শীতকালে চুলের যত্ন ও করণীয়

শীতে চুলের যত্ন

আসবে আসবে করে শীত চলে এল তাই না?  শীতে চুলের যত্ন ও করণীয় গুলো আমাদের মেনে চলতে হবে। ষড়ঋতুর এই দেশে এখন আর ৬ টি ঋতু আলাদা করে অনুভব করা যায় না। কিন্তু অক্টোবর এর শেষের দিকে ঠিকই সকালে খানিক কুয়াশা আর পরেই মিষ্টি রোদের দেখা পাওয়া যায়।

আমরা যারা বাংলাদেশে বা গ্রীষ্ম প্রধান থেকে বসবাস করি তারা সারা বছর এই একটু খানি শীতের দেখা পাওয়ার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। শীত এলেই আমরা বেশ কিছু আয়োজনের দেখা পাই, এই যেমন কম্বল, লেপ বা তোষক এবং শীতের জামা কাপড় রোদে দেওয়া, শীতের পিঠার জন্যে খেজুরের রস জোগাড় বা নারিকেল কোড়ানো, নানান পদের সবজির আগমন ঘটে বাজারে এই সময়ে সেই সবজি দিয়ে নিরামিষ, খিচুড়ি, স্যুপ বা বিকালের নাস্তা তৈরি করা ইত্যাদি। 

এই এত এত আয়োজনের মাঝে আমরা ভুলে যাই আমাদের শরীর ও মুখের ত্বক এবংশীতে চুলের যত্ন  কিছুটা প্রস্তুতি দরকার হয়। এই তীব্র শীতে কারন শীত এলেই আমাদের ত্বক হয়ে যায় শুষ্ক, মাথার চুলে হয় খুশকিসহ বেশ কিছু সমস্যা।

শীতকালে  ত্বক ও চুলের কিছু সমস্যার

  • সবচেয়ে বেশি এবং প্রধান সমস্যা হলো ঠোট ফেটে যাওয়া
  • মুখে লাল এবং সাদা প্যাচ হওয়া
  • মুখ অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে ধারালো হয়ে যাওয়া
  • ত্বকের যাবতীয় সমস্যা বেড়ে যাওয়া
  • ব্রণ ওঠা
  • শরীরে ও মুখের ত্বক প্রচুর পরিমানে শুষ্ক (Dry) হয়ে যাওয়া
  • চুলে খুশকি হওয়া 
  • চুলে খুশকির পরিমাণ বেশি হওয়ার কারনে চুলকানি হওয়া এবং মরা চামড়া উঠে আসা
  • পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়া
  • পায়ের এবং হাতের আঙুলের মাঝে ক্ষত হওয়া

আরও পড়ুনঃ  ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম


 

শীতে ত্বক ও চুলের যত্ন ও করণীয় 

শীতকালে ত্বক নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। ত্বক চায় একটু আলাদা যত্ন, এই জন্য শীতে চুলের যত্ন নেয়া উচিত। ঠিক মতো যত্ন না নিলে ত্বকের উজ্জ্বলতা হারায়, ত্বকের উপরিভাগ কালো হয়ে আসে এবং ত্বক ফেটে যায়।

শীতে চুলের যত্ন পাশাপাশি লোশন ও বডি ওয়েল ব্যবহার

শীতে শরীরের ত্বক অনেক বেশি পরিমানে শুষ্ক হয়ে যায় তাই শীতে অবশ্যই উচিত ভালো মানের লোশন (Lotion) ব্যবহার করা। গোসল শেষ করে সম্ভব হলে খানিক রোদে বসে এরপর সারা গায়ে লোশন মাখলে সারাদিনের জন্যে ত্বকের শুষ্ক ভাব কেটে যায়।

তবে অনেক ক্ষেত্রে লোশনের প্রভাব বেশিক্ষন থাকে না, দেখা যায় যে কিছুক্ষন পর আবারও ত্বক শুষ্ক হয়ে গেছে আর নখ দিয়ে  আচড় কাটলে সাদা সাদা দাগ দেখা হয়ে যাচ্ছে। এটা অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের চিহ্ন আর এ ক্ষেত্রে লোশনের পরিবর্তে ভালো মানের জয়তুনের তেল বা অলিভ অয়েল ( Olive Oil) ব্যবহার করা বেশ কার্যকরী। দিনে একবার যথাযথ পরিমান অলিভ ওয়েল শরীরে মাখলে ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে আনা সম্ভব।

