লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা
শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য অনেকে অনেক সমস্যায় ভুগে। আর এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে লেবু, চলুন জেনে নেওয়া যাক লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এর গুনাগুন।
আমাদের দেশে পরিচিত ফলের মধ্যে লেবু অন্যতম, লেবু তার টক স্বাদের জন্যে বেশ আলোচিত। টক জাতীয় ফলের মধ্যে লেবুর ব্যবহার অনেক বেশি। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে শুরু করে উচ্চভিত্তের পরিবারেও এর নানান ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
আমাদের দৈন্দিন জীবনের অনেক কাজেই লেবুর গুরুত্ব রয়েছে। লেবুর এমন সব উপকারিতা রয়েছে যা গবেষণার মাধ্যমে সকলের সম্মুখে এসেছে। লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা এ ব্যাপারেই আমরা আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব।
লেবুর উৎপত্তি
ধারণা করা হয়ে থাকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রথম লেবুর উৎপত্তি হয়। আরবরা ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলে দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকে লেবুর চাষ ছড়িয়ে দেয়।
এমন কথাও প্রচলিত রয়েছে যে ২০০ খ্রিস্টাব্দে ইতালির দিকে লেবুর প্রচলন শুরু হয়েছিল এবং ৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে মিশর এবং ইরানে লেবুর চাষ শুরু হয়।
আরও পড়ুনঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা
লেবুর উপাদানসমূহ
লেবুতে স্বল্প পরিমাণে ফ্যাট ও প্রোটিন রয়েছে, এর বেশিরভাগ জুড়েই রয়েছে পানি, লেবুর শতকরা আটাশি (৮৮) থেকে উনআশি (৮৯) ভাগ পানি এবং শতকরা ১০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট।
আরও কিছু উপাদান রয়েছে যেমন
- ফাইবার ২.৮ গ্রাম
- ক্যালরি ২৯
- ফ্যাট ০.৩ গ্রাম
- প্রোটিন ১.১ গ্রাম
- চিনি ২.৫ গ্রাম
লেবুতে আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক এসিড (Citric Acid) তাই লেবুতে একধরনের এসিডিক পি এইচ (Ph) থাকে। লেবুতে পি এইচের পরিমাণ থাকে দুই (২) ও তিন (৩) এর মধ্যে। অর্থাৎ লেবু পানির তুলনায় কয়েকগুণ বেশি অম্লীয়। যেহেতু লেবুর পি এইচ দুই (২) থেকে তিন (৩) এর মধ্যে পরে তাই লেবু অবশ্যই এসিডিক। অনেকেই লেবুকে ক্ষারীয় বলে থাকে, লেবু ক্ষারীয় নয় তবে লেবু বা লেবুর পানি শরীরে ক্ষারীয় প্রভাব ফেলে।
লেবুর প্রকারভেদ
জাতের নামঃ সীডলেস ( লেবুতে বীজের পরিমাণ ৬ থেকে ৭)
জাতের নামঃ বাউ লেবু ৩ / সেমি সীডলেস ( লেবুতে বীজের পরিমাণ ৬ থেকে ৭)
জাতের নামঃ বাউ লেবু ২ / সেন্টেড এলাচি ( লেবুতে বীজের পরিমাণ ৬ থেকে ৭)
জাতের নামঃ বারি লেবু ১ / এলাচি ( লেবুতে বীজের পরিমাণ ৬ থেকে ৭)
জাতের নামঃ বাউ কাগজী লেবু ১ / কাগজী লেবু ( লেবুতে বীজের পরিমাণ ৬ থেকে ৭)
উপরোক্ত প্রকারভেদ ছাড়া অঞ্চল, দেশ ভেদে লেবুর প্রকারভেদের হেরফের হতে পারে।
লেবুর উপকারিতা
- লেবুতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এন্টিঅক্সিডেন্ট এমন পদার্থ যা শরীরের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে যা ক্যান্সার, হৃদরোগ ও অন্যান্য রোগে ভূমিকা রাখতে পারে। চোখের জ্যোতি বাড়াতে, বয়সের ছাপ লুকাতে, মস্তিষ্কের উন্নতিতে, হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূর করতে এন্টিঅক্সিডেন্ট সাহায্য করে।
- ভিটামিন সি’র খুবই ভালো উৎস হলো লেবু। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- খাদ্যে রুচি বাড়াতে ও অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে।
- শরীরে শক্তি সঞ্চার করে ও মেটাবলিসম বাড়াতে সাহায্য করে।
- কিডিনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা কমাতে পারে।
- খাদ্য হজমে কার্যকরী।
- ওজন কমাতেও বিপুল কাজ করে।
- ত্বকের মান ভালো থাকে।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
- লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষায় লেবু পানি বেশ ভালো প্রমাণিত হয়েছে।
- নিয়মিত লেবু পানি পান করলে পেটের জেদী মেদ ঝরে যায়।
- রক্তে কোলেস্ট্রলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
লেবুর ব্যবহার
- সকালে সামান্য উষ্ণ গরম পানির সাথে এক চামচ আপেল সাইডার ভিনেগারের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া উত্তম। অনেকে এর সাথে হালকা মধুও মিশিয়ে নেয়, তবে মিষ্টি এড়াতে মধু বাদ দেওয়া যেতে পারে।
- লেবু, পুদিনা পাতা, চিনি ও ঠান্ডা পানি দিয়ে দারুন স্বাদের পানীয় মহিতো (Mojito) তৈরি করা হয়। এই পানীয়র উৎপত্তি কিউবার হাভানায়।
- গ্রীষ্মে লেবুর শরবতের কথা মনে আসলেই আমাদের শরীরে এক ধরনের আরাম অনুভূত হয়। সামান্য লেবুর রস, ঠান্ডা পানি ও চিনি দিয়ে এই মিশ্রণ তৈরি করা হয়।
- গোল গোল করে লেবু ও আদা কেটে বোতলে ভরে রাতভর রেখে সকালে বের করে সারাদিনে খেলে দারুন ডিটক্সিফিকেশনের কাজ করে।
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
ওজন বৃদ্ধি আমাদের অতি জটিল একটি সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এর মূলে রয়েছে অতিরিক্ত স্নেহ জাতীয় খাবার খাওয়া, কায়িক পরিশ্রম না করা, ঘুম কম হওয়া, সবুজ শাঁক-সবজী কম খাওয়া, হরমোনের সমস্যা ইত্যাদি। লেবুর নানান ব্যবহার দ্রুত গতিতে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এমনই কিছু উপায়
নিচে দেখানো হলোঃ
- লেবুতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় লেবু নিয়মিত খেলে ওজন কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লেবুর রস উষ্ণ গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে পাকস্থলির বিষাক্ত পদার্থ সব প্রসাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
- সকালে লেবু পানি খেলে পেটের মেদ আস্তে আস্তে কমে আসে, অবশ্যই তার সাথে সপ্তাহে অন্তত ৪ দিনবেশ কিছুক্ষন ব্যায়াম করতে হবে ।
- লেবু পানি খাওয়ার ফলে পাকস্থলি পূর্ণ থাকায় পেট ভারী থাকে এবং এর কারনে খাবারের রুচি নষ্ট হয় এবং এতে করে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার রুচি থাকে না।
- প্রতিদিনের খাবারের সাথে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের অস্বাস্থ্যকর পদার্থ প্রবেশ করে আর এই পদার্থ আমাদের ওজন বাড়াতে পারে। বেশ কিছুটা লেবুর রস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে শরীরে ডিটক্সিফিকেশনের ( Detoxification) মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের হয়ে যায়।
- লেবুতে ভিটামিন সি থাকায় এতে শরীরের শক্তি সঞ্চার হয় আর এর কারনে ব্যায়াম করার ইচ্ছাশক্তি ও শারীরিক শক্তি অটল থাকে।
- প্রচন্ড ক্ষিদের সময় লেবুর রস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে তৎক্ষণাৎ ক্ষিদে নিবারণ করা যায়।
- সারারাত ঘুমানোর ফলে আমাদের শরীরে খাবার প্রবেশের উপায় থাকে না তাই ঘুম থেকে ওঠার পর পর বেশ ক্ষিদে ভাব থাকা স্বাভাবিক। তখন লেবু পানি খেলে শরীরে পানির অভাব পূরণ করে শক্তি সঞ্চার করে।
ওজন বৃদ্ধি অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে যেমন হৃদ রোগ, ডায়েবেটিস, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি, যা কখনই কাম্য নয়। লেবুর দ্বারা আমরা নানান ভাবে উপকৃত হতে পারি এবং সেই উপায়গুলোর কথাই উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। নিয়মিত মেনে চললে অবশ্যই উপকার পাওয়া যাবে।
খালি পেটে লেবু খাওয়ার অপকারিতা
প্রত্যেক খাবারের যেমন ভালো গুন থাকে তার পাশাপাশি তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। সেই অনুযায়ী লেবুর যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু খাওয়ার ফলে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে নিম্নে তার বর্ণনা দেয়া হলো। তো আসুন একনজরে দেখে নিন লেবুর অপকারিতা গুলি-
লেবুতে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অম্লীয় উপাদান যা ত্বকের পক্ষে উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহারের ফলে তার অপকারও দেখা দিতে পারে। যেমন জ্বালাপোড়া।
লেবুতে উপস্থিতি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রাস্ট উপাদান। যে সকল মানুষ সাইট্রাস্ট ত্বকে ব্যবহার করে রোদ্দুরে যান, তাদের ত্বক রোদে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই রোদ্দুরে বেরোনোর আগে কেউ লেবু স্ক্রিনে ব্যবহার করবেন না।
উপসংহার
অবশেষে এটাই বলব যে, লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিয়েছেন, গাদা গাদা অর্থ ওজন কমানোতে খরচ না করে সামান্য কিছু উপায় অবলম্বন করলেই সময় বেশি হলেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত ওজনের আমরা পোঁছাতে পারব আশা করা যায়। একটু সময় করে আমরা যদি আমাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিই তাহলে আমরা সুস্থ থাকতে পারব সহজেই।