসমূহের মধ্যে এই পদ্ধতি অন্যতম একটি। এই একাউন্ট থেকে নিয়মিত ইনভেস্টমেন্ট -এর থেকে তুলনামূলক অনেক সহজেই যখন তখন যে কোনো জায়গায় প্রয়োজন অনুসারে টাকা তুলে নেওয়া যায় আবার অনিরাপদভাবে অথবা ঝুকিঁ নিয়ে টাকা নিজের কাছে জমিয়ে রাখার দরকার পরে না।
২. ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম ও শাখা
এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রথম যার ম্ধ্যমে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এর শুরু হয় যার নাম “ রকেট ” । এই ব্যাংকের আওতায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এটিএম নেটওর্য়াক। পুরো দেশ জুড়ে এই ব্যাংকের আওতাধীনে ৪৭৭৪ টি এটিএম বুথ, ১১০০ টি ফার্স্ট-ট্রাক এবং ৪৫০০ টি এজেন্ট বাংকিং অফিস রয়েছে।
৩. ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্টের ধরন
ডাচ বাংলা ব্যাংক অনেক ধরনেরই একাউন্ট সেবা দিয়ে থাকে। তবে এই ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট এর ক্ষেত্রে দুই ধরনের সেবা প্রদান করে। যথা :
- সাধারণ সেভিংস একাউন্ট্য
- স্টুডেন্ট সেভিংস একাউন্ট
তবে দুটির মধ্যে সাধারণ সেভিংস একাউন্ট ও এর সুবিধা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের মনে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন আসে এবং এইসব প্রশ্নের সমাধান নিচের আলোচনা থেকে পাওয়া যাবে।
৪.ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট ও এর সুবিধা
বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই ব্যাংক অর্থাৎ ব্যাংক ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল) – ও এই সেবা প্রদান করছে এবং এই সেবাতে তাদের গ্রাহকরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট। এছাড়াও এই ব্যাংক দিচ্ছে সেভিংস একাউন্ট এর জন্য কিছু সুবিধা
তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধাগুলো :
- ডাচ বাংলা ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় টাকা পয়সা লেনদেন এর ক্ষেত্রে একটু বেশি পরিমাণ সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে । যেমন : দেশের অন্য ব্যাংকের চেয়ে এই ব্যাংকে বেশি অংকের টাকা লেনদেন করা যায়।
- এখানে যৌথ ভাবে একাউন্ট খোলা যায়।
- ইন্টারনেট এর মাধ্যমে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে গ্রাহক তার একাউন্টের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
- এতে এসএমএস ব্যাংকিং কার্যক্রমও পরিচালনা করা যায়।
- এখানে গ্রাহক তার প্রয়োজনে চেকও ইস্যু করতে পারেন।
- একটি নতুন একাউন্টের জন্য গ্রাহক কে এই ব্যাংকে প্রথম বছরে বিনামূল্যে ডেবিট কার্ড প্রদান করে থাকে।
- গ্রাহক তার প্রয়োজন মোতাবেক তার টাকা ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য যে কোনো শাখাতে ট্রান্সফার করতে পারেন।
- এই ব্যাংক গ্রাহক কে জমা টাকার ওপরও মুনাফা প্রদান করে থাকে।
- গ্রাহক তার প্রয়োজনে ব্যাংকের যেকোনো শাখা থেকে টাকা তুলে নিতে বা জমা দিতে পারবেন।
- সঞ্চয় হিসাব খুলে গ্রাহক DPS সংক্রান্ত সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি লোন পরিষেবাও লাভ করতে পারেন।
এছাড়াও এই ব্যাংক Nexus Pay এর মাধ্যমে অনন্য কিছু সেবা প্রদান করে থাকে। নিচে Nexus Payসম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হলো:
৫.Nexus Pay কি
