কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

কাজুবাদাম (cashew nuts) প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনসহ পুষ্টি উপাদানের সমৃদ্ধ একটি উপকারী বীজ। কাজু বাদামে (Cashew) এত পরিমাণে প্রোটিন যা প্রায় রান্না করা মাংসে পাওয়া প্রোটিনের সমান। এতে খুব বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকে, শর্করার পরিমাণ কম থাকে।

কাজু বাদাম (Cashew) চিবিয়ে খাওয়া যায় অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়। আমাদের আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে।

এছাড়াও কাজুবাদাম সম্পর্কে বিশেষ তথ্য উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম সহ বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কাজু বাদামের আদিনিবাস ব্রাজিলে হলেও সারা বিশ্বের মধ্যে উষ্ণ আবহাওয়ার দেশগুলোতে এটি চাষ হয়ে থাকে। কাজু বাদাম (cashew nuts) হাড়ের জন্য খুবই উপকারী হিসেবে কাজ করে এবং ওজন কমাতে এবং হার্টকে ভালো রাখতেও সাহায্য করে। 

আরও পড়ুনঃ ৭ দিনে ফর্সা হওয়ার ক্রিম

খালি পেটে কাজু বাদাম খেলে কি হয় 

কাজু বাদামকে (cashew nuts) অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউস হিসেবে বিবেচিত করা হয়, কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা অনেক। খালি পেটে কাজুবাদাম (Cashew) খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। যেমন খালি পেটে কাজু বাদাম খেলে তা শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। 

১. হাড়ের গঠন মজবুত করে

কাজু বাদামে ক্যালসিয়াম (calcium),  ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম থাকার কারণে হাড়ের বিকাশ ও বল বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা কাজ করে। 

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে 

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস ও কিছু অনিয়ম আমাদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইবার সমৃদ্ধ কাজুবাদাম ওজন নিয়ন্ত্রণ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তার সাথে কাজুবাদামে (Cashew) স্থূলতাবিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার ফলে এটি স্হূলত্বের ঝুঁকি ও হ্রাস করে। 

৩. কোষ্ঠকাঠিন্যের মহাঔষধ কাজুবাদাম

সকালে খালি পেটে কাজু বাদাম (Cashew) খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এই সুস্বাদু কাজু বাদাম (cashew nuts) রেচন প্রক্রিয়াতে সহায়তা করে এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে হজম শক্তি বৃদ্ধি করার সাথে সাথে কুষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 

৪. শরীরে শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক

আমাদের শরীরে শক্তির মূল উপাদান কার্বোহাইড্রেট। শরীর এটিকে ভেঙ্গে গ্লুকোজে রূপান্তরিত করে। গ্লুকোজ আমাদের দেহের টিস্যু, কোষ এবং অঙ্গগুলির শক্তির প্রধান উৎস। খালি পেটে কাজু বাদাম খেলে পরিপাকতন্ত্র দ্রুত গ্লুকোজকে কাজ করতে বাধ্য করে। 

কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম 

বর্তমানে আমরা প্রায় সময় খাবারের মধ্যে কাজুবাদাম (Cashew) ব্যবহার করে থাকি। যেমন, চকলেট, পেস্টি, পায়েস, আচার, কেক ইত্যাদি খাবারের মধ্যে। তবে কাজু বাদাম খাবারের ক্ষেত্রেও বয়স ও শারীরিক অবস্থা ভেদে কিছু কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা উচিত। যেমন-

১. ছোট বাচ্চাদের জন্য – ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে  কাজু বাদাম খাওয়ানোর জন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এটি বাচ্চাদের গলায় আটকে যেতে পারে। তাদেরকে অন্য খাবারের সাথে কাজু বাদাম মিক্স করে খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন ২-৩ বারে ১০-১৫ টা করে কাজু বাদাম খাওয়ানো যাবে। 

২. ২ বছরের বড় বাচ্চাদের জন্য – এই বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অন্যান্য খাবারের সাথে দুই তিনটা করে কাজুবাদাম মিক্স করে খেতে দিতে পারেন। 

৩. গর্ভবতী মায়েদের জন্য – প্রতিদিন ১০-৫০ গ্রাম কাজু বাদাম খাওয়া ভালো গর্ভবতী মহিলাদের জন্য। তবে যদি বেশি খাওয়া হয়ে যায়, তবে আপনার সপ্তাহে দুই তিনবার করে খাওয়া উচিত। তবে গর্ভকালীন সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজুবাদাম খাওয়া উচিত। 

৪. ডায়াবেটিস রোগী এবং অন্যান্যদের জন্য – ৩০টি কাজুবাদাম বা ৫০ গ্রাম কাজু বাদাম প্রতিদিন খাওয়া যথেষ্ট বয়স্কদের জন্য। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ টি বাদাম খেতে পারেন। তবে অবশ্যই তবে অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন কাজু বাদাম খাওয়ার তালিকা নির্ধারণ করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ ওজন কমানোর উপায়

কাজু বাদামের উপকারিতা 

কাজুবাদাম শুধু তার স্বাদের জন্য নয়, পুষ্টিগুনের জন্য ও কার্যকরী। কাজু বাদামে রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। আসুন জেনে নেই কাজু বাদামের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-

