ফেসবুক থেকে অর্থ উপার্জনের উপায়সমূহ facebook thake ortho uparjoner upaysomuh

ফেসবুক থেকে আয় করার উপায়

ফেসবুক থেকে আয় করার উপায় নিয়ে কিছু জানার পূর্বে আমাদের  ফেসবুক সর্বপ্রথম তার যাত্রা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যামব্রিজ ম্যসাচুসেটস থেকে ২০০৪ সালে। মার্ক জাকারবার্গ প্রথম দিকে শুধু হার্ভার্ডের ছাত্র ছাত্রীদের জন্যে ফেসবুক ব্যবস্থা চালু করেন ২০০৩ সালে, পরবর্তীতে ২০০৪ সালে সকলের ব্যবহারের জন্যে উন্মুক্ত করা হয় ফেসবুক। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যবহৃত মাধ্যম হলো এই ফেসবুক।

একদম শুরুর দিকে বা আজ থেকে ১০ বছর আগেও ফেসবুক শুধু নতুন বন্ধু তৈরি সহ অল্প কিছু ফিচার নিয়ে চলছিল কিন্তু বর্তমান সময়ে ডিজিটালাইজেশনের কারনে এর ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে এবং বাণিজ্যিকভাবে এর দৌরাত্ম অনেক গুনেই বেড়ে গেছে। বিজ্ঞাপন সংস্থা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবকিছুতেই ফেসবুকের ব্যবহার বেশ লক্ষ্যনীয়।

ফেসবুক থেকে আয় করার উপায় সুযোগ এখন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু হাতে একটি বেশি বা কম দামি ল্যাপটপ ও সঠিক কাজ জানলে এবং উপায় জানা থাকলে এর মাধ্যমে আয় করে আপনিও স্বাবলম্বী হতে পারেন।

ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়

চাইলেই রাতারাতি ফেসবুক থেকে অর্থ উপার্জন করার আশা করতে পারেন না। ফেসবুক থেকে ভালো উপার্জন করতে চাইলে আপনাকে পরিকল্পিত উপায়ে কিছু কাজ করতে হবে। আয়ের আগে আপনাকে আয়ের সম্ভাবনা তৈরি করতে হবে। কীভাবে ফেসবুক থেকে  প্রচুর পরিমানে অর্থ উপার্জন করা যায় তার কিছু কৌশল নিচে তুলে ধরা হলো। চলুন দেখে নেওয়া যাক


আরও পড়ুনঃ  ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার সঠিক উপায়


ব্র্যান্ড কোলাবরেশন

আপনি কি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন বা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে হাস্যরসাত্নক বিবরণ দিয়ে ভিডিও বানাতে পারেন?  তাহলে আপনার ভিডিও প্রচারের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাদের পণ্যের প্রচারের জন্যে আপনাকে যথাযথ সম্মানী দিয়ে আপনার সাথে কাজ করার চেষ্টা করবে। আপনার কাজ হবে আপনার ভিডিও বা ছবি পোস্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্যটি সকলের সামনে তুলে ধরা।

এ ক্ষেত্রে আপনার সম্মানী নির্ভর করবে আপনার দক্ষতা, মানুষের কাছে আপনার কন্টেন্ট এর গ্রহণযোগ্যতা কত তার ওপর। যদি রিচ ভালো হয় সেক্ষেত্রে ধীরে ধীরে পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করারও সুযোগ রয়েছে।

লাইভ প্রোমোটার

বড় বড় বিউটি ব্র্যান্ডগুলো এবং ফ্যাশন হাউজগুলো তাদের পণ্য এবং পোশাক আশাক সবার মাঝে তুলে ধরার জন্যে জনপ্রিয় এবং পরিচিত মুখদের মাধ্যমে তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি পৌঁছে দেন। আর লাইভ প্রোমোটাররা ফেসবুকের লাইভ অপশনের সাহায্যে লাইভে এসে লাখো লাখো মানুষের মাঝে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্যের প্রমোশন করে থাকে।

