থাইরয়েড নরমাল কত
থাইরয়েড নরমাল কত অতি ছোট এই প্রশ্ন। প্রশ্নটা যতই ছোট হোক না কেন উত্তর পেতে হলে জানতে হবে আপনার অনেক কিছু, আজ তাই আমি চেষ্টা করবো আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে। আপনাকে জানতে হবে থাইরয়েড কি? কেন হয়? কি মাত্রায় থাইরয়েড নরমাল?
সহ আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর, তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।এই বিষয়গুলি তুলে ধরেছেন ডা: নুরুন নাহার। তিনি কর্মরত আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সাইন্সেন থাইরয়েড বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে।
থাইরয়েড নরমাল কত প্রায় ১৫-২০ মিলিগ্রাম আয়োডিন থাকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে। আর থাইরয়েড গ্রন্থির মধ্যে থাকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আয়োডিন।
অণুবীক গঠন দ্রব্য T3 ও T4 আয়োডিন দ্বারা তৈরি। শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি থাকলে T3 ও T4 উৎপাদন অনেকাংশে কমে যায় এবং তখন থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে গলগন্ড রোগ সৃষ্টি হয়।থাইরক্সিন(T4)-এর পরিমাণ ও অর্ধায়ু T3 -এর চেয়ে বেশি থাইরয়েড হরমোন গুলির মধ্য। থাইরয়েড নরমাল কত মানুষের শরীরে যে পরিমাণ রক্ত থাকে সেই পরিমাণ রক্তের উপর ভিত্তি করেই T4 ও T3 পরীক্ষা করা হয় ( T4 ও T3 এর অনুপাত ১৪:১ থেকে ২০:১) ।
টি এস এইচ কি
সাধারণত থাইরয়েড হরমোন (Thyroid Hormone) হরমোন বলতেট্রাই-আয়োডোথাইরোনিন বা (T3) এবং থাইরক্সিন বা (T4) কে বুঝায়। এরা এমন একটি হরমোন যা টাইরোসিন ভিত্তিক হরমোন থেকে নিঃসৃত হয়। রক্তে বিভিন্ন হরমোনের পরিমাণ এর উপর ভিত্তি করে থাইরয়েড নির্ধারণ করা হয়। যেমন রক্তে হরমোন কমে গেলে হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা দেয়, তেমনি রক্তে হরমোন বৃদ্ধি পেলে থাইরোটক্সিকোসিস বা হাইপারথাইরয়েডিজম দেখা দেয়।
থাইরয়েড নরমাল কত? ছোট্ট শিশুর শরীরে থাইরয়েড সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশু যদি ছোটবেলা থেকেই এই সমস্যায় ভোগে থাইরয়েড এর অভাবে ভোগেন তাহলে সে প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে। যদি তাকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়। সে শারীরিক এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে।
থাইরয়েড এর মাত্রা কত
সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণত থাইরয়েড এর মাত্রা ১০ থাকলে আমরা তাকে নর্মাল বলে মনে করি। ১০ বা ১০ এর নিচে থাইরয়েড এর মাত্রা থাকলে সেই রোগের ওষুধের প্রয়োজন হয় না।
এদিক থেকে একজন গর্ভবতী মায়ের তিনটি ভাগে ভাগ করে থাইরয়েড পরীক্ষা করা হয়। গর্ভবতী মহিলার প্রথম সপ্তাহ থেকে ২২ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে প্রথম সেমিনার। এরপরে ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহ দ্বিতীয় সেমিনার।সেকেন্ড সেমিস্টার নিয়ন্ত্রণ করে থাকবে যদি এমন হয় যে প্রথম ট্রাইমিস্টারে এসেছে আপার কাট অফ ২.৫ থাকা উচিত সুতরাং কোনো মহিলার যদি দিসিজ ট্রিটমেন্ট।
আসল কথা হচ্ছে যদি ৫ সাড়ে পাঁচ থাকে তাহলে কিন্তু তার ক্ষেত্রে ওষুধ দেওয়া হবে সেটা ওষুধ খাওয়ার একটা ইন্দিকেশন। এছাড়াও আমাদের মনে রাখতে হবে যে প্রথম ট্রাইমিস্টারে মানে প্রথম সপ্তাহের প্রথম তিন চার মাসে কিন্তু মিটিং স্বাভাবিকভাবে একটু কমাতে পারে কেননা প্রেগনেন্সিতে প্রেগনেন্সি শুরুর দিকে একটা মায়ের শরীর থেকে বেরোয় এটা ঠিক মত কাজ করে না।
টিএসএইচ লেভেল কমে যায় অনেকে দেখে ভয় পেয়ে যান যে আমার হয়তো হাইপার থাইরয়েডের, ওষুধ খেতে হবে কিন্তু তা নয়।তাহলে আমাদের কি মনে রাখতে হবে প্রেগনেন্সিতে প্রথম প্রথম চার মাসে বেশি বেশি করে এটা নরমাল না হাইপার থাইরয়েডিজম সেটা বোঝার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
গর্ভকালীন মায়ের যদি থাইরয়েডের সমস্যা থাকে সেই ক্ষেত্রে বাচ্চা জন্মের ৫ থেকে সাড়ে চার মাসের মধ্যে তিনটি টেস্ট করা হয় , এবং এটা ছেলে এবং মেয়ে উভয় সন্তানের ক্ষেত্রে সমান।সুতরাং একদম জন্মের সময় টুকু ছাড়া টিএসএইচ লেভেল নর্মাল লেভেল সারাজীবন কিন্তু মোটামুটি ভাবে একই থাকে।
আরও পড়ুনঃ ব্লাড ক্যান্সার এর লক্ষণ সমূহ
সাধারণ অর্থে থাইরয়েড কি?
প্রত্যেক মানুষের শরীরের গলার অংশে থাইরয়েড নামক একটি গ্রন্থি থাকে , যখন সেই গ্রন্থটি তার নিজ মাত্রায় থাকে তখন সেটি কোন রোগ বলা যায় না, কিন্তু যখন এটি তার নির্দিষ্ট আকৃতি চেয়ে বড় আকার ধারণ করে তখন থাইরয়েড গ্রন্থির রোগে পরিণত হয়। তখন শারীরিক কিছু পরিবর্তন ঘটে এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।
থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ হল সে আয়োডিনের ব্যবহার করে শরীরে যতটুকু থাইরয়েডের দরকার ততটুকু তৈরি করে, এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে তা ছড়িয়ে দেয় কিন্তু যতটুকু দরকার তার থেকে বেশি হরমোন যখন থাইরয়েড তৈরি করা শুরু করে তখনই শুরু হয় থাইরয়েড সমস্যা এবং শরীরে দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা।
ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা থাইরয়েড আক্রান্ত বেশি হওয়ার কারণ
নারীদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস এবং রক্তশূন্যতা আছে তারাও নিয়মিত থাইরয়েড পরীক্ষা করা উচিত। মেয়েদের থাইরয়েড ঘাটতির একটি উপসর্গ হলো অনিয়মিত মাসিক, বন্ধ্যাত্ব ,অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। এমনকি নারীদের ক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করা প্রয়োজন যখন নারীদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, অতিরিক্ত চুল পড়া শুরু হয়, ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দেয়।
যে নারীদের ঋতুস্রাব জনিত সমস্যা থাকে তাদের থাইরয়েডের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। অনেক সময় দেখা যায় ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও নারীদের থাইরয়েড আক্রান্ত হচ্ছে। কারণ ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে নারীর শরীরের হরমোন এর কিছুটা পরিবর্তন ঘটে, যেটা পুরুষের হয়না।
শরীরে থাইরয়েডের সমস্যা কেন হয়
শরীরের খুব জরুরী কিছু হরমোনের ঘাটতির কারণে থাইরয়েড সমস্যা হয়(থাইরয়েড হরমোন, থাইরক্সিন বা (T4) এবং ট্রাই-আয়োডোথাইরোনিন বা (T3) ) অটোইমিউন ব্যবস্থার কিছুটা গোলমালের কারণে থাইরয়েড কোষ নষ্ট হয়ে এই সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে কিছু ঔষধ পরিবর্তনের কারণে, থাইরয়েডের অস্ত্রোপচারের কারণে, বিকিরণ বা রেডিয়েশন প্রদাহ ইত্যাদি কারণে। থাইরক্সিন নামক হরমোন টি অতিরিক্ত পরিমাণে নিঃসৃত হতে পারে গ্রন্থি থেকে।
থাইরয়েড সমস্যা দেখা দিলে কি কি পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়
এন্ড্রোজেন হরমোনের প্রভাবে বিভিন্ন রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে নারীর শরীরে। যেমন- ক) অতিরিক্ত ঋতুস্রাব দেখা দিতে পারে খ) মাসিক অনিয়মিত হতে পারে গ) শুধু মুখ নয় শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্রণ দেখা দিতে পারে ঘ) পুরো শরীরের লোম অনেকাংশে বেড়ে যেতে পারে। এর সাথে যুক্ত হতে পারে আরও কিছু শারীরিক সমস্যা- ঘাড় বগল ইত্যাদি জায়গায় মখমলের মতো কালো ত্বক হয়ে যেতে পারে, তলপেট ব্যথা হতে পারে, নারীদের বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
TSH নামক রক্তের যে পরীক্ষাটি করা হয় তা আসলে কি
থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির অন্তর্নিহিত কারণ নির্ণয় করতে TSH পরীক্ষাটি করা হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি টি নিষ্ক্রিয় কি না তা নির্ধারণ করতেই এই পরীক্ষাটি করা হয়। আপনার রক্তে কি পরিমান TSH এর মাত্রা আছে তা পরীক্ষা করে ডাক্তার আপনার থাইরয়েড কতটা ভালো কাজ করছে তা বলে দিতে পারে।
হাইপারথাইরয়েডিজম লক্ষণ
এর প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রথমে রয়েছে খুব দ্রুত ঘাবড়ে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ হয়ে যাওয়া, শরীরের ঘাম অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়া, হৃদপিন্ডের দ্রুত সঞ্চালন হওয়া, অনিচ্ছাকৃত হাত পা কাঁপা, ঘুম একদমই অনিয়মিত হয়ে যাওয়া, শরীরের ত্বক অতিরিক্ত মাত্রায় পাতলা হয়ে যাওয়া, মাথার চুল শুষ্ক এবং ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, শরীরের অতিরিক্ত মাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়া।
থাইরয়েড গ্রন্থির কি ধরনের সমস্যা হতে পারে
অনেক সময় দেখা যায় জন্মগতভাবেই কোন বাচ্চার থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি হয়নি, অথবা যেভাবে তৈরি হয়েছে তা সঠিক নয়, সেটি সঠিক সময়ে ঠিকমতো বৃদ্ধি পায় না, অথবা তৈরি হয়েছে কিন্তু ঠিকমত কাজ করেনা, এই সমস্যা গুলোর মত একটি হলেও থাইরয়েড তৈরি হবে না। আর থাইরয়েড গ্রন্থি ঠিকমত কাজ না করলে বাচ্চা শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ হবেনা।
আর বড়দের ক্ষেত্রেও দেখা দেয় থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন রকম রোগ। থাইরয়েড হরমোন তৈরি করছে তা একটি স্বাভাবিক মাত্রায় থাকলে সেটি নরমাল কিন্তু সে তার পরিমাণের থেকে বেশি বা কম হরমোন তৈরি করা শুরু করলে সেটির রোগে পরিণত হয়। স্বাভাবিকের চেয়ে কম তৈরি হলে তাকে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম। আর বেশি তৈরি হলে বলা হয় হাইপার থাইরয়েডিজম।
প্রধান সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে থাইরয়েড গ্রন্থি নিজে নিজেই বড় হয়ে যেতে পারে। গলগন্ড বলে আমরা যাকে চিনি। বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন কারণে বড় হয়ে যায় থাইরয়েড গ্রন্থি। যারা আয়োডিনযুক্ত খাবার কম খান তাদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা দেয় এই সমস্যা। যেহেতু হরমোন তৈরি বিশেষ একটি উদাহরণ হল আয়োডিন। যদি কম থাকে শরীরে তখন গ্রন্থি চেষ্টা করবে শরীরের হরমোনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে।
আর শরীরের আয়োডিনের অভাব পূরণ করতেই সে আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে। যাকে বলা হয় হাইপারট্রফি। গ্রন্থি বড় হবে এবং হরমোন স্বাভাবিকভাবেই বের করার চেষ্টা করবে। এমন চলতে চলতে একটা সময় স্বাভাবিকভাবে শেয়ার আয়োডিন নিষ্কৃত করতে পারবেনা। আর তখনই হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা দেবে। লবণে পর্যাপ্ত আয়োডিন থাকার কারণে কারণে আমাদের দেশে এই সমস্যাটি কমে গেছে।
আরও পড়ুনঃ ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা
আরো যেসব সমস্যা হতে পারে
নডিউল নামক টিউমার হতে পারে থাইরয়েড গ্রন্থি তে। এই টিউমারটি এক বা একাধিক হতে পারে। ফলিকুলার এডিনোমার কারণে একটি টিউমার হয়। এটি বেনাইন ধরনের সিস্টেম আকৃতির মত হয়। গাইড নামক একটি টিউমার হতে পারে। সাধারণত এই টিউমার গুলি ক্যান্সারে রূপ নেয় না তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার হতেও পারে, তবে যে থাইরয়েড ক্যান্সারের রূপ নেয় তাকে থাইরয়েড ক্যান্সার বলা হয়।
হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপার হলে কী ধরনের সমস্যা হবে
আমাদের শরীরের বিপাকে সাহায্য এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজকর্ম করতে সাহায্য করে থাইরয়েড নরমাল কত যেহেতু থাইরয়েড হরমোন, যখন থাইরয়েড হরমোন শরীরে কম থাকবে অথবা হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা দিবে তখন মানুষের শরীরের অলসতা দেখা দিবে এবং কাজকর্ম ধীরগতি হয়ে যাবে। দিনে দিনে রোগী দুর্বল হয়ে পড়বে কারণ রোগীর ওজন বেড়ে যাবে। শরীরের পালস রেট কমে যাবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিবে। শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি বেশি হবে। হাইপো থাইরয়েড এর ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ লক্ষণীয়।
আর হাইপার থাইরয়েডিজম এর লক্ষণ হচ্ছে থাইরয়েড গ্রন্থি বেশি বেশি কাজ করবে। রোগীর শরীরে সবসময় অস্থিরতা কাজ করবে। হার্টের পালস রেট বেড়ে যাবে। হাত পা কাঁপবে এবং প্যালপিটিশন বেশি হবে। বারবার পায়খানার চাপ আসবে। খাবার খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যাবে কিন্তু ওজন কমতে থাকবে। শরীর সবসময় গরম অনুভুতি হবে শরীর দুর্বল লাগবে এবং অস্থিরতা বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন-
থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়
থাইরয়েড কমানোর উপায়