অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম ও সতর্কতা

অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম

অক্সিজেন আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান যা আমরা প্রকৃতি থেকে পাই। তবে বিভিন্ন রোগের কারণে আমাদের দেহে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য।

কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি দেখা গেছে। এছাড়া, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের রোগীরাও শ্বাসকষ্টে ভোগেন। এই সময়ে রোগীকে অতিরিক্ত অক্সিজেন দেওয়ার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন হয়।

যদি সঠিক সময়ে রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ না করা হয়, তাহলে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে। অনেকে তাই অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসাতেই রাখে। তাই অক্সিজেন আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়মগুলো জানা থাকা জরুরি।

আজকের আর্টিকেলে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম, কিভাবে সিলিন্ডার ব্যাবহার করবেন ও সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হবে।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবহারবিধি

অক্সিজেন সিলিন্ডার সম্পর্কে সকলের ধারণা রয়েছে। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম অনেকের জানা নেয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করার আগে সকলের জানা থাকা দরকার কখন কিভাবে অক্সিজেন দিতে হয়। সিলিন্ডার থেকে সরাসরি অক্সিজেন ব্যবহার করা যায় না। তার জন্য কিছু নির্দেশিকা মানতে হয়। 

অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম
অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের উপায়

১। প্রথমে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ফ্লো মিটারের বক্সটি খুলুন। সেখানে আপনি একটি অক্সিজেন নেজাল ক্যানোলা বা অক্সিজেন মাক্স, একটি হিউমিডিফায়ার বোতল এবং একটি ফ্লো মিটার পাবেন।

২। ফ্লো মিটারের নিচের অংশের ডানদিকে হিউমিডিফায়ার বোতলটি শক্ত করে ধরে সংযুক্ত করুন।

৩। এরপর হিউমিডিফায়ার বোতলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থাৎ বোতলের এক-তৃতীয়াংশ বিশুদ্ধ পানি নিন। খনিজ মুক্ত পানি, যেমন ডিস্টিলড ওয়াটার, ব্যবহার করলে ভালো হয়।

৪। রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন মাক্স বা অক্সিজেন নেজাল ক্যানোলার সাথে হিউমিডিফায়ার বোতলটি সংযুক্ত করুন।

৫। অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাবিটি বাম দিকে ঘুরিয়ে অক্সিজেন প্রবাহ শুরু করুন। চাবি ঘোরানোর পরপরই রোগীকে অক্সিজেন মাক্স পরিয়ে দিন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অক্সিজেন প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করুন। রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন প্রদান করুন অথবা অক্সিমিটারের মাধ্যমে অক্সিজেন পরিমাপ করুন।

অক্সিজেন ফ্লোমিটরির সাহায্যে 1 থেকে 15 লিটার অক্সিজেন দেওয়া যাবে। রোগীর যেন সমস্যা না হয় সে অনুপাতে অক্সিজেন দিতে হবে। সাধারণত তিন থেকে চার লিটার অক্সিজেন ব্যবহার করতে হয়। এই ভাবেই আপনারা অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম জেনে নিজে নিজেই ব্যবহার করতে পারবেন।

অক্সিজেন কখন দিতে হয়

অক্সিজেন কখন দিতে হয় সেটা আমরা অনেকেই জানিনা। সব ধরনের রোগীর জন্য অক্সিজেন নয়। কিছু কিছু রোগী আছে যারা অসুস্থ হলে অক্সিজেন নিতে হয়। অক্সিজেন দিতে দেরি হলে তারা মারা যেতে পারে।

শ্বাসকষ্ট, করোনা হলে রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসে। রোগীর বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে অনেক কষ্ট হয়। শ্বাসকষ্ট হলে রোগী নিঃশ্বাস নিতে পারে না।  এ কারণে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসবে। যার ফলে রোগীর ব্রেন ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। এই সমস্যা থেকে রোগীকে বাঁচানোর জন্য অক্সিজেন দিতে হয়। অক্সিজেন দিতে দেরি হলে অনেক সময় রোগী মারা যায়।

বর্তমান সময়ে  করোনা ভাইরাস মহামারীর রূপ ধারণ করেছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর সবচেয়ে বড় সমস্যা অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া। রোগী শ্বাস নিতে পারে না। যার ফলে রোগী মারা যাচ্ছে। এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করছে।

