খুব দ্রুত হেঁচকি বন্ধ করার উপায় khub druto hecki bondho korar upay

হেঁচকি বন্ধ করার উপায়

হেঁচকি আমাদের জীবনের একটি বিরক্তিকর সমস্যা। হেঁচকি বন্ধ করার উপায় আমরা কমবেশি সবাই জানি। তবে কেউ কেউ ভুল কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করি হেঁচকি বন্ধ করার জন্য। হেঁচকি বন্ধ করার জন্য আপনি কি কি ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং কোনটি সঠিক সেটি আজ আপনার সামনে তুলে ধরব আমরা।হেঁচকি সমস্যার সম্মুখীন হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। হেঁচকি অত্যন্ত বিরক্তিকর এই কারণেই যে একবার হেঁচকি উঠলে আর সহজে তা থামতে চায় না।

আমরা কি জানি যে হেঁচকির আরও একটি নাম আছে, হ্যাঁ হেঁচকির আরও একটি নাম আছে আর তা হলো হিক্কার।  আপনি হয়তো জীবনে এমন মানুষ দেখেননি যে যার হেঁচকি হয়নি। হেঁচকি সমস্যা যতটা বিরক্তিকর ঠিক ততটাই কষ্ট কর।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় হেঁচকি উঠলে কিছুক্ষণ পর তা নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায় আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে হেঁচকি  দীর্ঘক্ষণ ধরে  হচ্ছে ঠিক হওয়ার কোন নামই নেই। যুক্তরাষ্ট্রের চার্লস অসবোর্নের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে হেঁচকি উঠায়ে বিশ্বরেকর্ডের উদাহরন হিসেবে তার নাম পরিচিত১৯২২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত একটানা ৬৮ বছর হেঁচকি তোলেন তিনি। সঠিক ঘটনাটি এখনো জানা যায়নি তবে অনুমান করা হচ্ছে,মি. অসবোর্ন  যখন হেঁচকি তোলা শুরু করেন তখন তিনি একটি শুকর ওজন করার চেষ্টা করছিলেন, কোটির অধিক ওজন থাকার কারণে তাঁর এই সমস্যাটি শুরু হয়।

বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে হেঁচকি সমস্যাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা। হেঁচকি বন্ধ করার উপায়  হিসাবে আমরা অনেক সময় প্রচুর পরিমাণ পানি খেয়ে থাকি হেঁচকি বন্ধ করার জন্য, কিন্তু দেখা যায় তারপরেও তেমন কোন কাজ হয়নাজেনে অবাক হবেন হেঁচকি ওঠা খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা এবং মিনিট খানেকের মধ্যেই এটি স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে যায় তবে অতিরিক্ত মাত্রায় হেঁচকি উঠার উদাহরণ কিন্তু রয়েছে। এ জন্য সঠিক ভাবে হেঁচকি বন্ধ করার উপায় জানা দরকার।

 

 

হেঁচকি কেন হয়

আপনি খাবার খাচ্ছেন অথবা খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ করছেন হঠাৎ হেঁচকি প্রকোপ শুরু হয়ে গেল এটা খুবই সাধারণ একটি বিষয় হেচকির ক্ষেত্রে। কোন কারন ছাড়াই হঠাৎ আপনার হেঁচকি শুরু হয়ে গেল এটা নিয়ে চিন্তার বা খুব অবাক হওয়ার কিছুই নেই।বিশেষজ্ঞদের মতে পরিপাকতন্ত্রের কিছু গোলমালের কারণেই হেঁচকি শুরু হয়।বিশেষজ্ঞদের কাছে আরও জানা যায় হেচকি উঠার অনেক রকমের কারণ আছে,

  •  যারা ব্যবহার করেন অপিয়েট ড্রাগের।
  •  যাদের কাশি বেশি হয়
  •  যখন প্রচুর পরিমাণ বায়ু পাকস্থলীতে চলে যায়।
  •  যাদের হাইয়াটাস হার্নিয়া সমস্যা আছে।
  •  খুব তাড়াহুড়ো করে খাবার শেষ করা।
  • আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে
  • খুব দ্রুত খাবার খেলে
  •  মসলাযুক্ত খাবার বেশি খেলে
  • খুব বেশি পরিমাণে খাবার খেলে 
  • কারো মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে 
  • শর্করা জাতীয়  পানি বেশি পরিমাণে খেলে 
  • খাবার খাওয়ার সময় মনোযোগ বাড়ে না দিয়ে অধিক পরিমাণে কথা বলা  
  • জোরে জোরে  হাসতে থাকা ।
  • হঠাৎ ভয় পেয়ে গেলেও হেঁচকি হতে পারে।  
  • বেশি আবেগ বা উত্তেজনা, ভালোলাগার অনুভূতি কারনেও হেঁচকি হতে পারে।  
  • নির্দিষ্ট কিছু অসুখের কারণে ও হেঁচকি সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।
  • আপনার কিছু অসাবধানতার কারণে ও এটি হতে পারে। 

বিশেষজ্ঞরা শত শত বছর ধরে এই শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা হেঁচকি কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন। যখন হেঁচকি শুরু হয় তখন শ্বাসনালীতে কিছুটা খিঁচুনি হয় যার ফলে শ্বাসযন্ত্রে দ্রুত বাতাস প্রবেশ করে তখন ভোকাল কার্ড বন্ধ হয়ে যায় এবং ‘হিক হিক শব্দ’ তৈরি করে। ডায়াফ্রাম নামক পাতলা মাংসপেশির স্তর ফুসফুসের নিচে থাকে, হঠাৎ কুঁচকে আসে যার ফলে হেঁচকি তৈরি হয়। প্রায় একশর বেশি মেডিকেল কারণ আছে হেঁচকি ওঠার, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অতি সামান্য কারণেই হেঁচকি ওঠে।


আরও পড়ুনঃ শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়


হেঁচকি কমানোর উপায়

সাধারণ কিছু উপায় অনুসরণ করেই হেঁচকি বন্ধ করা যায় ।  তাই জেনে নিন ঘরোয়া কি উপায় অবলম্বন করলে হেঁচকি বন্ধ করতে পারবেন  দুইটি মূলনীতি অনুসরণ করা হয় ঘরোয়া উপায়ে হেঁচকি বন্ধ করার জন্য। এর মধ্যে প্রথমটি হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া, এর ফলে শ্বাসনালীতে তৈরি হওয়া  খিচুনি বন্ধ হবে। এবং দ্বিতীয়টি হলো গলধকরণের ও শ্বাসপ্রশ্বাস এর মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা যাতে করে স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে।চলুন জেনে নেই কি কিভাবে আমরা এই দুইটি কাজ করতে পারব

  •  যতক্ষণ সম্ভব শ্বাস বন্ধ করে রাখতে হবে এবং আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে হবে, বেশ কয়েকবার এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, প্রয়োজনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পুনরায় এ পদ্ধতিটি আবার অবলম্বন করতে হবে।
  •  একটি কাগজের ব্যাগ নিতে হবে, কাগজের ব্যাগে নিঃশ্বাস নেবেন এবং কাগজের ব্যাগ নিঃশ্বাস ফেলতে হবে, বেশ কয়েকবার এটা করবেন ।মনে রাখবেন কাগজের  ব্যাগের ভেতর কোনভাবেই সম্পূর্ণ মাথা ঢুকিয়ে দেবেন না।
  •  দুই হাটু চেপে ধরে বুক পর্যন্ত নিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে  থাকতে পারেন কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিবেন, কিছুক্ষণ জোরে শ্বাস নেবেন এবং পুনরায় এ পদ্ধতিটি আবার অবলম্বন করবেন।
  •  বরফ মিশ্রিত ঠান্ডা পানি খেলে হেঁচকি সমস্যা দূর করা সম্ভব তবে যাদের বরফ খেলে সমস্যা তারা এই  পদ্ধতিটি অবলম্বন না করাটাই ভালো।
  •  কিছু দানাদার চিনি মুখে দিয়ে থাকলে হেঁচকি সমস্যা দূর হয়, যাদের ডায়াবেটিস  রোগে আক্রান্ত আছে তারা এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

আরও কিছু উপায় রয়েছে

  •  নিজের মুখে একটু ভিনেগার অথবা লেবু গেলেও এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
  • হাতের দুই আঙুলের সাহায্যে  নাক চেপে ধরুন  এবং মুখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলার চেষ্টা করুন, কয়েক বার করুন হেঁচকি বন্ধ করার এই পদ্ধতিকে বলা হয় ভালসালভা মেনুভার।
  •  গরম গরম এক গ্লাস দুধ পান করুন।
  •  নাক চেপে ধরে পানি খেতে পারেন।
  •  গরম পানি দিয়ে গোসল করুন।
  •  উপুড় হয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে কি সমস্যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  •  নিজের একহাতে তালুর সাথে অন্য হাতের তালু ঘষলে হেঁচকি সমস্যা দূর হতে পারে।
  •  কিছুক্ষণ পরপর কয়েক সেকেন্ড করে জিভ বের করে রাখলেও হেঁচকি সমস্যা দূর হয়।
  •  পিনাট বাটার খেলে হেঁচকি দূর করা সম্ভব
  •  মুখে এক চামচ মধু দিলেও হেঁচকি দূর হয়
  •  এক গ্লাস পানি একবারে খেয়ে বড় বড় করে নিঃশ্বাস নেওয়া এবং ছাড়া

বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু মানুষ হেঁচকি বন্ধ করার জন্য প্রচুর পরিমাণ পানি খেয়ে থাকেন। তারা মনে করেন  অতিরিক্ত পানি খেলে হেঁচকি সমস্যা দূর হয়,  কিন্তু মানুষের এই ধারণাটি একেবারেই ভুল।  তার বদলে হেঁচকি বন্ধ করার উপায় জন্য কিছুক্ষণ শ্বাস বন্ধ রাখা উচিত।

শেষকথা

হেঁচকি বন্ধ করার উপায়, সাধারণত হেঁচকি উঠে এবং কিছুক্ষণ পরে নিজে নিজেই তা ভালো হয়ে যায় কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় হেঁচকি দীর্ঘক্ষন হতে থাকে,  হেঁচকি যদি ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভালো না হয় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে হেঁচকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসায় যখন হেঁচকি ভালো না হয় তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

 

আরও পড়ুনঃ-

কাঠবাদাম এর উপকারিতা

তিসি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।