ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়, শর্তাবলি ও নিয়মনীতি 

ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় 

লো শব্দটির অর্থ ঋণ করা বা ধার / কর্য করা। সাধারণত আর্থিক অসচ্ছলতা বা অন্যান্য কারণে অন্যদের নিকট থেকে আমরা ঋণ বা ধার নেই। ঠিক তেমনি একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহকদের অর্থ বা টাকা ঋণ দিয়ে থাকে। একে বলা হয় ব্যাংক লোন।

ব্যাংক লোনের ক্ষেত্রে টাকা পরিশোধ করার সময় কিছু টাকা বেশি (সুদ) দিতে হয়। প্রতি মাস অথবা প্রতি বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কিস্তি আকারে প্রদান করতে হয় ব্যাংকে। কিন্তু ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় কি জানেন? 

আর্থিক প্রয়োজনে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও বা গ্রাম মহাজনেরা ঋণ দিয়ে থাকেন। তবে সেক্ষেত্রে কাগজপত্রের প্রয়োজন তেমন হয় না। এমনকি কোন ধরনের জামানতেরও প্রয়োজন হয় না। যার ফলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি।

বিভিন্ন আর্থিক প্রয়োজনে আপনি ব্যাংক লোন নিতে পারবেন। অনেকেই মনে করেন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া অনেক ঝামেলার। অনেক ধরনের কাগজপত্র, জামানত ইত্যাদির প্রয়োজন হয়।

তাই যারা ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান তাদের সুবিধার্থে আজকে আলোচনা করব ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে। এছাড়া ব্যাংক লোন এর অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করব। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। 

আরও পড়ুনঃ মোটর সাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফি ও আবেদনের নিয়ম

আজকের আলোচ্য বিষয়

ব্যাংক লোন এর প্রকারভেদ 

ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

ঋণ গ্রাহকের উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে ব্যাংকসমূহের বিভিন্ন ধরনের ঋণ কার্যক্রম। ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় প্রসঙ্গে জানার আগে ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ জেনে নিন। ব্যাংক ঋণ প্রধানত তিন প্রকার :

১. স্বল্পমেয়াদী ঋণ 

২. মধ্যমেয়াদী ঋণ এবং 

৩. দীর্ঘমেয়াদী ঋণ 

স্বল্পমেয়াদী ঋণ 

যে সকল ব্যাংক ঋণের মেয়াদ ১ বছর থেকে ২ বছরের কম সেগুলোকে স্বল্পমেয়াদী ঋণ বলে। উদাহরণ : কৃষি ঋণ, প্রবাসী ঋণ, ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রয়োজনে ঋণ ইত্যাদি। স্বল্পমেয়াদী লোনের ক্ষেত্রে কম সুদের প্রয়োজন হয়। স্বল্পমেয়াদী ঋণের মেয়াদকাল কম হওয়ায় সপ্তাহিক পরিশোধের সুযোগও আছে। 

মধ্যমেয়াদী ঋণ 

যে সকল ব্যাংক ঋণের মেয়াদ ২-৫ বছর সেগুলোকে মধ্যমেয়াদী ঋণ বলে। বিভিন্ন সময় প্রয়োজন অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋণের মধ্যবর্তী মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়। মধ্যমেয়াদী ঋণ পাওয়ার উপায় তুলনামূলক সহজ অন্যান্য ঋণের থেকে। 

দীর্ঘমেয়াদী ঋণ

যে সকল ব্যাংক ঋণের মেয়াদ ৫ বছরের বেশি সেগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বলে। দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার তুলনামূলক বেশি হয়। উদাহরণ : ব্যবসায়িক ঋণ (Business Loan), হাউজ বিল্ডিং লোন (House Building Loan), শিক্ষার্থী ঋণ (Student Loan), ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan) ইত্যাদি। 

ব্যাংক ঋণের ধরন এবং কর্মসূচি 

ব্যাংক ঋণের প্রকারভেদ তো জানলেন। এছাড়াও ব্যাংক ঋণের রয়েছে বেশ কয়েকটি ধরন এবং কর্মসূচি। ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় অনুযায়ী লোন বা ঋণের ধরন গুলো হলো :

১. ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan) 

