ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম ও মেকআপের সরঞ্জাম

ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম

সবাই নিজেকে উপযুক্তভাবে প্রদর্শন করার চেষ্টা করে, বিশেষত মেয়েরা। নিজেকে সঠিকভাবে প্রদর্শন করার জন্য পরিপাটি হওয়া প্রয়োজন। এই পরিপাটিতে সঠিক প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, যেমন মেকআপ, যা ব্যক্তিকে আরো আকর্ষণীয় করে।

মেকআপের জন্য সঠিক পদ্ধতি ও কৌশল জানা প্রয়োজন। অনেকেই ঘরে মেকআপ করার জন্য আত্মবিশ্বাস পায় না, তবে সঠিক কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে এই কাজটি নিমিষেই করা যায়।

যদি আমরা সঠিকভাবে মেকআপ করতে পারি, তাহলে যেকোনো অনুষ্ঠানে ঘরে বসেই নিজেকে তৈরি করে নিতে পারব। আজকের আর্টিকেলে ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম ও প্রসাধনী সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হল।

মেকআপ করার নিয়ম

ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়মগুলোকে সাধারণত কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়। নিচে সেই ধাপ গুলো তুলে ধরা হলো:

১। স্কিন প্রিপেয়ার করা

ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম হল সবার আগে মেকআপের জন্য স্কিনকে প্রিপেয়ার বা তৈরী করা। কারণ আন- প্রিপেয়ারড স্কিনে মেকআপ সহজে বসে না এবং দেখতেও খুঁতখুতেঁ লাগে। অন্য দিকে মেকআপ এর জন্য স্কিনকে প্রিপেয়ার বা তৈরী করলে সে স্কিনে মেকআপ ভালো ভাবে বসে যায় এবং দেখতেও অনেক সুন্দর লাগে।

২। ক্লিনজিং

মুখে সচরাচর অনেক ময়লা জমে থাকে। তাই মুখে মেকআপ লাগানোর আগে অবশ্যই সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। আবার অনেকের মুখের ত্বক বেশ তৈলাক্ত হয়। তৈলাক্ত স্কিনে মেকআপ ভালো হয় না।

ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম
ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম

আর মুখের স্কিন থেকে তৈলাক্ততা এবং ময়লাগুলো দূর করার কাজটিই করে ক্লিনজিং। ক্লিনজিং করার জন্য Simple Kind To Skin Moisturising Facial Wash এর মত সাবানহীন ক্লিনজার ভালো ভাবে মুখে লাগিয়ে নিয়ে ফোম তৈরী করে নিন। এরপর মুখের সবখানে ম্যাসাজ করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।

৩। স্ক্রাবিং

মুখে মাঝে মাঝে এমন ধরনের কিছু ময়লা জমে যা সহজে ক্লিনজিং এর মাধ্যমে যেতে চায় না। এইসব ময়লা মুখ থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য স্ক্রাবিং করতে হয়। স্ক্রাবিং করার জন্য যে কোনো একটি স্ক্রাবার যা আপনার স্কিনের জন্য উপযুক্ত তা মুখে লাগিয়ে নিন।

যদিও বাজারে অনেক ধরনের স্ক্রাবার পাওয়া যায়। কিন্তু আপনার কাছে যদি কোনো কারণে তা না থাকে তবে আপনি কোনো একটি স্ক্রাবার বানিয়ে মুখে লাগিয়ে নিতে পারেন। এরপর আলতো হাতে মুখে ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৪। টোনিং

ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম এর মধ্যে একটি হল স্কিন পরিষ্কার করার পর টোনিং করতে হয়। টোনিং এর ধাপটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারন টোনিং এর মাধ্যমে স্কিনের পোর্জ গুলো বন্ধ করা হয় যে জন্য বাহিরে থেকে ময়লা স্কিনে ঢুকতে পারে না।

বাজারে মুখে ব্যবহারের জন্য স্কিন টাইপ অনুযায়ী অনেক রকম টোনার পাওয়া যায়। তবে রেগুলার টোনার হিসেবে গোলাপ জলও ইউজ করা যায়। টোনিং করার জন্য পছন্দ অনুযায় যে কোনো টোনার কয়েক ফোঁটা হাতে বা কটন বলে নিয়ে ট্যাপ ট্যাপ করে মুখে লাগাতে হবে।

