আনারসের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আনারসের উপকারিতা

বাংলাদেশে বিভিন্ন ঋতুতে বাহারি রকমের মওসুমি ফল পাওয়া যাই। তেমন একটি মওসুমি ফল হচ্ছে আনারস। স্বাদের দিক দিয়ে আনারস টক ও মিষ্টি উভয় রকমের হয়। মওসুমি এই ফলটি এখন পাওয়া যায় সারা বছর। তবে স্বাদে ভিন্নতা হলেও আনারসের উপকারিতা রয়েছে অনেক। তাই প্রতিদিনের রুটিনে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে আনারস রাখা যেতে পারে।

এখন অধিকাংশ মানুষ তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করেন। স্বাস্থ্য সচেতনতা থাকলেও আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে কেউ তেমন কোন ধারনা রাখে না। আজকের আর্টিকেলে আনারসের উপকারিতা, এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা দিক তুলে ধরব। আশা করছি তা অনেকের উপকারে আসবে। 

আনারসের পুষ্টিমান   

পুষ্টিগুণের বিচারে আনারস বেশ উপকারী একটি ফল। এই ফলে রয়েছে এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে রয়েছে ৫০ কিলোক্যালরি শক্তি, শর্করা ১৩.১২ গ্রাম, চিনি ৯.৮৫গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১.৪গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.১২গ্রাম, প্রোটিন ০.৫৪ গ্রাম। 

ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে থায়ামিন বি১ ০.০৭৯ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন বি২ ০.০৩২ মিলিগ্রাম, নায়াসিন বি৩ ০.৫ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক বি৫ ০.২১৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.১১২ মিলিগ্রাম, ফোলেট ১৮ মাইক্রোগ্রাম, কোলিন ৫.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম।

আনারসের উপকারিতা

খনিজের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ১৩ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.২৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১২ মিলিগ্রাম, মাঙ্গানিজ ০.৯২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১০৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১মিলিগ্রাম, জিংক ০.১২মিলিগ্রাম। 

আনারসের উপকারী দিক 

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আনারসের উপকারিতার কোন জুড়ি নেই। পুষ্টির অভাব পুরনে আনারসের নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। আনারসের বিভিন্ন উপকারী দিক তুলে ধরা হল- 

১। হজমশক্তি বৃদ্ধিতে

আনারসে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম রয়েছে যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। তাই বদহজম বা হজমজনিত সমস্যা দূর করতে আনারস খেতে পারেন। 

২। পুষ্টির অভাব পুরনে

পুষ্টি তালিকায় আনারস একটি বড় উৎস হতে পারে। কারন আনারসে রয়েছে ভিটামিন বি৬, বি৫, বি৯, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় উপাদান। তাই পুষ্টির অভাব পুরনে আনারস অনেক উপকারী। 

৩। ওজন নিয়ন্ত্রনে

অবাক লাগলেও কথাটা সত্য যে আনারস ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। আনারসে ফাইবার রয়েছে বেশি। তবে ফ্যাট আছে তুলনামুলক অনেক কম। প্রতিদিন সকালে আনারসের সালাদ বা জুস খেলে তা স্বাস্থ্য ভাল রাখে। 

৪। হাড়ের সুরক্ষায়

আনারসে ক্যালসিয়াম ও মাঙ্গানিজের পরিমান অনেক বেশি। এই ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে ও মাঙ্গানিজ হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত আনারস খেলে হাড়ের সমস্যা জনিত বিভিন্ন রোগ দূর করা যায়। 

৫। দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় 

আনারসে থাকা ক্যালসিয়াম শুধু হাড় নয় দাঁতের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতেও প্রয়োজন। নিয়মিত আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর সংক্রমন কমে যায় ও মাড়ির সমস্যা দূর করে।

৬। চোখের যত্নে

চোখের সুরক্ষায় আনারস অনেক উপকারী। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন নামক অসুখ থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে অন্ধত্ব সৃষ্টি করতে পারে। আনারসে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। নিয়মিত আনারস খেলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০% পর্যন্ত কমে যায়। 