এই লাইভগুলোতে পণ্যের নিখুঁত বর্ণনা সহ, মুল্য এবং ডেলিভারি সংক্রান্ত সব তথ্য উল্লেখ করা থাকে। বিউটি হাউজগুলোর পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্যের ব্যবহার সরাসরি শরীরে প্রয়োগ করে দেখানো হয়। লাইভ সেশনের মাধ্যমে আগ্রহী হয়ে অনেক ক্রেতাই পণ্যের অর্ডার দিয়ে থাকেন।

পেজ মডারেটর

ফেসবুক এখন বাণিজ্যিক অগ্রগতির জন্যে বেশ সাড়া জাগানো একটি মাধ্যম। যেকোন ব্যবসায়কে ব্যবসা সফল করতে হলে এর সুযোগ কাজে লাগানো যায়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ভোক্তারা সরাসরি যোগাযোগ করে পণ্য সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে চায়। সেক্ষেত্রে চব্বিশ ঘন্টা উপস্থিত থাকার জন্যে লোকের দরকার হয়, যারা কিনা পণ্য সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে ক্রেতা বা ভোক্তাদের সাহায্য করবেন।

পণ্যের আকার, টেকসয়িতা, মূল্য, রঙের নিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয়ে সরাসরি কথা বলার জন্যেই পেজ মডারেটরের দরকার হয়। রেস্তোরার ক্ষেত্রে রেস্তোরার অবস্থান, খাবারে তালিকা, মূল্য, ডিস্কাউন্ট, অনুষ্ঠানের আয়োজন ইত্যাদি বিষয়ক তথ্য দিয়ে সাহায্য করে থাকেন পেজ মডারেটর।

স্বল্প মূলধনের ব্যবসায়

ছোটখাট ব্যাবসার মাধ্যমে লাখপতি হয়েছে এমন উদাহরণ অনেক। সামান্য কিছু মূলধন নিয়ে কয়েক বছরের মধ্যে বেশ ফুলে ফেঁপে উঠেছে এমন উদ্যোক্তার সংখ্যাও নেহাত কম না। আপনার সেই ছোট্ট ব্যবসায়টি হতে পারে রুচিশীল শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, সিজনভেদে সুয়েটার, শাল, জুতো, ঘড়ি, কস্মেটিকস, বাচ্চাদের খেলনা, ঘর সাজানোর পণ্য, চাদর, পর্দা, বাহারি ডিজাইনের বাসনপত্র আরো নানান কিছু।

রন্ধনশিল্পের প্রসার

আমাদের মধ্যে অনেকেই রান্না করতে ভালোবাসি, বিশেষ করে নারীরা এই দিকে পুরুষদের চেয়ে অনেকংশে এগিয়ে রয়েছে। রান্নার এই অভিজ্ঞতাকে চার দেওয়ালের মাঝে আটকে না রেখে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। রুচিশীল, মুখে লেগে থাকার মতো সুস্বাদু রান্না করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জায়গামত পৌছে দেওয়ার মাধ্যমে আপনি মাস শেষে বেশ ভালো অংকের অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

ফেসবুকের মাধ্যমে ঘরে বসে অর্ডার নিয়ে শুরু করা যায় এই ব্যবসায়। হোম ডেলিভারির অনেক চাহিদা এখন বাজারে, ঘরের খাবারের স্বাদ পেতে সবাইই ভালোবাসে তাই আপনার রান্নার জাদুকে কাজে লাগিয়ে আজই শুরু করতে পারেন রান্না করে খাবার ডেলিভারি দেওয়ার ছোট ব্যবসায়টি।

