পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায়
বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । বাচ্চা মানেই চঞ্চল। তাদের এক জায়গায় বসানো খুবই কঠিন। বাচ্চারা সকল কাজে মনযোগী হলেও পড়াশুনার ক্ষেত্রে কোন বাচ্চাই মনযোগী হয় না। কিন্তু পড়াশুনার ক্ষেত্রে মনোযোগ বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চারা পড়াশুনায় অমনোযোগী হওয়ার কারনে প্রত্যেক বাবা মা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে।
প্রায় সকল বাবা মা বলে তাদের বাচ্চারা পড়ায় অমনোযোগী। বাচ্চাদের পড়ায় মনযোগী করার জন্য কিছু কৌশল অনুসরণ করলেই বাচ্চাদের মনযোগ তৈরি করা সম্ভব। এছারা বাচ্চার জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য ও মনোযোগ বাড়াতে এই দোয়া টি শিখিয়ে দিন। দোয়াটি হলোঃ
উচ্চারনঃ রাব্বি জিদনি ইলমা।
অর্থঃহে আমার পালন কর্তা! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।
মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় সমস্যা কাটাতে যে সকল বিষয়ে জোর দিতে হবে সেগুলো হলোঃ
- রুটিন তৈরি
- বাবা মায়ের দায়িক্ত
- সঠিক স্থান নির্বাচন
- ইন্ডোর গেমস
- অংকের কেরামতি
- খেলার সময় দেয়া
- বাচ্চার পাশে বই পড়া
- নিয়মিত স্কুলে যেতে উৎসাহ দেয়া
- আঁকতে দেয়া
- বেড়াতে নিয়ে যাওয়া
- উৎসাহ ও প্রশংসা করা
- গল্প বলা
- মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখুন
বাচ্চাদের পড়ায় মনযোগী করার জন্য কিছু উপায় মেনে চলতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলঃ
রুটিন তৈরি
বাচ্চাদের জন্য রুটিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাদের প্রতিদিন দিনে দুইবার পড়তে বসার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এবং সেই রুটিন বাচ্চাকে সাথে নিয়ে তৈরি করতে হবে। বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করতে হবে তার দিনের কোন কোন সময় পড়তে ভালো লাগে। সেই সময় অনুযায়ী বাচ্চা কে পরানো উচিত। নয়তো অন্য কারও সময় অনুযায়ী পরাতে বসলে সেই সময় বাচ্চার মনোযোগ পড়াশুনায় নাও থাকতে পারে। বাচ্চার সময়টায় অন্য কিছু করার ইচ্ছে করতে পারে। এতে পড়াশোনায় মনোযোগ আসবে না। তাই বাচ্চার পছন্দের সময় অনুযায়ি রুটিন করে এবং সেই রুটিন টাইমে বাচ্চাকে পড়তে বসালে বাচ্চার পড়াশুনায় মনোযোগ আসবে। এই রুটিন অনুযায়ী পড়ালে কিছু দিনের মধ্যেই বাচ্চার পড়াশুনায় মনোযোগী হবে।
বাবা মায়ের দায়িক্ত
বেশিরভাগ পরিবারে দেখা যায় পরিবারের বিভিন্ন কাজে ব্যাস্ত হয়ে বাবা মা বাচ্চাদের পড়াশোনার বিষয়টা খেয়াল রাখতে পারে না। এতে করে বাচ্চাদের পড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। তাই পরিবারে যারা থাকে সবাই কিছুটা সময় বের করে বাচ্চার পড়ার দায়িত্ব নিলে বাচ্চাদের পড়তে ভালো লাগবে এবং কথার ফাঁকে, কাজের ফাঁকে, খেলার ছলে পরিবারের সবার দায়িত্ব নিতে হবে পড়ানোর। এতে করে বাচ্চা কোন ফাঁকে কোনটা শিখছে বুঝতে পারবেনা। এছারা বাবা মায়ের উচিত বাচ্চার সঙ্গে কথা বলা। বাচ্চার কথা মন দিয়ে শুনা। মা-বাবা ধীরস্থির হয়ে, মন দিয়ে বাচ্চার কথা শুনলে স্বভাবতই ওর অতিরিক্ত ছটফটে ভাব কমে আসবে।
