ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের খাদ্যতালিকায় এমন অনেক খাবার রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে এই সকল খাবার গুলোই আবার বিশেষ কিছু রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
এমন কিছু সবজি রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকেরা। যে সকল খাবার ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খাওয়া একদম ঠিক নয় সেগুলো তার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়াই উত্তম।
আজকের আর্টিকেলটি আমরা সাজিয়েছি ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না এ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য দিয়ে । আসুন জেনে নিই ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
আরও পড়ুনঃ চিয়া সিড এর উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও এর পুষ্টিগুন
ডায়াবেটিস হলে যে সবজি খাওয়া নিষেধ
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার মানে সকল ধরনের গ্রুপ থেকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। অনেকেই মনে করেন যে মাটির নিচের খাবার খাওয়া মানেই ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে। এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন ,ডায়াবেটিসে মাটির নিচের সবজি খাওয়া মানা একটি মিথ। আলু ,কচু ,গাজর বিটে শর্করার পরিমাণ বেশি তাই এগুলো কম খাওয়া যেতে পারে। তবে একেবারে নিষিদ্ধ নয়।
আবার মাটির নিচের সবজি যেমন মুলা, আলু, পেয়াজ, শালগম, রসুন,আদা ইত্যাদিতে শর্করার পরিমাণ কম। তাই মাটির নিচের সবজি মানেই খাওয়া নিষেধ এই কথাটি পুরোপুরি সঠিক নয় বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যেসব সবজিতে গ্লাইকোসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলো সুগার অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া উচিৎ নয়। এই ধরনের সবজি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। হ্যাঁ, ঠিকই পড়লেন। এমন অনেক সবজি রয়েছে, যা ডায়াবেটিসের রোগীদের এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ।
যে সবজিতে স্টার্চ ও কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, যা ডায়াবেটিসের জন্য উপযুক্ত নয়।যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীর পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- আলু, ভুট্টা, মিষ্টিকর্ন, মিষ্টি আলু এবং বাটার স্কোয়াশ সবজি। কোন কোন সবজি খেলে রক্তে সুগার লেভেল বাড়তে পারে। নিচে ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না সেটির তালিকা দেওয়া হলো।
১। আলু
অনেকেই বলে থাকেন যে, ডায়াবেটিসের রোগীদের আলু খাওয়া নিষিদ্ধ। আলুতে গ্লাইসেমিক সূচক অনেক। এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই আলু পরিমিত পরিমানে খাওয়াই ভালো।
২। মিষ্টি আলু
সাধারণ আলুর চেয়ে রাঙা আলু বা মিষ্টি আলু বেশি উপকারী। তবে রাঙা বা মিষ্টি আলুতেও কার্বোহাইড্রেড এর পরিমাণ বেশি। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের সীমিত পরিমাণে মিষ্টি আলু খাওয়া উচিৎ। নাহলে বাড়তে পারে সুগার লেভেল।
৩। ওল
গরম ভাতে সর্ষে দিয়ে মাখা ওল সেদ্ধ খেতে কার না ভালো লাগে!! তবে এই খাবার ডায়িাবেটিস রোগীদের এড়িয়ে চলায় ভালো। মাটির নিচের এই সবজিতে স্টার্চের পরিমাণ বেশি। এতে হঠাৎ শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে। মিষ্টি আলুর মত এটিও ডায়াবেটিসের রোগীদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
৪। কচু
মিষ্টি আলু, ওলের মতো কচুও মাটির নিচের ফসল। এই সবজিতেও স্টার্চের পরিমাণ বেশি। এটি ইনসুলিনের মাত্রার উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের সীমিত পরিমাণে কচু খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না তার মধ্যে এটিও রয়েছে।
৫। বিটরুট