পরিবারের কারও কোন সমস্যা হলে সাথে সাথে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছে। যার ফলে রোগীর ভোগান্তি এবং মৃত্যুর হার কমে যাচ্ছে। তাই অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে সকলকে অবগত থাকা উচিত।

রক্তে অক্সিজেন কমে কি সমস্যা হয়

অক্সিজেন এর মাত্রা মাপার জন্য সাধারণত অক্সিমিটার ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মাপা যায়। কিন্তু অক্সিমিটার ছাড়াও অক্সিজেনের মাত্রা বুঝার উপায় রয়েছে।

রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে মাথা ঝিমঝিম করবে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হবে। শরীর দুর্বল হয়ে যাবে অনেক সময় রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। তখনি বুঝবেন রোগীকে অক্সিজেন দিতে হবে।

অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে মস্তিষ্কের অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। যা খুব বিপদজনক। অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে রোগীর  কমায় যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শ্বাস নিতে কষ্ট হলে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে খুব চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম ও সতর্কতা

১। অপ্রয়োজনে অক্সিজেনের ব্যবহার করবেন না। যেকোনো কিছু অতিরিক্ত গ্রহণের মতোই, অক্সিজেনও অতিরিক্ত নেওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত অক্সিজেন শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

২। বাড়ির জন্য একটি পাল্স অক্সিমেট্রি মেশিন সংগ্রহ করুন ও অক্সিমিটার ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন। সেটি ব্যবহার করে ১-২ মিনিট পর অক্সিজেন স্যাচুরেশন পরীক্ষা করুন। যদি স্যাচুরেশন ৯৩ শতাংশের বেশি থাকে, তবে অক্সিজেন প্রয়োজন নেই। যদি কম থাকে, তবে অক্সিজেন দিন এবং পরিমাপ করে নিশ্চিত হোন। অক্সিজেন দিয়ে ৯৩ শতাংশে রাখতে পারলেই যথেষ্ট, ১০০ শতাংশে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না, এটি ক্ষতিকর হতে পারে।

৩। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঙ্গে ন্যাসাল ক্যানুলা ব্যবহার করতে হবে, যা নাকে পরানো হয়। এটি দিয়ে সর্বাধিক ছয় লিটার অক্সিজেন প্রতি মিনিটে সরবরাহ করা যায়। যদি ২-৪ লিটার অক্সিজেনেও রোগীর স্যাচুরেশন ৯২ শতাংশের নিচে থাকে, তাহলে অবিলম্বে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো প্রয়োজন। 

৪। অক্সিজেন ব্যবহারের পাশাপাশি দুটি জিনিসের প্রয়োজন। প্রথমত, anti-coagulant ওষুধ (ডাক্তারের পরামর্শে) এবং দ্বিতীয়ত, রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে অক্সিজেন দিন। সকলের অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম জেনে তারপরেই তা ব্যবহার করা উচিৎ।

৫। অক্সিজেন থেকে আগুন লাগার ঝুঁকি আছে। তাই অক্সিজেন সিলিন্ডার রান্নাঘর থেকে দূরে রাখুন, ধূমপান করবেন না এবং রোগীকে এমন ক্রিম ব্যবহার করতে দিবেন না যেগুলোতে আগুন লাগার সম্ভাবনা আছে – যেমন পেট্রোলিয়াম জেলি বা ভ্যাসলিন। বৃষ্টির এই সময়ে মশার উপদ্রব বেশি হতে পারে। মশা মারার জন্য কয়েল বা অ্যারোসল স্প্রে ব্যবহার করবেন না, কারণ এগুলোর মাধ্যমে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে।

৬। ফায়ার সার্ভিসের নম্বর কাছে রাখুন। যদি বাসায় আগুন লাগে, কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন তার একটি পরিকল্পনা তৈরি রাখুন। সম্ভব হলে ফায়ার এক্সটিংগুইশারও রাখুন।

পরিশেষে

উপরের আলোচনা থেকে অবশ্যই অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম কিভাবে ব্যবহার করতে হয় বুঝতে পেরেছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার সব সময় সাবধানতা সাথে ব্যবহার করবেন। সাবধানতা অবলম্বন না করলে অনেক ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। সঠিক মাত্রায় অক্সিজেন ব্যবহার না করলে রোগীর মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে।

আরও পড়ুন-

মোটর সাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফি ও আবেদনের নিয়ম

Leave a Comment