পানি খাওয়ার উপকারিতা
দৈনন্দিন জীবনে পানির গুরুত্ব অপরিসিম। পৃথিবীতে জীব জগত টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি হচ্ছে পানি । এটি মানুষের প্রত্যাহিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ যা ছাড়া মানব জীবন কল্পনাও করা যায় না । তবে এই অতীব প্রয়োজনীয় জিনিসটির আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পানি খাওয়ার উপকারিতা গুরুত্ব কতখানি তা নিচে আলোচনা করা হলো :
দৈনন্দিন জীবনে পানির গুরুত্ব বোঝাতে একটি প্রবাদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং সেইটি হলো “ পানির অপর নাম জীবন । “ আর এই কথাটির যথেষ্ট যর্থাথতাও রয়েছে । তবে পানির গুরুত্ব বুঝতে হলে আমাদের পানি সম্পর্কে কিছু সাধারন বিষয় অবশ্যই জানতে হবে ।
পানি
পানি এমন একটি রাসায়নিক পর্দাথ যা গন্ধহীন, স্বাদহীন , বর্ণহীন এবং স্বচ্ছ । এটি উদ্ভিদ কোষ, প্রাণী কােষ ও বারি মন্ডলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান । সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হয় পানি প্রত্যক্ষ ভাবে জীবের কোনো শক্তি জোগায় না বলে মনে হয় । কিন্তু বিজ্ঞান মতে, পানি ছাড়া জীবের বেঁচে থাকা এবং জীবের অস্তিত্ব উভয়ই অসম্ভব । এই জন্য বিজ্ঞানীরা যখন পৃথিবীর বাহিরে অন্যান্য গ্রহে জীবের অস্তিত্ব আছে কি না সে বিষয়ে জানার জন্য প্রথমে জানতে চেষ্টা করেন যে – সেখানে পানির অস্তিত্ব আছে কি না । কারন যেখানে পানি আছে সেখানে জীবের অস্তিত্ব সম্পর্কেও আশাবাদী হওয়া যায় ।
ইউপ্যাক অনুযায়ী পানির রাসায়নিক নাম হাইড্রোজেন মনোক্সাইড । আর এর সংকেতিক চিহ্ন হলো H2O অর্থাৎ এতে দুটি হাইড্রোজেন অণু এবং একটি অক্সিজেন অণু রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা
পানির সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য
বিশ্বব্যাপী চার ভাগের তিন ভাগই পানি। যার করা হিসেবকে পানির শতকরা ৭১.৪ শতাংশ দাড়ায়। থবে এত পানি থাকার শর্তে ব্যবহার করার জন্য পানির জন্য সীমিত। কারণ ভূপৃষ্ঠে বিদ্যমান পানির মধ্যে ৯৭ ভাগ পানিই রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠে। অন্য বিদ্যমান পানির ৯৭ ভাগই প্রকাশ। বাকি আর তিন ভাগের মধ্যে ২ ভাগ বরফ এবং ১ ভাগ সুপেয় ও ব্যবহারযোগ্য পানি ।
পানি যে একটি যৌগ তা আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৮ সালে এবং এটি আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী ক্যাভেন্ডিস । পানির পিএইচ মান হলো ৭.০ কারণ এর ক্ষারকত্ব বা অম্লত্ব কোনোটিই নেই ।
UNDC ১৯৯২ সালে বিশ্বে পানির পানির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে আসে এবং তারপর অর্থাৎ ১৯৯৩ সাল থেকেই পানির গুরুত্ব বোঝানোর জন্যই প্রতি বছর ২২শে মার্চ বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে পালন করা হয় । পানি খাওয়ার উপকারিতা এবার জেনে নেওয়া যাক দৈনন্দিন জীবনে পানির গুরুত্ব সম্পর্কে :
দৈনন্দিন জীবনে পানির গুরুত্ব
প্রতিদিন প্রায় সব ধরণের কাজে আমাদের পানি লাগবেই। এছাড়া সারাদিন আমরা যত ধরণের খাবার খাই, তার মধ্যে একমাত্র পানিই ক্যালরি,ফ্যাট,শর্করা ও চিনি মুক্ত। যদিও পানিতে কোনো পুষ্টি নেই তবে এটি জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
শরীরের পানির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে একটু বিশদ ব্যাখ্যাই বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার করবে-
