থাইরয়েড কমানোর উপায়
যারা দীর্ঘদিন থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন তারা ওষুধের পাশাপাশি থাইরয়েড কমানোর উপায় হিসেবে ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করতে পারেন। থাইরয়েড বর্তমান সমাজে প্রচলিত রোগ গুলির মধ্যে অসাধারণ একটি পরিচিত রোগ। এটি একটি গ্রন্থি বা হরমোন জনিত রোগ।
মানুষের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মতোই হরমোন সমানভাবে থাকে কিন্তু যখনই হরমোন গ্রন্থি বেড়ে যায় তখনই আমরা এটিকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করি। থাইরয়েড রোগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলারা আক্রান্ত হলেও বর্তমানে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে উভয়েই এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষত শরীরে থাইরয়েড গ্রন্থি থাইরয়েড হরমোনের সৃষ্টি করে তখন এর পরিমাণ প্রয়োজনের থেকে কম বা বেশি হওয়াতেই এর রোগ সমস্যা সৃষ্টি করে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে থাইরয়েড গ্রন্থি গলার সামনের দিকে অবস্থিত এবং এটি দেখতে কিছুটা প্রজাপতির মত যা শ্বাসনালিকে পেঁচিয়ে থাকে, যদিও বা এটি একটি ছোট্ট গ্রন্থি তারপরও মানবদেহে এর কার্যকারিতা প্রভাব অনেক।
থাইরয়েড সমস্যার খুব কমন কিছু প্রশ্ন
- রাতে খুব ভালো ঘুম হওয়ার পরেও সারাদিন শরীরটা ম্যাজম্যাজ করে কেন?
- আমার সব সময় শরীর অবসন্ন লাগে কেন?
- কেন হঠাৎ প্রচন্ড চুল পড়ছে?
- গলাটা হঠাৎ ফলাফল দেখাচ্ছে কেন?
- আমার থাইরয়েড হলো না তো?
- কিভাবে বুঝবো আমি যে আমার থাইরয়েড হয়েছে কিনা?
থাইরয়েড রোগীদের এ প্রশ্নগুলো খুবই কমন, আস্তে আস্তে সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব, একটু কষ্ট করে আমাদের সঙ্গেই থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
ভ্রুণ অবস্থায় থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত থাইরয়েড হরমোন মানবদেহের জন্য অপরিহার্য কারণ এই হরমোনের ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা হয়ে যাওয়া ওজন কমে যাওয়া, মহিলাদের মাসিকের বিভিন্ন রকম সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, হার্টের সমস্যা, এমনকি চোখ ও ভয়ংকরভাবে বড় হয়ে যেতে পারে। নারীদের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে হরমোন গ্রন্থি থাইরয়েড এর সমস্যা। এ কারণে শারীরিক অক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় হরমোন শরীরে থাকা জরুরি।
মানবদেহে দুই ধরনের সমস্যা দেখা যায়
- হাইপার থাইরয়েডিজম
- হাইপোথাইরয়েডিজম
থাইরয়েড গ্রন্থি তে অতিরিক্ত হরমোন সৃষ্টি হলেই তাকে আমরা হাইপারথাইরয়েডিজম বলি। আর পর্যাপ্ত পরিমাণে হরমোন সৃষ্টি হওয়াকে বলি হাইপোথাইরয়েডিজম।
মানবদেহে থাইরয়েডের ক্ষরণ একটা সঠিক মাপের হয় অর্থাৎ শরীরে যতটুকু দরকার কিন্তু হরমোনের মাত্রা অনেক বেশি বা কম হলেই শরীরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে, বিশেষ করে তখন থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায় এবং গলগন্ড রোগের সৃষ্টি হয়। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রনের অভাব দেখা দিলেই থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। লবণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হলেও এটাতে আয়োডিন থাকায় তা থাইরয়েডের সমস্যার মোকাবেলা করতে সক্ষম।
থাইরয়েডের লক্ষন সমূহ
আপনার শরীরে থাইরয়েড সমস্যা দেখা দিয়েছে কিনা তা জানার জন্য নিচে আটটি লক্ষণের দিকে নজর রাখুন। এবং এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনার এখনই সতর্ক হওয়া উচিত।
- হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া।
- প্রচন্ড ক্লান্তি অনুভব করা।
- অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা।
- পেশী এবং হাড়ের জয়েন্ট দুর্বলতা এবং যন্ত্রণা অনুভব করা।
- অতিরিক্ত মাত্রায় চুল পড়ে যাওয়া।
- অবসন্নতা।
- মনোযোগ দিতে না পারা বা ভুলে যাওয়া।
- ঋতুস্রাবের সমস্যা।
থাইরয়েড এমন একটি সমস্যা যা কখনো পুরোপুরি ভালো হয়না, তবে কিছু পদ্ধতি এবং খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা ঠিক রাখার মাধ্যমে থাইরয়েড কে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
আরও পড়ুনঃ থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়
থাইরয়েড কমানোর উপায়
- থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রধান শর্ত হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ এবং এর জন্য আপনাকে প্রথমেই বাহিরের প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং জাঙ্ক ফুড ( এক প্রকার খাবার লবণ কার্বনের ক্ষতিকারক উপাদান থাকে) পরিহার করতে হবে। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অতিমাত্রায় ক্ষতিকর এবং নিয়মিত এসব খাবার গ্রহণের ফলে শরীরের অনেক খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
- থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে শৃংখলাবদ্ধ জীবন যাপন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন পরিহার করে জীবনযাত্রা ঠিক করতে হবে। বর্তমান যুগে মানুষের এত বেশি শারীরিক মানসিক সমস্যা হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।
- মানসিক ও শারীরিক ভাবে নিজেকে ফিট রাখতে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি ক্ষয় হবে এবং শরীরের হরমোন সঠিক উৎপন্ন হবে।
- নিয়ন্ত্রণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে খাওয়ার টেবিলে মনোযোগী হওয়া। কেননা খাওয়ার সময় মনোযোগ দিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খেলে তা থাইরয়েড ও মনের মধ্যে গড়ে তোলে, তাই খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে কারণ শরীরের নিয়ন্ত্রণে থাইরয়েড গ্রন্থি বিশেষ ভূমিকা পালন করে,, এবং সেজন্যই খাবার গ্রহণের সময় চিবিয়ে খেলে বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে।
- থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আরেকটি শর্ত হচ্ছে সিদ্ধ খাবার গ্রহণ করা। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু শাকসবজি যেমন বাঁধাকপি, ব্রকলি, ফুলকপি ইত্যাদি সবজিগুলো অবস্থায় খাওয়া ঠিক নয় এগুলো না করে কাচা খেলে শরীরে থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ হয়ে থাকে এবং থাইরয়েড গ্রন্থির ভারসাম্য নষ্ট হয়।
আরও অনেক উপায় রয়েছে
- থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা, এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। এক্ষেত্রে নারকেল তেল গরম না করে ব্যবহার করলে তা ওজন কমাতে এবং বিপাকীয় ক্রিয়া বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। নারিকেল তেল ফ্যাটি এসিড থাকায় তা থাইরয়েড গ্রন্থি এর কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এছাড়া শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে নারিকেল তেল অনেক কার্যকারী।
- থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে হরমোনের নিয়ন্ত্রণ বা ভারসাম্য বজায় রাখা সে ক্ষেত্রে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অনেক উপকারী কারণ এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে পুষ্টি শোষণের সহায়তা করে এবং শরীরের ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
- থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আদা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ রয়েছে বিভিন্ন রকমের খনিজ যেমন- পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম থাইরয়েড সমস্যায় এটি অনেক বেশি কার্যকরী, এবং নিয়মিত আদা চা শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
- থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ভিটামিন বি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ হাইপোথাইরয়েডিজম এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ কারণে ভিটামিন বি যুক্ত খাবার যেমন- ডিম, মাছ, দুধ, মাংস, বাদাম, এগুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি সরবরাহ করতে পারে
- চিনি কে না বলুন:- সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য তিনি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে, তাই প্রক্রিয়াজাত চিনি খাওয়া একদমই পরিহার করুন। পাকিতিক শর্করার সমৃদ্ধ খাবার গুলো যদি সম্ভব হয় তবে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
যেখানে থাইরয়েডের চিকিৎসা হয়
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন থেকেই থাইরয়েড রোগীদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা পেয়ে আসছে, তারমধ্য বারডেম হাসপাতাল ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ দেশের প্রায় প্রতিটি মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ সফলভাবে থাইরয়েডের চিকিৎসা করে থাকেন।
আরও পড়ুন-