মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ, এর প্রতিকার ও করনীয়

মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ

কর্মব্যস্ত এই জীবনে মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকছে। তা হতে পারে কাজ, সংসারের ঝামেলা বা টাকার সমস্যা। দৈনিক খাদ্যাভ্যাস ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারার কারনেও অনেকে স্ট্রোক এর শিকার হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে স্ট্রোক হলেও তা বুঝা যায় না। 

ডাক্তারি পরীক্ষাতেও তা ধরা পরে না। এই ধরনের স্ট্রোক কে বলে ট্রানসিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক বা টিআইএ। এটিই মিনি স্ট্রোক নামে পরিচিত। মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ এর মধ্যে আচমকা মাথা দুলে উঠা, হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া, চোখের সামনে অন্ধকার দেখা অন্যতম। 

টিআইএর লক্ষণ অল্প সময়ের জন্য দেখা দিলেও এর প্রভাব সুদুর প্রসারী। আজকের আর্টিকেলে মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ, এর প্রভাব, সুস্থ থাকার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। 

স্ট্রোক কি 

মস্তিস্কের রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে মস্তিস্ক আর ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে সেই জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধতে থাকে। মস্তিস্কের রক্তনালিতে এই রক্ত জমাট বাধে। এভাবেই স্ট্রোকের সৃষ্টি হয়। যেহেতু মস্তিস্ক দেহের সকল কাজ নিয়ন্ত্রন করে, তাই শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। 

টিআইএ বা মিনি স্ট্রোক

মস্তিস্কের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে রক্ত প্রবাহ সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হলে মিনি স্ট্রোক হয়। মিনি স্ট্রোক হলে মস্তিস্ক সাময়িকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, হাত পা অচল হয়ে যায়, সাময়িক বাকশক্তি হারানোর ভয় থাকে। TIA মস্তিষ্কে রক্ত ​​​​প্রবাহে একটি অস্থায়ী ব্যাঘাত। এই অচলাবস্থা কয়েক মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। 

মিনি স্ট্রোকের বিভিন্ন উপসর্গ 

ক্লিনিকাল প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ পরিবর্তন হতেও পারে। তবে কিছু লক্ষণ একই ধরনের হতে পারে। 

১। হঠাৎ হাত, পা, মুখ একদিকে বেকে যেতে পারে, প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা হতে পারে। 

২। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যাক্তি কোন কিছু আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করবে। পা টলমলে মনে হতে পারে। 

মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ

৩। কথা বলার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে। মুখে জড়তা আসবে। কথা বলার সময় জড়িয়ে যাবে (অ্যাফেসিয়া)।

৪। কথা বোঝার বা প্রকাশ করার ক্ষমতা হারিয়ে যাবে (অ্যাফেসিয়া), সঠিক শব্দ খুজে পেতে অসুবিধা হবে।

৫। হঠাৎ চোখের দৃষ্টিতে ঝাপসা ভাব আসবে। 

৬। ডবল ভিসন বা ডিপ্লোপিয়া। 

৭। ভিজ্যুয়াল ফিল্ডের ঘাটতি, যেমন সমজাতীয় হেমিয়ানোপসিয়া বা একক অন্ধত্ব।

৮। গিলতে অসুবিধা হতে পারে (ডিসফ্যাগিয়া)। 

৯। হাত বা পা তুলতে অসুবিধা মনে হবে। হাত পা অসার হয়ে যাবে। 

১০। চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা কমে যাবে, দিক ভুল হতে পারে। 

মিনি স্ট্রোকের ঝুকি কাদের বেশি

অনিরাপদ জীবনযাপন মিনি স্ট্রোকের মত ব্যাধি সৃষ্টিতে অনেক বড় ভুমিকা পালন করে। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার অভ্যাসগুলি এই রকম অসুখ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। 

১। উচ্চ রক্তচাপ

২। অধিক কোলেস্টেরল 

৩। ডায়াবেটিস 

৪। ধূমপান

৫। স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন, স্থুলতা

৬। মদ্যপান, অ্যালকোহল, কোকেন, হেরোইন সেবন 

৭। হৃদরোগ, ক্যারোটিড ধমনি রোগ 

মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ ও করনীয় 

১। লক্ষণ দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত মেডিকেল নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। কারন স্ট্রোক হওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাবস্থা নিলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। 

২। ধমনী আটকে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারনে স্ট্রোক হলে ওষুধের মাধ্যমে ব্লক খুলে দেয়া সম্ভব। এই কাজ দ্রুত করতে হবে।

মিনি স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়

মিনি স্ট্রোক সাধারন স্ট্রোক হলেও তা অনেক দিন প্রভাব বিস্তার করে থাকতে পারে। তাই একে অবহেলা করা উচিত নয়। মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ সম্পর্কে জানার পরে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে হবে। তবেই এই জাতীয় অসুখ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

১। যাদের ওজন অনেক বেশি তাদের দ্রুতই ওজন কমানোর চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত ডায়েট অনুসরন করে ওজন নিয়ন্ত্রন করতে হবে। 

২। ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত ডায়াবেটিস চেক করতে হবে। ডায়াবেটিস অতিরিক্ত থাকলে স্ট্রোকের ঝুকি বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

৩। কোলেস্টেরল ও চর্বি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। কারন এগুলো শুধু কোলেস্টেরল নয় সাথে ওজনও বৃদ্ধি করে। 

৪। ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। কারন তা শরীরে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ফলে স্ট্রোকের ঝুকি তৈরি হয়। 

৫। মাদক ও অ্যালকোহল জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।

৬। দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে মিনি স্ট্রোকের ঝুকি তৈরি হয়।

৭। নিয়মিত হাটা ও ব্যায়াম এর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। 

৮। রুটিন মাফিক ও সঠিক খাবার গ্রহন করতে হবে। 

পরিশেষে 

দৈনন্দিন জীবনে আমদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে থাকে। তবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা বা বসে থাকা উচিত নয়। মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র ডাক্তারের কাছে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। কারন তা বড় কোন স্ট্রোক হওয়াকে প্রতিহত করবে। সুস্থ শরীর ও সুস্থ মন প্রত্যেকের কাম্য। আশা করছি আজকের আর্টিকেল থেকে মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন। ধন্যবাদ। 

মিনি স্ট্রোক সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। মিনি স্ট্রোক হলে কি কি হয়?

উত্তরঃ কয়েক মিনিট এরকম কথা বলতে না পারা, হাত বা পা অসাড় হয়ে যাওয়া অথবা চোখে অন্ধকার দেখা।

২। স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা কি?

উত্তরঃ স্ট্রোকের রোগী সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে আসলে চিকিৎসকরা আই ভি থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

৩। মিনি স্ট্রোক কতটা গুরুতর?

উত্তরঃ টিআইএ থাকার অর্থ হল খুব নিকট ভবিষ্যতে আপনার স্ট্রোক হতে পারে।

আরও পড়ুন-

কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না, খাদ্যাভ্যাস ও রুটিন

Leave a Comment