যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি ও যাকাতের সঠিক হিসাব

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি

দৈহিক ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। আর আর্থিক ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করা।

কুরআন মাজীদে ৮২ বার নামাজের সাথে সাথে যাকাতের কথা বলা হয়েছে। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি সে সম্পর্কেও উল্লেখ আছে।

সঠিকবাবে যাকাত প্রদান করলে দারিদ্রতা কমানো যায়। ফলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্টের উপকার হয়। ইসলামের মূলভিত্তি গুলোর মধ্যে যাকাত অন্যত্তম একটি ভিত্তি বা স্তম্ভ।

যাকাত দিলে সম্পদ বৃদ্ধি পাই। ইসলামে যাকাতকে কখোনও দয়া হিসাবে দেখার সুযোগ নেই। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি  তা হলো যাকাত আদায়কারীদের মালের নেসাব পরিমাণ যাকাত প্রদান করতে হবে। এটি গরীবের হক।

ইসলামী শরীয়ত মতো যাকাত আদায় করলে দারিদ্রমুক্ত একটি সমাজ গড়ে তুলা সম্ভাব। ধনী গরীবের মধ্যে যে বৈষম্য সঠিকবাবে যাকাত প্রদান করলে তা দূর করা যায়।

যাকাত সঠিকভাবে আদায়কারার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাত ও আখিরাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

আরও পরুনঃ যাকাত হিসাব করার নিয়ম ও যাকাতের সঠিক পরিমান

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি

১। যাকাতা প্রদানকারীকে নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হতে হবে। অর্থাৎ যাকাত প্রদানকারীকে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ,বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা কিংবা সমপরিমাণ মূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসার মালের মালিক হতে হবে। 

২।যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি তা হলো  মুসলমান হতে হবে। অমুসলিমের উপর যাকাত দেওয়া ফরয নয়।

৩। যাকাত প্রদানকারীকে বালেগ হতে হবে। নাবালেগের উপর যাকাত প্রদান করা ফরয নয়।

৪। যাকাত প্রদানকারীকে বিবেকজ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।  পাগলের উপর নিসাব পরিমাণ মাল থাকলেও  তার উপর যাকাত প্রদান করা ফরয নয়।

৫। ব্যাক্তিকে  স্বাধীন বা মুক্ত হতে হবে। দাস- দাসীর উপর যাকাত আদায় করা ফরয নয়। 

৬। মালের উপর ব্যাক্তির নিজের পূর্ণ মালিকানা থাকতে হবে। অসম্পূর্ণ মালিকানা থাকলো তার উপর যাকাত আদায় করা ফরয হয় না। 

৭।  যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি  তা হলো   নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ব্যাবহারের পর যে অতিরক্তি সম্পদ থাকে এবং তা যদি নেসাব পরিমাণ হয়ে থাকে তাহলে তার উপরে যাকাত ফরয হয়। 

৮। নেসাব পরিমাণ মাল যদি এক বছর সময় ধরে নিজের কাছে থাকে তাহলে তার উপর যাকাত ফরয। 

৯। মাল বর্ধনশীল হওয়া। যাকাতের ফযিলত সর্ম্পকে আল্লাহ বলেন, তোমরা যা কিছু আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর তিনি তার বিনিময়ে দান করবেন। আর তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।(সুরা সাবা, আয়াত-৩৯)

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা:) বলেন নবী করিম (সা:) বলেন, দান আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে এবং অপমৃত্যু রোধ করে। 

যাকাত হিসাব করার নিয়ম

নিসাব পরিমাণ সম্পদ যদি এক বছর সময় ধরে নিজের কাছে গুচ্চিত থাকে সে সকল মুসলিম নর নারীর উপর যাকাত ফরয করা হয়েছে।

কোন ব্যাক্তি যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পরও ঋণগ্রস্ত হয়ে থাকে তবে তাকে ঋণ বাদ দিয়েও যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে থাকে তবে তার ওপর যাকাত ফরয হয়।

যাকাত ফরয হওয়ার পর যদি কোন ব্যাক্তি তা প্রদান না করে অর্থ সম্পদ খরচ করে ফেলে তাহলে তাকে পূর্বের যাকাত প্রদান করতে হবে।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি তার মধ্যে বর্তমান সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সেই পরিমাণ অর্থ কারোও কাছে যদি পূর্ণ ১ বছর বা তার অধিক সময় ধরে নিজের কাছে থাকে তার উপর যাকাত ফরয হয়। যাকাত আড়াই শতাংশ হারে প্রদান করতে হয়।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি – নগদ টাকার হিসাব

কাগজের তৈরি নোটের ওপরও যাকাত দিতে হবে কারণ এ নোটগুলো রুপার স্থলঅভিষিক্ত হবে এবং রুপার নিসাবের সমপরিমাণ হবে। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি তা হলো 

টাকা-পয়সা, ব্যাংক জমা, বৈদেশিক মুদ্রা, পোস্টাল সেভিংস (নগদ, এফসি অ্যাকাউন্ট, টিসি, ওয়েজ আর্নার বন্ড), কোম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, বন্ড, প্রাইজবন্ড, জমাকৃত মালামাল, বীমা পলিসি (জমাকