হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল hater lekha sundor korar kousol

হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল

সুন্দর হাতের লেখা একটি শীল্প। হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল হিসেবে তাই অনুশীলনের বিকল্প নেই। হাতের লেখা সুন্দর করার কোনো বয়স নেই। সবাই চায় তার হাতের লেখা সুন্দর হোক। যেকোনো বয়সেই হাতের লেখা পরিবর্তন করা যায়। বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নে ইন্টারনেটের যুগে, আমাদের হাতে লেখালেখির অভ্যাস অনেকটাই কমে গেছে বললেই চলে। কিন্তু সুন্দর হাতের লেখার কদর সবসময়ই রয়েছে। সুন্দর হাতের লেখার প্রশংসা করতে গিয়ে অনেকেই বলে থাকেন যে “মুক্তোর” মত লেখা। সুন্দর হাতের লেখা নিজের মনকেও এক ধরনের প্রশান্তি দেয়।

হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়

ছোটবেলায় বইতে পড়েছিলাম এবং শুনেছিলাম যে “হাতের লিখা সুন্দর হলে পরীক্ষায় অধিক নাম্বার পাওয়া যায় “। কথাটুকু কতটুকু সত্য তা যাচাই না হয় পরে করা যাবে। কিন্তু লেখা সুন্দর হলে অবশ্যই অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া পাওয়া যায়। চলুন তাহলে হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল সমূহ জেনে আসিঃ

সঠিক কলম বাছাই করুন

সব সময় একই ধরনের কলম দিয়ে লেখার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি লিখতেও স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন এবং আপনার লেখা সুন্দর হবে। চিকন কালির কলম ব্যবহার করুন। এতে করে আপনি দ্রুত লিখতে পারবেন। লেখার ক্ষেত্রে কখনোই ভারী এবং মোটা কলম ব্যবহার করবেন না। এতে আপনার লেখার গতি স্লো হয়ে যেতে পারে এবং কিছুক্ষণ লেখার পর আপনার হাত খুব দ্রুত ব্যথা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই লেখালেখির পূর্বেই লেখার যে মূল উপাদান “কলম” তা আপনার পছন্দমত সঠিকভাবে বাছাই করে নিবেন।

কলমের গ্রিপে নজর দিন

অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বেশিক্ষণ ধরে লেখার কারণে তাদের হাত ঘামিয়ে যায়। এতে করে আপনার লেখা অসুন্দর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায। এক্ষেত্রে হালকা কালির গ্রিপযুক্ত কলম উত্তম। বাজারে অনেক কলম রয়েছে যেগুলোর গায়ে রাবারের গ্রিপ থাকে। ওই ধরনের কলম দিয়ে লেখার চেষ্টা করবেন।

হাত ও কব্জির সামঞ্জস্য বজায় রাখা

অনেক সময় আমরা লেখার ক্ষেত্রে আমাদের হাতের উপর অতিরিক্ত চাপ দিয়ে ফেলি। এতে করে হাত ও কব্জি সামঞ্জস্য অবস্থায় না থাকলে আমাদের হাতের লেখার মধ্যে তারতম্য ঘটে  এবং কিছুক্ষণ লিখার পরেই আমাদের হাত ব্যথা হয়ে যায়। তাই লেখার সময় হাতে বেশি চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।

উপযুক্ত স্থানে বসে লেখার অভ্যাস করুন

যে কোন লেখার সময় আপনি অবশ্যই চেয়ার, টেবিল ব্যবহার করবেন। শুয়ে, বসে লিখলে আপনার লেখা এমনিতেই খারাপ হবে। এজন্য লেখালেখির সময় অবশ্যই উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করুন।

জায়গা রাখুন

লিখার সময় শব্দ থেকে শব্দ এবং লাইন থেকে লাইনের মাঝে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা রেখে লিখুন। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, আপনার হাতের লেখা খুব সুন্দর কিন্তু আপনি লেখার সময় যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাপ দিলেন না, এতে করে আপনার লেখাটি যে পড়বে তার কাছে খুব এই বিরক্ত লাগবে। তাই লিখার ক্ষেত্রে অবশই নির্দিষ্ট পরিমান গ্যাপ দিয়ে লিখুন।

সবগুলো অক্ষর একই সাইজের লিখবেন

একই লাইনের একটি অক্ষর ছোট, একটি অক্ষর বড়, এটা খুব বাজে দেখায়। এজন্য লেখার সময় প্রতিটি লাইনের অক্ষরগুলো একই সাইজের লিখবেন। এতে করে আপনার লেখা সুন্দর দেখাবে।

