কলা খাওয়ার উপকারিতা
অনেকেই সকালের নাস্তায় বা টিফিনে কলা খান। শুধু খাওয়ার জন্য নয়, প্রতিদিন কলা খাওয়ার ফলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কলায় অনেক ভিটামিন রয়েছে। তাই চিকিৎসকরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। শরীরে শক্তির ঘাটতি পুরনে কলা কার্যকর।
এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ ও ভাল পরিমানে ডায়েটরি ফাইবার থাকে। কলায় ফ্যাট বা কোলেস্টেরল নেই। তাই বলা যায় কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। একে এনার্জির পাওয়ার হাউজ বলে।
হেলথ এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিদিন কলা খেলে শরীর ও মস্তিস্কের স্বাস্থ্যে উন্নতি হয় এবং চাপ কমাতে সহায়তা করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা যোগ করলে আপনার ফিটনেস উন্নত হবে। আজকের আর্টিকেলে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
কলার উপকারিতাসমূহ
কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানে না। কলা বিভিন্ন ভাবে দেহের উপকার করে।
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কলা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, কারণ কলায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। এটি শরীরের ফ্রি রেডিকেল কমায় এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কোষগুলি রক্ষা করে।
২। ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ
কলা ভিটামিন বি৬ এর একটি ভালো উৎস, যা মস্তিষ্কের বিকাশ ও কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি সেরোটোনিন ও নোরপাইনফ্রাইন নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদনে সাহায্য করে, যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণ ও ভালো ঘুম নিশ্চিত করে। এটি কলা খাওয়ার উপকারিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
৩। মলাশয়কে সুস্থ রাখে
নিউ ইয়র্কের পুষ্টি পরামর্শক ও ওয়েলনেস ওয়েবসাইট ‘দ্যা আনউইন্ডার’য়ের সম্পাদক জন ফকস ২০১৭ সালের এক পুষ্টি গবেষণা উল্লেখ করে বলেন, কলায় ‘প্রতিরোধী শ্বেতসার’ থাকে।
অনেকেই শ্বেতসারকে নেতিবাচকভাবে দেখেন, কিন্তু এটি শর্ট চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড উৎপাদনে সহায়তা করে, যা মলাশয়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই কলা খাওয়া মলাশয়ের সুস্থতার জন্য উপকারী।
৪। লবনের ভারসাম্য ঠিক থাকে
নিউ ইয়র্কের ‘ইন্সটিটিউট অফ কালিনারি এডুকেশন’য়ের পুষ্টি বিভাগের পরিচালক সেলিন বিচম্যান বলেছেন, “কলার পটাসিয়ামের মাত্রা আমাদের খাদ্যতালিকায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত যদি অন্য খাবারের সঙ্গে বেশি লবণ গ্রহণ করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “কলা পটাসিয়ামের ভালো উৎস, যা সোডিয়ামের নেতিবাচক প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে পুষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করে।”
“পটাশিয়াম ভালো মাত্রায় খাবার তালিকায় যোগ করা হৃদস্বাস্থ্য ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে,” তিনি যোগ করেন।
৫। হজমে সাহায্য করে
কলাতে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড উপাদান আছে, যা প্রতিদিন খেলে হজম ভালো হয় ও অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমে। এর ফাইবার সামগ্রী পাচনতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৬। পেশি গঠনে সাহায্য করে
কলা একটি সুবিধাজনক এবং বহনযোগ্য স্ন্যাক্স, যা পেশীর ক্র্যাম্প প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি শক্তি এবং পটাশিয়ামের জন্য ভালো কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য প্রদান করে। ব্যায়াম-পরবর্তী স্ন্যাক্স হিসেবে কলা সহজ বিকল্প হতে পারে।
৭। চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখে
কলায় ভিটামিন এ আছে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৮। মানসিক চাপ কমায়
কলায় ডোপামিন থাকে, যা মস্তিষ্কে ডোপামিন উৎপাদনে সহায়ক। ডোপামিন আনন্দের অনুভূতি আনতে সাহায্য করে এবং চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ।
৯। উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কলায় কম সোডিয়াম এবং উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকার ফলে কলা খেলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নিয়মিত কলা খেলে ৪০ শতাংশ হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
১০। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি প্রখর করে। গবেষকদের মতে, যেসব মানুষজন সকালের নাস্তায় বা বিকেলের নাস্তায় কলা খায়, তাদের মনোযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
১১। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কলার মধ্যে রয়েছে ফাইবার/আঁশ যা হজমে সাহায্য করে। হজমের গণ্ডগোল ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে নিয়মিত কলা খাওয়া উচিত। এতে থাকা ফাইবার এসব সমস্যা দূর করে।
১২। কলা শরীরে প্রোবায়টিকের যোগান দেয়
প্রোবায়োটিক হলো উপকারী অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়া। প্রোবায়োটিক এর একটি প্রাকৃতিক উৎস হল কলা। এতে রয়েছে ফ্রুক্টোওলিগোস্যাকারাইড (FOS) যা দেহে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোবায়টিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৩। কিডনি সুস্থ রাখে
কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য কলায় থাকা পটাশিয়াম অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন কলা খেলে কিডনি ভালো থাকে। তবে আপনি যদি কিডনি রোগী হয়ে থাকেন অথবা আপনার কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কলা খাবেন। কারন, যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পটাশিয়ামের লেভেলটাকে নিয়ন্ত্রণ করে গ্ৰহন করতে হয়।
১৪। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
কলা বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। কলা মিষ্টি ফল হওয়া সর্তেও সুগার বাড়ায় না। কলার জিআই ভ্যালু কম হওয়ায় ডায়াবেটিসের রোগীরাও নিশ্চিন্তে কলা খেতে পারেন।
১৫। কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কলা খেলে আপনার কোলন ক্যান্সার এর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। তাই নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
কলা খাওয়ার উপকারিতা – সতর্কতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনই অতিরিক্ত কলা খেলে হতে পারে স্বাস্থ্যগত সমস্যা। তাই পরিমিত পরিমানে কলা খেতে হবে। কলার উপকারিতা সঠিকভাবে পেতে হলে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
১। কলাতে শর্করা ও ক্যালরি থাকায় এটি খেলে ওজন বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন একটি মাঝারি পাকা কলায় ১০৫ ক্যালরি শক্তি থাকে। যার ফলে প্রচুর পরিমানে কলা খেলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
২। কলাতে টাইরামাইন নামে এক ধরনের উপাদান রয়েছে। মাইগ্রেনের কারণের মধ্যে টাইরামাইন অন্যতম। তাই যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তাদের কলাতে থেকে দূরে থাকা ভালো
৩। কলাতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকায় বেশি খেলে দাঁতের ক্ষতি হয়। এমনকী দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য কলা নাকি চকলেটের থেকেও বেশি ক্ষতিকর।
৪। রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে এই রোগ হয়। এই রোগে আক্রান্তরা সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে থাকে। কলায় পটাশিয়াম থাকায় বেশি খেলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫। কলাতে প্রচুর পরিমানে সুগার থাকায় অত্যধিক মাত্রায় কলা খেলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থানহা
উপসংহার
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আমাদের আজকের এই আলোচনা থেকে আপনারা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা সম্পর্কে অনেক নতুন কিছু তথ্য জানতে পারবেন যা আপনাদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগবে। আর কলা খাওয়ার উপকারিতা সত্যিকার অর্থে পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।