২. শিল্প ঋণ (Industrial Loan) 

৩. ব্যবসায় ঋণ (Business Loan) 

৪. অটোমোবাইল ঋণ (Automobile Loan) 

৫. হাউজ বিল্ডিং লোন (House Building Loan)  

৬. এসএমই ঋণ (SME Loan) 

৭. এডুকেশন / স্টুডেন্ট লোন (Education / Student Loan) 

৮. কৃষি ঋণ (Agriculture Loan) 

৯. প্রবাসী ঋণ (Expatriate Loan) 

১০. চিকিৎসা ঋণ (Medical Loan)  

১১. তাৎক্ষণিক ঋণ ( Quick Loan) 

১২. সেলারি ঋণ (Salary Loan)  

১৩. বিবাহ ঋণ (Marriage Loan) 

উপরোক্ত ঋণ কর্মসূচিসহ বাণিজ্যিক কর্মসূচি, সেবা খাত এবং বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচি আছে। উল্লেখ্য যে, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সমূহ ভূমিকা রাখে। 

ব্যাংক লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে সিআইবি (CIB) রিপোর্ট 

বাংলাদেশে বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ঋণ খেলাপি বিপুল হারে বেড়ে গিয়েছিল। যার কারণে ১৯৯২ সালে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সংস্থার প্রকল্প গ্রহণ এবং সিআইবি টিম প্রতিষ্ঠা করা হয়। সিআইবি হচ্ছে একজন ঋণ গ্রাহকের ক্রেডিট স্কোর রিপোর্ট। 

বিভিন্ন ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট ঝুঁকি কমানোর জন্য সিআইবি রিপোর্ট করা হয়। সিআইবি রিপোর্ট তৈরি করা হয় ঋণ আবেদনকারীর পূর্ববর্তী ঋণের ক্রেডিট স্কোর বিবেচনা করে। এটি ঋণ খেলাপি রোধ করতে ঋণ আবেদনকারীর অর্থনৈতিক সুনাম বিবেচনা করে। 

সিআইবি রিপোর্ট ভালো হবে যদি ঋণগ্রহিতা পূর্বে কোন ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে সঠিকভাবে নিয়মিত কিস্তিতে সেই অর্থ পরিশোধ করে। আর যদি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করতে না পারে তাহলে সিআইবি রিপোর্ট খারাপ হবে। পূর্ববর্তী ব্যাংকে যদি ১ টাকাও অপরিশোধিত থাকে সেক্ষেত্রেও সিআইবি রিপোর্ট খারাপ হবে। 

গ্রাহকদের ওপর জরিপ করে সিআইবি টিম বিভিন্ন তথ্য নিয়ে এর রিপোর্ট প্রণয়ন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট এই রিপোর্ট সংরক্ষিত থাকে। সংরক্ষিত রিপোর্ট অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুসন্ধান করতে পারে। সিআইবি রিপোর্ট ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

ব্যাংক লোন পাওয়ার শর্তাবলী 

ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বি়ভিন্ন ব্যাংক বেশ কিছু শর্তাবলী আরোপ করে থাকে। তাই ঋণ নেওয়ার পূর্বে যাচাই করে নিন সেই সকল শর্তাবলী পূরন করতে পারবেন কিনা। ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় ও শর্তাবলী হচ্ছে :

  • যে কারণে লোন নিতে চান তার তথ্য। 
  • আপনার পেশা, চাকরি বা ব্যবসায় কত বছরের অভিজ্ঞতা আছে। 
  • ক্রেডিট হিস্ট্রি বা অর্থনৈতিক তথ্য। 
  • লোনের অর্থ কোথায় বিনিয়োগ বা ব্যয় করবেন। 
  • আপনার ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট (Financial Statement) 
  • ব্যক্তিগত তথ্য জানাতে হবে ব্যাংককে।
  • আয়ের উৎসের প্রমাণপত্র অথবা ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট। 
  • অন্য কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে সেই তথ্য। 
  • পূর্বে অন্য কোন ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিলে সেই তথ্য। 
  • ঋণের জামানাত (ব্যক্তিগত বা সরকারি গ্যারান্টি)। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : অনেক ক্ষেত্রে ইক্যুইটি রিটার্ন কোম্পানির জন্য হলে অর্থনৈতিক সুনাম ইত্যাদি তথ্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

ব্যাংক লোন পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 

ব্যাংক থেকে লোনের আবেদন থেকে শুরু করে লোন পাওয়া পর্যন্ত বেশ কিছু ডকুমেন্টস বা কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো হলো :

  • ব্যাংক লোন আবেদন করার জন্য গ্রাহকের স্বাক্ষরসহ আবেদন ফরম পূরণ। 
  • এনআইডি (NID) কার্ডের ফটোকপি। 
  • ঋণ গ্রাহকের ছবি। 
  • প্রয়োজন অনুযায়ী পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি। 
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (অন্ততপক্ষে বিগত ছয় মাসের)। 
  • আবেদনকারীর আয়ের উৎসের প্রমাণপত্র। 
  • ইউটিলিটি বিলের কপি (গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি) । 
  • গ্যারানটারের ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি । 
  • গ্যারানটারের অফিস আইডি কার্ড বা ভিজিটিং কার্ড (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। 
  • ব্যবসায়ী কাজের ক্ষেত্রে টিআইএন সার্টিফিকেট (TIN Certificate)।  
  • পেশার ক্ষেত্রে অফিস আইডি কার্ড, বিজনেস কার্ড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদি। 
  • ট্রেড লাইসেন্স, অংশীদারিত্বের স্মারকলিপি। 
  • সরকারি চাকরিজীবীদের সেলারি সার্টিফিকেট (Pay Scale) এর কপি। 
  •  ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর নামে ব্যাংক চলতি হিসাবের তথ্য। 
  • চেকবুক পেজ (Checkbook page)

এছাড়াও বিভিন্ন রকম ব্যবসার ক্ষেত্রে যেসকল ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র প্রয়োজন :

  • ওষুধ ব্যবসার ক্ষেত্রে ড্রাগ লাইসেন্স। 
  • ডিজেল এবং এসিড ব্যবসার জন্য ডিসির অনুমোদন। 
  • খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিএসটিআই (BSTI) সার্টিফিকেট। 

অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর ক্ষেত্রে :

  • মজুদ মাল এবং তার বর্তমান মূল্যের তালিকা। 
  • স্থায়ী সম্পদের তালিকা এবং মূল্য। 
  • দেনাদার এবং পাওনাদারের তালিকা। 

ব্যাংক লোন এর বিপরীতে জামানত 

জামানত হচ্ছে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে ঋণগ্রহীতা প্রদত্ত কোন সম্পত্তি। ঋণগ্রহীতা যদি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে সে সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করে ব্যাংক তার প্রদত্ত অর্থ সংগ্রহ করে। ব্যাংক ঋণ এর বিপরীতে যে সমস্ত জামানত নিয়ে থাকে তা হল :

  • জমি, যন্ত্রপাতি, দালানকোঠা, আসবাবপত্র, মূল্যবান দ্রব্য, পণ্যদ্রব্য এবং মালিকানার গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র। 
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর সেভিংস সার্টিফিকেট। 
  • ব্যক্তিগত গ্যারান্টি এবং অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা প্রয়োগে সম্মতি। 
  • ঋণ গ্যারান্টার বা সাক্ষী প্রদানকারী বা জামানতকারীর ব্যক্তিগত গ্যারান্টি। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : বর্তমানে অনেক ব্যাংকে জামানত ছাড়াই গ্রাহককে সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা দেয়। 