  • হার্টের জন্য উপকারী – কাজু বাদাম হৃদরোগ অথবা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে। 
  • ওজন কমায় – কাজু বাদামে যে পরিমাণ ক্যালরি থাকে তার ৮৪ শতাংশ হজম করতে এবং শুষে নিতে পারে মানব দেহ। তাছাড়া প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং সব সময় পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে যার ফলে ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে অনেক। 
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ – কাজুবাদাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি বীজ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের বিভিন্ন রোগ, হৃদরোগ ও স্মৃতিশক্তি জনিত যেকোনো সমস্যা প্রতিরোধের সহায়তা করে। তাছাড়া ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ফলে ত্বকের সৌন্দর্যতা বজায় থাকে। চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। 
  • হাড়ের জন্য উপকারী – কাজু বাদামে ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ থাকার কারণে হাড়ের জন্য খুবই উপকারী হিসেবে কাজ করে। কাজু বাদাম মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় কপারের অভাব পূরণ করে। কপারের অভাবে বিভিন্ন হাড়ের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। 
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে – কাজু বাদামে (Cashew) থাকা ফাইবার রক্তের শর্করার স্পাইক প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে শর্করার পরিমাণ ও অনেক কম থাকে। যার কারনে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। ডায়াবেটিস রোগের জন্য খুবই উপকারী একটি বীজ কাজুবাদাম। 

তবে কাজুবাদাম (Cashew) কাঁচা না খাওয়াই ভালো। কাঁচা অবস্থায় কাজু বাদামের মধ্যে উরুশিওল নামক বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা কাঁচা অবস্থায় খেলে মানুষের ত্বকে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। রান্না করে খেতে পারেন অথবা যে কোন রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য ও ব্যবহার করতে পারেন। কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য রয়েছে আমাদের এই পোস্টে, পুরো আর্টিকেলটি পড়লে তা জানতে পারবেন। 

সকালে খালি পেটে কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা 

কাজু বাদামে রয়েছে, প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ভিটামিন। শারীরিক উপকারিতার দিক থেকে কাজু বাদামের মাহাত্ন অনেক। প্রতিদিন ৩-৪ টি কাজুবাদাম খেলে শরীরের খনিজ পদার্থ ও পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ হয়। এতে অধিক পরিমাণে ভিটামিনের কারণে ডাক্তাররা কাজু বাদামকে অনেক সময় প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট বলেও উল্লেখ করেন। খালি পেটে কাজু বাদাম খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, 

  • খালিপেটে কাজু বাদাম খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। 
  • হাড়কে মজবুত করে। 
  • স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পায়। 
  • ক্ষুধা নিবারণ হয়। 
  • ক্ষুধা লাগলে তিন-চারটা কাজুবাদাম খেলেই পেট ভরা থাকে অনেকক্ষণ। 
  • শরীরে শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 

শিক্ষার্থীদের মেধা শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য কাজু বাদাম খুবই কার্যকরী। ডাক্তাররাও বয়স্কদের জন্য অনেক সময় কাজু বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতার মধ্যে মস্তিষ্কের টিস্যুর শক্তি বাড়িয়ে তুলতে বিশ্বাস সহায়ক হিসেবে কাজ করে কাজু বাদামের ম্যাগনেসিয়াম। কাজু বাদামকে ব্রেনের পাওয়ার বুস্টারও বলাও হয়। প্রতিদিন ২-৩ বারে ১০-১৫ টা খাওয়ানো যাবে 

শেষকথা 

কাজু বাদামের অনেক উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। সবকিছুরই একটা নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কাজু বাদামের অনেক পুষ্টিগুণ থাকলেও অতিরিক্ত গ্রহণ করলে শরীরে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বয়ে আনতে পারে। কাজুবাদাম (Cashew) ফাইবার জাতীয় খাদ্য হওয়ার ফলে বেশি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। অনেকের আবার বাদামে এলার্জি থাকে তাদের ক্ষেত্রে বাদাম এড়িয়ে চলাই ভালো। 

আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন, কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে। কাজুবাদাম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কাজু বাদাম সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। অযথা তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খাবেন, নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ। 

কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

১. প্রতিদিন কাজু বাদাম খেলে কি হয়? 

উত্তর :- কি কারনে কাজু বাদাম খাচ্ছেন সেটার উপর নির্ভর করে। আপনি যদি ডায়েটের জন্য কাজুবাদাম খান, তবে ক্ষুধা লাগলেই প্রতিদিন একমুঠ কাজু বাদাম খেতে পারেন। 

২. দিনে কতবার ব্রাজিল বাদাম খাওয়া যায়? 

উত্তর :- এগুলো সেলেনিয়াম বিশেষত্ব উচ্চ, শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যসহ একটি খনিজ। ব্রাজিল বাদাম খেলে প্রদাহ কমাতে পারে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে সমর্থন করে, থাইরয়েড ফাংশন এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে। প্রতিদিন ১ থেকে ৩ টি ব্রাজিল বাদাম খাওয়া যায়। 

৩. কাজুবাদাম কখন খেলে ওজন বাড়ে? 

উত্তর:- কাজুবাদাম ওজন বাড়াতে নয় কমাতে সাহায্য করে। কাজু বাদামে রয়েছে উপকারি ফ্যাট, যা শরীরের গঠনে কাজে আসে। বাদামে থাকা ফ্যাট বা স্নেহ পদার্থ এগুলোর প্রভাবে ওজন বাড়ে না বরং ফ্যাটের সহায়তায় বিপাকের হার বাড়ে একই সঙ্গে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

৪. ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে কত ক্যালরি থাকে? 

উত্তর :- ১০০ গ্রাম বাদামে প্রায় ৫৬৯ গ্রাম ক্যালরি পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন- 

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

কালোজিরার উপকারিতা

 

Leave a Comment