বাড়ির পরিবেশ শান্ত ও স্বচ্ছন্দ থাকে, তাহলে বাচ্চার স্বভাবেও তার প্রভাব পড়ে।
সঠিক স্থান নির্বাচন
বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য কোলাহল মুক্ত ও নির্জন শান্তি পূর্ণ জায়গা নির্বাচন করা উচিত। এমন জায়গায় বাচ্চাকে পোড়ানো উচিত যাতে বাচ্চার মনোযোগ নষ্ট না হয়।
ইন্ডোর গেমস
এখন অসংখ্য ইন্ডোর গেমস বই পাওয়া যায় যা বাচ্চার কগনিটিভ স্কিল বাড়ায়। যেমন নানা ধরনের অ্যাকটিভিটি বুক, বিল্ডিং ব্লকস, পাজলস ইত্যাদি। বর্তমানে এই ধরনের খেলা বা বই ওর হাতে তুলে দিলে মনোযোগের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। ফলে বাচ্চারা খেলার ছলে অনেক কিছু শিখতে পারবে।
অংকের কেরামতি
ছয় বছর থেকেই বাচ্চাকে নিয়মিত কিছুটা সময় ধরে অঙ্ক কষার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অঙ্ক মানে শুধুই সিলেবাসের অঙ্ক নয়। পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বইয়ের অংক কষতে দেয়া উচিত। ধাঁধার সমাধান করার ঢঙে অংক করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনোযোগ বাড়াতে অংক হয়ে উঠতে পারে তুরুপের তাস।
খেলার সময় দেয়া
বাচ্চাদের অবশ্যই খেলার সময় দেয়া উচিত। কারণ খোলা আকাশের নিচে খেলাধুলা করলে বাচ্চাদের মনসংযোগ বৃদ্ধি পায়। পড়াশুনার বিষয়ে যেমন খেয়াল রাখা উচিত তেমনি বাচ্চাদের খেলাধুলার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত। পড়ার সময় পড়া এবং খেলার সময় খেলতে দেয়া প্রত্যেক মা বাবার দায়িক্ত।খেলার জন্য বাচ্চার স্কুলের সময়টা বেশি ভূমিকা রাখে। স্কুলের সময় যদি মর্নিং টাইমে হয় তাহলে বাচ্চাকে সকালে পড়তে বসানো উচিত না। স্কুল থেকে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর তাকে একটু খেলতে দেয়া উচিত। তাহলে বাচ্চারা একটা রুটিন এর মধ্যে আসবে। খেলার সময়ের জন্য যেমন অপেক্ষা করে তেমনি পড়ার সময়ের জন্য অপেক্ষা করবে।
আরও পড়ুনঃ সুস্থ জীবনের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা
বাচ্চার পাশে বই পড়া
বাচ্চারা বড়দের যা দেখে তাই করতে আগ্রহি হয়। অনেক মায়েদের দেখা যায় বাচ্চাকে পড়তে বসিয়ে বাচ্চার পাশে বসে মোবাইল টিপছে। এতে বাচ্চাদের মনোযোগ মোবাইলের দিকে যায়। তাই বাচ্চাকে পড়তে বসিয়ে পাশে একটা বই নিয়ে বসা উচিত। যখন বাচ্চা দেখবে তার মা পড়াশোনা করছে তখন তারও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
নিয়মিত স্কুলে যেতে উৎসাহ দেয়া
বাচ্চাকে প্রতিদিন স্কুলে যেতে উৎসাহ দেয়া উচিত। এতে করে প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে পারবে। বাচ্চা প্রতিদিন স্কুলে গেলে পড়ার একঘেয়েমি দূর হবে। ক্লাসের সহপাঠীদের সাথে একসাথে পড়াশোনা করলে পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। যখন সে দেখবে তার সহপাঠীরা তার থেকে বেশি পড়া পারে তখন সেই বাচ্চার মাঝে কম্পিটিশন জাগবে এবং পরে সে নিজে থেকেই পড়ার প্রতি আগ্রহ জাগবে। বাচ্চা নিজে থেকেই তার সেই সহপাঠীদের চেয়ে আরো ভালো করার চেষ্টা করবে।
আঁকতে দেয়া
