কিসমিস এর উপকারিতা
কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি কিসমিস খাওয়ার নিয়ম ও অনিয়মে খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত জানতে পারবেন, যাতে আপনি কিসমিস এর সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে পারেন। আজ এমনই একটি খাবার উপাদান সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানার প্রয়াস করব। আর সেটি হল কিসমিস। আমাদের সকল প্রকার মিষ্টান্নে এই সুস্বাদু খাদ্য উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে। একে ইংরেজিতে ‘রেইসিন’ বলে। তাই অনেকেই এই নামেও চিনে থাকে।
কিসমিস শুকনো আঙুর। বিশ্বের সকল দেশেই এর পরিচিতি আছে। কেউ এটি শুকনো খেতে পছন্দ করে, কেউবা মিষ্টান্নে দিয়ে। তবে এটি প্রছুর স্বাদের তা অস্বীকার করা কারও সম্ভব নয়! এই ধরুন আপনি আজ পায়েশ রান্না করছেন। রান্না শেষে যখন পরিবেশন করবেন, এক মুঠো কিসমিস আপনি তাতে দিয়েই পরিবেশন করবেন। এই হল কিসমিস এর রাজত্ব আপনার রান্নায় আর স্বাদে। চলুন, আর দেরি না করে আমরা কিসমিস এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
কিভাবে কিসমিস খেতে পারেন?
- আপনি আঙুর ফল শুকিয়ে কিসমিস খেতে পারেন। যেকোনো মিষ্টান্ন এর সাথে দিয়ে রান্না করে এটি খাওয়া যায়।
- কিসমিস কাঁচা অবস্থাতেও খাওয়া যায়। তবে তার আগে এটি ভালমত ধুয়ে পরিস্কার করে খেতে হবে।
- রাতে কিসমিস ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে আপনি শক্তি পাবেন। এছাড়াও এর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।
কিসমিস কত প্রকার?
কিসমিস বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে প্রধান তিন ধরণের হল-
১. বাদামী কিসমিস
এই ধরণের কিসমিস তিন সপ্তাহ ধরে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। শুকানোর পর এগুলো বাদামী হয়ে যায়। এটি তৈরিতে বিভিন্ন ধরণের আঙুর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে রঙ, আকার এবং স্বাদ আঙুরের উপর নির্ভর করে থাকে।
২. কালো কিসমিস
এই ধরণের কিসমিসকে বেদানা ও বলা হয়। তাছাড়াও এটি কালো আঙুর থেকে তৈরি হয়। এগুলোকেও প্রায় তিন সপ্তাহ শুকিয়ে তৈরি করা হয়। এরা আকারে ছোট হয় এবং স্বাদ টক, মিষ্টি ধরণের হয়।
৩. সুলতানা
এই কিসমিসকে গোল্ডেন রেইজিন বলা হয়। এটি এই নামে বেশ পরিচিত। সবুজ আঙুর, বীজহীন আঙুর দিয়ে এই কিসমিস তৈরি হয়। এই কিসমিস তৈরি করার আগে এদের একরকম তেলে ভিজিয়ে রাখা হয়। তার জন্যই এই কিসমিসের রঙ সোনালী বা বাদামী রঙের হয়। এই কিসমিস খেতে অন্যান্য কিসমিসের তুলনায় মিষ্টি বেশী হয়।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
- সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। আপনার দেহে আয়রন এর ঘাটতি পূরণ হবে।
- কিসমিস ভিজানো পানি খেলে রক্ত পরিস্কার হয়।
- কিসমিস নিয়মিত খেলে আপনার অ্যাসিডিটি এর সমস্যার সমাধান হবে। কারণ কিসমিস আপনার হজমে সহায়তা করে থাকে।
- কিসমিস আপনার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। আর আপনার সুস্বাস্থ্য গঠনে সহায়তা করে।
- এছাড়াও কিসমিসে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগ নিরাময়ে নানান ভাবে সহায়তা করে থাকে।
- কিসমিসে আছে বোরন ও ক্যালসিয়াম যা হাঁড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ নিয়মিত খেজুর খাওয়র উপকারিতা
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
আমরা সকলেই আমাদের ওজন নিয়ে খুব চিন্তিত থাকি। কেউ ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে, কেউবা ওজন বৃদ্ধি করতে। আর ওজন বাড়াতেই কিসমিস সহায়তা করে থাকে। স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে চাইলেই কিসমিস আপনার সহায়ক। কিসমিস এর উপকারিতা আছে গ্লকোজ ও ফ্রক্টজ, যা প্রাকৃতিকভাবে কোন ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াই ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যেহেতু কিসমিসে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তাই এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। কিসমিসে আছে পলিফেনলস, অ্যান্টিবেক্ট্রল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা যেকোনো ক্ষত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
বর্তমান যুগে হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েই চলেছে। নানা রকম ঔষধ এর তাড়না যেন বেড়েই চলেছে। তাই সকলেই প্রাকৃতিক উপায়ে এই রোগ নিরাময় করার উপায় খুঁজে থাকে। কিসমিস খারাপ কোলেস্টেরল, এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে থাকে। এইভাবেই আপনি প্রতিদিন কিসমিস খেয়ে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
