ফর্সা হওয়ার উপায় সহ ১০টি কার্যকারী সমাধান

ফর্সা হওয়ার উপায়

মানুষ সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি। তিনি সবাইকে একই আদলে গড়ে তুলেননি, এক এক জনকে আলাদা আলাদা রুপ, গঠন, গায়ের রং দিয়েছেন।

গায়ের রং নিয়ে আমাদের অনেকেরই আফসোস থাকে। এই সব ক্ষেত্রে অনেকে আবার ফর্সা হওয়ার উপায় খুঁজা বেড়াই।

অনেকেকেই বলতে দেখা যায়, যে ছোট বেলার সেই টুকটুকে গায়ের রং হঠাৎ করেই কেন যেন তামাটে রং ধারন করেছে। কথাটা অনেকাংশেই সঠিক। বেশিরভাগ মানুষের জন্মগত গায়ের রং পরিণত বয়স পর্যন্ত বজায় থাকে না।

খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ, সঠিক ঘুম, কাজের ধরন এসব অনেক কিছুর ওপর ফর্সা রং কালো হয়ে যাওয়া নির্ভর করে।

আরও পড়ুনঃ  লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

গায়ের রং কালো হওয়ার কারণ কি?

ফর্সা হওয়ার উপায় forsa howar upay
ফর্সা হওয়ার উপায়
  • গ্রীষ্মকালীন সময়ঃ– গ্রীষ্মকালে স্বাভাবিকভাবে সূর্যের তাপ বেশি থাকে। মেলানিন বা মেলাস এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ যা মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে তৈরি হয় যার কারনে মানুষের চুল ও চামড়া কালো হয়। সূর্যের সংস্পর্শে এলে মেলানোসাইট তাদের উৎপাদন বাড়ায়, এটির উৎপাদন সূর্য থেকে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করে, ত্বকে যত বেশি পরিমানে মেলানিন থাকবে গায়ের রং তত গাঢ় হবে।
  • হাইপার পিগমেন্টেশনঃ– গ্রীষ্মকালে দিন বড় হওয়ার কারনে আমাদের সূর্যের তাপ সহ্য করতে হয় বেশিক্ষন, আর এছাড়াও বাইরে যাওয়া, দূরে বেড়াতে যাওয়া, বাইকে ঘোরা, নদী ভ্রমণ ইত্যাদি লেগেই থাকে, এই অতিরিক্ত সূর্যের সান্নিধ্যে থাকার কারনে গায়ের রং কালো হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে আর হাইপার পিগপমেন্টেশন এর কারনেই বেড়ে যায়।সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় শরীরের যে অংশগুলো উন্মুক্ত রয়েছে বেশি সেগুলো যেমনঃ হাতের কব্জি, মুখ, পায়ের পাতা, কনুই ইত্যাদি।
  • হরমোনঃ– গর্ভকালীন সময়ে হরমোন অতিরিক্ত ওঠা নামা করার ফলে গায়ের রঙয়ের পরিবর্তন হতে পারে।
  • পর্যাপ্ত পরিমানে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করাঃ– সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের জন্যে বেশ ক্ষতিকর। এমন কি বাইরে বের না হলেও ঘরের ভেতর কাচেঁর মাধ্যমে এই ক্ষতিকর রশ্মি আমাদের ত্বকে প্রবেশ করে ত্বককে কালো করে। এস পি এফ ২৫ বা এস পি এফ ৫০ ব্যবহারের মাধ্যমে সূর্যের এই রশ্মি থেকে হওয়া ক্ষতি আমরা এড়িয়ে চলতে পারি।

একদম সেই ছোট্ট বেলার গায়ের রং ফেরত না এলেও ত্বকের উজ্জ্বলতা আমরা চাইলে ঘরোয়া অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করে কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পারি এবং নিয়মিত ব্যবহারে একটা পরিবর্তন অবশ্যই চোখে পরবে আশা করা যায়।

স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায় ১০টি

এইবার আমরা  ১০ টি স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায় এবং আমরা কি ভাবে শরীরের রঙ উজ্জ্বল করতে পারি এই বিষয়ে আলোচনা করব ।

লেবুর রস

তাজা লেবুর রস ত্বকের কালো দাগ আর মেছতা দূর করতে স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায় এর মধ্যে বেশ কার্যকরী উপায়। লেবুর রস পরিষ্কার কোন একটি ব্রাশের সাহায্যে মুখে লাগিয়ে  ১০-১৫ মিনিট মুখে রেখে ধুয়ে ফেললে এবং নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখের দাগ আস্তে আস্তে হাল্কা হতে থাকবে।

