কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না
ডায়াবেটিস আক্রাান্তের সংখ্যা বিশ্বজুড়ে নি:শব্দ ঘাতকের মতই বাড়ছে। আমাদের দেশে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ডায়াবেটিস যা সবথেকে উদ্বেগের বিষয়।
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপরও চাপ পড়ে রক্তে শর্করা যদি অনিয়ন্ত্রিত হয়। অনেক অঙ্গের ক্ষতি হয় আমাদের নিজেদের অজান্তেই। যে কারণে প্রথম থেকেই সচেতন থাকা প্রয়োজন।
একবারে কম খেতে হবে চিনি এবং ক্যালোরিন। প্রতিদিন নিয়মিত শরীরচর্চ করতে হবে।
সুগার চেক করা খুব জরুরি ২৫ বছরের পর থেকে প্রতি বছর অন্তত দুইবার। কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না এ বিষয়ে প্রথম থেকেই নজর দিতে হবে। প্রথম থেকেই সর্তক হতে হবে যদি অতিরিক্ত তৃষ্ণা, বেশি করে খিদে পাওয়া, প্রস্রাব বেড়ে যাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া, কাটা ঘা শুকাতে সময় লাগলে ইত্যদি লক্ষণ দেখা দিলে।
ডায়াবেটিস শরীরকে অনেক দুর্বল করে দেয়। তাই খুবই জরুরি সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখা। ডায়েট মেনে খাওয়া দাওয়া করতে হবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে। আজকের আর্টিকেলে আমরা কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায়, খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরব।
আরও পড়ুনঃ কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা, খাদ্যাভ্যাস ও সতর্কতা
যে লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ডায়াবেটিস হলে। ডায়াবেটিসের অনেক সময় লক্ষণ পাওয়া না গেলেও বিশেষ কিছু বৈশিষ্টের উপস্থতি জানান দিতে পারে ডায়াবেটিস।
কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না এই বিষয়ে সকলকে নজর রাখতে হবে। নিম্নে ডায়াবেটিসের লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১। পিপাসা লাগা এবং ঘনঘন প্রসাব হওয়া
২। দুর্বল লাগা
৩। ক্ষুধার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
৪। রক্তের শর্করা কমে যাওয়া
৭। কাটাছেঁড়া বা শরীরে ক্ষত হলেও সেটা সারে না দীর্ঘদিনেও
৮। চামড়াই চুলকানী ,খসখসে এবং শুষ্ক ভাব
৯। বিরক্তি এবং মেজাজ খিটীখটে হওয়া
১০। চোখে কম দেখতে পাওয়া
যেসব খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখে ডায়াবেটিস
সুস্থ হওয়া সম্ভাব নয় একবার ডায়াবেটিস হলে। তবে সুস্থ জীবন-যাপন করা সম্ভাব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রেখে। এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ঠিকমত খাদ্যভাস।
সঠিক খাদ্যভাস সহজ হয় যদি জানা থাকে কি খাবার খেতে হবে আর কি খেতে হবে না। কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১। মাছ
গবেষণায় দেখা যায়, ইনসুলিনের সংবেদনশীলতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে র্গলুকোজের ঘনত্ব কমিয়ে। এতে প্রোটিন রয়েছে চর্বিহীন।
২। সবুজ চা
ইনসুলিনের মতো কাজ করে মানুসের শরীরে সবুজ চা, এটি সাহায্য করে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে।
৩। ওয়াইল্ড স্যামন
কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না এরমধ্যে অন্যতম একটি ঔষধি খাদ্য ওয়াইল্ড স্যামন ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যাক্তিদের জন্য। এতে ওমেগা-৩ রয়েছে উচ্চ মাত্রায়। একটি বড় উৎস ফ্যাটি অ্যাসিডের এটি। ওয়াইল্ড স্যামন কার্ডিওভাসকুলার রোগের পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকিও কমায়।
৪। ডিমের সাদা অংশ
পেশি গঠনকারী খাদ্য বলা হয় ডিমকে। ডিমে প্রোটিন রয়েছে উচ্চ মানের। ডিমের সাদা অংশে রয়েছে কম মাত্রার কার্বোহাইড্রেট যা সাহায্য করে ২ ধরণের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে।
৫। টক দই
একটি স্বাস্থকর খাদ্য হলো টক দই। এতে খুব কম পরিমাণ চিনি রয়েছে। এটি সাহায্য করে রক্তে চিনির পরিমাণ কমাতে। বিকালের নাস্তায় স্যান্ডউইচের সঙ্গে এবং দুপুরে খাবারের সঙ্গে টক দই খাওয়া যায়। এটি সাহায্য করে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে।
৬। সবুজ শাকসবজি
২ ধরণের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝঁকি কমায় সবুজ শাকসবজি। ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকে পাতা কপি, শালগম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালং পাতা, লেটুস পাতা ইত্যাদি খাবারে। গবেষণায় দেখা যায়, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৪ শতাংস পর্যন্ত কমে যায় সবুজ শাকসবজি খেলে।
৭। লেবু
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে লেবু এবং লেবু জাতীয় ফল। গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসের ঝঁকি রয়েছে শরীরে ভিটামিন সি এর অভাবে। ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয় লেবু জাতীয় ফল খেলে। ইনসুলিনের মতো কাজ করে কমলা, লেবু, জাম্বুরা এবং লাইমস।
৮। শস্য দানা
মানুষের শরীরে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় শস্য দানা রাখলে। ফলে সম্ভাবনা কমে ডায়াবেটিসের। শস্য দানা সাহায্য করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে।
৯। বাদাম
