ব্লাড ক্যান্সার এর লক্ষণ ও প্রতিকার Blood-Cancer-lokkhon-and-Protikar

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ

প্রাণঘাতী রোগ ব্লাড ক্যান্সার, সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার এটাই যে, বড়দের তুলনায় শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ কি তা আমাদের জানা উচিত। এ রোগ হওয়ার নির্দিষ্ট কোন কারণ থাকে না। আমরা অনেকেই ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ জানিনা, ব্লাড ক্যান্সারের বিভিন্ন লক্ষণ অনেক সময় অনেক আগে থেকে আমাদের শরীরে দেখা দেয় আর এই লক্ষণসমূহ না জানার কারণে আমরা  ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ কে এড়িয়ে যাই।

আর এই জন্য সহজেই শরীরে বাসা বাঁধতে পারে মরণব্যাধী ব্লাড ক্যান্সার। তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নিই ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ কি কি? কিভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে মরণব্যাধির সংক্রমণ হয়েছে। কোন পর্যায়ে গেলে কি চিকিৎসা নেবেন, ইত্যাদি আরো অনেক তথ্য। প্রখ্যাত রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ খান (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান) বলেন, ব্লাড ক্যান্সারের তেমন কোনো লক্ষণ না থাকায় এটি সাধারণ চোখে নির্ণয় করা কঠিন। তবে কিছু সময় ব্লাড ক্যান্সারের পরিমাণ বেড়ে যায়

উপরে যে সমস্ত কারণগুলি বলা হলো তার যেকোনো একটি কারণেও যদি আপনার শরীরে অস্থিমজ্জার ভিতরে মাদার সেল এর কোনো পরিবর্তন হয় তাহলেই অপরিপক্ক কোষ তৈরি  হয় আর এই অপরিপক্ক কোষটির নাম হল  মরণব্যাধি ক্যান্সার। লিউকেমিয়া,লিম্ফোমা সব রকম বয়স এবং যেকোনো লিঙ্গের মানুষকে আক্রমণ করতে পারে।


আরও পড়ুনঃ থাইরয়েড নরমাল কত


ব্লাড ক্যান্সার

ব্লাড ক্যান্সার ৩ ধরনের হয়। এই সম্পর্কে উল্লেখ করা হলঃ

  • মায়েলোমা
  • লিস্কোমা
  • লিউকেমিয়া

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ

ব্লাড ক্যান্সার অতিপরিচিত রোগ হলেও এ রোগের নাম শুনলে ভেতরটা কেমন  ভয়ে কেঁপে ওঠে ।  তবে শুরু থেকেই সচেতন থাকলে এ রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যার জন্য প্রয়োজন আমাদের জানা ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ।  বোনমেরু থেকে শুরু হয় ব্লাড ক্যান্সার, বোনমেরু হল ব্লাড তৈরি করার কারখানা।  রক্তের কোষগুলো যখন তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায় তখনই ব্লাড ক্যান্সার হয়। 

জন্ম থেকে আমাদের শরীরের মধ্যে নিজস্ব কিছু এন্টিবায়োটিক কাজ করে। এই এন্টিবায়োটিক প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের রক্তে মিশে থাকে। রক্তের মধ্যে এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে বা কোন রোগকে আক্রমণের সময় বাধা সৃষ্টি করে না তখনই ব্লাড ক্যান্সার আক্রমণ করে শরীরে।

  •  দিনের বেশিরভাগ সময়ে মাথা ব্যথা করা
  •  শরীরের সব সময় ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা
  •  নিঃশ্বাস ভারী হতে থাকা এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করা 
  •   শরীরের ত্বক খসখসে হয়ে যেতে পারে এবং ত্বকে হঠাৎ ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে 
  •  রাতে ঘুমানোর সময় অস্বাভাবিক ভাবে শরীর ঘেমে যাওয়া 
  •   খাবারে অরুচি এবং সব সময় বমি বমি ভাব
  •  হঠাৎ ওজন কমে যেতে পারে 
  •  শরীরের প্রত্যেকটা হার এবং জয়েন্টে ব্যথা
  •   এই সমস্যাগুলো বারবার হতে থাকে
  •   গলায়, বগলে, হাতের চিপায়, চামড়ার উপর দিয়ে হঠাৎ রক্ত চাকা চাকা দেখা দিতে পারে
  •   পেটে দীর্ঘক্ষণ অস্বস্তি বোধ করা,বিশেষ করে তলপেটে ব্যাথা হওয়া

 উপরের লক্ষণগুলো ছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ শরীরে দেখা দিতে পারে 

  •  কিছুদিন পরপরই জ্বর আসবে আর এটিই ব্লাড ক্যান্সারের সবচেয়ে লক্ষণীয় একটি বিষয়।
  •  প্রায় সময়ই দাঁতের মাড়ি ফুলে যাবে
  •  শরীরে কোথাও অল্প কেটে গেলেও অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হতে পারে
  •  মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাবে, এবং খুব বেশি  ধড়ফড় করবে

আরও পড়ুনঃ এলার্জি দূর করার উপায় ও ঔষধের নাম


আপনার শরীরের কোথাও এই লক্ষণগুলো দেখা দিচ্ছে নাতো? সাবধান‍!  তাহলে কিন্তু আপনার শরীরের ব্লাড ক্যান্সার বাসা বাঁধছে