১.দৈনন্দিন জীবনে মানব দেহে পানির গুরুত্ব
সব রকম প্রাণী ও উদ্ভিদ বেঁচে থাকার জন্য পানি অবশ্যই প্রয়োজন । পানি ছাড়া পৃথিবীতে জীবন বা কোনো জীব সত্তা থাকতে পারে না। মানব দেহেও পানির গুরুত্ব অপরিসীম । মানব শরীরের ওজনের ৬০ শতাংশই পানি দিয়ে তৈরী । তাই পানি আমাদের জীবনকে যে ভাবে প্রভাবিত করে তা নিচে উল্লেখ করা হলো :
পানি মুখে লালা তৈরি করতে সাহায্য করে
মুখে লালা তৈরির প্র্রধান উপাদান পানি । কঠিন খাবার ভেঙে ফেলা এবং মুখ সুস্থ রাখার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ । শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় পানি কম গ্রহণ করলে মুখ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শুষ্ক হয়ে যায় । তাই দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি গ্রহণ করতে হবে ।
পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
হাইড্রেটেড থাকা এবং শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গরম পরিবেশে যখন ঘামে তখন আমাদের শরীরযখন ঘামে তখন শরীর থেকে পানি কমে যায় । এই পানির অভাব পূরণ না করলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যার ফলে হয় ডিহাইড্রেশন । অর্থাৎ পানির অভাব শরীরে ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি করে, যার ফলে ইলেক্ট্রোলাইট এবং প্লাজমার মাত্রা কমে যায়। তাই আমরা বলতে পারি যে অন্য কোনো উপাদানই শরীরে পানির অভাব পূরন করকে পারে না ।
এটি মানব দেহের শক্তির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে
পানি আমাদের মেটাবলিক রেট বাড়াতে সাহায্য করে । খেলাধুলা করার সময়, ওয়ার্কআউট বা ওয়ার্ম আপ করার সময় অধিক পানি পান করা উচিত কারণ এই সময় শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায় । কিন্তু ঠিক পরিমাণে পানি গ্রহণ এবং ওয়ার্কআউট এর সমন্বয় ঘটলে এতে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
এটি ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জ্য নির্গত করে
পানির কারণে শরীরে ঘামের সৃষ্টি হয় । আর ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে দূষিত ও অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর তা বের হয়ে যায়। এই জন্য সব সময় পরিমিত পানি গ্রহণ করা উচিত ।
আরও পড়ুনঃ সুস্থ জীবনের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা
পানি টিস্যু, মেরুদণ্ড এবং জয়েন্টগুলিকে রক্ষা করে
পানি আমাদের জয়েন্ট, মেরুদণ্ড এবং টিস্যুকে লুব্রিকেট এবং কুশন করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের শারীরিকভাবে আরও সক্রিয় হতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস কমাতে এবং আর্থ্রাইটিসের মতো অবস্থার কারণে সৃষ্ট অস্বস্তি কমায় ।
পানি হজম সমস্যা দূর করে
অনেক সময় আনহেলদি ডায়েট এবং নিয়ম মাফিক খাবার গ্রহণ না করার কারণে শরীরে হজমের সমস্যা দেখা দেয় । যদি তাড়াতাড়ি এই সমস্যার জন্য চিকিৎসা না নেয়া হয় তবে কোষ্ঠ কাঠিন্যও দেখা দিতে পারে । তবে নিয়ম মেনে পরিমিত পানি পান করলে এই সমস্যা সহজেই দূর করা যায়।
শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে
আমরা জানি যে পানি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন অণুর সমন্বয়ে গঠিত । পানি গ্রহণ করার ফলে পানিতে বিদ্যমান অক্সিজেন পানির সথে আমাদের দেহে প্রবেশ করে এবং রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয় । আর এই অক্সিজেনের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
