ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ও নিয়মাবলী

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিস আমাদের সকলের কাছে একটি  অতিপরিচিত রোগ। বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগী পাওয়া যাবে না এমন পরিবার পাওয়া অসম্ভব। ডায়াবেটিস একটি অসংক্রামক রোগ যা মহামারি রোগের মত ছড়িয়ে পড়ছে। তাই আজ আমরা জানব, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা। ডায়াবেটিস কমানোর ক্ষেত্রে খাবারের ভুমিকা অপরিসিম।

ডায়াবেটিস রোগ পুরোপুরি বা সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা যায় না। তবে বেশ কিছু নিয়ম মেনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। ডায়াবেটিস

নিয়ন্ত্রণ করার অনেক উপায় আছে। নিয়মিত ব্যায়াম ও ওষুধ সেবন করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে সব চেষ্টাই ব্যর্থ হবে যদি আপনি খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণমতো এমন সব খাদ্য রাখতে হবে যা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। এক্ষেত্রে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ও তা ব্যবহার করতে পারে না। অনেকের ক্ষেত্রে ইনসুলিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। যে কোনো খাবার খাওয়া পর আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে (গ্লুকোজ) রুপান্তরিত করে।

আজকের আর্টিকেলে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা, ডায়াবেটিস কমানোর খাবার, প্রয়োজনীয় ক্যালোরি ইত্যাদি সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা  diabetic food chart
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিস হলেই যে আপনাকে অনেক কিছু খাবার খাওয়া একদম ছেড়ে দিতে হবে এমন টা নয়। আপনি অনেক ধরনের খাবার খেতে পারবেন, তবে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা মেনে খেতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা এ সব ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন;

  • বিভিন্নধরনের খাবার খাওয়া: রোজ রোজ একই ধরনের খাবার না খেয়ে,বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল ও কিছু শ্বেতসার-জাতীয় খাবার খেতে পারেন। যেমন: লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি ও আলু।
  • যেসব খাবার কম খাবেন : চিনি, লবণ ও চর্বিজাতীয় খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে।
  • সময়মত খাবার খাওয়া: প্রতিদিন সকালের নাশতা, দুপুরের ও রাতের খাবার সময়মত খেতে হবে। কোনো বেলার খাবার যেন বাদ না পড়ে।

তবে আপনি যদি মনে করেন আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে তাহলে প্রতিটি  সপ্তাহে একটু একটু করে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন এই ভাবে পরিবর্তন করা আপনার জন্য সহজ হবে। একবারে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে শরীরের অপর খারাপ প্রভাব পড়বে।

কি খেলে ডায়াবেটিস দ্রুত কমে

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা এর পাশাপাশি এখানে কিছু খাবার রয়েছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে:

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার

  • শাকসবজি (পালং শাক, লাউ শাক, ঢেঁড়স শাক, মূলো শাক, লাউ শাক, ঝিনুক শাক, কচু শাক, পুঁইশাক ইত্যাদি)
  • ফল (জাম্বুরা, পেঁপে, আপেল, বেদানা, জাম, আঙ্গুর, কাঁঠাল, লেবু, নারকেল ইত্যাদি)
  • শস্য (ওটমিল, বাদামী চাল, কুইনোয়া, বারলি ইত্যাদি)
  • ডাল (মুসুর ডাল, মসুর ডাল, মটরশুঁটি, ছোলা ইত্যাদি)
  • বাদাম (আখরোট, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, চিনাবাদাম ইত্যাদি)

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

  • মাছ (রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, ইলিশ ইত্যাদি)
  • মাংস (চিকেন, মুরগি, খাসি, খরগোশ ইত্যাদি)
  • ডিম
  • ডাল
  • বাদাম

স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার

  • জলপাই তেল
  • অ্যাভোকাডো
  • বাদাম
  • বীজ

কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন খাবার

  • এই খাবারগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায়।
  • এর মধ্যে রয়েছে বেশিরভাগ শাকসবজি, কিছু ফল, এবং পুরো শস্য।
  • এছাড়াও, নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত ঘুম পাওয়া এবং স্ট্রেস কমানো গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াবেটিস কমানোর খাবার

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা এর খাবারের ক্ষেত্রে, মূল লক্ষ্য হলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এর জন্য, নিম্নলিখিত খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে:

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার

শাকসবজি: পালং শাক, লাউ শাক, ঢেঁড়স শাক, মূলো শাক, লাউ শাক, ঝিনুক শাক, কচু শাক, পুঁইশাক ইত্যাদি।

ফল: জাম্বুরা, পেঁপে, আপেল, বেদানা, জাম, আঙ্গুর, কাঁঠাল, লেবু, নারকেল ইত্যাদি।

শস্য: ওটমিল, বাদামী চাল, কুইনোয়া, বারলি ইত্যাদি।

ডাল: মুসুর ডাল, মসুর ডাল, মটরশুঁটি, ছোলা ইত্যাদি।

বাদাম: আখরোট, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, চিনাবাদাম ইত্যাদি।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

মাছ: রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, ইলিশ ইত্যাদি।

মাংস: চিকেন, মুরগি, খাসি, খরগোশ ইত্যাদি।

ডিম।

ডাল।

বাদাম।

স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার

জলপাই তেল।

অ্যাভোকাডো।

বাদাম।

বীজ।

কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন খাবার

বেশিরভাগ শাকসবজি।

কিছু ফল।

পুরো শস্য।

সুগার হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে

সুগার থাকলেও আপনি ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা মেনে অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল উপভোগ করতে পারেন। প্রতিটি ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। GI রক্তে শর্করার মাত্রা কতটা দ্রুত বাড়ায় তা পরিমাপ করে। নিম্ন GI সম্পন্ন ফলগুলি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। একটি ছোট বা মাঝারি আকারের ফল (প্রায় 15-20 গ্রাম) একটি পরিবেশন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আপনার ডাক্তার বা একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করে আপনার জন্য উপযুক্ত ফলের পরিমাণ নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