এছাড়াও, অ্যাসিডিটি একটি পরিচিত সমস্যা এবং এটি এখন ঘরে ঘরে হতে দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যায় বুক থেকে পেট পর্যন্ত জ্বালাপোড়া হতে দেখা যায়। পাকস্থলিতে অম্লতার পরিমাণ কমাতে আপনি কিসমিস এর সাহায্য নিতে পারেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিসমিসে ক্ষারত্বের উপস্থিতি রয়েছে যা আপনাকে অ্যাসিডিটি কমাতে সহায়তা করবে।
কিসমিসের অন্যান্য উপকারিতা
আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের কাজ করে থাকি, এর জন্য আমাদের শক্তির প্রয়োজন। কিসমিসকে কার্বোহাইড্রেটের উৎস বিবেচনা করা হয়। এটি ব্যায়ামের সময় গ্লকজের মাত্রা বজায় রাখতে পারে ফলে শরীরে শক্তির প্রবাহ বজায় থাকে। তাই আপনি শক্তি বাড়াতে চাইলে নিয়মিত কিসমিস খেতে পারেন।
মুখ ও দাঁতের যত্নে কিসমিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, কিসমিসে ফাইটোক্যামিকেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় দাঁতে ‘ক্যারিস’ নামক জীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও মুখের মধ্যে ক্ষতকারক ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি রোধ করতে কিসমিস হতে পারে আপনার সহায়ক। কিসমিসে ডায়েটারি ফাইবার উপস্থিত আছে বলে এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে।
আপনারা অনেকেই বিশ্বাস করেন, ডায়েবেটিক রোগীরা কিসমিস খেতে পারে না। এই ধারণাটি ভুল। আপনি জেনে অবাক হবেন, কিসমিস এর উপকারিতা ডায়েবেটিকস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। কিসমিসের কম গ্লাইসেমিক সূচক আছে, যা ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে ব্যাপক সহায়তা করে। এটি ডায়েবেটিকস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে কিসমিস হতে পারে অন্যতম সহায়ক। বোরন নামক খনিজ আমাদের শরীরে যৌন স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত হরমোন বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি প্রতিদিন কিসমিস সেবন করে আপনার যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারেন।
ফ্রি র্যাডিকেল চুলের ক্ষতি করে থাকে। কিসমিসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি এই ফ্রি র্যাডিকেল থেকে চুলকে রক্ষা করতে পারে। তাই অকালে চুল ধুসর কিংবা চুলের ক্ষতি হওয়া থেকে কিসমিস হতে পারে আপনার সহায়ক।
কিসমিসের অপকারিতা
বিভিন্ন রকম উপকারিতার পাশাপাশি কিসমিসের কিছু অপকারিতাও রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে এখন জেনে নেই আমরা।
- কোন কিছুই বেশী খাওয়া ভালো নয় তা আমরা সকলেই জানি। অতিরিক্ত কিসমিস সেবনে আপনার ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
- রক্তে কম বেশী এলার্জি সকলেরই থাকে। যাদের এই সমস্যা আছে তারা এটি সেবন না করাই ভালো।
- অনেক বেশী পরিমাণে কিসমিস খেলে আপনার ডায়রিয়া ও গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই নিয়ম করেই এটি খাওয়া শ্রেয়।
- আপনি যদি টাইপ-২ ডায়েবেটিকসের রোগী হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি সেবন করবেন।
আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত উপাদান সমূহ আমাদের জন্য উপকারি হবে বটে তবে তা সঠিক নিয়ম করে সেবন করলেই সম্ভব হবে। প্রতিটি খাদ্য উপাদান গ্রহণ করার আগে এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের আগেই জেনে নিতে হবে।
উপসংহার
কিসমিস এর উপকারিতা অনেক ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ একটি সুস্বাদু খাদ্য আইটেম, যা আপনি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যের একটি অংশ হিসেবে যুক্ত করতে পারেন। এখানে উল্লেখিত কোনো সমস্যায় ভুগলে আজ থেকেই কিসমিস খাওয়া শুরু করুন।এছাড়াও মনে রাখবেন যে যদি এটি নিয়মিত সেবনের কারণে অ্যালার্জির মতো উপসর্গ দেখা যায়, তাহলে অবিলম্বে এটি খাওয়া বন্ধ করুন এবং আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। ডায়াবেটিস রোগীদের কিসমিস খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রকৃতি থেকে সরাসরি প্রাপ্ত প্রতিটি জিনিস আমাদের জন্য উপকারী হবে যদি আমরা সঠিক নিয়ম মেনে তা গ্রহণ করতে পারি। তাই এখানে উল্লেখিত কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পূর্ণ জেনে এবং নিয়মগুলো মেনেই এটি গ্রহণ করুণ। এটি সেবন করলে সঠিক ফলাফল পাওয়া সম্ভব ও সহজ। প্রয়োজন হলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এরপর কিসমিস সেবন করুন।
আপনি যদি এই সম্পর্কের না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভাল হবে জেনে নিন। কারণ কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আপনার জানা উচিত তাই এই বিষয়ে জানতে সম্পুর্ন পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আপনার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ধন্যবাদ।