তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায়সমুহ ও চিকিৎসা

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায়

আজকের আর্টিকেলটি মূলত তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তৈলাক্ত ত্বক কারোরই পছন্দ না। তার ওপর যদি তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হয় তাহলে সেটি দেখতে আরো খারাপ লাগে। আর মেয়েরা চাই সব সময় নিজেদেরকে সুন্দর এবং ফিট দেখাতে।

যাদের মুখ তৈলাক্ত এবং মুখে অনেক ব্রণ হয় তারা আমাদের কাছে এই ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। আশা করছি এই আর্টিকেল থেকে আপনি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

সাধারণত ব্রণ হলো ত্বকের একটি সমস্যা. আর ব্রণ তৈলাক্ত ত্বকের মানুষের শরীরে বেশি দেখা যায়। ব্রণ সাধারণত মানুষের মুখে, পিঠে এবং বুকে হয়ে থাকে। ব্রণ হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো ত্বকের তেল গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হওয়া।

এই নিঃসরণ হওয়া অতিরিক্ত তেল ত্বকের ক্ষুদ্র ছিদ্রে আটকে গেলে সেটি ব্রণ হয়ে যায়। চলুন এখন তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।


আরও পড়ুনঃ দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট, করনীয় ও সঠিক চিকিৎসা


ব্রণ দূর করার উপায়

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায়

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় অনেক ধরনের রয়েছে। এখানে কিছু উপায় আছে যা ঘরোয়া উপায় আর কিছু ঔষধি উপায়। ঘরোয়া উপায় বলতে ঘরে বসে ঘরের কিছু উপাদান দিয়েই যে মাধ্যমে ব্রণ দূর করা যায় সেই মাধ্যম গুলো।

আর ঔষধি উপায় বলতে ঔষধ খাওয়া বা ব্যবহারের মাধ্যমে ব্রণ দূর করার উপায়। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে ঔষধি উপায় এর থেকে ঘরোয়া উপায় গুলো স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ভালো হয়। কারণ অনেক সময় এমন হয় যে ঔষধ ব্রণ দূর করলেও ত্বকের অন্য ক্ষতি করে ফেলে।

আর অন্যদিকে ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে ত্বকের কোন ক্ষতি হয় না। বরং ত্বক আরো সুন্দর এবং মসৃণ হয়। এজন্য অনেকেই ঔষধি উপায় ব্যবহারের আগে ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে চাই। আমরা আজকে ঘরোয়া এবং ঔষধি দুই ধরনের উপায় নিয়েই সম্পূর্ণ আলোচনা করব।

ঘরোয়া উপায়

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ঘরোয়া উপায়। নিম্নে কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো:-

১। নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করা

ত্বকে অনেক সময় তেল এবং ময়লা জমে থাকে যার ফলে ত্বকে ব্রণ এর সৃষ্টি হয়। ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল এবং ময়লা দূর করার জন্য নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করা প্রয়োজন। দিনে কম করে হলেও দুইবার মুখ ধুতে হবে। মুখ ধোয়ার জন্য হালকা ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে সেটি বেশি কার্যকরী হবে।

২। ব্লটিং পেপার ব্যবহার করা

দিনে কয়েকবার মুখের অতিরিক্ত তেল শুষে নেওয়ার জন্য ব্লটিং পেপার ব্যবহার করুন।

৩। মধু ব্যবহার করা

মধু কিন্তু অনেক পুষ্টি গুণ সম্পূর্ণ। মধুতে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকে যা ত্বকের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। প্রথমে একটু তুলো ভিজিয়ে নিয়ে মধুতে ডুবিয়ে ব্রণের উপর লাগাতে হবে। মিনিমাম ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৪। লেবু ব্যবহার করা

লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে কে না জানে। লেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে যা ত্বকের তেল শোষণ করতে সাহায্য করে। লেবুর রস বের করে ব্রণের উপর লাগিয়ে রাখতে হবে। ১৫-২০ মিনিট রাখার পর মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

৫। বেসন ব্যবহার করা

বেসনও আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। বেসনে আছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা আমাদের ত্বকের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।

একটি পাত্রে অল্প বেসন নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো পানি বা দুধ মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্টটিও ব্রণের উপর কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখতে হবে। ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

৬। আদা ব্যবহার করা

আদাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। একটি আদার টুকরো চটকে ব্রণের উপর লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

ঔষধি উপায়

এবার আমরা আপনাদের মাঝে কিছু ঔষধি উপায় নিয়ে আলোচনা করব:-

  • অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা জেল ব্যবহার করা: ব্রণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা জেল ব্যবহার করতে পারেন। এই ক্রিম বা জেল ব্রণ হওয়ার জন্য যে ব্যাকটেরিয়া গুলো দায়ী সেই গুলোকে ধ্বংস করে দেয়।
  • রেটিনয়েড ক্রিম ব্যবহার করা: রেটিনয়েড হলো একটি ভিটামিন এ জাতীয় উপাদান যা ত্বকের কোষ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত রেটিনয়েড ক্রিম ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
  • সাইক্লোপিরোক্স অমল ক্রিম ব্যবহার করা: সাইক্লোপিরোক্স অমল হলো একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণ থেকেও ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। তাই ব্রণের চিকিৎসার জন্য সাইক্লোপিরোক্স অমল ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার জন্য টিপস

তৈলাক্ত ত্বক থেকে ব্রণ দূর করার জন্য আপনি খাবারের দিকে লক্ষ্য দিন। যে সকল খাবার থেকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন হয় সে সকল খাবার এড়িয়ে চলুন। যেমন:- 

  • ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, চকলেট, বাদাম ইত্যাদি।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। পানি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী, পানি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম নিন। ঘুম আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজন এবং আপনার কোষ হতে থাকে।

উপসংহার

সঠিকভাবে নিজের জন্য একটি স্কিন কেয়ার রুটিন তৈরি করে এবং নিজের খাবার-দাবারের উপর লক্ষ্য রাখলে আপনি ব্রণ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে আমরা আজকে সম্পূর্ণ আলোচনা করেছি।

মনে রাখবেন, সুন্দর ত্বক হল স্বাস্থ্যকর ত্বক, তাই আপনার সামগ্রিক সুস্থতার প্রতি মনোযোগ দিন এবং তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় মেনে চলুন।

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য কতবার মুখ ধোয়া লাগবে?

উত্তর: আপনার মুখ প্রতিদিন দুইবার, সকালে এবং রাতে, একটি তেল মুক্ত ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনি একদিনে দুই বার মুখ ধুতে পারেন তবে প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি এর বেশিও ধুতে পারবেন।

২। টোনার কি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী?

উত্তর: হ্যাঁ! টোনার তেল উৎপাদনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে, ছিদ্র কমাতে পারে এবং ত্বক থেকে অবশিষ্ট তেল অপসারণ করতে পারে। এক কথায় টোনার তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অনেক উপকারী একটি জিনিস।

৩। কোন উপাদানগুলো তৈলাক্ত ত্বক থেকে ব্রণ দূর করতে পারে?

উত্তর: স্যালিসিলিক অ্যাসিড একটি দুর্দান্ত রাসায়নিক এক্সফোলিয়েন্ট যা ছিদ্রগুলিকে বন্ধ করে দেয়। নিয়াসিনামাইড তেল নিয়ন্ত্রণ করতে এবং লালভাব নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ক্লে মাস্ক অতিরিক্ত তেল এবং অমেধ্য শোষণ করে।

৪। কি তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে?

উত্তর: প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করার লক্ষ্য রাখুন। পুরো শস্য, ফল এবং শাকসবজির উপর ফোকাস করে চিনিযুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে দিন। যোগব্যায়াম, ধ্যান বা প্রকৃতিতে সময় কাটানোর মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।

৫। পিম্পল পপ করা কি খারাপ?

উত্তর: একেবারেই! পপিং পিম্পল প্রদাহকে আরও খারাপ করতে পারে, ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে এবং দাগ ফেলে দিতে পারে। প্রবণতাকে প্রতিরোধ!

৬। আমার কি ব্রণ দূর করার জন্য ঘরোয়া উপায় মেনে চলা উচিত?

উত্তর: অবশ্যই তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে ঘরোয়া উপায় অন্যতম একটি। মধুর মুখোশ বা লেবুর রস প্রয়োগের মতো কিছু ঘরোয়া প্রতিকার সংবেদনশীল ত্বককে জ্বালাতন করতে পারে এবং ব্রণকে আরও খারাপ করতে পারে। প্রমাণিত ব্রণ-প্রতিরোধী উপাদানগুলিতে লেগে থাকুন এবং ব্যক্তিগত পরামর্শের জন্য একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।

আরও পড়ুন-

ভিটামিন বি ১২ ট্যাবলেট এর নাম ও খাওয়ার নিয়ম

ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় ও চিকিৎসা

Leave a Comment