শিশুরা বিভিন্ন জিনিস আকতে ও রং করতে পছন্দ করে। বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগ বাড়তে খাতা আর নতুন রং পেনসিল বক্স উপহার দিন। বাচ্চাকে বিভিন্ন জিনিস আঁকতে উৎসাহ দিলে বাচ্চার মেধার বিকাশ ঘটে । তাই বাচ্চাদের আঁকতে উৎসাহ দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বেড়াতে নিয়ে যাওয়া
বাচ্চাকে নিয়ে মাঝে মাঝে বেরাতে নিয়ে গেলে বাচ্চাদের মন ভালো থাকে । পড়াশুনার একঘেয়েমি দূর হয়। এমন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া উচিত যেখানে বাচ্চারা আনন্দের সাথে অনেক কিছু শিখতে পারে। যার ফলে বেরানোর মাধ্যমেই বাচ্চারা অনেক কিছু শিখতে পারবে।
উৎসাহ ও প্রশংসা করা
বাচ্চাদের ছোট ছোট কাজ করতে দিন। এবং কাজ শেষে বাচ্চার প্রশংসা করুন। এতে বাচ্চার সকল কাজ করার আগ্রহ বাড়বে। উৎসাহ ও প্রসংসা শিশুর মনোযোগ বাড়াতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। তাই সামান্য উন্নতিতে প্রসংসা করুন।
গল্প বলা
ঘুমানোর আগে কিছুটা সময় বাচ্চাকে গল্প শুনানো উচিত। অভিনয় করে গল্প বললে বাচ্চারা আগ্রহী হয়। গল্পের মধ্যে প্রশ্ন করতে সুযোগ দিতে হবে। এতে করে বাচ্চার ধৈর্য ধরে শুনার প্রবনতা তিরি হবে। মনোযোগ বাড়াতে গল্প শুনানোর ভুমিকা গুরুত্ব পূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে পানি খাওয়ার উপকারিতা
মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখুন
বাচ্চাদের অবশ্যই মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখা উচিত। বাচ্চাদের মধ্যে সৃজনশীল ক্ষমতা থাকে। বাচ্চারা নিজের মেধা খাটিয়ে অনেক কিছু তৈরি করতে পারে। কিন্তু বাচ্চারা যদি একবার মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে তাদের সৃজনশীল ক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। এমন নয় যে মোবাইল ফোনের মধ্যে সব কিছু খারাপ। বাচ্চারা তো ভালো মন্দ বুঝতে পারে না। বাচ্চাকে সবসময় মোবাইল হাতে দিয়ে রাখলে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবে না। কোনো কিছু শেখার থাকলে তখন মোবাইল হাতে দিন এছাড়া বাচ্চাদের মোবাইল হাতে দেওয়া উচিত নয়।
আরও জানুন ছেলে ও মেয়েদের আকিকার দেওয়ার সঠিক নিয়মঃ
নবজাতক শিশুর কল্যাণের উদ্দেশে করা হয়। আকিকা আরবি শব্দ। অর্থঃকর্তন করা। আকিকা করা সুন্নত। আকিকা হলো শিশুর অধিকার। নবজাতক শিশুর জন্য আকিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
আকিকার প্রথা জাহেলী যুগ থেকেই প্রচলিত আছে। মাওয়ারদী বলেন, ‘আকীকা বলা হয় ওই পশুকে ইসলাম পূর্বযুগে আরবা যা সন্তান ভূমিষ্ট হলে জবাই করত। এতে ছিল ধর্মীয়, নাগরিক ও আত্মিক অনেক উপকারী দিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই তা অব্যাহত রাখেন এবং মানুষকে এতে উদ্বুদ্ধ করেন। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক ছেলে ও মেয়েদের আকিকার দেওয়ার সঠিক নিয়ম
উপসংহার
বাচ্চাদের পড়ায় মনযোগী করতে টেনশন করা উচিত না। বাচ্চাদের বুঝিয়ে ও কৌশল অনুযায়ী পড়াশুনায় মনযোগী করতে হবে।
আপনার বাচ্চাকে আপনার থেকে ভালো কেউ বুজবে না। তাই বাচ্চাকে ভয় না দেখিয়ে,বাচ্চার সাথে রাগারাগি না করে তাদের সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলে বুঝিয়ে পড়াশুনায় মনযোগী করতে হবে। উপরিক্ত আলোচনা আপনার পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা রাখবে।