বিগত কিছু বছরের তুলনায় দেখা গিয়েছে বর্তমানে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে।  খুবই আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে চলেছে রোগটি।  স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি চারজন ক্যান্সারের রোগীর মধ্যে একজন রোগীর মৃত্যু হয়।  আবার অনেক সময় দেখা যায় চার জন রোগীর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হতে পারে।  ব্লাড ক্যান্সারের বিভিন্ন লক্ষণ আমাদের না জানার কারনে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এই মরণব্যাধি ক্যান্সার আমাদের শরীরে। 

ডায়েটিং কিংবা অন্য কোনো পরিশ্রম ছাড়াই শরীরের ওজন অস্বাভাবিক হারে কমতে থাকে এটা কখনোই স্বাভাবিক বিষয় নয়। নিজে ইচ্ছাকৃত ওজন কমাতে চান সে বিষয়টি সম্পূর্ণই আলাদা।  কিন্তু আপনি আগের মতই জীবনযাপন করছেন এদিকে আপনার ওজন দিন দিন কমে যাচ্ছে এটা অস্বাভাবিক।  এরকম সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। ক্ষুধামন্দা, দুর্বলতা, কাজের মধ্যে অনীহা এবং স্কিন লিভার বড় হয়ে যেতে পারে।

এই সকল ধরনের উপসর্গ যদি আপনার শরীরে থাকে তাহলে ধরা যেতে পারে আপনার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে।  শুধুমাত্র যে ব্লাড ক্যান্সারের রোগীদের এই উপসর্গগুলো হতে পারে এমনটি নয়। অন্য বিভিন্ন রোগের কারণেও এই উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে। এই উপসর্গ গুলো শরীরে দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়

  1. যে রোগীকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি একসঙ্গে দেয়া হয় তাদের মধ্যে ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা ২০ গুণ বেড়ে যায়।
  2. সকল ধরণের তেজস্ক্রিয়তা পরিহার করতে হবে।
  3. রাসায়নিক দ্রব্যাদির সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে।
  4. এক্স-রে ও নিউক্লিয়ার বিভাগে কাজ করার সময় সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
  5. ধূমপান ও তামাক জর্দা পরিহার করতে হবে।

ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসায় বাংলাদেশ

এখন বাংলাদেশেই ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসার অনেক উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে ক্যান্সার গবেষণা জন্য অনেক রকমের সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল  কাজ করছে,  যেখানে খুব উন্নতমানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। ব্লাড কাউন্ট নামক পরীক্ষাটি সর্বপ্রথম করা হয়। বোনমেরু এক্সামিনেশন করা হয় দ্বিতীয় পরীক্ষা, তখনই বুঝা যায় রক্তের ক্যানসার বাসা বেঁধেছে কিনা।  এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় এটা কোন ধরনের ব্লাড ক্যান্সার এবং সেটার উপর নির্ণয় করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

প্রাথমিক অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, এবং শরীরে রক্ত কমে গেলে প্লাটিলেট দেওয়া হয়।ব্লাড ক্যান্সারের রোগীদের দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসা নিতে হয় যার কারনে এই চিকিৎসা টা কিছুটা ব্যয়বহুল বলাই যায়।  তবে  বেড এবং চিকিৎসক সীমিত হওয়ার কারণে রোগীদের কিছুটা কষ্ট হয়। 

আবার শুধু সরকারি মাধ্যমেও এই বিশাল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা করাও সম্ভব নয়।  তাই বিকল্প পথ হিসেবে অনেকেই প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে যান চিকিৎসা নেওয়ার জন্য।

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ – চিকিৎসার খরচ

বাংলাদেশ ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে প্রায়  ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যায়।৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার দরকার হয় অটোলকাস বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করাতে গেলে। যদি রোগীকে এলোজেনিক বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করানো হয় তবে ১০ থেকে ১২  লক্ষ টাকা খরচ পড়বে।

অনেক সময় আমরা দালালের খপ্পরে পড়ে ভুল পথে চলে যাই। এতে আমাদের অধিক টাকা খরচ হয়ে যায়। নয়তোবা বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এজন্যই সবসময় নিজের চোখ কান খোলা রাখতে হবে, সবথেকে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে তারপরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তবে সরকারের উচিত ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।  মূলত ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে কোন ধরনের ক্যান্সার তার ওপর। লিউকেমিয়া  নামক ব্লাড ক্যান্সার টি হলে  এটা যদি স্টেজ 2 তে এসে ধরা পড়ে তাহলে খুব ভালো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।  নিরাময় যোগ্য হয়  ৮০%।  আবার যদি স্টেজ ফর বা তার অধিক হয়ে যায় পয়েন্ট তখন নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।

ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় রোগীরা অনেক দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যান। যার কারণে চিকিৎসার ফলাফলে তেমন কোনো লাভ পাওয়া যায় না।  কোন কোন ধরনের ব্লাড ক্যান্সার আছে যা  ৯০ ভাগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  এছাড়াও বাচ্চাদের ক্যান্সার হলে তা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। 

উপসংহার

ক্যান্সার মানেই মৃত্যু আসলে ব্যাপারটা এমন নয় সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে সব অসুখ নিরাময় করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে সরকার যদি ক্যান্সারের বিষয়ে আরেকটু সচেতন হয়,  চিকিৎসা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেয় তাহলে ক্যান্সার রোগ অনেকাংশেই নিরাময় করা সম্ভব।

 

আরও পড়ুন-

হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার

থাইরয়েড নরমাল কত হওয়া উচিত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।