অলিভ অয়েলকে তরল সোনা” বা “Liquid Gold” বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। অলিভ অয়েলে রয়েছে “ভিটামিন ই”  যা অনেক আগে থেকেই সোরাইয়সিস (Psoriasis) একজিমা (Eczema) সহ নানান ত্বকের সমস্যা সমাধানে ব্যবহার হয়ে আসছে। অলিভ অয়েলের পাশাপাশি বাদামের তেল (Almond Oil) ব্যবহার করলেও একই ফলাফল পাওয়া যাবে। 

শীতে চুলের যত্ন পাশাপাশি সঠিক ক্লিনজার বেছে নেওয়া 

শীতে মুখের ত্বকেরও শুষ্ক ভাব দেখা যায়। মুখের শুষ্কতা বেশি বোঝা যায় কারন আমাদের মুখের ত্বক আমাদের শরীরের তুলনায় পাতলা হয় আর এ কারনে শুষ্কতা শীতের সময় ত্বকের জন্যে বেশ ক্ষতিকর। শীতে ত্বকের যত্নের জন্যে প্রথম ধাপ হলো মুখ সঠিক উপায়ে পরিষ্কার করা।

ভালো মানের ক্লিনজার (Cleanser) ব্যবহার করা অবশ্যই জরুরী, এমনকি গরমে যেকোন ক্লিনজার ব্যবহার করলেও শীতে আলাদা করে ওয়াটার বেজড ক্লিনজার (Water Based Cleanser) বা ক্রিম বেজ্ড / মিল্ক বেজড ক্লিনজার (Cream  Based  / Milk  Based) ব্যবহার করা ভালো, এতে করে ত্বকের পি এইচ (Ph) মাত্রা ঠিক থাকে। সহজভাবে বলতে গেলে ত্বককে ডিহাইড্রেট (Dehydrate) করা থেকে বাঁচাতে আদর্শ ক্লিনজার বেঁছে নিতে হবে।


আরও পড়ুনঃ অ্যালোভেরার উপকারিতা সমূহ


 

সানস্ক্রিন ব্যবহার করা 

শীতকাল এলেই আমরা অনেকেই সানস্ক্রিনের ব্যাপারে বেশ উদাসীন হয়ে পরি, এটা মোটেই উচিত না। গরমের তীব্রতা তখন থাকে না  ঠিকই কিন্তু সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি ঠিকই সঠিক সাবধানতা অবলম্বন না করলে  আমাদের ত্বকের বেশ ক্ষতি করতে পারে।

নিউওয়ার্ক শহরের ওয়াশিংটন স্কয়ার ডার্মোটোলজির এম ডি ডা. সামির জাবের ব্যাখ্যা করেন যে দুই ধরনের ইউ ভি রশ্নি রয়েছে যা আমাদের প্রভাবিত করে যার মধ্যে একটি শীতকালে আমাদের ত্বকের জন্যে বেশ বিপজ্জনক। ইউভিএ (UVA) সর্বদা উপস্থিত থাকে এবং মেঘ, কাঁচ ও ত্বক ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ইউভিএ ত্বকের গভীর স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে অকালে বার্ধক্য এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আপনার ত্বকের যত্নের সর্বশেষ ধাপ হওয়া উচিত সানস্ক্রিন মাখা। যেহেতু সানস্ক্রিনে এস পি এফ ( SPF) সহ আরও উপাদান থাকে যা ত্বককে প্রতিরক্ষা করতে সাহায্য করে।তাই সবচেয়ে ভালো হয় মশ্চারাইজার মাখার পর সানস্ক্রিন মাখা। এস পি এফ ২৫ বা ৫০ সবচেয়ে বেশি ত্বকের রক্ষায় কাজ করে। 