ব্যাংক লোনের জন্য আবেদনের নিয়ম 

  • ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে শর্তাবলী পূরণ করা। এরপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস থাকলে লোনের আবেদন করা যাবে। 
  • ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য পূর্বেই সুবিধা অনুযায়ী একটি ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে। 
  • ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ পদ্ধতি এবং সুদের হার বিবেচনা করতে হবে। 
  • নির্ধারিত ব্যাংকের শাখা অফিসে উপস্থিত হয়ে ব্যাংক লোনের আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। 
  • ব্যাংক লোনের আবেদন ফরমে ঋণ দেওয়ার কারণ, ঋণের পরিমাণ, ব্যক্তিগত এবং অন্যান্য তথ্য সঠিক ভাবে দিতে হবে। 
  • আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ডকুমেন্টস এবং ফরমের তথ্য যাচাই-বাছাই করবেন। পরবর্তীতে সেই ব্যাংক থেকে গ্রাহককে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে। 
  • সাক্ষাৎকারে ঋণ নেওয়ার শর্তাবলী পূরণ করেছেন কিনা, ঋণ নেওয়ার কারণ, আর্থিক সক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। 
  • সঠিক কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করে থাকলে খুব সহজেই ভেরিফিকেশন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 
  • অতঃপর ব্যাংক নিজস্ব নিয়মে তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় অনুযায়ী ব্যাংক তার গ্রাহকের একাউন্টে লোনের অর্থ বিতরণ করে। 

ব্যাংক লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় 

ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিবেচ্য বিষয় রয়েছে। ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার খেলতে যেসব ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে :

  • লোন প্রসেসিং ফি 
  • আবেদনের পূর্বে ক্রেডিট স্কোর জানা 
  • ঋণ এর বিপরীতে সুদের হার 
  • ইনস্টলমেন্ট পদ্ধতি বা ব্যাংক লোনের কিস্তি 
  • মেয়াদ উত্তীর্ণ ঋণের সুদের হার 
  • মেয়ের পূর্তির পূর্বে ঋণ পরিশোধ করার নীতিমালা 
  • অন্যান্য বাড়তি ফি 

ব্যাংক লোনের সুদের হার 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে বর্তমানে সকল ব্যাংক ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯%। তবে কিছু ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৭-৮% হারে সুদ বা ইন্টারেস্ট নেয়। 

এক্ষেত্রে সময়মতো ঋণ প্রদান করতে না পারলে সুদের হার বৃদ্ধি পেয়ে ১০% হতে পারে। ব্যাংকের চেয়ে বিভিন্ন এনজিওতে সুদের হার বেশি। এনজিওগুলোতে ১০-১৩% পর্যন্ত সুদ দিতে হয়। 

তাই ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পূর্বে খেয়াল করবেন :

  • সুদের হার কোন ব্যাংকের কম। 
  • ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সহজ কোন ব্যাংকের। 
  • ঋণ পরিশোধ ব্যবস্থা সহজ কোন ব্যাংকের। 

ব্যাংক লোন পরিশোধের সময়সীমা 

ব্যাংক লোন পরিশোধের সময়সীমা ব্যাংক, ঋণের খাত, ঋণের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে ঋণের সময়সীমা :

  • স্বল্পমেয়াদী ঋণ : ১-২ বছর 
  • মধ্যমিয়াদী ঋণ : ২-৫ বছর 
  • দীর্ঘমেয়াদী ঋণ : ৫ বছরের বেশি 

অনেক ক্ষেত্রে লোন পরিশোধের সময়সীমা ১৫-২০ বছরও হয়ে থাকে। লোন বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমার ওপর নির্ভর করে সুদের হার। 

সাধারণত –

  • স্বল্পমেয়াদী ঋণ : সাপ্তাহিক, মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা হয়। 
  • মধ্যমিয়াদী ঋণ : মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা হয়। 
  • দীর্ঘমেয়াদী ঋণ : ষান্মাসিক ও বাৎসরিক কিস্তিতে পরিশোধ করা হয়। 

ব্যাংক লোনের জন্য সেরা কিছু ব্যাংক 

বাংলাদেশের মোট তালিকাভুক্ত ৬১ টি এবং অ-তালিকাভুক্ত ৫ টি ব্যাংক আছে। এছাড়াও রয়েছে বহু এনজিও এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের সুবিধা দিয়ে থাকে। ঋণ গ্রহণের জন্য সেরা কয়েকটি ব্যাংকের নাম নিচে দেওয়া হল :