মাটির নিচের সবজি বিটরুটও। এই সবজি পুষ্টিতে ভরপুর হলেও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুব একটা উপযোগী নয়। যদিও বিটরুটের রস রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই অল্প পরিমাণে এটি খেতে পারেন।
৬। কাঁচকলা
ডায়াবেটিসের রোগীরা পাকা কলা খেলেও, কাঁচকলা থেকে সাবধান। কাঁচকলার মধ্যেও ভরপুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। কিন্তু এতে স্টার্চের পরিমাণও বেশি। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
৭। গাজর ও মটর/কড়াইশুঁটি
সুগার থাকা সত্ত্বেও রোজের খাদ্যতালিকায় গাজর,মটর/কড়াইশুঁটি থাকে? এগুলো স্বাস্থ্যকর সবজি, গ্লাইসেমিক সূচকও কম। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের এগুলো কম পরিমাণে খাওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না – খাবারের নিয়ম
ডায়াবেটিক রোগীর খাদ্যাভ্যাসে কিছু সাধারণ নিয়মাবলি মেনে চলা উচিৎ। যেমন-
- তিনবেলার খাবার ছয়বারে ভাগ করে খেতে হবে।
- কোনো বেলার খাবারই বাদ দেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে চর্বি জাতীয় খাবার কম গ্রহণ এবং মিষ্টি জাতীয় খাদ্য পরিহার করা আবশ্যক।
- ওজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা মেনে চলতে হবে।
- এছাড়াও খাবার খেতে কোনো সমস্যা হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করে ঔষধ সমন্বয় করে নিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু পরামর্শ
- কখনো বেশি পরিমাণে খাবার খাবেন না।
- যেসব খাবার বা কোমল পানীয়তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে সেসব বাদ দিতে হবে
- কাঁচা লবণ পরিহার করতে হবে।
- ডুবো তেলে ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
- প্রতিদিন দুই কাপের বেশি চা বা কফি
- দুধ খেতে হলে ফ্যাট কমিয়ে ক্রিম দুধ খেতে পারবেন।
- পনির খেতে পারবেন ,তবে ফ্যাট ছাড়া।
- ভাত, আলু, কলা এবং গাজর রক্তে সুগার লেভেল বাড়ায়।তাই যত কম খাবেন, তত ভালো।
পরিশেষে
ডায়াবেটিস রোগীর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করলে উপরে উল্লেখিত সবজিগুলো খাওয়া বাদ দেওয়া উত্তম। এরপরও যদি একান্তই বাদ দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে খুবই অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না তা জেনে সঠিক খাদ্য তালিকা করা জরুরী।
আর আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন তবে তা অবশ্যই পালনীয়। আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা কিভাবে উপকৃত হয়েছেন সেটি অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন এবং যেকেনো প্রশ্ন জানতেও কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করলেও আমরা জানিয়ে দিবো। ধন্যবাদ।
ডায়াবেটিস সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর/FAQ
১) কি কি খাবার খেলে ব্লাড সুগার বেড়ে যায়?
উত্তর: জটিল শর্করা অন্ত্রে শোষিত হয় কম, ফলে এ থেকে আমরা চিনিও পাই কম। কিন্তু সরল শর্করা দ্রুত অন্ত্রে শোষিত হয়, আর রক্তে চিনির মাত্রাকে দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। যেমন:- সাদা চাল, সাদা চিনি, সাদা ময়দার তৈরি যেকোনো খাবার, সাদা পাউরুটি। তাই যেকোনো শর্করা মানেই অনেক চিনি, তা নয়।
২) ডায়াবেটিস রোগী দিনে কত ফল খাওয়া যাবে?
উত্তর: স্বাস্থ্যের জন্য খাদ্যতালিকা নির্দেশিকা প্রতিদিন 1.5-2 কাপ ফল এবং 2-3 কাপ সবজি সুপারিশ করে। ফল এবং শাকসবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সরবরাহ করে যা টাইপ 2 ডায়াবেটিসে সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৩) ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে না?
উত্তর: মিষ্টি ফলে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। তাই পরিমিত খেতে হবে। যেমন একটি মাঝারি আপেল, কমলা, নাশপাতি অর্ধেক, ছোট একটি কলা ইত্যাদি। ফল যদি স্টার্চি এবং স্বাদে মিষ্টি হয়, তাহলে ৫০ থেকে ৭৫ গ্রাম খেতে পারেন।
আরও পড়ুন-
ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর কাজ কি ও এর গুরুত্ব
জাফরান এর উপকারিতা, স্বাস্থ্যগুন ও ব্যবহারবিধি