আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও এর সতর্কতা

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম

স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের মাঝে জনপ্রিয় একটি টনিক হল আপেল সিডার ভিনেগার। পৃথিবীর প্রাচীনতম থেরাপিউটিক পদার্থগুলির একটি হল আপেল সিডার ভিনেগার। মেডিসিনের জনক হিপোক্রেটিস, কাশির চিকিৎসায় আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করেছিলেন। এটি কখনো খাবার মশলা, কখনো রূপের যত্নে, খাদ্য সংরক্ষণে বা ওজন নিয়ন্ত্রনে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

স্বল্প মূল্যে সহজ লভ্য এই দ্রব্যটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় পানীয়তে পরিণত হয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হল।

আপেল সিডার ভিনেগার কি

আপেল সিডার ভিনেগার হচ্ছে আপেলের রস থেকে তৈরী ভিনেগার যা দুই বার গাঁজানো হয়। প্রথমত আপেলের রস আপেল সিডারে গাজন করা হয়। পরবর্তীতে আপেল সিডার আপেল সিডার ভিনেগারে গাজন করা হয়।

এতে আপেলের রসের প্রাকৃতিক শর্করা ভেঙ্গে অ্যালকোহল ও অ্যাসিটিক অ্যাসিড এ বিভক্ত হয়। আপেল সিডারে ভিটামিন, খনিজ, ম্যালিক অ্যাসিড, অ্যামিনো এসিড, দ্রবণীয় ফাইবার, এনজাইম ও পলিফেনল রয়েছে।

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম

ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়ায় আপেলের শর্করাযুক্ত দানা ভেঙে ফেলে একে অ্যালকোহলে রূপান্তর করা হয় এবং তারপর এতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড তৈরীর জন্য Acetobacter নামক ব্যাকটেরিয়া তৈরী করা হয়। এর পর ম্যালিক অ্যাসিড ও এসিটিক অ্যাসিড দুটি মিলিত করে একে ভিনেগারের স্বাদ দেওয়া হয়

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার রেসিপি

১। টনিক হিসেবে

১ কাপ গরম পানিতে ১ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। খালি পেটে খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট পূর্বে খেয়ে নিন। যাদের ডায়াবেটিস নাই তারা ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।

২। সালাদে ব্যাবহার

সবজি বা ফলের সালাদে এই ভিনেগার যোগ করতে পারেন। এই রকম তিনটি রেসিপি দেয়া হল –

  • ১ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, ১ চামচ অতিরিক্ত ভার্জিন অয়েল, ১ চামচ মধু, আধা চামচ লবঙ্গ রসুন ও সরিষা এক সাথে ব্লেন্ড করুন। মরিচ ও লবন পরিমান মত দিতে পারেন।
  • ১ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, ১ চামচ অতিরিক্ত ভার্জিন অয়েল, ১ চামচ লেবুর রস ও ১ চামচ মধু এক সাথে ব্লেন্ড করুন। মরিচ ও লবন পরিমান মত দিতে পারেন।
  • ১ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, ১ চামচ গ্রেট করা আদা, ১ চামচ তিলের তেল ও ১ চামচ লেবুর রস, গোলমরিচ এক সাথে ব্লেন্ড করুন। লবন পরিমান মত দিতে পারেন।

৩। জুস, স্মুদি ও চা এর সাথে

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম এর মধ্যে একটি হল তাজা ফল বা উদ্ভিজ্জ রসে এক ড্যাশ আপেল সিডার ভিনেগার মিশ্রিত করুন বা সবুজ চায়ের কাপে মিশ্রিত করুন।

৪। গলা ব্যাথা, দাঁত সাদা করার জন্য

এক গ্লাস পানিতে ১-২ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশ্রিত করুন। নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ, গলা ব্যাথা প্রশমিত করতে ও দাঁত সাদা করতে দিনে দুই বার এই পানি দিয়ে গারগল করুন। এভাবে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী খেতে পারেন।

৫। ত্বকের যত্নে

  • আপেল সিডার ভিনেগার ও পানি ১ঃ২ অনুপাতে মিশ্রিত করুন। পিগমেন্টেশন দূর করতে একটি তুলো দিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন।
  • ১০০মিলি পানির সাথে ১ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশ্রিত করুন। মুখ পরিষ্কার করে তুলো দিয়ে লাগান।

৬। চুলের বৃদ্ধির জন্য

৫০০ মিলি পানিতে আপেল সিডার ভিনেগার মিশ্রিত করুন। শ্যাম্পু করার পর এই পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ১০-১৫ মিনিট একটি তোয়ালে দিয়ে চুল মুড়িয়ে নেন।

আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার

আপেল সিডার ভিনেগার প্রস্তুতির ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়াটির বাড়ানো হয়, তখন এতে উপকারী ইষ্ট, এনজাইম ও অ্যাসিটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়ে যায়। এদের একত্রে মাদার বলে। এটি দেখতে ঘোলাটে ও তুলনামুলক ঘন।

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার উপকারিতা

১। পেটের জমে থাকা মেদ কমায়।

২। ত্বক সুন্দর ও ব্রন কমাতে সাহায্য করে।

৩। চুলকে মজবুত করে ও চুল পড়া বন্ধ করে।

৪। পেটের অ্যাসিটিক সমস্যা দূর করে।

৫। খাবারের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু ধংস করে।

৬। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। বিশেষ করে Type-2 ইনসুলিন সেনসিটিভিট বৃদ্ধি করে।

আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা

ষ্বাস্থ্য রক্ষায় আপেল সিডার ভিনেগার অতুলনীয় উপকারি একটি জিনিস । চলুন তাহলে এর উপকারি দিক গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক :

১। আপেল সিডার ভিনেগার সাধারন মানুষসহ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত সকলের জন্য বেশ উপকারি একটি দ্রব্য। রিসার্চে দেখা গেছে, যে সব মানুষ রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য পরিমাণ ভিনেগার গ্রহণ করে, সকাল বেলা তাদের রক্তে শর্করার বেড়ে যাওয়ার গতি চার শতাংশ কমে যায়।

২। আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড এবং এটি খাওয়ার ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে সাহায্য করে, পাশাপাশি মেটাবলিজম বাড়ায়।

৩। এটি গ্রহণের ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমে আসে। জাপানের একটি গবেষণার জরিপে দেখা গেছে যে, অ্যাসিটিক অ্যাসিড রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করে ফেলতে সাহায্য করে ।

৪। এই ভিনেগারে রয়েছে পাকস্থলীর এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। এই ভিনেগার আমাদের অন্ত্রে পেপসিন নামক এনজইম তৈরীর মাত্রা বাড়ায় যা প্রোটিন জাতীয় খাবার তাড়াতাড়ি পরিপাক করতে সাহায্য করে।

৫। আপেল সিডার E.Coil এর মতো খারাপ ব্যাকটোরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এই কারণেই প্রাচীন সময়েও বিভিন্ন রকম খাদ্য সংরক্ষণে এটি ব্যবহার করা হতো।

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহারে সতর্কতা

১। এই ভিনেগার দীর্ঘদিন খেলে অ্যাসিডিটি এমনকি আলসারও হতে পারে।

২। দীর্ঘদিন ব্যবহারে কিডনির জটিলতা দেখা দিতে পারে।

৩। অতিরিক্ত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। জিহ্বায় ক্ষত হতে পারে।

৪। ঘুমাতে যাবার আগে ভিনেগার খাওয়া যাবে না। এতে খাদ্যনালী ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

৫। আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে হাড়ের ভেতর থেকে খনিজ বের হয়ে যেতে পারে। ফলে হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি পাবে।

৬। অপরিশোধিত আপেল সিডার পান করলে হজমজনিত সমস্যা হতে পারে।

শেষকথা

আপেল সিডার ভিনেগার ব্যাবহারে যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমন অনেক ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ব্যাবহার ক্ষতির কারনও হতে পারে। তাই প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম প্রয়োজনভেদে ভিন্ন। তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আরও পড়ুন-

জাফরান এর উপকারিতা, স্বাস্থ্যগুন ও ব্যবহারবিধি

Leave a Comment