নিম্নলিখিত ফলগুলি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাল বিকল্প হতে পারে (কম GI সহ):

  • জাম্বুরা:এটি ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
  • লেবু:এটি ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভাল উৎস। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
  • বেদানা:এটি ভিটামিন এ, সি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ।
  • আপেল:এটি ফাইবার, পেকটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভাল উৎস। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
  • পেঁপে:এটি ভিটামিন এ, সি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ।
  • আঙ্গুর:এটি ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ।
  • স্ট্রবেরি:এটি ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ।
  • কামরাঙা:এটি ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
  • নারকেল:এটি ফাইবার, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ।
  • জাম:এটি ভিটামিন এ, সি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ।

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সীমাবদ্ধ কিছু খাবার। সাধারণত, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা রয়েছে নিম্নলিখিত খাবারগুলি সীমাবদ্ধ করা বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়।

উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার

  • মিষ্টি: চকলেট, ক্যান্ডি, আইসক্রিম, জেলি, পেস্ট্রি
  • মিষ্টি পানীয়: সোডা, জুস, এনার্জি ড্রিঙ্ক
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার: ফাস্ট ফুড, স্ন্যাকস, বেকড খাবার
  • মিষ্টি সস এবং কন্ডিমেন্ট: কেচাপ, বারবিকিউ সস, টেরিয়াকি সস

সাদা শস্য

  • সাদা রুটি, পাউরুটি, ব্যাগেল
  • সাদা চাল
  • সাদা পাস্তা
  • সাদা আটা দিয়ে তৈরি মিষ্টি

উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার

  • লাল মাংস: গরুর মাংস, ছাগলের মাংস, ভেড়ার মাংস
  • প্রক্রিয়াজাত মাংস: বেকন, সসেজ, হ্যাম
  • পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার: পুরো দুধ, পুরো ক্রিম পনির, মাখন
  • ভাজা খাবার: ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস, ডোনাট

অস্বাস্থ্যকর চর্বি

  • ট্রান্স ফ্যাট: processed foods, fast food, baked goods
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট: red meat, processed meat, full-fat dairy

অতিরিক্ত লবণ

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার: fast food, snacks, canned foods
  • রেস্তোরাঁর খাবার: often high in salt
  • নোনতা খাবার: pickles, chips, pretzels

ডায়াবেটি রোগীদের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি

  • একজন মধ্য বয়সী বা বৃদ্ধ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য দৈনিক ১০০০ – ১৬০০ কিলোক্যালরি প্রয়োজন।
  • একজন কম বয়সী ডায়াবেটিস রুগীর জন্য দৈনিক ১৮০০ -৩০০০ কিলোগ্রাম প্রয়োজন।
  • প্রতিদিন ফ্যাট গ্রহণ করার পরিমাণ: ৫০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রাম।
  • একটি বয়স্ক ডায়াবেটিস রুগীর জন্য ১৪০০ -১৮০০ কিলোক্যালরির বেশি প্রয়োজন নেই।
  • দৈনিক প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ: ৬০ গ্রাম থেকে ১১০ গ্রাম।
  • দৈনিক কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা: মোট ক্যালোরি ১৮০ গ্রাম।

পরিশেষে

পরিশেষে আমরা বলতে পারি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু খাবার রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু খাবার সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনা করলাম। এই খাবারগুলো পরিমিতভাবে গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস কমানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে আশা করা যায়।

আজ আমরা ডায়াবেটিস ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানলাম। আপনি যদি এই সম্পর্কের না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভাল হবে জেনে নিন। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানতে সম্পুর্ন পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ

১। কি কি খাবার খেলে ব্লাড সুগার বেড়ে যায়?

উত্তরঃ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব সবজিতে গ্লাইকোসেমিক ইনডেক্স বেশি থাকে সেগুলো সুগার অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া উচিত নয়। এই ধরনের সবজি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীর পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- আলু, ভুট্টা, মিষ্টিকর্ন, মিষ্টি আলু এবং বাটার স্কোয়াশ সবজি।

২। সুগার হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে না?

উত্তরঃ যে ফল গুলি এড়িয়ে চলবেন কাঁঠাল, সবেদা, আম, কলা, আঙুর এই ফল গুলি একাবারে এড়িয়ে চলুন। এই ধরণের ফেল গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ বেশী যা রক্তে শর্করার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিকদের জন্য এই ফল গুলি বিপজ্জনক। ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে তাই এই ফল গুলি খাওয়া চলবে না। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ই নিহিত রয়েছে।

৩। সুগার বেশি হলে কি না খেয়ে ইনসুলিন নেওয়া যায়?

উত্তরঃ ইনসুলিন নিন, কিন্তু খাবেন না: দ্রুত-অভিনয় এবং স্বল্প-অভিনয়কারী ইনসুলিন ইনজেকশনগুলি খাবারের ঠিক আগে বা সঙ্গে নেওয়া উচিত। খাওয়ার পরে আপনার রক্তে শর্করা বেড়ে যায়। না খেয়ে দ্রুত-অভিনয় বা স্বল্প-অভিনয়কারী ইনসুলিন গ্রহণ আপনার চিনিকে বিপজ্জনক মাত্রায় কমিয়ে দিতে পারে । ব্যায়ামের ঠিক আগে একটি বাহু বা পায়ে ইনসুলিন ইনজেকশন দিন।

আরেও পড়ুন-

ডায়বেটিস কমানোর উপায়

Leave a Comment