দৈই

এক টেবিল চামচ টক দৈই সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক হিসেবে মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই একটা চোখ ধাধানো উজ্জ্বলতা ফুটে উঠবে চেহারায়।

দুধ বা দুধের সর

ঘন দুধের সর বা সামান্য দুধ একটু মধু আর হলুদের সাথে মিশিয়ে মুখে নিয়মিত মাখলে কালো প্যাচ দূর করতে সাহায্য করবে।

বেসনের পেস্ট

বেসন মূলত অনেক ধরনের ডালের গুড়ো একসাথে করাকেই বলে, এক টেবিল চামচ পরিমান বেসনের সাথে পানি মিশিয়ে পেস্টের মত করে নিয়ে মুখে, গলায় এবং ঘাড়ে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং তারপর হাল্কা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই নরম মসৃন এবং উজ্জ্বল ত্বকের দেখা পাওয়া যাবে।

শসা

শসা অনেক আগে থেকেই চোখের নীচের কালো দাগ দূর করার কাজে বেশ পারদর্শী। বিউটি পার্লারগুলোতে প্রায়ই রমণীদের রুপ চর্চায় শসা   চোখের উপর দিয়ে আরামে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। শসায় রয়েছে ভিটামিন সি এবং ফলিক এসিড।

ভিটামিন সি কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে আর ফলিক এসিড অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোকে উদ্দীপিত করে যা আমাদের ত্বককে পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

মানসম্মত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা

সানস্ক্রিন আমাদের শরীরের জন্যে সুরক্ষা কবচের মতো কাজ করে। সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি আমাদের ত্বকের অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। তাই  ভালো মানের সানস্ক্রিন ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা ত্বকের কালো হওয়া রোধ করে ফর্সা ভাব ফুটিয়ে তুলতে পারি। এটি স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায় এর মধ্যে অন্যতম।

ছাতা ব্যবহার করা

শরীরের উন্মুক্ত অংশের কালো হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বেশিরভাগ সময়ে কব্জি, পায়ের পাতা কালো হয়ে যায়। তাই রোদের সময়  বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে ছাতা ব্যবহার করা অপরিহার্য।

নিয়মিত এক্সফোলিয়েট

খুবই ভালো মানের / ব্র্যান্ডের স্ক্রাব পরিমিত পরিমাণে শরীরের বাহ্যিক অংশে আলতো করে ঘসলে চামড়্রার ওপর থেকে মৃত কোষ আস্তে আস্তে উঠে যেতে থাকে আর হাইপার পিগমেন্টেশন (Hyper Pigmentation) জন্যে হওয়া দাগও আস্তে আস্তে হালকা হতে থাকে।

এক্সফোলিয়েশন এর পর পর অবশ্যই ময়েস্টোরাইজার মুখে মাখা জরুরী এতে করে ত্বকের শুষ্ক ভাব থাকে না। রোদে পোড়া দাগ এক্সফোলিয়েশন এর  মাধ্যমে দূর করা শতভাগ সম্ভব।

অ্যালোভেরা ব্যবহার করা

খুবই স্বল্প সংখ্যক গবেষনায় দেখা গেছে যে অ্যালোভেরার মধ্যে অল্প পরিমাণে রং ফর্সাকারী উপাদান রয়েছে, কারন এতে অ্যালোইয়িন ( Aloin) ও অ্যালোসিন (Aloesin) নামক ক্যামিকেল রয়েছে যা শরীরে বিদ্যমান মেলানিন ( Melanin) কমাতে সাহায্য করে এবং তার সাথে সাথে হাইপার পিগমেন্টেশন বা ত্বকের বাদামী রঙয়ের উপস্থিতি হ্রাস করে ত্বককে উজ্জ্বল করতেও কাজ করে।

উপটান ব্যবহার

ঘরে বিদ্যমান উপকরণ দিয়ে কম খরচে ফেস প্যাক বা উপটান বানানো খুবই সহজলভ্য একটি ব্যাপার। যুগ যুগ ধরে রুপচর্চায় ঘরে তৈরি উপটান ব্যবহার করা হচ্ছে।

দাদী, নানী, মা, খালা থেকে শুরু করে অনেকের হাত ধরেই এই উপটান ব্যবহার এখনও আমাদের মধ্যে বেশ প্রচলিত। সেটা খুবই সামান্য ডালের গুড়ো দিয়ে তৈরি বেসনও হতে পারে বা দুধের সর, লেবুর রস সাথে একটু মধু দিয়ে উপটান হতে পারে আবার হলুদ গুড়ো পানিতে মিশিয়ে তৈরি হতে পারে চমৎকার মুখ ফর্সাকারী উপটান।