২. কৃষি কাজে পানির গুরুত্ব
বাংলাদেশে একটি কৃষি নির্ভর দেশ তার কারন এখানকার অর্থনীতি মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল । আর কৃষি কাজের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় উপাদান হলো পানি। কারণ কৃষি ফসল ফলানোর সময় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পানির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ।
যে কোনো ফসলের উৎপাদন কেমন হবে তা নির্ভর করে ঐ ফসলের বীজ বপনের সময় থেকে তার কর্তন করার সময়ের আগে মুহুর্ত পর্যন্ত তাতে সঠিক পরিমাণে পানি প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না তার ওপর ।
৩. ঘরের কাজে পানির গুরুত্ব
পানি ছাড়া দিনের একটি মুহুর্তও কল্পনা করা যায় না । প্রতিদিনের রান্নার কাজ থেকে শুরু করে ঘর পরিষ্কার সহ যে কোনো ধরনের কাজ করতে গেলে পানি অবশ্যই প্রয়োজন হয় । এই প্রাত্যাহিক কাজে পানির গুরুত্ব অনেক বেশি ।
৪. পানি নির্ভর জীবিকা
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ । এ দেশে আনাচে কানাচে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে নদী । আবার এ দেশের এক দিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর । এই নদী এবং উপকূলীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষই জেলে । অর্থাৎ তারা নদী এবং সমুদ্র থেকে মাছ মেরে সেই মাছ বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে । যেহেতু নদী ও সমুদ্রের মূল উপাদান পানি তাই বলা যায় তাদের জীবিকাও পানি নির্ভর । এই জন্য বলা যায় , বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ পানির ওপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে ।
আবার মাছ চাষ করার ক্ষেত্রেও পানি গুরুত্বপূর্ণ । দেশের জনসংখ্যার উল্লেখ যোগ্য একটি অংশ মাছ চাষ করার মাধ্যমে স্ব কর্মসংস্থান ঘটিয়েছে ।
দৈনন্দিন জীবনে পানির গুরুত্বর পাশাপাশি অনেক ফলফলাদির গুরুত্ব রয়েছে যার মধ্যে কলা ও পেয়েরা অন্যতম
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সবাই জানেন। অন্ত্রের সুস্থতায় কলার গুরুত্ব অনেক। তবে নিয়মিত কলা খাওয়া দেহে আরও নানাবিধ উপকার করে যা অনেকেরই অজানা। এই ফলে থাকা মিনারেল, ভিটামিন আর ফাইবার শরীরের জন্য খুব প্রয়োজন। এছাড়া কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। একটি ছোট ও মাঝারি মাপের কলা থেকে শরীরে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম প্রবেশ করে। তাই বলা যায় কলাতে প্রচুর পরিমানে উপকার রয়েছে।
বাজারে প্রায় সারা বছরই মেলে পেয়ারার দেখা। ভিটামিন সমৃদ্ধ এই ফলটি খেতে ভালোবাসেন না, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দেশি ফলগুলোর মধ্যে পেয়ারা অন্যতম জনপ্রিয় ফল। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ পেয়ারাতে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। পেয়ারাকে আমরা দেশিও আপেল বলে থাকি। কারন এই ফলটি কম দাম আর সব সময় পাওয়া যায়।
শেষকথা
পরিশেষে বলা যায়, পানি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ এবং পানি ব্যতিত জীব ও জীবন কখনোই সম্ভব নয় । তাই দৈনন্দিন জীবনে পানি খাওয়ার উপকারিতা গুরুত্ব অবর্ণনীয় ।