অক্ষর বা বর্ণগুলো সঠিকভাবে লিখুন

বাংলা লেখার সময় স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ এর মধ্যে মাত্রাসহ, মাত্রাহীন, অর্ধমাত্রা এরকম ভাগ রয়েছে। লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই এগুলো খেয়াল করবেন। তাহলে আপনার লেখা স্পষ্ট ও সুন্দর হবে।

লাইনগুলো সমান্তরাল এ রাখা

একটি লাইন থেকে আরেকটি লাইন লেখার সময় অবশ্যই সমান্তরালে লেখার চেষ্টা করবেন। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু লাইন নিচ থেকে উপরে এবং উপর থেকে নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে করে আপনার লেখার সৌন্দর্য নষ্ট হবে। তাই লাইনগুলো সমান্তরাল রাখার চেষ্টা করবেন।

আকর্ষণীয় মার্জিন

আপনার পুরো খাতার নকশাই বদলে দিতে পারে একটি সুন্দর মার্জিন। মার্জিন করার ক্ষেত্রে নীল কালির কলম অথবা পেন্সিল ব্যবহার করতে পারেন। আরেকটু আকর্ষণীয় করতে চাইলে আপনি পাশাপাশি দুটো মার্জিন টানতে পারেন অর্থাৎ ডাবল লাইন টেনে মার্জিন করতে পারেন। এক্ষেত্রে ওই পৃষ্ঠায় লিখার ফলে লেখাটি আকর্ষণীয় হয়ে ফুটে উঠবে।

নীল কালি ব্যবহার করুন

গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বা বাক্যটি লেখার শেষে নীল কালি দিয়ে নিচে দাগ দিন। অথবা গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি নীল কালি দিয়ে লিখুন। এতে করে আপনার লেখাটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।


আরও পড়ুনঃ সুস্থ জীবনের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা


পয়েন্ট করে লিখুন

পয়েন্ট করে লিখার অভ্যাস করুন। এতে করে আপনার লেখাটা যে গঠনমূলক তা প্রকাশ পাবে এবং আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন তা খুব সহজেই ফুটে উঠবে।

অনুচ্ছেদ করে লিখুন

কিছু কিছু লিখার ক্ষেত্রে পয়েন্ট ব্যবহার করা যায় না। সেক্ষেত্রে আপনি ছোট ছোট অনুচ্ছেদ করে লিখতে পারেন। এক একটি অনুচ্ছেদ আকারে লেখার ফলে আপনার মতামত গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।

একটানে ভুল সংশোধন করুন

আপনি যদি কোন বাক্য বা শব্দ লিখতে গিয়ে ভুল করে ফেলেন তাহলে শুধু একটি দাগ দিয়ে তা কেটে ফেলুন। কখনোই হিবিজিবি করে কাটতে যাবেন না। আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনার কাটাকাটির অংশটি যেন কোনোভাবেই প্রাধান্য না পায়।

মনোযোগ দিয়ে লিখুন

হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে লিখতে হবে। আপনি কি লিখছেন? আপনার লেখার ধরন, বর্ণ, অক্ষর শব্দ, লাইন সব সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনি যদি আপনার লেখার প্রতি মনোযোগী হন তাহলে খুব সহজেই ভুলগুলো ধরতে পারবেন এবং শুধরে নিতে পারবেন।


আরও পড়ুনঃ ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম


অনুশীলন করা

হাতের লেখা সুন্দর করার ক্ষেত্রে অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। আপনি যতই অনুশীলন করবেন আপনার হাতের লেখা ততই সুন্দর হবে। তাই নিয়মিত আপনাকে হাতের লেখা সুন্দর করার সব নিয়ম মেনে অনুশীলন করতে হবে। ধীরে ধীরে অনুশীলনের সময় বাড়াতে হবে। এভাবে একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা করে গেলে, আপনি অবশ্যই একদিন সুন্দর হাতের লেখার অধিকারী হবেন।

উপসংহার

‌উপরোক্তে আমরা হাতের লেখা সুন্দর করার বেশ কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করলাম। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে “আগে দর্শনদারি পরে গুণবিচারি”। অর্থাৎ প্রথমে দর্শনে ভাল হতে হবে, পরে গুণের বিবেচনা। মানুষ জন্মগত ভাবে সুন্দরের পূজারী। ঠিক তেমনি হাতের লেখা সুন্দর হলে সে লেখার প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। তাই সুন্দর হাতের লেখা প্রায় সবারই কাম্য। আর হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল গুলো মেনে চললে আপনারা অবশ্যই উপকৃত হবেন বলে আশা করছি।

 

আরও পড়ুন-

ইংরেজি শেখার সহজ উপায়

মিশরের পিরামিড

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।