জরায়ু টিউমারের লক্ষণ ও চিকিৎসা

জরায়ু টিউমারের লক্ষণ

জরায়ু টিউমারের অপর নাম হল ইউটেরিন ফাইব্রয়েড নামে পরিচিত। ফাইব্রয়েড এমন একটি সমস্যা যার লক্ষণ পূর্বে বোঝা যায় না।

ভয়াবহ জরায়ু টিউমারের লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে আমাদের সকলের জানা উচিত কারন, নারীদের গর্ভধারণের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ হল জরায়ু।

অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হওয়া সত্বেও এটি টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীর ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে সন্তান গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয় ।

নারীরা সন্তান ধারণে অক্ষম হয়। ঠিক তখনই বিভিন্ন শারীরিক

পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে জরায়ুর টিউমার। জরায়ু টিউমারের বিশেষ কোনো লক্ষণ পূর্বে দেখা যায় না।৩০ ঊর্ধ্ব নারীদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ নারী এ সমস্যা দেখা দেয়।

জরায়ু টিউমারের লক্ষণ এর ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েড খুব নীরব টিউমার। যা ক্যানসার এবং কোন বিপদজনক  এমন কিছু না।

জরায়ু ফাইব্রয়েডগুলি অ-ক্যান্সারযুক্ত টিউমার যা জরায়ুর ভিতরে বা বাইরে বৃদ্ধি পায়। তারা বন্ধ্যাত্ব এবং গর্ভাবস্থার জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, সেইসাথে গুরুতর পেলভিক ব্যথা এবং রক্তপাত হতে পারে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অনুসারে প্রায় ২৬ মিলিয়ন আমেরিকানদের তাদের জীবদ্দশায় ফাইব্রয়েড থাকবে –

মোটামুটি আমেরিকানদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ার সংখ্যার সমান। এগুলি কালো মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং সাধারণত তাদের মাসিকের সময়গুলিতে নারীদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অধিকাংশ নারীর এই সমস্যায় ভোগেন এবং গর্ভধারণে বেশ কিছু জটিলতা দেখা দেয়।

আরও পড়ুনঃ  জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা

জরায়ু টিউমারের লক্ষণ সমূহ

জরায়ু টিউমারের লক্ষণ uterus tumor
জরায়ু টিউমারের লক্ষণ

জরায়ুর টিউমার, যা ফাইব্রয়েড, মায়োমা বা পলিপ নামেও পরিচিত, নারীর প্রজনন অঙ্গে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি। এগুলি সাধারণত নিরীহ, তবে কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণ এবং জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

জরায়ু টিউমারের লক্ষণ গুলির মধ্যে রয়েছে:

  • অস্বাভাবিক যোনি রক্তপাত: এটি ঋতুস্রাবের মধ্যে রক্তপাত, ভারী ঋতুস্রাব বা দীর্ঘস্থায়ী ঋতুস্রাব হতে পারে।
  • পেটে ব্যথা: এটি তীব্র বা ধীরে ধীরে হতে পারে এবং এটি তলপেট বা ন্যূনপেটে অনুভূত হতে পারে।
  • চাপ বা পূর্ণতার অনুভূতি: এটি তলপেটে বা নিম্ন পিঠে অনুভূত হতে পারে।
  • মিষ্টি বা যোনি থেকে স্রাব: এটি স্বচ্ছ, সাদা, গোলাপী বা রক্তাক্ত হতে পারে।
  • বন্ধ্যাত্ব: কিছু ক্ষেত্রে, জরায়ুর টিউমার ডিম্বাণুর গর্ভধারণ বা প্রতিস্থাপনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

যদি আপনি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ। তারা টিউমারের কারণ নির্ণয় করতে এবং চিকিৎসার বিকল্পগুলি নিয়ে আলোচনা করতে একটি শারীরিক পরীক্ষা এবং ইমেজিং পরীক্ষা, যেমন আল্ট্রাসাউন্ড বা এমআরআই করতে পারেন।

