ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম

ইশরাকের নামাজ ফজরের নামাজের পর আদায় করা হয়। ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম হলো স্বাভাবিক দুই রাকাত নফল নামাজের মত করে আদায় করতে হবে। দুই রাকাতেই সূরা ফাতেহার পর যেকোন সূরা দিয়ে, রুকু ও সিজদাহ দিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়।

এই নামাজ দুই, চার, ছয়, আট ও এর চেয়ে বেশিও পড়া যাবে। মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমাদের এই পৃথিবীতে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত এক আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকা।

অনেক ইবাদতের বিষয়ে আমরা কম বেশি সকলেই জানি এবং পালন করি। আজকে ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম জানা থাকলে সহজে নফল ইবাদত করা যায়।

মুসলিম উম্মাদের জন্যে ফরয আমল 

  • প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
  • রোযা (সিয়াম পালন করা)
  • কুরাআন তেলাওয়াত
  • হালাল উপার্জন
  • হজ্জ্ব পালন করা
  • সাধ্য অনুযায়ী দান সদকা করা
  • সব অবস্থায় যতটা সম্ভব আল্লাহর জিকিরে নিজেকে ব্যস্ত রাখা
  • নবীজি মুহাম্মদ (সাঃ) এর সুন্নাত অনুসরণ করা
  • হারাম কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা
  • উম্মাহ হিসেবে পরিবার, প্রতিবেশি, দেশের প্রতি যথাসাধ্য কর্তব্য পালন করা

সালাতুল ইশরাক

ইশরাক শব্দের অর্থ হলো আলোকিত হওয়া। সূর্য উঠার পর জগত আলোকিত হয় বলে এ সময় হাদিসে যে নামাজের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, মুহাদ্দিসিনে কেরামগণ তাকে সালাতুল ইশরাক বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এ নামাজ পড়তেন না বরং একটু সময় নিয়ে আদায় করতেন। এ নফল নামাজের ফজিলত বর্ণনায় একাধিক হাদিসে এসেছে-

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম
ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম


– হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজর নামাজ জামাআতে আদায় করার পর সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত ওখানে বসে বসেই আল্লাহর জিকির করে। তারপর দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে। তার জন্য পূর্ণাঙ্গ হজ ও ওমরার সমান সাওয়াব রয়েছে।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

– হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক নামাজের পর (ধারাবাহিক) আর এক নামাজ; যার মাঝখানে কোনো গোনাহ হয়নি, তা ইল্লিয়্যুন (উচ্চ মর্যাদায়) লেখা হয়।’ (আবু দাউদ)

– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়ল। অতপর সূর্য উঠা পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর জিকির করল; অতপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাআত নামাজ পড়ল; সে একটি হজ ও ওমরাহ করার সাওয়াব নিয়ে ফিরে গেল।’ (তাবারানি, আত-তারগিব)

– অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সূর্য উঠার আগে আল্লাহর জিকির, তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা আমার কাছে ইসমাঈল বংশের দুইজন গোলাম আজাদ করার চেয়েও অধিক প্রিয়।’ (মুসনাদে আহামদ)

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম ও বিধান

সালাতুল ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম হলো, সূর্য উদয়ের পনের (১৫) থেকে বিশ (২০) মিনিট পর থেকে যোহরের ওয়াক্তের আগ পর্যন্ত এই সালাতের ওয়াক্ত থাকে। এর মাঝে যেকোন সময়ে দুই বা চার রাকাত সালাত আদায় করলেই সেটি ইশরাকের সালাত বলে বিবেচিত হবে। ইশরাকের নামাজ কত রাকাত সে সম্পর্কে জানবো।

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম হল সর্বনিম্ন দু রাকাত সালাত আদায় করতে হয়। সর্বোচ্চ কত রাকাত পড়তে হবে এই নিয়ে কোন নিয়ম নেই, যত ইচ্ছা পড়া যাবে। ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম এর কোন বিশেষ বিধান নেই, সাধারণ দুই রাকাত সালাতের মত করেই সাধারন সূরা দিয়ে এই সালাত আদায় করা যাবে। 

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের মুসলিম উম্মাহর অনেকেই এই সালাতের অস্তিত্ব ভুলতে বসেছে। আমাদের উচিত ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে সেই সালাতের বিষয়ে মনোযোগী হওয়া।

ইশরাকের সালাতের সময়

ইশরাকের উপযুক্ত সময় হলো, সূর্য অবিরত মধ্য আকাশে স্থিরভাবে প্রকাশিত হওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা মধ্যে পড়ে নেওয়া। এই সময়ে চাশত বা দোহার নামাজ পড়ার জন্য অত্যাবশ্যক মুহূর্ত। যদিও এই নামাজ পৃথকভাবে পড়ার অনুমতি রয়েছে, কিন্তু অনেকে এটাকে ইশরাকের নামাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, যখন সময় শুরু হয়, তখন এটা ইশরাক এবং সময়ের শেষে অনুষ্ঠিত হলে তা হয় দোহা।

ইশরাক শব্দের অর্থ হলো আলোকিত হওয়া, উজ্জ্বল হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যের উদয়ের সাথে এই নামাজ পড়তেন না, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন। সূর্য উদয়ের ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর এই নামাজ পড়ার সঠিক সময়। কারও মতে, সূর্য উদয়ের ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর এই নামাজ পড়া উত্তম। আর ইশরাকের নামাজ পড়ার শেষ সময় হল, সূর্য এক বর্ষা পরিমাণ মধ্য আকাশে উদিত হওয়া পর্যন্ত ইশরাকের নামাজ পড়া যায়, এক বর্ষা সমান দেড় মিটার।

ইশরাক সালাতের ফজিলত

নফল আমলের মধ্যে তাহাজ্জুদের পর দ্বিতীয় ফজিলতপূর্ণ আমল হিসেবে ধরা হয় সালাতুল দোহা, ইশরাক বা চাশতকে। নবী কারিম (সাঃ) সাহাবীদেরকে বার বার ওসিহত করেছেন যাতে এই সালাত ত্যাগ না করা হয়। 

যদি কোন মানুষ সকালে ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত করে দুই রাকাত সালাত আদায় করে, তবে শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তরফ থেকে সাদাকা দেওয়ার কাজ পূর্ণ হয়ে যায়। এই সালাত যে নিয়মিত আদায় করে সে বান্দা ধীরে ধীরে আল্লাহর পথের দিকে ধাবিত হয়, আল্লাহ মুখী বান্দায় পরিণত হয়।

এই ইশরাক বা সালাতুল দোহা সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন “আমার বন্ধু রসুলে কারীম (সাঃ) আমাকে তিনটি (৩) কাজ করার জন্যে ওসিহত করেছেন এর মধ্যে একটি (১) হলো সালাতুল দোহা আদায় করা” এবং তিনি এও প্রতিজ্ঞা করেন যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই সালাত আদায় করা ছাড়বেন না। 

আব্দুল্লাহ ইবনু মু’আবিয়া আল-জুমহী আল-বসরী (রহঃ) আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “যে ব্যাক্তি জামাআতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর যিকর করবে এবং এরপর দু’রাকাত সালাত আদায় করবে তার জন্যে একটি হজ্ব ও উমরাহ পালনের সওয়াব হবে”। 

আনাস রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু বলেছেন যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে “ঐ ব্যক্তির জন্য হজ্জ্ব ও ওমরার পরিপূর্ণ সওয়াব হবে, পরিপূর্ণ সওয়াব হবে, পরিপূর্ণ সওয়াব হবে”। তিনবার নবীজি এই বিষয়ে ওসিহত করেছেন, তাই বলার অপেক্ষা রাখে না এই সালাতের মহিমা কতখানি। 

সহিহ মুসলিমের আর একটি হাদিসে এসেছে মা আয়েশা (রাঃ) নবী কারীম (সাঃ) সম্বন্ধে বলেছেন যে নবীজি সবসময় সালাতুল দোহা আদায় করতেন, চার রাকাত বা তার চেয়েও বেশি আদায় করতেন মাঝে মাঝে। 

শেষকথা

পরিশেষে এটাই বলব যে, ইবাদতের দ্বারা আমরা আমাদের আমলনামায় অনেক সওয়াব জমা করতে পারি, আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হতে পারি। আল্লাহ আমাদেরকে অন্যান্য সব ইবাদতের পাশাপাশি ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে ইশরাকের সালাত আদায়ের তৌফিক দান করুক।

আরও পড়ুন-

ইসলামিক কথা, ইসলামের আলোকে মহান বানী

Leave a Comment