কলা খাওয়ার উপকারিতা kola khawar upokarita

কলা খাওয়ার উপকারিতা

আমরা সকালের নাস্তাতে যেই সব খাবার খাইনা কেন তার মধ্যে কলা অন্যতম। কলা একটি স্বাস্থ্যকর খাবার এবং কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কলাতে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম রয়েছে। কলাতে থাকা ক্যালরির পরিমান ১০০। এছাড়াও প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। কলা একটি সহজলভ্য ফল। যা ১২ মাস এই পাওয়া যায়। আর এই কলা খাওয়ার বেশকিছু উপকারিতাও রয়েছ। পাকা ও কাঁচা কলা উভয়ই শরীরের জন্য উপকারী। পাকা কলা আমরা সাধারণত ফল হিসেবে খেয়ে থাকি এবং কাঁচা কলা সবজি হিসেবে খেয়ে থাকি। কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুন রয়েছে যা বিভিন্ন রোগ কে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা উপকারিতা

কারণ কলা খাওয়ার উপকারিতা অসিম কলা ত্বককে বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। তাই কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে সম্পুর্ন পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

রক্তশূন্যতা কমাতে কলা

রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করতে কলা একটি উপকারি ফল। দেহে লৌহের ঘাটতি দেখা দিলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দেয়। কলাতে রয়েছে আয়রন যা রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিন তৈরিতে কাজ করে। আর আয়রনের ঘাটতিতে রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে। তাই নিয়মিত কলা খেলে রক্তের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করতে সম্ভব হবে।

শরীরের শক্তি যোগায়

দেহের শক্তি বাড়াতে কলার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বিভিন্ন চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে প্রাথমিক শক্তি পাওয়া গেলেও তা অতিদ্রুত শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কলাতে থাকা কার্বোহাইড্রেইট শক্তি যোগায় এবং তা ধীরে ধীরে শেষ হয়। তাই শরীরে দুর্বলতা দেখা দিলে কলা খাওয়া যেতে পারে যা শরীরের শক্তিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

মানসিক চাপ কমায়

কলা মুড ভালো করতে সাহায্য করে, বিষণ্ণতা কমায়। কলার মধ্যে থাকা উপাদান মস্তিষ্কে সুখী হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। তাই বিষণ্ণতায় ভুগলে, মানসিক চাপ কমাতে ফ্যাটি ফুডের চেয়ে কলা বেশি প্রয়োজনীয়। কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি যা স্নায়ুকে শান্ত করে। তাই নিয়মিত কলা খেলে অবসন্নতা ও দুর্বলতা দূর হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় কলার প্রয়োজনীয়তা

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা । কলা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। ভালোভাবে প্রসব হওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কলা খাওয়া প্রয়োজন। কেননা, এটি গর্ভাবস্থায় সকালের ক্লান্তি ভাব দূর করে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের জ্বর হলে ওষুধের বদলে অনেক সময় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কলা খাওয়ানো হয়।


আরও পড়ুনঃ কমলা খাওয়ার উপকারিতা


উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কলায় কম সোডিয়াম এবং উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকার ফলে কলা খেলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নিয়মিত কলা খেলে ৪০ শতাংশ হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়

কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি প্রখর করে। গবেষকদের মতে, যেসব মানুষজন সকালের নাস্তায় বা বিকেলের নাস্তায় কলা খায়, তাদের মনোযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

কলার মধ্যে রয়েছে ফাইবার/আঁশ যা হজমে সাহায্য করে। হজমের গণ্ডগোল ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে নিয়মিত কলা খাওয়া উচিত। এতে থাকা ফাইবার এসব সমস্যা দূর করে।

পেটের সমস্যা কমাতে

কলা নরম ও মিহি হওয়ায় পেটের সমস্যায় খুব উপকারি খাবার। এমনকি খারাপ পেটের রোগেও কলাই একমাত্র ফল যা নির্বিঘ্নে খাওয়া যেতে পারে। অস্বস্তি কমিয়ে কলা আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। পেটের সমস্যার ক্ষেত্রে কাঁচা কলার তরকারি খুব এই উপকারি।

সুনিদ্রায় সাহায্য করে

কলায় থাকে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড যা সেরাটোনিন নামক হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এই হরমোন ঘুমের জন্য অত্যন্ত কার্যকারী।

কলা শরীরে প্রোবায়টিকের যোগান দেয়

প্রোবায়োটিক হলো উপকারী অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়া। প্রোবায়োটিক এর একটি অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস হল কলা। এতে রয়েছে ফ্রুক্টোওলিগোস্যাকারাইড(FOS) যা দেহে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোবায়টিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কলা খাওয়ার উপকারিতা