স্ক্রাবের জন্যে কফির বা চালের গুড়ো পুরো মুখে ১-২ মিনিট ঘসে তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই বেশ কার্যকরভাবে উঠে আসবে ত্বকের ক্ষতিকর মৃত কোষ।

হঠাৎ করে গায়ের রং কালো হওয়ার কারণ

হঠাৎ করে গায়ের রং কালো হওয়ার কারণ নানান ধরণের হতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হল:

সূর্যের সংস্পর্শে আসা

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের কোষগুলিকে আরও বেশি মেলানিন তৈরি করতে উদ্দীপিত করে, যা ত্বককে গাঢ় করে তোলে। এটি ট্যানিং নামে পরিচিত। যদি আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে রোদে থাকেন, তাহলে আপনার ত্বক অস্বাভাবিকভাবে কালচে বা দাগযুক্ত হতে পারে।

ওষুধ

কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বকের রঙ পরিবর্তন হতে পারে। যেমন, হরমোন থেরাপি, অ্যান্টিবায়োটিক এবং কিছু ক্যান্সারের ওষুধ ত্বককে গাঢ় করে তুলতে পারে।

অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থা

কিছু চিকিৎসা অবস্থা, যেমন অ্যাডিসন’স রোগ, হাইপোথাইরয়েডিজম এবং কিছু লিভারের রোগ ত্বকের রঙ পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।

গর্ভাবস্থা

গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের ফলে কিছু মহিলার মুখ, স্তন এবং পেটে মেলাসমা নামে ত্বকের গাঢ় দাগ দেখা দিতে পারে। যার ফলে হঠাৎ করে গায়ের রং কালো হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

পোস্ট-ইনফ্ল্যামেটরি হাইপারপিগমেন্টেশন (PIH)

আঘাত, সংক্রমণ বা কিছু ত্বকের রোগের পরে ত্বকের একটি নির্দিষ্ট এলাকা কালচে হয়ে যেতে পারে।

যদি আপনার ত্বকের রঙ হঠাৎ করে পরিবর্তিত হয়, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার কারণ নির্ণয় করতে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে পারবেন।

কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়

ত্বকের রঙ পরিবর্তন একটি জটিল এবং বহুল পরামর্শবহ প্রক্রিয়া। আপনার প্রাকৃতিক ত্বকের রঙ এবং গঠন অনুযায়ী ত্বকের রঙ পরিবর্তন করার চেষ্টা করা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

তাই, আপনাকে কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায় অনুসরণ করতে হবে। ত্বকের যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো দেয়া হলো:

  • সানস্ক্রীন ব্যবহার করুন: সূর্যের ক্ষতিকারক UV রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য সানস্ক্রীন ব্যবহার করা উচিত।
  • ত্বক পরিষ্কার রাখুন: প্রতিদিন মুখ ধোয়া এবং ত্বক পরিষ্কার রাখুন।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন: ত্বককে আর্দ্র রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন: ভিটামিন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
  • প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন: আলো ভেরা, টমেটো, ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে পারেন।
  • রাত্রে ত্বকের যত্ন নিন: রাতে ত্বকের জন্য সঠিক পণ্য ব্যবহার করুন।
  • চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: চর্ম বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ গ্রহণ করুন।

কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায় অনুসরণ করে আপনি ত্বককে স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল রাখতে পারেন। ত্বকের রঙ পরিবর্তনের চেষ্টা না করে ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়া উচিত।

শেষ কথা

উপরোক্ত আলোচলার ভিত্তিতে বলা যায় যে, ফর্সা হওয়ার উপায় এর মধ্যে  প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ত্বকের রং উজ্জ্বল করার প্রচেষ্টা করা সবচেয়ে উত্তম। রং ফর্সাকারী ক্রিম বয়ে আনতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক সমস্যা, চামড়া পুড়ে পাতলা হয়ে ত্বকের নানান ক্ষতি হতে পারে বা ব্যায়বহুল ফেসিয়াল তেমন কোন পার্থক্য আনতে নাও পারে।

তবে সঠিক ফলাফলের জন্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ত্বকের উজ্জলতা বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। শেষ পয়ন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধনবাদ…আমাদের সাথেই থাকুন।

আরও পড়ুন-

শীতে চুলের যত্ন ও করণীয়

Leave a Comment