গ্রাফিক ডিজাইন

আপনি যদি ডিজাইনে পারদর্শী হন বা লোগো তৈরি করতে পারেন তাহলে সহজেই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে অনলাইনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তাদের নির্দিষ্ট কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। ফাইবার বা আপওয়ার্কের মাধ্যমে প্রোফাইল তৈরি করে প্রথমে স্বল্প অর্থের বিনিময়ে কাজ শুরু করে পরবর্তীতে বেশ বড় পারিশ্রমিকের বিনিময়ে উচ্চ পর্যায়ের মক্কেলের সাথে কাজ করা সম্ভব।

ভিডিও এডিটিং এবং মোশন ডিজাইন

 মানসম্মত ভিডিও এডিট এবং মোশন ডিজাইন করতে জানলে আপনার জন্যে দারুন সুযোগ অপেক্ষা করছে। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের প্রোমোশনাল ভিডিও বা বিয়ের অনুষ্ঠানের ভিডিও এবং মোশন এডিট করার মাধ্যমে ভাল পরিমানে অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।

নিজের পেজ তৈরি করে তার মধ্যে উদারহন বা DEMO হিসেবে কিছু ভিডিও আপ্লোড করা থাকলে যারা কাজ করাতে চান তাদের জন্যে সুবিধা হয়। এরপর যখন দরকার ইনবক্সে মেসেজ করে প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন কাজের সময়, সম্মানী এসব জেনে নিতে পারবে আগ্রহী পক্ষ।

নিজস্ব কন্টেন্টে বিজ্ঞাপন যুক্ত করার মাধ্যমে

আপনি যদি Facebook Influencer হয়ে থাকেন তাহলে নিজস্ব কন্টেন্টে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের প্রোমোশনাল মেসেজ পোঁছে দিতে পারেন। এতে আপনি বেশ ভাল পরিমানে সম্মানী উপার্জন করতে পারবেন, আপনার কন্টেন্টের রিচ কেমন সেটা দেখেই আপনাকে প্রস্তাব দেওয়া হবে।

আপনার কন্টেন্টের মাঝেই হাজির হবে ১০-১৫ সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপন যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড তার প্রমোশন করতে পারবে।

রিভিউয়ার

ফেসবুক আজকাল রেস্তোরার বা পণ্যের প্রমোশনে রিভিউয়াররা বেশ ভালো ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে খাবারের রিভিউয়রাদের চাহিদা অনেকাংশেই বেশি। বিভিন্ন রেস্তোরা থেকে জনপ্রিয় রিভিউয়ারদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং তারা এসে খাবারের মান এবং পরিবেশ সম্পর্কে যাচাই করে ছিবি বা ভিডিও করে সেগুলো তাদের নিজস্ব পেইজ থেকে আপ্লোড করে এবং এই কাজটুকুর জন্যে তাদেরকে যথেষ্ট পরিমানে সম্মানী প্রদান করা হয়।

একইভাবে পণ্যের ক্ষেত্রেও গুডি বক্স বা নতুন কালেকশনের পণ্য রিভিউয়ারদের পাঠানো হয় তারা সেগুলো আনবক্সিং সহ মান যাচাই এবং মূল্য সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে ভিডিও করে তাদের পেজে আপ্লোড করেন।

শেষ কথা

ফেসবুক থেকে আয় করার উপায় উপরের আলোচনার শেষে বলা যায় যে, ফেসবুকের কল্যাণে অনেকেই তাদের প্রতিভা ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে তার পাশাপাশি স্বাবলম্বীও হচ্ছেন। আপনিও চাইলে শুরু করতে পারেন সহজ, ছোট খাট কোন ব্যবসায় আর উদ্যোক্তা হয়ে নিজের এবং অন্যের সহযোগিতা করতে।

সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। মানুষ বর্তমানে৷ আয়ের ক্ষেত্র বেছে নিয়েছে ফেসবুকের মাধ্যমে  ইনকামকে, ভবিষ্যতে এই খাত আরও সম্প্রসারণ হবে। তাই আমরা আপনাদেরকে জানিয়েছি, ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়।

 

আরও পড়ুন-

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি

ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।