থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
থানকুনি পাতা মূলত ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবেই পরিচিত। এটি বহু বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ যা পুকুর ও জলাশয়ের আশেপাশে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ, শ্রীলংকাসহ আরো নানান দেশে এটির সহজলভ্যতা এবং এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।
এই পাতা দেখতে সবুজ, ফুলের বোটাও সবুজ হয় এবং তিনটি একত্রে থাকে। ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সকলেই জানে। থানকুনি পাতা, শেকড়, কান্ড এই তিনটিই ভোজ্য হিসেবে বিবেচিত। স্যাঁতস্যাঁতে ভূমিতে এই পাতা জন্মাতে দেখা যায়।
আজকের আর্টিকেলে থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আশা করছি এই পাতার গুনাগুণ আপনার অনেক কাজে আসবে।
থানকুনি পাতার উপকারিতা
১। ক্ষত নিরাময়ে
থানকুনি পাতার অ্যান্টি-বায়েটিক বৈশিষ্ট্যের কারনে যেকোনো ক্ষত স্থানে এই পাতা বেটে লাগালে ব্যাথা উপশম হয়। রক্ত পরাও বন্ধ হয়।
২। পেটের আলসার ও মুত্রনালির সংক্রমনরোধে
থানকুনি পাতা পরিষ্কার করে সেই পাতা সিদ্ধ করতে হবে। এই সিদ্ধ পাতার সাথে মধু মিশিয়ে নিয়মিত সকালে পান করুন। এতে পেটের ও মুত্রনালির সংক্রমন অনেকটা কমে যাবে।
৩। হজমের সমস্যা দূর করতে
থানকুনি পাতা লবন দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। এই সেদ্ধ পানি নিয়মিত খেলে হজমের সমস্যা দূর হবে।
৪। পেট ও লিভারের স্বাস্থ্য ভাল রাখে
প্রতিদিন একটি কলার সাথে থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে পেটের ও লিভারের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
৫। আর্থ্রাইটিস দূর করে
থানকুনি পাতা প্রদাহ দূর করে। প্রতিদিন সকালে দুটি থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে বাতের সমস্যা দূর হবে। স্কলেরসিস (Sclerosis) এর কারণে শরীরে যেই ব্যাথার সৃষ্টি হয় সেই ব্যাথা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে নিরাময় করা যায়।
৬। শরীরের জ্বালা পড়া দূর করে
থানকুনির মধ্যে থাকা ম্যাডেকাসসাইড ত্বকের জ্বালাপড়া দূর করে। ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে ত্বককে ঠাণ্ডা রাখে।
৭। শরীরের রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে
যারা সি ভি আই (Chronic Venus Insufficiency) রোগে আক্রান্ত তাদের শিরায় রক্ত চলাচল সচল রাখতে থানকুনি পাতা বেশ কার্যকরী। সি ভি আই তখনই দেখা দেয় যখন পায়ের শিরাগুলো প্রয়োজনীয় রক্ত মস্তিষ্কে পৌছাতে দেয় না। এছাড়াও পা ভাড়ি হয়ে পাওয়া, ব্যাথা এবং ফুলে যাওয়া রোধে এর ব্যবহার বেশ লক্ষ্যনীয়।
৮। মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে
নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেন্টাসাক্লিক ট্রিটারপেনস নামক উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
৯। অনিদ্রা দূর করে
যাদের অনিদ্রার সমস্যা আছে তারা শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়ে অসুস্থ থাকে। নিয়মিত দুই বার ২-৪ চামচ থানকুনি পাতার রস ও মধু মিশিয়ে খেলে অনিদ্রার সমস্যা দূর হবে।
১০। মানসিক অবসাদ দূর করে
থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রন করে। নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে মানসিক অবসাদ দূর হয়।
১১। ত্বকের যত্নে
থানকুনির মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। থানকুনির নির্যাস ত্বকের ক্লান্তিভাব দূর করে। থানকুনির মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ব্রনের বিস্তৃতি কমাতে সাহায্য করে। ফ্ল্যাভোনয়েড ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। থানকুনিতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইটোক্যামিকেল ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়।
থানকুনি পাতার অপকারিতা
জগতে সব ভালো বস্তুর ভালো ও খারাপ দুটো দিক থাকে। থানকুনি পাতারও বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে, যেমনঃ
- থানকুনি পাতার অতিরিক্ত সেবন লিভারে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
- যথাযথ সেবন না করলে পাকস্থলির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- মাথা ঘোরানো, বমি ভাব, খাবারে অরুচি এসবও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- গা জ্বালাপোড়া সহ এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- অতিরিক্ত সেবনে সর্বক্ষন ঘুমের ভাব থাকতে পারে।
- অবসাদ, জন্ডিস, প্রসাবের গাঢ় রং ধারন করা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
উপসংহার
পরিশেষে বলব যে প্রাকৃতিক, আয়ুর্বেদিক বা হারবাল কিছু ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ভালো করে জেনে বুঝে শুনে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত। সুস্বাস্থ্য আমাদের সকলের কাম্য। থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই রয়েছে। তাই প্রাকৃতিক যেকোন কিছুর ব্যবহার আমাদের ভেতর থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে এই কথাটি অতিশয় সত্য।
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১। থানকুনি পাতা কিভাবে মুখে লাগাতে হয়?
উত্তরঃ থানকুনি পাতার টোনার সরাসরি মুখে লাগানো যায়। সেক্ষেত্রে পাতার রসের সঙ্গে সামান্য জল মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
২। থানকুনি পাতার রস কিভাবে খেতে হয়?
উত্তরঃ নিয়মিত একগ্লাস দুধে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে, চেহারায় লাবণ্য ফিরে আসে।