চীনাবাদাম প্রায় ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমায় ডায়াবেটিস ঝুকি। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বিষ্ময়করভাবে কাজ করে যদি খাদ্য তালিকায় ১ আউন্স কাজুবাদাম বা আখরোট থাকে।
১০। মটরশুটি
উপকারী একটি খাদ্য মটরশুটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য। গবেষণায় দেখা যায়, ২ ধরণের ডায়াবেটিসর ঝঁকি কমে প্রতিদিন ১ কাপ মটরশুটি খেলে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় চর্বিহীন প্রোটিন, শর্করা এবং আঁশ। এটি হৃদরোগের সম্ভাবনাও কমায়।
কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না – যে খাবার এড়িয়ে চলবেন
ডায়াবেটিস রোগীদের চর্বি, লবণ ও চিনিসমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া ভালো। তবে এসব খাবার এড়িয়ে চলা সব সময় সম্ভব হয় না। আমাদের সকলের জানা উচিত এগুলো কী ধরণের প্রভাব ফেলে আমাদের শরীরে ওপর।
কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না তার মধ্যে রয়েছে চিপ্স, কেক, চকলেট, বিস্কুট, মাখন, আইসক্রিম, কোমল পানীয়, অতিরিক্ত চিনি দেওয়া ইত্যাদি এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে। সুগারের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেয় এসব খাবার কারণ এতে প্রচুর ক্যালোরি রয়েছে।
তাই বিকল্প খুঁজে নিতে হবে চিনিমুক্ত, কম ক্যালরিযুক্ত খাবার। হার্টের স্বাস্থ রক্তের কোলেস্টরের মাত্রা বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে। এসব খাবারে প্রচুর লবণ থাকে বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাতকরন খাদ্যে। অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপ ও স্টোকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। লবণ দিনে মোট ১ চা চামচ ( ৬গ্রাম) এর বেশি খাওয়া উচিত নয়।
অতিরিক্ত খাদ্যাভ্যাস কমানোর উপায়
১। নজর রাখতে হবে কী পরিমাণ লবণ খাওয়া হচ্ছে খাবারে।
২। চেষ্টা করতে হবে চিনি ছাড়া চা-কফি খাওয়ার। এগুলোর বিকল্প হিসাবে ফলের জুস খাওয়া ভালো কারণ এতে অতিরিক্ত ক্যালোরি বা শর্করা থাকে না।
৩। কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না প্রথমেই বন্ধ করতে হবে কাঁচা লবণ খাওয়া খাবারের সাথে এর পরিবর্তে অন্যান্য মশলা, গোল মরিচের গুঁড়া ও হার্ব ব্যাবহার করা।
৪। বাড়িতেই বিভিন্ন সস ও ম্যারিনেট করার মশলা তৈরি করতে হবে এবং দোকানের সম ও মসলা মিক্স কিনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫। খুব কম সংখ্যক মানুষ কায়িক পরিশ্রম করেন বর্তমান সময়ে জীবনযাপনের ধরণের কারণে। আর এটি উসকে দেয় ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাকে। তাই প্রতিদিন নিয়মিত ১ ঘন্টা হাঁটা উচিত সকলকে এবং নিয়মিত ব্যায়ম এবং খেলাধুলো করতে হবে।
৬। ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস সবার আগে ছেড়ে দিতে হবে ডায়াবেটিস রোগ ঠেকাতে। কারণ এগুলো সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দেয় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার।
শেষকথা
ডায়াবেটিস রোগীদের সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হয় উপমহাদেশের বা অনেক শর্করা প্রধান খাবারের দেশে। কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না এই বিষয়ে সকলকে গুরুত্ব সহকারে জানতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদেরকে ভাতের বিকল্প হসিাবে সবুজ সবজি আর আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বাড়ির তৈরি খাবার খেতে হবে।
ডায়াবেটিস সংক্রান্ত প্রশ্ন- উত্তর / FAQ
১। ডায়াবেটিস কমানোর জন্য কি কি খেতে হবে?
উত্তরঃ পালং শাক, পাতা কপি, শালগম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস পাতা ইত্যাদি খাবারে ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম। গবেষণায় বলা হয়, সবুজ শাক সবজি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে। লেবু ও লেবু জাতীয় ফল ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কাজ করে।
২। বেশি বেশি চিনি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়?
উত্তরঃ চিনি বেশি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার সরাসরি কোনও যোগসূত্র নেই। তবে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার ডায়াবেটিস হবার ক্ষেত্রে পরোক্ষ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। “চিনি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার যেমন সরাসরি সম্পর্ক নাই- এটা যেমন সত্য, আপনি যদি বেশি মিষ্টি খেতে অভ্যস্ত হন, তাহলে মুটিয়ে যেতে পারেন।
৩। নিম পাতা খেলে কি ব্লাড সুগার কমে?
উত্তরঃ নিমের পাতা রক্তের সুগার লেভেল কমতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্ত নালীকে প্রসারিত করে রক্ত সংবহন উন্নত করে। ভালো ফল পেতে নিমের কচি পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। সকালে খালি পেটে ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিম পাতা বেটে খেলে তা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন-
ঘি এর উপকারিতা, ঘি খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ
প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা