চুলের যত্ন

চুলের যত্ন

নিজেকে সুন্দর ও মার্জিত দেখাতে সিল্কি ও সাইনি চুলের কোনো বিকল্প নেই। উজ্জ্বল ও মসৃণ চুল পেতে চুলের সঠিক যত্ন নেয়া খুব জরুরী। চুলের যত্ন সব সময় এক হয়না। ঋতু ভেদে চুলের যত্ন হয় আলাদা। আমাদের দেশ ৬ ঋতুর দেশ। ৬ ঋতুর দেশ হলেও গ্রীষ্ম ও শীত এই দুই ঋতুই প্রধান। তাই চুলের যত্নও গ্রীষ্ম ও শীতে হয় আলাদা।

আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো গ্রীষ্ম ও শীতে আমাদের চুলকে সুন্দর রাখতে কি কি করতে পারি আর কি কি এড়িয়ে চলতে পারি।

চুলের যত্ন

গ্রীষ্মে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়

গ্রীষ্মকালে গরম বাতাস, ধূলাবালি ইত্যাদির প্রভাব আমাদের চুলের সমস্যা তৈরি করে। যেমন- খুশকি, চুল ফেঁটে যাওয়া এবং চুল পড়া ইত্যাদি। গ্রীষ্মে আমাদের মাথার ত্বক পরিষ্কার, শুষ্ক ও চুলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে আমরা যা করতে পারি তা হলো:

গ্রীষ্মে চুলের যত্নে ৬ টি টিপস

১.শ্যাম্পু নির্বাচন

আমরা সাধারনত শ্যাম্পু নির্বাচনে তেমন সচেতন নই। হাতের কাছে বা দোকানে যখন যা পাই তাই ব্যবহার করি। যা অনেক সময় চুলপড়া ও চুলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার করণ। চুলের যত্নে শ্যাম্পু নির্বাচন খুব ‍গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

এক্ষেত্রে এমন শ্যাম্পু নির্বাচন করতে হবে যা আমাদের চুলকে ময়েশ্চারাইজ করবে আর অতিরিক্ত শুষ্ক করবে না ৷ সাধারনত ২-৩দিন পর পর শেম্পু করা ভালো বেশি ঘন ঘন শেম্পু করলে চুল বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি মাথার ত্বক পরীক্ষা করে কোনো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা শ্যাম্পু নির্বাচন করতে পারি।

২. চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার

চুলের ময়েশ্চারাইজ ধরে রাখতে ২-১ দিন পর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ তবে কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়ম হলো  চুলের গোড়া থেকে মিনিমাম ৩ সে.মি দূর থেকে কন্ডিশনার ব্যবহার করা ৷ এতে চুলের শাইন ফিরে আসবে এবং চুল মসৃন লাগবে ৷

৩. হেয়ার সিরাম ব্যবহার

যে কোনো সময় চট জলদি চুলকে শাইনি, স্মুথ করতে হেয়ার সিরাম খুবই কার্যকরী ৷ যদিও এটা ভেজা চুলে ব্যবহার করতে হয় তবুও চুলের ড্রাই ও ফ্রিজি ভাব দূর করতে যে কোনো সময় হেয়ার সিরাম ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ এতে করে  চুলে ইনস্ট্যান্ট শাইন চলে আশে এবং চুল খুব সুন্দর দেখায়।

তবে নিয়ম হচ্ছে প্রথমত, একটি হালকা শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে নিন । তারপর হাতের তালুতে পরিমাণ মত সিরাম নিয়ে তা হালকাভাবে ভেজা চুলের উপরিভাগে লাগিয়ে দিবেন। এটি চুলের গোড়ায় লাগানোর দরকার নেই। তারপর চুল শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন।

৪. সঠিক চিরুনি নির্বাচন

গ্রীষ্মে শুষ্ক চুলের যত্ন নিতে ফাকা চিরুনি ব্যবহার করা উত্তম। চিরুনির দাঁত গুলো যেনো গোল ও সমৃণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে করে চুল ছেড়া কমে যাবে এবং মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প ভালো থাকবে।

৫.হেয়ার ড্রায়ার ও হেয়ার স্ট্রেটনার ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা

অতিরিক্ত হেয়ার স্ট্রেটনার এবং হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারের কারণে চুল তার স্বাভাবিক অবস্থা ধরে রাখতে পারে না, এতে করে চুল শুষ্ক এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাই যতদূর সম্ভব হেয়ার স্ট্রেটনার এবং হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন ৷ আর যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় ৩০-৪৫ পার পর ব্যবহার করুন।