  • বাংলাদেশ ব্যাংক 
  • ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড 
  • সোনালী ব্যাংক 
  • ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড 
  • প্রাইম ব্যাংক 
  • জনতা ব্যাংক 
  • গ্রামীণ ব্যাংক 
  • ব্র্যাক ব্যাংক 
  • সিটি ব্যাংক 
  • এশিয়ান ব্যাংক 
  • স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক 
  • ট্রাস্ট ব্যাংক 
  • আল আরাফা ব্যাংক 
  • ইবিএল ব্যাংক 
  • অগ্রণী ব্যাংক 
  • রূপালী ব্যাংক 
  • ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড 
  • বেসিক ব্যাংক লিমিটেড 
  • বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড 
  • ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড 
  • পূবালী ব্যাংক লিমিটেড 
  • আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড 

ব্যাংক লোনের সুবিধা 

ব্যাংক লোনের রয়েছে বেশ কিছু সুবিধা। যেমন :

  • জরুরী প্রয়োজনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয়। 
  • অর্থনৈতিক উন্নয়ন ।
  • উদ্যোক্তাদের উদ্যোগকে প্রসারিত করে। 
  • অল্প সুদে ঋণ নেওয়া যায়। 
  • কর্মসংস্থানের সুযোগ। 
  • স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে এবং বেকারত্ব কমায়। 
  • আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠা। 
  • নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য। 

ব্যাংক লোনের অসুবিধা 

ব্যাংক লোনের অসুবিধা গুলো হলো :

  • ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে জামানত এবং অন্যান্য অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। 
  • চাইলেই যে কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেনা। 
  • চাকরিজীবীদের মাসিক আয় সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যবসায়ীদের মাসিক আয় সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা হতে হবে। 
  • নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ঋণ পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাড়তি সুদ এমনকি জামানত দেওয়া সম্পদের ক্ষতি হতে পারে। 
  • ইসলামী শরীয়ত মতে সুদী ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হারাম। 
  • অনেকেই বারবার ঋণ নিয়ে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যা পরবর্তীতে দেউলিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায় 

বর্তমানে অনেক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনলাইন লোন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। সহজ শর্ত এবং সহজ নিয়মে আর্থিক সুবিধা প্রদান করাই অনলাইন লোনের উদ্দেশ্য। অনলাইনে লোন দিয়ে থাকে যে সকল ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান :

  • বিকাশ (BKash) 
  • সিটি ব্যাংক (City Bank) 
  • ব্র্যাক ব্যাংক (Brac Bank)
  • কর্মসংস্থান ব্যাংক (Karmasangsthan Bank)
  • প্রাইম ব্যাংক ( Prime Bank Limited )
  • ঢাকা ব্যাংক (Dhaka Bank) 

অন্যান্য ব্যাংকগুলোও এ সেবার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে।

অনলাইনে লোনের আবেদন করার নিয়ম 

অনলাইনে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের নিয়ম বা প্রক্রিয়া ভিন্ন। অনলাইনে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় নিচে দেওয়া হল :

সিটি ব্যাংক এবং বিকাশের অনলাইন লোন 

বিকাশ এবং সিটি ব্যাংক পার্টনারশিপ করে অনলাইনে ঋণ দিয়ে থাকে। ঋণ আবেদন করতে অবশ্যই বিকাশ অ্যাপ ইউজার হইতে হবে। 

  • বিকাশ অ্যাপ এ লগইন করে মোর (More) অপশন থেকে লোন (Loan) এ ক্লিক করুন। 
  • ঋণ নেওয়ার যোগ্যতা পূরণ করলে পরবর্তী পেজে যান। 
  • ঋণ নেওয়ার জন্য ক্লিক করুন টেক লোন (Take Loan) অপশনে।
  • এবার কত টাকা ঋণ নিতে পারবেন এবং পরিশোধ করতে পারবেন তা দেখে নিন। 
  • পরবর্তী পেজের নির্দেশনাবলীতে আই এগ্রি (I Agree) অপশন এ ক্লিক করুন। 
  • বিকাশ একাউন্ট পিন নাম্বার দিয়ে, ট্যাপ করে রেখে ঋণ আবেদনটি সম্পন্ন করুন। 
ঢাকা ব্যাংকের অনলাইন লোন বা ই-লোন 

সরকারি কর্মচারীদের জন্য ঢাকা ব্যাংক অনলাইনে লোন দেয়। কোন ডকুমেন্ট ছাড়া ঋণ গ্রাহকের পূর্বের স্টেটমেন্ট যাচাই করে ঋণ দেওয়া হয়। 

মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে ঢাকা ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়ে লোন দেয়। ঋণ গ্রাহকের ব্যাংক একাউন্টে লোন ট্রান্সফার করা হয়। 

বর্তমানে ই-ঋণ (e-loan) অ্যাপস এর মাধ্যমে ঢাকা ব্যাংক এই সেবা প্রদান করে থাকে। 

কর্মসংস্থান ব্যাংকের অনলাইন লোন 

১. অনলাইনে কর্মসংস্থান ব্যাংকের লোন আবেদন করার জন্য ভিজিট করুন নিচের লিংকে –

http://www.kb.gov.bd/site/view/internal_eservices

২. প্রথমে অনলাইনে ঋণ আবেদন অপশনটি ক্লিক করুন। 

৩. ক্লিক করার পর একটি লোন আবেদন ফরম (Loan Application Form) আসবে। 

৪. আবেদন ফরমে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন। 

প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো হল : 

  • Project Area (Select a Branch) 
  • Applicant Full Name  
  • National ID Number ( own ) 
  • Mobile Number 
  • Father / Spouse name  
  • Mother’s name 
  • Address (present) 
  • Guaranter Name 
  • National ID Number (Guaranter)
  • Your Date of Birth 
  • Project Type and Name  

এরপর আবেদন ফরমটি সাবমিট করলে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। 

অনলাইনে ব্যাংক লোন নিতে সতর্কতা 

  • বর্তমানে অনলাইনে লোন দেওয়ার জন্য অসংখ্য মাধ্যম এবং মোবাইল অ্যাপস রয়েছে। তবে বিশ্বস্ত মাধ্যম ছাড়া লোন নিলে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 
  • অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল ট্রাক করে প্রতারকরা সকল গোপন তথ্য হ্যাক করে। 
  • অনেকের আবার অনলাইনে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করার পরেও ইনস্টলমেন্ট স্টেটমেন্ট শূন্য দেখায়। 
  • তাই প্রতারণা থেকে মুক্ত পেতে উপরে বর্ণিত ব্যাংকে অনলাইন ঋণ আবেদন করতে পারেন। 

শেষকথা 

আশা করছি সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। বর্তমানে অনলাইনে লোন আরো বেশি সহজসাধ্য হয়ে গিয়েছে। তবে মনে রাখবেন প্রতারকের হাত থেকে সাবধান। অনেক বেশি পরিমাণ ঋণ নিতে চাইলে অবশ্যই ব্যাংকের শরণাপন্ন হতে হবে।

প্রয়োজন ছাড়া কখনো ঋণ নিবেন না। কারণ অতিরিক্ত ঋণের কারণে দেউলিয়া হবার সম্ভাবনা আছে। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী সুদের ভিত্তিতে ব্যাংক লোন নেওয়া হারাম। তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন ব্যাংক লোন না নিতে। এছাড়াও ব্যাংক লোন নেওয়ার উপায় সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আমরা চেষ্টা করব আপনার মূল্যবান প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার। 

ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ 

১. ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া কি জায়েজ? 

উত্তর : ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী সুদের ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া জায়েজ নয়। বরং এটি হারাম। তবে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করে থাকে। পরবর্তীতে আপনার ব্যবসার একটি অংশ লভ্যাংশ হিসেবে তারা গ্রহণ করে। তবে লভ্যাংশের হার প্রত্যেকবার নির্দিষ্ট হলে তা সুদ বলে গণ্য হবে। 

২. জামানত ছাড়া কি অনলাইনে লোন পাওয়া যাবে? 

উত্তর : বর্তমানে জামানত ছাড়াই অনলাইনে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় আছে। শুধু আইডি কার্ড যাচাই করে ঋণ দিয়ে থাকে অনেক মোবাইল অ্যাপস এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে এক্ষেত্রে। কয়েকটি বিশ্বস্ত মাধ্যমের নাম দেওয়া হল :

  • বিকাশ
  • কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং 
  • ঢাকা ব্যাংকের ই-লোন  

আরও পড়ুন-

কৃষি ব্যাংক লোন, নিয়মকানুন ও লোনের জন্য শর্তাবলি

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও সুবিধা

Leave a Comment