হেয়ার সিরাম ব্যবহার করার নিয়ম Hair-Serum-babohar-korar-neyom

সিরাম ব্যবহারের নিয়ম

চুলের সঠিক যত্নের ওপর চুলের সার্বিক স্বাস্থ্য, বৃদ্ধি, উজ্জ্বলতা নির্ভর করে। সুন্দর সুস্থ চুল নারী ও পুরুষ উভয়ের ব্যক্তিত্বে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে, আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে মুহূর্তেই।হেয়ার সিরাম চুলের যত্নে নতুন মাত্রা যোগ করে তাই হেয়ার সিরাম ব্যবহারের নিয়ম সঠিক জানা জরুরী। চুলের যত্নে আধুনিক যুগে অনেক পণ্যই বাজারে পাওয়া যায়, প্রতি ছ’মাসে একটি নতুন ট্রেন্ড শুরু হয় ‘বিউটি ইন্ড্রাস্টিতে”।

এ ছাড়াও নানান ব্র‍্যান্ড নতুন নতুন পলিসি দাড় করিয়ে চুলের বিভিন্ন ব্যবহারে বাজারে নতুন পণ্য আনতেই থাকে। মাঝে মাঝে এত এত পণ্যের ভিড়ে কোন পণ্যটি আপনার জন্যে যুৎসই তা বুঝে ওঠা বেশ মুশকিল। চুলের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক ধরনের শ্যাম্পু, হেয়ার প্যাক, তেল, ট্রিটমেন্ট, হেয়ার ফুড এবং বিভিন্ন হেয়ার সিরাম। হেয়ার সিরাম ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে আমাদের কমবেশি ধারনা আছে তবুও বৃহৎভাবে আমরা আজ আরও একটু বিষয় জেনে নেব। 

সিরাম কি

সিলিকন দ্বারা তৈরি এক ধরনের তরল পদার্থ যা চুলের ফাইবারের উপর এক ধরনের সুরক্ষা স্তর সৃষ্টি করে তাকেই হেয়ার সিরাম বলে। সহজে বলতে গেলে চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় যে সিরাম ব্যবহার করা হয় তাকেই হেয়ার সিরাম বলে, কারন সিরাম ত্বকের যত্নেও বহুল ব্যবহৃত পণ্য। দুইটির ব্যবহার আলাদা। ধারনা করা হয় ১৯৮০ সালের শেষের দিকে ব্রিটিশ টেলিভিশনে সরাসরি হেয়ার সিরাম প্রথম প্রদর্শন করা হয় আর সেটিই হেয়ার সিরামের যাত্রার শুরু। নতুন হিসেবে এই পণ্যটি তখন সাধারণ জনগণের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়ে তুলছিল খুব স্বল্প সময়েই। 

প্রথম যে হেয়ার সিরামটি চালু করা হয়েছিল তার নাম “ফ্রিজ ইজ” (Frizz Ease)। আক্ষরিক অর্থে এর মানে হলো “কোকড়ানো বা রুক্ষ চুলকে সহজ করা” আর সঠিক অর্থে বলতে গেলে চুলের মসৃণতাকে বাড়াতে, উজ্জ্বল করতে যে পদার্থ বা তৈলাক্ত (Oily) উপাদান ব্যবহার করা হয় তাকেই হেয়ার সিরাম বলে। 

 

সিরাম এর কাজ কি

চুলের ধরন ও চুলকে ঠিক কি উদ্দ্যেশ্য সজ্জ্বা করানো হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে হেয়ার সিরামের নানান ধরন হয়ে থাকে আর এক এক ধরনের সিরামের উপাদান এক এক রকম হওয়াও স্বাভাবিক, তবে খুবই সাধারণ কিছু উপাদান যা সব সিরামেই সিরাম ব্যবহারের নিয়ম কাজ মোটামুটিভাবে থাকে তা হলোঃ 

  • গ্লিসারিন
  • জোজোবা অয়েল 
  • ভিটামিন ই
  • অরগান অয়েল
  • সানফ্লাওয়ার অয়েল
  • মারুলা অয়েল
  • স্কোয়ালেন 
  • ডাইমেথিকোন
  • সিলিকন 

এসব উপাদানের কম বেশি হেয়ার সিরামে হতে পারে, আরও থাকে কিছু গোপন উপাদান যা বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবসায়ী বা টেকনিশিয়ানরা কখনই খোলাসা করবেন না। 

সিরাম এর উপকারিতা

চুলের শোভা বর্ধনে ও চুলকে বাহ্যিক অনেক ক্ষতিকর পদার্থ ও পণ্য থেকে সুরক্ষা প্রদানে সিরামের ব্যবহার হয়ে আসছে। তাও এদের বেশ কিছু সাধারণ ব্যবহার আমরা জেনে নেব। 