৬. ছাতা বা স্কার্ফের ব্যবহার

গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রে বাইরে গেলে অবশ্যই ছাতা বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন। রৌদ্রে দীর্ঘক্ষণ ঘোরা-ফেরার কারণে চুল শুষ্ক ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

এছাড়াও গ্রীষ্মে চুল ভালো রাখতে মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখা, চুলে ভিনেগার ব্যবহার করা, হট অয়েল ম্যাসেজ করা, কেমিক্যাল বা যে প্রডাক্টে কেমিক্যালের মাত্রা বেশি সেগুলো ব্যবহার থেকে দূরে থাকা এবং অবশ্যই প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন।

শীতে চুলের যত্নে ৬ টিপস:

ঋতু পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে এর প্রভাব আমাদের চুল ও ত্বকের উপর পড়তে শুরু করে।  শীত আসলেই চুল শুষ্ক হয়ে যায়, মাথায় খুশকির মতো সমস্যা গুলো বাড়তে থাকে। ঠিকঠাক সাজগোজ করার পরেও শুধু মাত্র চুলের সমস্যার কারনে আমাদের সুন্দর্য পরিপূর্ণভাবে ফুটে উঠেনা। শীতে চুলেকে সুন্দর, মসৃল ও ঝলঝলে রাখতে নিম্নের টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

১. মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখা

চুলের প্রায় সকল সমস্যার শুরুই হয় অপরিষ্কার মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প থেকে। শীতে ধুলো বালি বেশি হওয়ার কারনে খুব সহজে মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প অপরিষ্কার হয়ে যায়। যার ফলে খুশকি দেখা দেয়। আর খুশকি থেকেই অন্যান্য সমস্যা গুলো শুরু হয়। তাই আমাদের  মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে।

২. ভিনেগার দিয়ে নিয়মিত চুল ধৌত করুন

ভিনেগার চুলের রুক্ষতা দূর করতে বেশ কার্যকরী। এটি চুলে কন্ডিশনারের মতো কাজ করে থাকে। এক মগ পানির সঙ্গে ২ চামচ ভিনেগার মিশিয়ে রেখে শ্যাম্পু করার পর সেই পানি মাথায় ঢালতে হবে। এতে করে চুল মসৃণ ও উজ্জ্বল হবে।

৩. ফাটা চুল কেটে ফেলুন

শীতকালে অনেকের চুলের আগা ফাটে। চুলের ফেটে যাওয়া অংশ কেটে ফেলাই উত্তম। এতে করে চুল বৃদ্ধি পায় এবং চুলে যেনো আর না ফাটে সে বিষয়ে কেয়ার নেয়া যায়।

৪. চুলে গরম পানি ব্যবহার না করা

শীতে আমরা অনেকেই গরম পানি দিয়ে গোসল করি। এই গরম পানি চুলের জন্য খুব ক্ষতিকর। এতে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় এবং চুলের নানা রকম ক্ষতি হয়। তাই চুলে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করাই উত্তম।

৫. অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ম্যাসাজ করা

চুলের যত্নে অ্যালোভেরার ভূমিকা অনেক। শ্যাম্পু করার পূর্বে অ্যালোভেরার জেল দিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করে কিছুক্ষণ রাখুন এতে করে চুলের রুক্ষভাব চলে যাবে এবং চুল ময়েশ্চারাইজড হবে। আর চুল শুকানোর পর আপনি নিজেই এর ফলাফল অনুভব করতে পারবেন।

৬. চুলের রুক্ষতা দূর করতে মধু

শীতে চুল নিঃষ্প্রাণ হয়ে গেলে চুলের গোড়ায় মধু ভালোভাবে লাগিয়ে, গরম পানিতে  একটি তোয়াল ভিজিয়ে তা ১৫-২০ মিনিট মাথায় বেঁধে রাখুন এবং তার পর চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে করে  চুলের রুক্ষতা কমে যায় এবং চুল মসৃণ ও সুন্দর হয়।

এছাড়াও শীতে চুলের যত্নে চুলে মাস্ক ব্যবহার করা, বাইরে গেলে চুল ঢেকে রাখা ইত্যাদি শীতকালে চুলকে সুন্দর রাখার জন্য আমরা করতে পারি।

আরও পড়ুন-

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

Leave a Comment