Nexus Pay হলো ডাচ বাংলা ব্যাংক কর্তৃক তৈরীকৃত একটি অ্যাপস যার মাধ্যমে উক্ত ব্যাংক যে কোনো জায়গায় তে বিকল্প সেবা প্রদান করতে পারে। রকেট গ্রাহকেরাও এই নেক্সাস পে অ্যাপস ব্যবহার করতে পারে। এর মাধ্যমে অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর করা যাবে। আবার এ অ্যাপস দিয়ে কার্ড ছাড়া এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন সুবিধা চালু করা হবে বলে জানা গেছে।
এর মাধ্যমে সেভিংস একাউন্টের যাবতীয় কার্যক্রম ঘরে বসেই পরিচালনা করা যায়। এছাড়াও নেক্সাস পে অ্যাপ ব্যবহার করে যেকোনো সময় সিটি করপোরেশনের বিল, ক্রেডিট কার্ড বিল, পরিষেবা বিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন, ডিশের লাইনের বিল, ইনস্যুরেন্স, ইন্টারনেট বিল, টেলিফোন বিল ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম – ক্রয় ও মুনাফার হার
৬. ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যা যা প্রয়োজন
উপরে ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধাগুলো জানার পর এখন অবশ্যই জানতে চাইবেন যে ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খুলতে কি কি প্রয়োজন হয়। সে তথ্য গুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. যিনি একাউন্ট খুলতে চান তার জাতীয় পরিচয় পত্র (NID) এর ফটোকপি ।
২.উক্ত ব্যাক্তির দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৩.ইউটিলিটি বিল(কারেন্ট বিল) এর ফটোকপি।
৪.তিনি ব্যবসায়ী পেশার হলে ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি।
৫.উক্ত ব্যাক্তি তার একাউন্টের জন্য যাকে নমিনি করতে ইচ্ছুক তার জাতীয় পরিচয় পত্র- এর ফটোকপি এবং এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৬. রেফারেন্সের ( যে ব্যাক্তির মাধ্যমে একাউন্ট করতে এসেছেন) জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৭.ডাচ বাংলা সেভিংস একাউন্ট চার্জ
ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট এর জন্য কিছু চার্জ কাটা হয় যা ইউজারদের জানা প্রয়োজন। সেগুলো হলো:
১. এই ব্যাংকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বাৎসরিক কোনো চার্জ দিতে হয় না।
২.১০,০০০ টাকার ওপর সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ৬ মাসে ১০০ টাকা চার্জ কাটা হয়(+ ১৫% সরকারি ভ্যাট)।
৩.২৫,০০০ এর উপর সর্বোচ্চ ২০০,০০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৬ মাসে ২০০ টাকা চার্জ কাটা হয়(+ ১৫% সরকারি ভ্যাট)
৪.২০০,০০০ এর উপর থেকে সর্বোচ্চ ১০, ০০,০০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২৫০ টাকা চার্জ কাটা হয়(+ ১৫% সরকারি ভ্যাট)
৫.১০,০০,০০০ টাকা উপর যত রাখা হোক না কেন তার জন্য চার্জ কাটা হবে ৩০০ টাকা করে(+১৫% সরকারি ভ্যাট)।
৬.এখানে ইন্সিডেন্টাল কোনো চার্জ কাটা হয় না।
৭. একাউন্ট কোনো কারণবশত বন্ধ করতে চাইলে তার জন্য ২০০ টাকা চার্জ কাটা হয়।
শেষকথা
আশা করছি এই আলোচনা থেকে যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন এবং ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও এর সুবিধা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনি যদি এই ধরনের তথ্য মুলক আর্টিকেল সমূহ পেতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন। নতুন নতুন তথ্য দেওয়ার সাথে সাথে আপনি পেয়ে যাবেন সকল আপডেট।
আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ…
আরও পড়ুন-
টিন সার্টিফিকেট কি? ই-টিন (E-TIN)কী, কেন ও কীভাবে করতে হয়?
শেয়ার বাজার কি? শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে