এলোভেরার উপকারিতা
এলোভেরা অনেক উপকারি একটা জিনিস। চলুন ঘৃতকুমারী বা এলোভেরার উপকারিতা নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। ঘৃতকুমারী নামটা অনেকের কাছেই পরিচিত না, কিন্তু এলোভেরা নামটি আবার খুব বেশি পরিচিত, “অ্যালোভেরা” নামটি আরবি শব্দ ” অ্যালোহ” থেকে এসেছে, যার অনুবাদ “চকচকে তিক্ত পদার্থ ” এবং ল্যাটিন শব্দ ”ভেরা” যার অর্থ ”সত্য”। এতে রয়েছে ভিটামিন এ (বিটা-ক্যারোটিন), সি এবং ই যাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে ভিটামিন বি ১২, ফলিক অ্যাসিড এবং কোলিনও রয়েছে।
উদ্ভিদের শারীরিক গুণাবলীর বর্ণনায় শব্দটির আক্ষরিক অনুবাদটি বেশ সঠিক। ছোট বড় সকলেই এই গাছটি সম্পর্কে কমবেশি আমরা জানি। এর রং সবুজ, পাতাগুলো মোটা এবং পুরু, দুপাশে কাটাযুক্ত গাছের মত কাটা অংশ রয়েছে। এই গাছের ব্যবহার গত দশ বছরে বাংলাদেশ এবং সারাবিশ্বে অনেক বেড়ে গেছে। মাঝে মাঝেই এই গাছের উপকারিতা, গাছটির যত্ন কি রুপে করতে হবে আর কিভাবে এই গাছ রোপণ করতে হবে এই নিয়ে চর্চা চলছে। এলোভেরার উপকারিতা ব্যবহার সর্বপ্রথম শুরু হয় ছয় হাজার (৬০০০) বছর আগে। মিশরীয় রানী নেফারতিতি এবং ক্লিওপেট্রা উভয়েই তাদের রুপচর্চায় এলোভেরা ব্যবহার করতেন। অনেক বছর পরে হলেও আবারও রুপ চর্চায় এর ব্যবহার বেশ লক্ষ্য করার মতো বেড়ে গেছে।
আরও পড়ুনঃ নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা
এলোভেরার উপকারিতা কিছু
- পোড়া বা অন্যান্য ক্ষতর জন্যে আরামদায়ক
- অন্ত্রের সমস্যা সহজ করে
- আর্থারাইটিসের ফোলা কমায়
- সোরাইয়সিসের ক্ষত নিরাময় করে
- মাড়ির সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে
- চোখের জ্বালা এবং আঘাতের ক্ষেত্রে কার্যকরী
- ফুসফুসের সমস্যায় সহায়তা করে
- ব্রন ও ফুসকড়ি রোধে সহায়তা করে
- কোষ্ট্যকাঠিন্য রোধে বেশ কার্যকর
- চুল পড়ার সমস্যা রোধ করে
এলোভেরার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকার কারনে এটি পোড়া এবং অন্যান্য ত্বকের ব্যাধি যেমন অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের জন্য একটি সম্ভাব্য চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য এলোভেরার উপকারিতা দারুন দেখা যায় যখন এটি পানীয় হিসাবে খাওয়া হয় এবং তার সাথে সাথে সরাসরি প্রয়োগ করা হয়। এখনও এলোভেরার ব্যবহার ও গুণের ওপর সীমিত গবেষণা বিদ্যমান।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন টানা বারো সপ্তাহ ধরে ৪০ মাইক্রোগ্রাম এলোভেরা তরল হিসেবে গ্রহণ করলে তারুণ্য ধরে রাখতে দারুনভাবে কাজ করবে। এর পরিমিত ব্যবহার বলিরেখা, বয়সের ছাপ, চোখের নীচের কালো দাগ দূরে রাখতে সাহায্য করবে। অনেক নামী দামি ব্র্যান্ড এখন তাদের পণ্যে এলোভেরা ব্যবহার করছেন নানানভাবে। ক্রিম, সুদিং জেল, ফেস মাস্ক , ফেস ওয়াশ, শ্যাম্পু এবং আরও নিত্য নতুন পণ্য তৈরি হচ্ছে একে কেন্দ্র করে।
এলোভেরা দিয়ে রূপচর্চা
রুপচর্চায় যেভাবে এলোভেরা ব্যবহার করা যায় তা হলো –
- এলোভেরা গাছ থেকে তাজা টাটকা এলোভেরা কেটে নিয়ে আসুন, পাশের কাটা ছাড়িয়ে, মাঝের জেলের অংশটুকু রেখে বাকি অংশ ফেলে দিয়ে সেই জেল সরাসরি মুখে মাখতে পারেন অথবা ব্লেন্ডারের সাহায্যে ব্লেন্ড করেও মুখে মাখানো যায়। আর যদি এত কষ্ট করতে ইচ্ছে না করে তাহলে বাজার থেকে ভালো মানের, বা ভালো ব্র্যান্ডের এলোভেরা জেল কিনে এনে রাতে ঘুমানোর আগে মুখে ম্যাসাজ করা যেতে পারে। একবিংশ শতাব্দীর এক সুবিধা হলো সবকিছুই এখন হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে।
- এলোভেরা উদ্ভিদটি সবচেয়ে বেশি ময়শ্চারাইজিং (Moisturizing) এবং হাইড্রেটিং জেল (Hydrating Gel) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- ত্বকের ভারসাম্য বা পি এইচ (Ph) লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে
- চোখের নীচের কালো দাগ দূর করতে বেশ কার্যকরী।
আরও পড়ুনঃ মুখে ব্রণ কমানোর উপায়
চুলের যত্নে এলোভেরা
- সরাসরি একদম গাছ থেকে কেটে এলোভেরার জেল সম্পূর্ণ চুলে, চুলের আগায় এবং মাথার স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন, দেখবেন বেশ একটা সিল্কি ভাব চুলে এসে গেছে।
- যাদের চুল খুব উষ্কখুষ্ক বা ফেটে গেছে, ভেঙ্গে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়, তারা ১ থেকে ২ চামচ এলোভেরার জেল, ১ চামচ লেবুর রস এক কাপ পানির সাথে মিশিয়ে মিশ্রণের মতো তৈরি করে শ্যাম্পু করার পর সেই মিশ্রণ দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলবেন এবং ১০ মিনিট পর সাধারণ পানি দিয়ে আবারো চুল ধুয়ে ফেললেই উষ্কখুষ্ক ভাব কেটে গিয়ে দারুন মোলায়েম ভাব চলে আসবে।
- নারিকেল তেল, রেড়ির তেল বা ক্যস্টর অয়েল একসাথে মিশিয়ে, বেশ কয়েকটি নিম পাতা ধুয়ে শুকিয়ে তার সাথে এলোভেরার জেল মিশিয়ে বেশ কিছুক্ষন চুলায় অল্প আঁচে জাল করে নিতে হবে যতক্ষন না পর্যন্ত নিম পাতার রং একদম গাঢ় সবুজ থেকে হালকা সবুজ হয়ে যাচ্ছে, এরপর চুলা বন্ধ করে নামিয়ে ঠান্ডা করে অন্তত সাতদিন কড়া রোদে একটি বোতলে ভরে রেখে দিতে হবে মাথায় বা চুলে দেওয়ার উপযোগি করে তোলার জন্যে। এই তেল চুলকে মজবুত করে, গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া বন্ধ ও নিয়মিত ব্যবহারে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। যাদের মাথায় টাক পরে যাচ্ছে বা সামনের দিকে ফাকা অথবা অ্যালোপেসিয়ার কারনে বিভিন্ন জায়গায় চুল ঝরে যাচ্ছে তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
ওজন কমতে – এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা ব্যবহার সমূহ
ওজন কমাতে এলোভেরা খুব উপকারী। এলোভেরার মধ্যে রয়েছে ইনফ্লামেটারি, যা দ্রুত শরীরের শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছড়ায়। আর এলোভেরা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে।
পৃথিবীতে যা কিছু আশীর্বাদস্বরুপ রয়েছে তার কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। এলোভেরাও এর বাইরে না, এবার জেনে নেব এর ক্ষতিকর দিকগুলো
এলোভেরা অপকারিতা
- এলোভেরা মাঝে মাঝে যাদের স্পর্শকাতর ত্বক তাদের ত্বকে জ্বালাপোড়ার কারন হতে পারে।
- হাইপারগ্লাইসেমিয়া হতে পারে
- অতিরিক্ত সেবনে পেটের পীড়া, ডায়েরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
- শরীরে পটাসিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে
- ওজন কমতে পারে সেবনের মাধ্যমে
- সেবনের কারনে হৃদরোগের সমস্যা আর অতিরিক্ত সেবনে হৃদরোগের ঝুকি বাড়তে পারে
- অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের কারনে লিভারে সমস্যা দেখা দিতে পারে