জরায়ু টিউমার চেনার উপায়

ফাইব্রয়েড বা জরায়ু টিউমারের লক্ষণ,  তেমন কোনো  শারীরিক পরিবর্তন না থাকলেও  ছোট ছোট শারীরিক কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। জরায়ু টিউমার চেনার উপায় গুলো নিম্নে দেয়া হলোঃ-

  • যেমন- ঋতুস্রাবের সময় অধিক রক্তপাত এবং ব্যথা অনুভব হতে পারে।
  • ফাইব্রয়েড টিউমার এর জন্য ঋতুস্রাব দীর্ঘ সময় ধরে হতে পারে।
  • অনেক সময় টিউমারের আকার বড় হলে তলপেট ফুলে যেতে পারে।
  • কখনও টিউমারের আকার বড় হলে মূত্রথলির উপর চাপ পড়ে, তখন রোগীর বারবার প্রস্রাবের চাপ আসে।
  • টিউমারের অবস্থান যদি জরায়ুর মুখে হয়, তবে সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব হতে পারে এবং অস্বস্তি বোধ হয়।  এই জাতীয় সমস্যার নাম হল ডিস্পেরনিয়া।
  •  বায়ুতে যদি অসংখ্য ফাইব্রয়েড  টিউমারের সৃষ্টি হয় যা ফেলোপিয়ান টিউব কে বন্ধ করে দেয় গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে এবং বার্ধক্য জনিত সমস্যা  তৈরি করে। যা কখনো কখনো গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

উপরিক্ত কারণগুলোর মাধ্যমগুলো জরায়ু টিউমার চেনার উপায়। তাছাড়া এই জরায়ু টিউমারের লক্ষণ থাকে না। অন্য সমস্যার জন্য নারীরা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে গেলে আল্ট্রাসাউন্ড করলে জরায়ুর টিউমার ধরা পড়ে।

গর্ভধারণের ক্ষেত্রে জরায়ুর-টিউমার  যেসকল জটিলতা তৈরি করে

জরায়ুতে টিউমার থাকা অবস্থায় যদি কোন নারী গর্ভধারণ করে তবে সে টিউমারটি মা এবং শিশুর জন্য কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি জটিলতা হতে পারে।

  • সাব মিউকাস নামক টিউমারটি মায়ের শরীরে জটিলতা তৈরি করে কারণ এটি জরায়ুর ভিতরে অবস্থান করে যার কারণে এটি  ভ্রুন এবং প্লাসেন্টার স্থাপন হতে দেয় না।
  • একজন টিউমারে আক্রান্ত নারীর যখন গর্ভধারণ হয় তখন সেই নারীর বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন গর্ভধারণের পর পেট যত বড় হয় টিউমারের আকার টাও আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে এবং টিউমার এর ভেতর রক্তক্ষরণ এবং পানি জমাট হতে পারে যার কারণে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হতে পারে।
  • টিউমার এবং  শিশু দুটি একসাথে বড় হওয়ার জন্য পেটের শিশুটি জায়গা কম  পায়, যার কারণে শিশুর ওজন কম হতে পারে।
  • অন্যদিকে, গর্ভফুল নিচের দিকে থাকা এবং সময়ের আগেই শিশু ডেলিভারি করানোর জটিলতা দেখা দিতে পারে।
  • জরায়ু টিউমারের কারণে বেশিরভাগ সময়ই গর্ভবতী মাকে নরমাল ডেলিভারি পরিবর্তে সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

যদিও জরায়ু ফাইব্রয়েডগুলি সাধারণত বিপজ্জনক নয়, তবে তারা অস্বস্তির কারণ হতে পারে এবং লাল রক্তকণিকা কমে যাওয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে (অ্যানিমিয়া), যা ভারী রক্তক্ষরণ থেকে ক্লান্তি সৃষ্টি করে। কদাচিৎ, রক্তক্ষরণের কারণে ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হয়।