  • চুলের রুক্ষ ভাব কমাতে বা দূর করতে সিরাম ব্যবহার করা হয়।
  • অনেকের চুল অতিরিক্ত শুষ্ক থাকে অর্থ্যাৎ চুলের প্রাকৃতিক তেল চুলে বজায় থাকে না যার জন্যে চুল হয়ে পরে উষ্কখুষ্ক, সিরামের ব্যবহারে চুলের এই শুষ্ক ভাব দূর হয়।
  • চুলের জট সহজে ছাড়াতে সিরাম ব্যবহৃত হয়। 
  • চুলের প্রাকৃতিক ভাব ফুটে ওঠে।
  •  বাজে বা মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য ব্যবহারের ফলে চুলের স্বাভাবিক জৌলস নষ্ট হয়ে যায়, সিরামের নিয়মিত ব্যবহারে সেই হারানো জৌলস ফেরত আনা সম্ভব। 
  • বিভিন্ন সাজে চুলকে সাজানো আজকাল ফ্যাশনের বড় একটি ধাপ, এই ফ্যাশনের জন্যে কখনো চুল স্ট্রেইট, কখনো কার্ল বা পাম করে ফুলিয়ে নেওয়া হয়। এসব স্টাইলিং এর জন্যে ব্যবহৃত হয় ইলেক্ট্রিক আয়রন ও স্ট্রেইটনার, হেয়ার ড্রায়ার যা চুলকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • স্টাইল করার আগে সিরাম ব্যবহার করে নিলে স্টাইলের দরুন হওয়া ক্ষতি থেকে খানিক রক্ষা পাওয়া যায়। সিরাম চুলকে বাইরের তাপ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। 
  • চুলের মসৃণতা ধরে রাখে। 
  • চুলের বিভিন্ন স্টাইল যেমন- স্ট্রেইট, কার্ল, লুজ কার্ল, ওয়েট লুক, পাম এগুলো দীর্ঘ সময়ে টিকিয়ে রাখার জন্যে সিরাম কার্যকরী।
  • চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করে।
  • নিয়মিত ব্যবহারে চুলের বৃদ্ধি ঘটে ও চুলে ভলিউম তৈরি হয়। 

আরও পড়ুনঃ আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা


কোন সিরাম ভালো

  • চুলের নানান ব্যবহার ও সমস্যার উপর ভিত্তি সিরাম বাছাই করা উচিত। জেনে নেব বেশ কিছু সিরামের ধরন 
  • স্প্রে সিরাম (Spray Serum)- 
  • সিলিকন বেসড সিরাম (Silicon Based Serum)- 
  • কার্ল ডিফাইনিং সিরাম (Curl Defining Serum)- 
  • ওয়াটার- বেসড সিরাম (Water-Based Serum)- 
  • চুল পরা রোধের জন্যে সিরাম
  • চুলের জট বাধা রোধের জন্যে সিরাম
  • ওয়েল-বেসড সিরাম(Oil-Based Serum) 

সিরাম কিভাবে ব্যবহার করে

  • পছন্দ ও চুলের ধরন অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন হেয়ার সিরাম, চুলের সমস্যার জন্যেও সিরামের হেরফের হয়, আবার অনেকে একই সাথে বেশ কয়েকটি হেয়ার সিরাম ব্যবহার করেন। 
  • সিরাম হাতের তালুতে নিয়ে কিছুক্ষন তালুতে ঘষে হালকা উষ্ণ করে নিতে হবে এরপর আলতো করে সম্পূর্ন চুলে মাখতে হবে, কখনই চুল অতিরিক্ত ঘষা যাবে না, এতে চুল রুক্ষ হয়ে ঝরে পরে যাবার সম্ভাবনা থাকে। 
  • চুল স্টাইলিং এর আগে চুলে সিরাম স্প্রে করে অথবা আলতো করে ঘষে নিলে স্টাইলিং এর জন্যে তাপ প্রয়োগে যে ক্ষতি হয় সেটা অনেকাংশে দূর করা সম্ভব। 
  • চুলের আগা ফেটে যাবার প্রবণতা থাকে অনেকের, সেক্ষেত্রে সিরাম হাতের তালুতে নিয়ে চুলের আগায় আলতো করে ঘষতে হবে। 
  • গোসলের পর অল্প করে সিরাম চুলে ঘষে নিলে চুলের জট খুলে আসে।
  • চুল বেশি রুক্ষ হয়ে গেলে এবং গোসলের সময় না থাকলে হালকা পানি চুলে স্প্রে করে পছন্দ মতো সিরাম চুলে হালকা করে ঘষে নিলেই চুলের মসৃন ভাব ফিরে আসবে। 

বিঃদ্রঃ হেয়ার সিরাম কখনই চুলের গোড়ায় ব্যবহার করা উচিত না, নাহলে চুল ও মাথার ত্বক চিটচিটে ও তৈলাক্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।  

 


আরও পড়ুনঃ শীতকালে ত্বকের যত্ন ঘরোয়া উপায়


 

১০ টি জনপ্রিয় হেয়ার সিরামের নাম 

  • Streax Professional Vitariche Gloss Hair Serum
  • L’Oreal Paris Smooth Intense Instant Smoothing Serum.
  • Livon Anti-Frizz Serum  
  • Biolage Smooth Proof Deep Smoothing Serum 
  • Garnier Fructis Sleek & Shine
  • Paul Mitchell Super Skinny Serum
  • Pattern Jojoba Oil Hair Serum
  • John Freida Frizz Ease Original Hair Serum
  • Dr. Barbara Strum Balancing Scalp Serum
  • The Ordinary Natural Moisturizing  Factors+ Hyaluronic Acid Scalp Serum

শেষকথা

সবেশেষে এটাই কাম্য হবে যে চুলের যত্নে আমরা সঠিক পণ্য বেছে নেব, কমদামী ও ক্যামিক্যালযুক্ত পণ্য যা ক্ষতিকর সেসব থেকে দূরে থাকব। অনুষ্ঠানভেদে স্টাইলিং মাঝে মাঝে সবারই করতে হয় আর তখন চুলের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়, হেয়ার সিরাম পারে আমাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে। সিরাম কখনই প্রতিদিন ব্যবহার করা উচিত না, সপ্তাহে তিন ব্যবহার করা যথেষ্ট। সিরাম ব্যবহারের নিয়ম জেনে যাদের চুল অধিক সংবেদনশীল তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সিরাম ব্যবহার করা উচিত। 

 

আরও পড়ুন-

শীতকালে পা ফাটা থেকে মুক্তির উপায়

গোল মরিচের উপকারিতা

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।