৭। রক্ত পরিস্কার করতে

আনারসে থাকা বিভিন্ন উপাদান দেহে রক্ত জমাট বাধতে দেয় না। ফলে শিরা ধমনির মধ্যে দিয়ে রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকে। এর ফলে হৃদপিণ্ডে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত প্রবাহ সহজ হয়। আনারস রক্তকে পরিস্কার করে হৃদপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে। 

৮। জ্বর ও কোষ্ঠকাঠিন্যজাতীয় রোগ দূর করতে

দীর্ঘদিন যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন তারা আনারস খেতে পারেন। এটি ক্ষুধা বর্ধক হিসেবেও কাজ করে। বিশেষ করে জ্বর বা কঠিন কোন অসুখ হলে মুখের রুচি কমে যায়। আনারস খেলে অরুচি ভাব কেটে যায়। 

৯। কৃমিনাশক হিসেবে 

আনারসের উপকারিতার মধ্যে একটি হল আনারস ক্রিমিনাশক হিসেবেও পরিচিত। যাদের অ্যাসিডিটি সমস্যা নেই তারা কৃমি দূর করতে সকালে খালি পেটে আনারস খেতে পারেন। 

১০। ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি নিরাময়ে

আনারসে থাকা ভিটামিন সি বিভিন্ন ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি জাতীয় রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। এছাড়াও আনারস জ্বর ও জন্ডিসেও বেশ কার্যকরী। নিয়মিত আনারস খেলে নাক দিয়ে পানি পরা, গলা ব্যাথা ও ব্রংকাইটিস এর মত সমস্যা দূর করা যায়। 

১১। আর্থ্রাইটিস দূর করে

আনারস গেটে বাত বা আর্থ্রাইটিস এর ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে

১২। আনারসের উপকারিতাত্বকের যত্নে

আনারসে থাকা প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষকে দূর করে, ত্বকের কুচকে যাওয়া রোধ করে। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব, ব্রনের সমস্যা দূর করতে আনারস অনেক কার্যকরী। 

১৩। ক্যান্সার প্রতিরোধে 

আনারসে পানিতে দ্রবনিয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি রয়েছে। এটি শরীরে ফ্রি রেডি কাল প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। আনারস জরায়ু, স্তন, ফুসফুস ও অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। আনারসের মধ্যে থাকা যৌগগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কম করে। 

আনারসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

১। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে  তাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আনারস খাবার আগে তা কেটে লবন দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এতে সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।

২। গর্ভাবস্থায় নারীদের আনারস না খাওয়া ভাল। এতে গর্ভপাতের ঝুকি থাকতে পারে।

৩। আনারস খেলে অনেকের বাতের ব্যাথা হবার সম্ভাবনা থাকে। কারন আনারস খাওয়ার পর তা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল নালীর কাছে গিয়ে তা অ্যালকোহলে পরিনত হয়। 

৪। আনারসে প্রাকৃতিক চিনির পরিমান অনেক বেশি থাকে। আনারসের মধ্যে চিনি উপাদান সুক্রোজ এবং ফ্রুক্টোজ রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। 

৫। আনারসের মধ্যে থাকা ব্র মিলেইন ওষুধ তৈরিতে ব্যাবহৃত হয়। তাই যারা অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিকনভালসেন্ট ব্যাবহার করেন তাদের ডাক্তাররা আনারস খেতে নিষেধ করে।

৬। কাঁচা আনারস দেহের জন্য ক্ষতিকর। কাঁচা আনারস খেলে অনেকের বমিও হতে পারে। 

৭। কেভিটিস ও জিংজাইভেটিভসজাতীয় দাঁতের রোগ থাকলে তাদের আনারস না খাওয়াই ভাল। এতে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। 

পরিশেষে

আনারসের উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন আনারস সহজলভ্য ও খেতেও সুস্বাদু। এর বিভিন্ন পুষ্টিগুণ আমাদের শরীর কে অনেক দিক দিয়ে সাহায্য করে। এমনকি অনেক সংক্রামক ব্যাধি থেকেও দূরে রাখে। তবে অতিরিক্ত আনারস খেলে তা ক্ষতির কারন হতে পারে। তাই নিজের স্বাস্থ্য বিবেচনা করে আনারস খাওয়া উচিত।  

আরও পড়ুন-

মেথির উপকারিতা, মেথি খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহার

Leave a Comment