জরায়ু টিউমার প্রতিরোধের উপায়

বাহিরের দিকে টিউমার অপারেশনের মাধ্যমে কেটে ফেলা হলেও জরায়ুর ভিতরে টিউমার সহজে কেটে ফেলা সম্ভব হয়না কারণ  জরায়ুর ভিতরে টিউমার হলে এবং টিউমারের আকার যদি বড় হয় সেই ক্ষেত্রে জরায়ু কেটে ফেলতে হয় একজন নারীর জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়, কারণ জরায়ু কেটে ফেললে নারীর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, যার কারনে সেই নারী আর পুনরায় গর্ভ ধারণে অক্ষম হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে নারীর শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অন্যদিকে ডেলিভারির পর অনেক সময় টিউমারটির আকার অনেক ছোট হয়ে যায় সে,ক্ষেত্রে আর অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে না। ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব।

তবে জরায়ু টিউমারের প্রধান চিকিৎসায় হল অস্ত্রপ্রচার। ঔষধের মাধ্যমে এটা কিছুদিনের জন্য মাত্রা কমে থাকলেও এটা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়।

 দুই ধরনের অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে এই টিউমার নিরাময় করা সম্ভব।

১. জরায়ু কেটে ফেলে দেওয়া এবং ২. জরায়ুর দেয়াল থেকে ফাইব্রয়েড কেটে তুলে ফেলা।

ছিদ্র করে এবং পেট কেটে এই দুই মাধ্যমেই অপারেশন করা যায়। তবে এই দুই ধরণের অপারেশন এই বেশ রক্তপাত হয়। তবে বেশির ভাগই লক্ষ্য করা যায় অপারেশনের সময় জরায়ু কেটে ফেলতে হয়।

এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর গর্ভধারনের সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায় বললেই চলে। 

তবে লেজার সার্জারি এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে  এসেছে  টিউমারের চিকিৎসায়। এটির মাধ্যমে রক্তপাতহীন  ও কোন প্রকার কাটাছেঁড়া ছাড়া লেজারের মাধ্যমে এবং  ল্যাপ্রোস্কোপ ও গজও গাইডেন্সে টিউমারের চিকিৎসা করা সম্ভব।ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজ বা লেজার আবলাশন নামে পরিচিত আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে এখন বাংলাদেশেও এই চিকিৎসার প্রচলন হয়েছে। এই  চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত সুস্থতা লাভ করে কেননা এই  চিকিৎসায় কোনো কাটা-ছেঁড়া করার প্রয়োজন হয় না। যার ফলে রোগীর রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকেনা।

সবথেকে ফলপ্রসূ ব্যাপার হল লেজারের মাধ্যমে অপারেশন করলে জরায়ু কেটে ফেলতে হয় না যার ফলে নারী পুনরায় গর্ভধারণ করা  এবং মাতৃত্ব অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব।

মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়

মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয়? বলতে গেলে মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোন একক কারণ নেই, তবে বিভিন্ন ঝুঁকির বিষয় রয়েছে যা তাদের বিকাশে ভূমিকা পালন করতে পারে।

কিছু সম্ভাব্য কারণের মধ্যে রয়েছে:

  • হরমোন: ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন জরায়ুর কোষের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা টিউমারের বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
  • জিনগত কারণ: জরায়ুর টিউমারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • বয়স: 30 বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা টিউমারের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে পারে।
  • মানসিক চাপ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা টিউমারের বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
  • জীবনধারা: অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, অল্পব্যায়াম এবং অতিরিক্ত ওজন টিউমারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

মনে রাখবেন যে এটি কেবলমাত্র সম্ভাব্য কারণের একটি তালিকা, এবং গবেষণা এখনও চলছে যাতে টিউমারের সঠিক কারণগুলি আরও ভালভাবে বোঝা যায়।

পরিশেষে

জরায়ু টিউমারের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্র অব্যশই চিকিৎসকের সরনাপন্ন হতে হবে। প্রয়োজনীয় যেসব পরীক্ষা নিরিক্ষা আছে সেসব করে নিতে হবে। কারণ টিউমার থেকে ক্যান্সার ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এর চিকিৎসা শুরু করতে হবে এবং সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আশা করি জরায়ু টিউমারের লক্ষণ সম্পর্কিত বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি। ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন-

থাইরয়েড এর লক্ষণ ও প্রতিকার

Leave a Comment