৫। ময়শ্চারাইজিং

ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম এর সর্বশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হলো ময়শ্চারাইজিং । ময়শ্চারাইজিং এর মাধ্য়মে মুখে বাইরে থেকে ময়শ্চার প্রদান করার হয় যাতে মুখের স্কিন শুষ্ক না হয়ে যায়।

ময়শ্চারাইজিং করার জন্য স্কিন টাইপ অনুযায়ী যে কোনো ময়শ্চারাইজার মুখে ভালো ভাবে লাগিয়ে আলতোভাবে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। ত্বকে আর্দ্রতা ফেরাতে মাখুন পন্ড’স লাইট ময়শ্চারাইজার নন-অয়েলি ফ্রেশ ফিল উইথ ভিটামিন ই+গ্লিসারিন/ Ponds Light Moisturiser Non-Oily Fresh Feel With Vitamin E + Glycerine।

মেকআপ করতে কি কি লাগে

ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো প্রোডাক্ট যখন তখন মুখের যে কোনো অংশে লাগানো যাবে না। কারণ এটি মেকআপের সঠিক পদ্ধতি নয়।

১। ফেস মেকআপ প্রাইমার

মেকআপের শুরুতেই যে প্রোডাক্ট মুখে লাগাতে হবে তা হলো প্রাইমার। এটি মেকআপকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে এবং এর পাশাপাশি স্কিন ও মেকআপ এর মাঝে এমন একটি স্তর তৈরী করে যার জন্য মেকআপে বিদ্যমান প্রোডাক্টের দানা গুলো মুখের স্কিনে ঢুকতে পারে না।

ল্যাকমে অ্যাবসলিউট আন্ডারকভার জেল প্রাইমার Lakmé Absolute Undercover Gel Primer. -এর মতো জেল-বেসড প্রাইমার বেছে নিন। ভিটামিন ই-র গুণে সমৃদ্ধ এই প্রাইমারটি ত্বক মসৃণ করে, দাগছোপ ঢেকে দিয়ে আপনার মুখ ফাউন্ডেশন লাগানোর উপযোগী করে তোলে। 

২। ফাউন্ডেশন

ফাউন্ডেশন কিছুটা হাতে বের করে নিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে মুখে ও গলাতে লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর একটি বিউটি ব্লেন্ডারের সাহায্যে সেটি ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে যেন স্কিন দেখতে স্মুথ লাগে।

ল্যাকমে নাইন টু ফাইভ প্রাইমার+ম্যাট পারফেক্ট কভার ফাউন্ডেশন Lakmé 9 to 5 Primer + Matte Perfect Cover Foundation এর মতো ফুল কভারেজ ফাউন্ডেশন লাগাতে পারেন। 

৩। কনসিলার ব্যবহারের নিয়ম

মূলত স্কিনের কোনো দাগ, লালচে ভাব, চোখের ডার্ক সার্কেল ইত্যাদি হাইড করে মুখকে সুন্দর করে তোলার জন্য কনসিলার ব্যবহার করা হয়।

  • ডার্ক সার্কেল হাইড করার জন্য চোখের নিচে কনসিলার লাগিয়ে ত্রিভুজাকৃতির মতো আকতে হবে এবং এরপর ভালো করে ব্লেন্ড করতে হবে।
  • লালচে ভাব হাইড করার জন্য মুখের যেখানে লালচে ভাব আছে সেখানে কনসিলার লাগিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করতে হবে।

৪। কনটোর

সামান্য ব্রঞ্জ পাউডার মেকআপ ব্রাশে নিয়ে মুখের ঠিক চিকবোন বরাবর, নাকের দুপাশে, চুলের লাইনে এবং কানের পাশে লাগাতে হবে এবং ভালো করে ব্লেন্ড করতে হবে।

৫। ব্লাশ অন

হাসার সময় মুখের যে অংশটুকু উচুঁ হয় ঠিক সেখান থেকে ব্লাশ অন লাগিয়ে কান পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে হবে। এরপর ব্লেন্ড করতে হবে যেন স্কিনের সাথে এডজাস্ট হয়ে যায়।

৬। হাইলাইটিং

পছন্দ মতো হাইলাইটার ছোট ব্রাশে নিতে হবে এবং ঠোঁটের একদম ওপর দিকে, নাকের ডগায় ও গালের ব্লাশ অন এর একদম ওপর দিকে লাগাতে হবে।

৭। আই মেকআপ আইভ্রু

ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম এ প্রথমে কনসিলার লাগিয়ে ভ্রু লাইন ক্লিন করে নিন এবং এরপর স্কিন শেড অনুসারে পছন্দসই আইভ্রু কালার আইভ্রু ব্রাশের সাহায্যে লাগিয়ে নিন।

৮। আইশ্যাডো

আইশ্যাডো লাগানোর আগে আবশ্যই চোখে প্রাইমার ও কনসিলার লাগাতে হবে। এরপর স্কিন শেড অনুযায়ী এক অথবা দু কালারের আইশ্যাডো লাগিয়ে নিতে হবে।

৯। কাজল ও আইলাইনার

সঠিক স্ট্রোকে কাজল ও আইলাইনার লাগানোর মাধ্যমে চোখের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলা যায়। এখন নীল,সবুজ বিভিন্ন রংয়ের কাজল ও আইলাইনার পাওয়া যায় এবং মানুষ ব্যবহারও করে। তবে অন্য রংয়ের তুলনায় কালো রঙয়ের কাজল ও আইলাইনারই চোখে বেশি মানানসই লাগে।

১০। ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম – মাশকারা

চোখের পাতা ঘন এবং বড় দেখাতে মাশকারা ব্যবহার করা হয়। এজন্য মাশকারা ব্রাশ নিচ থেকে উপরের দিকে ঘোরাতে হবে।

১১। লিপ মেকআপ লিপ লাইনার

ঠোঁটের শেপ ঠিকঠাক আনতে লিপলাইনার দিয়ে লিপলাইন এঁকে নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে নুড শেড দিয়ে লিপ লাইন আকতে হবে এবং তারপর লিপস্টিকের শেডের সাথে ম্যাচ করা লিপ লাইনার দিয়ে লিপ লাইন আকতে হবে।

১২। লিপস্টিক

পছন্দসই লিপস্টিক লাগাতে সকলেই ভালোবাসে। তবে এ ক্ষেত্রে স্কিন শেডের অব্যশই খেয়াল রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে লিপস্টিক যেন ঠোঁটের এড়িয়া থেকে বেড়িয়ে না যায় এ জন্য মাঝখান থেকে লিপস্টিক লাগানো শুরু করতে হবে। লিপস্টিক পুরো মেকআপে ফিনিশিং লুক আনতে সাহায্য করে এবং মুখের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

১৩। সেটিং স্প্রে

পুরো মেকআপ কত সময় পর্যন্ত স্থায়ী হবে তা নির্ভর করে এই জিনিসটির ওপর। একটি ভালো মানের সেটিং স্প্রে ৮ – ১০ ঘন্টা পর্যন্ত মেকআপ দরে রাখতে পারে। একটি ভালো মানের সেটিং স্প্রে মুখ তেকে একটু দুরত্বে রাখুন এবন ২-৩ বার স্প্রে করুন। ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম এর মধ্যে এটি অন্যতম।

শেষকথা

মুখে মেকআপ করার সময় যে কোনো প্রোডাক্ট যখন তখন মুখের যে কোনো অংশে লাগানো যাবে না। কারণ এটি মেকআপের সঠিক পদ্ধতি নয়। এ জন্য ক্রমে ক্রমে মুখে মেকআপ প্রোডাক্ট এপ্লাই করতে হয়। ধারাবাহিক ভাবে কখন কোন প্রোডাক্ট লাগাতে হবে।

কারণ আন- প্রিপেয়ারড স্কিনে মেকআপ সহজে বসে না এবং দেখতেও খুঁতখুতেঁ লাগে। অন্য দিকে মেকআপ এর জন্য স্কিনকে প্রিপেয়ার বা তৈরী করলে সে স্কিনে মেকআপ ভালো ভাবে বসে যায় এবং দেখতেও অনেক সুন্দর লাগে। তাই ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম ভালভাবে মেনে তারপর মেকআপ করতে হবে।

আরও পড়ুন-

ইজেক্স ক্রিম এর কাজ, ব্যবহারবিধি ও সতর্কতা

Leave a Comment