পরিশ্রম ও ব্যায়ামে শক্তি যোগায়

অনেকেই ব্যায়াম করার আগে কলা খেতে পছন্দ করেন। কেননা অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যেতে পারে, এক্ষেত্রে কলা শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। কলার পুষ্টিগুণ পেশি, লিগামেন্ট ও রগ শক্তিশালী করে। তাই কোনো শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার পূর্বে কলা খাওয়া অত্যন্ত জরুরী, এতে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করে

ধূমপান ছাড়তে যে কলা কতটা কার্যকারী তা অনেকের এই অজানা। কারণ কলায় থাকা ভিটামিন বি৬, বি১২, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম শরীর থেকে নিকোটিনের প্রভাব দূর করতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি ধূমপানে বেশি আসক্ত হয়ে থাকেন এবং ধূমপান ছাড়তে চান তাহলে নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস করুন এতে উপকৃত হবেন।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী কোষের সিংহভাগই থাকে অন্ত্রে বা হজমতন্ত্রে। কলাতে বিদ্যমান রেজিস্ট্যান্ড স্টার্চ মানুষের হজমতন্ত্রে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি করে যা পরবর্তীতে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কলায় বিদ্যমান ভিটামিন সি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

 


আরও পড়ুনঃ  খাঁটি ঘি খাওয়ার উপকারিতা


কিডনি সুস্থ রাখে

কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য কলায় থাকা পটাশিয়াম অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন কলা খেলে কিডনি ভালো থাকে। কিডনির স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পটাশিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে আপনি যদি কিডনি রোগী হয়ে থাকেন অথবা আপনার কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কলা খাবেন। কারন, যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পটাশিয়ামের লেভেলটাকে নিয়ন্ত্রণ করে গ্ৰহন করতে হয়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য

কলা বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। কলা মিষ্টি ফল হওয়া সর্তেও সুগার বাড়ায় না। কলার জিআই ভ্যালু কম হওয়ায় ডায়াবেটিসের রোগীরাও নিশ্চিন্তে কলা খেতে পারেন।

কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে কলা

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কলা খেলে আপনার কোলন ক্যান্সার এর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। যদি আপনার এই ধরনের কোন সমস্যা থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস করুন।

দূষণের ক্ষতি থেকে বাঁচায়

এন্টি অক্সিডেন্ট এর চমৎকার উৎস হল কলা। আপনার শরীরে, সারাদিন দূষণ থেকে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় এবং এর ফলে শরীরের যে সেল ড্যামেজ হয়, এজন্য শরীরে বড় ধরনের রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। নিয়মিত কলা খেলে এই সমস্যা গুলো আপনি অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করা যায়। কলা খেলে শারীরিকভাবে যেমন সুস্থ থাকা যায়, তেমনি ভালো থাকে ত্বক ও চুল।

এছাড়াও কলা হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, মাথা ব্যথা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কলা খাওয়ার অপকারিতা

কলা খওয়ার অপকারিতা বলতে তেমন কিছু নাই। তবে সবকিছুর ভাল দিক থাকার পাশাপাশি খারাপ দিকও রয়েছে। ঠিক তেমনি কলারও বেশ অপকারিতা রয়েছে যা নিয়ে এখন আমরা আলোচনা করব

অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি

কলাতে শর্করা ও ক্যালরি থাকায় এটি খেলে ওজন বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন একটি মাঝারি পাকা কলায় ১০৫ ক্যালরি শক্তি থাকে। যার ফলে প্রচুর পরিমানে কলা খেলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

মাইগ্রেনের সমস্যা

কলাতে টাইরামাইন নামে এক ধরনের উপাদান রয়েছে। মাইগ্রেনের কারণের মধ্যে টাইরামাইন অন্যতম। তাই যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তাদের কলাতে থেকে দূরে থাকা ভালো

দাঁতের ক্ষয় করে

কলাতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকায় বেশি খেলে দাঁতের ক্ষতি হয়। এমনকী দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য কলা নাকি চকলেটের থেকেও বেশি ক্ষতিকর।

হাইপারক্যালেমিয়া বৃদ্ধি

রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে এই রোগ হয়। এই রোগে আক্রান্তরা সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে থাকে। কলায় পটাশিয়াম থাকায় বেশি খেলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডায়াবেটিস বৃদ্ধি

কলাতে প্রচুর পরিমানে সুগার থাকায় অত্যধিক মাত্রায় কলা খেলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থানহা

উপসংহার

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আমদের আজকের এই আলোচনা থেকে আপনারা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা সম্পর্কে অনেক নতুন কিছু তথ্য জানতে পারবেন যা আপনাদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগবে। আর কলা খাওয়ার উপকারিতা সত্যিকার অর্থে পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

 

আরও পড়ুন-

আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।