ঠোঁটের শুষ্কতা রোধে লিপ বাম ব্যবহার 

শীতকালে আমাদের পানির তৃষ্ণা কম লাগে আর এই কারনেই ঠোটের শুষ্কতা বেড়ে যায়। অনেকের ঠোঁট ফেটে রক্ত পর্যন্ত বের হয় সঠিক যত্নের অভাবে। তাই এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচতে নিয়ম করে ভালো মানের লিপ বাম আমাদের ঠোঁটের যত্নে ব্যবহার করা উচিত।

নিয়ম করে প্রতি সকালে বা যখনই মনে পরবে অবশ্যই এর ব্যবহার করতে হবে, এছাড়াও এসেনশিয়াল ওয়েল (Essential oil) যেমন টি ট্রি ওয়েল, অলিভ ওয়েল, আমন্ড ওয়েল এগুলোর অল্প একটু ছোয়া আপনার ঠোঁটকে সুন্দর রাখবে এই তীব্র শীতেও। কফি ও মধু দিয়ে তৈরি লিপ মাস্ক ( Lip Mask) ব্যবহারে ঠোঁটের মরা চামড়া উঠে বেশ একটা গোলাপি আভা আসবে আপনার ঠোঁটে। 

মাথায় গরম তেল ম্যাসাজ 

যেকোন ধরনের তেল সহনীয় পর্যায়ে গরম করে  হাল্কা ম্যাসাজ করে সারারাত রেখে দিয়ে বা শুধু ২-৩ ঘন্টার জন্যে রেখে এরপর শ্যাম্পু করা শীতের জন্যে উপকারি, এতে মাথার ত্বকের শুষ্কতা রোধ হয়। খুশকিও দূর হয়।

এন্টি ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারপাইরিথাইয়োন জিঙ্ক 

(Pyrithione zinc) নামক উপাদান উপস্থিত  থাকে ভালো মানের এন্টি ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পুতে আর এই উপাদানের উপস্থিতির কারনে মাথার ত্বক থেকে খুশকি নিরসন বেশ কার্যকরী হয়। কিটোকোনাজেল (Ketoconazole) শ্যাম্পু ব্যবহারে মাথার ত্বকে হওয়া জ্বালা বা চুলকারি দূর করা সম্ভব।

কিটোকোনাজেল শ্যাম্পু  মাথার ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হবে ৫-১০ মিনিট এরপর সাধারন পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে, এই ৫-১০ মিনিট সময়ে ত্বকে হালকা জালাপোড়া হতে পারে এবং সেটা খুব স্বাভাবিক। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত।


আরও পড়ুনঃ হেয়ার সিরাম ব্যবহার করার নিয়ম


শীতকালে পায়ের যত্ন 

পা ফেটে যাওয়া রোধে ভালো মানের ক্র্যাক হিল রিপেয়ার ক্রিম ব্যবহার করা আর ঘরোয়া পদ্ধতিতে চাইলে গরম পানিতে পা ডুবিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিলে আস্তে আস্তে পায়ের মরা চামড়া উঠে আসে। এরপর তেল বা লোশন ম্যাসাজ করা উত্তম।

শেষ কথা

পরিশেষে এটাই বলব যে শীতে চুলের যত্ন ও করণীয় পাশাপাশি এই নিয়ম মেনে চললেই শীতটা বেশ নিশ্চিন্তে কেটে যাবে। শীতে অনেকের চুল পড়তে দেখা যায়। এই চুল পড়া রোধে এলোভেরা জেল, অলিভ অয়েল ও ক্যাস্টর অয়েল একসঙ্গে হালকা গরম করে নিন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তাতে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল ভেঙে মিশিয়ে চুলে লাগান।

শীতের দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি উপকারে আসে হট অয়েলের ম্যাসাজ। নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল, বাদাম তেল বা যে কোনো চুলে লাগানোর তেল হালকা গরম করে নিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে লাগান। ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন।

এসবের পাশাপাশি বেশি বেশি শাক-সবজি আর পানি খেতে হবে শরীর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে। “ধন্যবাদ”

 

আরও পড়ুন-

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

বিবি ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।