থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক রয়েছে। থানকুনি পাতা আমাদের কাছে মূলত ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবেই পরিচিত। এটি দেখতে অনেকটা লাউ পাতার মত। এর বৈজ্ঞানিক নাম সেনটেলা এশিয়াটিকা ( Centella Asiatica)। এর ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান পেনিওয়ার্ট (Indian Pennywort)। বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ, শ্রীলংকাসহ আরো নানান দেশে এটির সহজলভ্যতা এবং ব্যবহার রয়েছে।
এই পাতা দেখতে সবুজ, ফুলের বোটাও সবুজ হয় এবং তিনটি একত্রে থাকে। ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে এর উপকারিতার গুণগানের কথা যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। থানকুনি পাতা, শেকড়, কান্ড এই তিনটিই ভোজ্য হিসেবে বিবেচিত। বেশিরভাগ সময়ে স্যাঁতস্যাঁতে ভূমিতে এই পাতা জন্মাতে দেখা যায়।
থানকুনি পাতা ছেড়ার পর অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে এরপর খাবার বা ওষুধের কাজে ব্যবহার করা উচিত। এটি সরাসরি অর্থ্যাৎ কাঁচা খাওয়া যায় এবং সালাদেও ব্যবহার করা যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১,বি২,বি৩, সি, কে, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, বিটা কেরোটিন ও মিনারেল রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা
- থানকুনি পাতার মূল উপকারিতা হলো এটির নিয়মিত সেবনে স্মৃতিশক্তি তুখোড় এবং উন্নত হয়।
- এতে শরীরকে ঠান্ডা করার অনেক উপাদান রয়েছে।
- আর্থ্রাইটিস (Arthritis) বা বাতের ব্যাথায় খুবই উপকারি ওষুধ
- যারা সি ভি আই ( CVI = Chronic Venus Insufficiency) রোগে আক্রান্ত তাদের শিরায় রক্ত চলাচল সচল রাখতে থানকুনি পাতা বেশ কার্যকরী। সি ভি আই তখনই দেখা দেয় যখন পায়ের শিরাগুলো প্রয়োজনীয় রক্ত মস্তিষ্কে পৌছাতে দেয় না। এছাড়াও পা ভাড়ি হয়ে পাওয়া, ব্যাথা এবং ফুলে যাওয়া রোধে এর ব্যবহার বেশ লক্ষ্যনীয়।
- ক্ষত ও পোড়া সাড়তে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
- গবেষণায় দেখা গেছে এর সেবনে নতুন রক্তনালীর বিকাশ ঘটে।
- এর মধ্যে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
- স্কলেরসিস (Sclerosis) এর কারণে শরীরে যেই ব্যাথার সৃষ্টি হয় সেই ব্যাথা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে নিরাময় করা যায়।
- যাদের ঘুমের অতিরিক্ত ঘাটতি হয় বা যাদের ইনসমনিয়া ( Insomnia) আছে, নিয়মিত থানকুনি পাতার রস সেবন করলে এই সমস্যা দূর হবে।
- মাতৃত্বকালীন সময়ে বা ওজন বৃদ্ধির কারণে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফাটা দাগের মত দেখা যায়, নিয়মিত থানকুনি পাতার রস সেবন করলে সেই দাগ আস্তে আস্তে বিলীন হওয়া সম্ভব।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বেশ উপকারী।
- রক্তের কোলেস্ট্রল কমাতে সাহায্য করে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে সয়াহতা করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম।
- সার্বিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় এই পাতার সেবন বেশ উপকারী।
থানকুনি পাতার অপকারিতা
জগতে সব ভালো বস্তুর ভালো ও খারাপ দুটো দিক থাকে। থানকুনি পাতারও বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে, যেমনঃ
- থানকুনি পাতার অতিরিক্ত সেবন লিভারে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
- যথাযথ সেবন না করলে পাকস্থলির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- মাথা ঘোরানো, বমি ভাব, খাবারে অরুচি এসবও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- গা জ্বালাপোড়া সহ এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- অতিরিক্ত সেবনে সর্বক্ষন ঘুমের ভাব থাকতে পারে।
- অবসাদ, জন্ডিস, প্রসাবের গাঢ় রং ধারন করা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ থাইরয়েড এর লক্ষণ ও প্রতিকার
উপসংহার
পরিশেষে বলব যে প্রাকৃতিক, আয়ুর্বেদিক বা হারবাল কিছু ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ভালো করে জেনে বুঝে শুনে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর ব্যবহার করা উচিত। সুস্থ্যতা আমাদের সকলের জন্যেই কাম্য। থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আছে। তাই প্রাকৃতিক যেকোন কিছুর ব্যবহার আমাদের ভেতর থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে এই কথাটি অতিশয় সত্য তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার অনেক সময় ক্ষতিও ডেকে আনতে পারে।