গর্ভবতী মহিলা বা বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে এমন মায়েদের জন্যে এলোভেরার সেবন ক্ষতির কারন হতে পারে, তাই এই সময়ে এর সেবন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো।
এলোভেরা উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে চায়না এবং অস্ট্রেলিয়া। রুপচর্চায় এবং স্বাস্থ্যরক্ষায় এলোভেরার ব্যবহার সুপ্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসছে। এমনকি প্রাচীন চীন এবং মিশরীয় সভ্যতাগুলি পোড়া প্রশমিত করতে, ক্ষত নিরাময় করতে এবং জ্বর কমাতে এলোভেরা ব্যবহার করত। গবেষকরা আরও জানায় যে অ্যারিস্টটলের পরামর্শে, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট আহত সৈন্যদের সাহায্যের জন্য, এলোভেরার সরবরাহ সুরক্ষিত করতে সোকোট্রা দ্বীপ জয় করেছিলেন।
উদ্ভিদ হিসাবে ব্যাপকভাবে পরিচিত এলোভেরা ত্বককে মসৃণ করার জন্য চমৎকার কাজ করে। এটিতে অনেক খনিজ, এনজাইম, ভিটামিন এবং অ্যামিনো অ্যাসিড থাকার কারনে ভিতর থেকে স্বাস্থ্যকে নিরাপদে রাখতে সহায়তা করে।
শরীরের পুষ্টিগুণ ঠিক রাখার জন্য আমাদের জানা প্রয়োজন কলা ও পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতাঃ
সকালে নাস্তার টেবিলে দুধ ডিম ব্রেড এর সঙ্গে অনেকেই কলা খেতে পছন্দ করেন। দামেও সস্তা সারাবছর খুব সহজে হাতের সামনেও মেলে এই ফল। সঙ্গে পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ এই ফল। এই ফলে থাকা মিনারেল, ভিটামিন আর ফাইবার শরীরের জন্য খুব প্রয়োজন। এছাড়া কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। একটি ছোট ও মাঝারি মাপের কলা থেকে শরীরে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম প্রবেশ করে। তাই বলা যায় কলাতে প্রচুর পরিমানে উপকার রয়েছে।
পেয়ারা এমন একটি ফল যা সারা বছর পাওয়া যায় । এই দেশিও ফলটি দামে সস্তা ও সহজলভ্য। অন্যান্য ফলের তুলনায় পেয়ারার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ পেয়ারার রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।পেয়ারাকে আমরা দেশিও আপেল বলে থাকি। কারন এই ফলটি কম দাম আর সব সময় পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা
শেষ কথা
পরিশেষে, এলোভেরা অভ্যন্তরীণভাবে গ্রহণ করলে স্বাভাবিকভাবেই সঠিক হজম এবং শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। এলোভেরা অনেক উপকারী জিনিস যা আপনার অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে আব্র এর কিছু অপকারী দিক আছে জেগুলা থাকে আপনাকে বেচে থকার চেষ্টা করতে হবে। এই । ঘরের কোনে একটা ছোট্ট অ্যালোভেরার গাছ আপনার রুপ ও স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে পারে সহজেই।
আপনি যদি এই সম্পর্কের না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভাল হবে জেনে নিন। কারণ ঘৃতকুমারী বা এলোভেরার উপকারিতা আপনার ত্বককে বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। তাই ঘৃতকুমারী বা এলোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে সম্পুর্ন পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আরও পড়ুন-
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা