পাকা আমের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সমূহ

পাকা আমের উপকারিতা

ঠিক এই সময় পাকা আমের ঘ্রাণে মম করে বাজার থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি বাড়ি। পাকা আম শুধু সুস্বাদু নয়, এটি অনেক পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ একটি ফল। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ লবণ, আঁশ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। 

পাকা আমে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১, বি-২, এবং ক্যারোটিনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এছাড়াও আমে প্রোটিন, ফ্যাট, এবং শ্বেতসার রয়েছে, যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং সুস্থ রাখে।

আপনি চাইলে পাকা আম সংরক্ষণ করে সারা বছর উপভোগ করতে পারেন। আম কাটার পর ফ্রিজে রেখে দিলে তা কিছু দিন ভাল থাকে। 

এছাড়া আম দিয়ে মিষ্টি, চাটনি, জ্যাম, আচার ইত্যাদি তৈরি করে সংরক্ষণ করতে পারেন। আজকের আর্টিকেলে পাকা আমের উপকারিতা, পাকা আমের পুষ্টিগুণ, পাকা আমে কোন ভিটামিন থাকে ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুনঃ- আনারসের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা

পাকা আমের উপকারিতা paka amer upokarita
পাকা আমের উপকারিতা

পাকা আমের উপকারিতা কয়েক ধরণের রয়েছে। পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিম্নে দেওয়া হলো-

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: পাকা আম ভিটামিন সি, এ, এবং অন্যান্য ২৫ ধরনের ক্যারোটিনয়েডস সমৃদ্ধ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • হজমে সহায়তা: পাকা আমের মধ্যে থাকা ফাইবার বা খাদ্যআঁশ, পানি ও এনজাইম হজমের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
  • চোখের জন্য উপকারী: আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে যা চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে লুটিন এবং জিয়াজানথিনও রয়েছে যা চোখের জন্য ভালো।
  • ত্বকের যত্ন: আম ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ত্বকের ফুসকুড়ি দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
  • হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য: আমে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে। এগুলো শরীরের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর ফলে ভালো থাকে হৃৎপিণ্ড।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক: আমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস উপাদান যা কোলন, স্তন, প্রস্টেট, লিউকেমিয়া প্রভৃতি ধরনের ক্যান্সার থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: আমে থাকে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-সি, প্যাকটিন ও আঁশ। এসকল উপাদান রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
  • এনার্জি বৃদ্ধি: আমে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
  • ওজন কমানো: আমে ক্যালোরি কম এবং আঁশ বেশি থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: আমে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • হাড়ের স্বাস্থ্য: আমে থাকা ক্যালসিয়াম আপনার হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) কম থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আম খাওয়া উপকারী।
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: আমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
  • ত্বকের বয়স হ্রাস: আমে থাকা ভিটামিন এ ত্বকের বয়স হ্রাসে সাহায্য করে।
  • চুলের স্বাস্থ্য: আমে থাকা ভিটামিন ই চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ: আমে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা গরমের দিনে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে।

উপরিক্ত সকল উপকারিতা সমূহ পাকা আমের উপকারিতা।

আম বেশি খেলে কি হয়

যদি জানতে চায় আম বেশি খেলে কি হয়?  আম পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু ফল হলেও, অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু অসুবিধা হতে পারে। 

পাকা আমের উপকারিতা থাকলেও অতিরিক্ত আম খাওয়ার কারণে কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়।

  • ওজন বৃদ্ধি: আমে প্রাকৃতিক শর্করা এবং ক্যালোরির পরিমাণ বেশি। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি: আমে থাকা শর্করা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে, যা ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন প্রতিরোধী ব্যক্তিদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • হজমে সমস্যা: অতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস, ফাঁপা ভাব, ডায়রিয়া, বা পেটে ব্যথা হতে পারে।
  • এলার্জি: কিছু মানুষ আমে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে পারে, বিশেষত যদি তাদের আমের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকে।
  • দাঁতের ক্ষতি: আমে থাকা শর্করা দাঁতের ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে যদি আম খাওয়ার পরপর দাঁত পরিষ্কার না করা হয়।
  • পাকস্থলীর অস্বস্তি: অতিরিক্ত আম খেলে পাকস্থলীর অস্বস্তি, পেটে গ্যাস বা ফাঁপা ভাব হতে পারে।

এই কারণে, আম উপভোগ করা ভালো হলেও, তা পরিমিত মাত্রায় খাওয়া উচিত। যদি আপনি কোনো অসুবিধা অনুভব করেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

পাকা আমের পুষ্টিগুণ

পাকা আম পুষ্টিকর এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি ফল। এটি শরীরের জন্য উপকারী। 

পাকা আমের উপকারিতা জানার পাশাপাশি পাকা আমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হবে।

  • ভিটামিন সি: পাকা আম ভিটামিন সি-এর উৎকৃষ্ট উৎস। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, এবং ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন এ: আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে, চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে।
  • আঁশ: পাকা আমে ভালো পরিমাণে আঁশ থাকে, যা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • পটাসিয়াম: পাকা আম পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
  • ক্যারোটিনয়েডস: আমে ক্যারোটিন, বিটা-ক্যারোটিন, এবং অন্যান্য ক্যারোটিনয়েডস থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের কোষগুলিকে সুরক্ষিত রাখে।
  • ভিটামিন বি-৬ ও বি-৯: পাকা আমে ভিটামিন বি-৬ এবং ফোলেট (ভিটামিন বি-৯) থাকে, যা মস্তিষ্ক এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
  • ম্যাগনেসিয়াম: আমে ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা হাড় ও পেশির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
  • এনার্জি: পাকা আমে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

পাকা আম খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। তবে, কোনও খাবারেরই অতিরিক্ত গ্রহণ না করা উচিত এবং একটি সুষম খাদ্যতালিকা অনুসরণ করা উচিত।

পাকা আমে কোন ভিটামিন থাকে

পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

ভিটামিন এ

  • চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী, রাতের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
  • ত্বকের কোষের বৃদ্ধি ও মেরামত করে, ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ভিটামিন সি

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • ত্বকের কোষের বৃদ্ধি ও মেরামত করে, ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে।
  • হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ভিটামিন ই

  • শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
  • ত্বকের বয়স হ্রাস করে, রিংকেল ও ফাইন লাইন দূর করে।
  • হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ভিটামিন কে

  • রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

ভিটামিন বি৬

  • শরীরের বিপাকক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

এছাড়াও পাকা আমে আরও অনেক ভিটামিন থাকে, যেমন

  • ভিটামিন বি১ (থায়ামিন)
  • ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন)
  • ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন)
  • ভিটামিন বি৫ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড)
  • ভিটামিন বি৯ (ফোলেট)

পাকা আম খাওয়ার মাধ্যমে আপনি এই সকল ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে পারেন।

পরিশেষে

পাকা আম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। পাকা আমের উপকারিতা অনেক, যা আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। নিয়মিত পরিমাণ মতো খেলে আম আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অসাধারণ উপকার করবে। 

প্রত্যেকটি জিনিসেরই উপকার ক্ষতি দুটি দিক রয়েছে। অতিরিক্ত পাকা আম খেলে অব্যশই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। আশা করি আজকের আর্টিকেলে পাকা আমের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি। ধন্যবাদ।

পাকা আমের উপকারিতা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ

১। পাকা আমে কি বেশি থাকে?

উত্তরঃ পাকা আমের ভেতর প্রায় ৮০ ভাগ পানি, সঙ্গে কিছু ভিটামিন ও মিনারেলস, চর্বি এবং বেশ কিছু পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। তবে এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই। আমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি–অ্যালার্জিক, অ্যান্টি–ক্যানসার, ইমিউনো মডুলেটরি উপকার রয়েছে। ১০০ গ্রামের একটি আমে মাত্র ৬০ ক্যালরি থাকে।

২। আম কখন খাওয়া ভালো?

উত্তরঃ তাসনিম আশিক জানান, আম খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে মধ্য সকাল অর্থাৎ সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের মাঝের সময়টা। এটা সবার ক্ষেত্রেই। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান বা ডায়াবেটিস যাদের আছে তারাও চেষ্টা করবেন মধ্য সকালে আম খেতে।

৩। রাতের খাবারের পরে আম নয়

উত্তরঃ রাতের খাবার খাওয়া হয়ে গেলে এরপর আর আম খাবেন না। কারণ আম হলো ভারী ধরনের ফল। এতে ক্যালোরির মাত্রা থাকে অনেকটা বেশি। রাতে খাবার খাওয়ার পরে আম খেলে সেই খাবার হজম করতে সমস্যা হবে, সেইসঙ্গে বাড়তে পারে ওজনও।

আরও পড়ুনঃ-

পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা ও সেবনবিধি

Leave a Comment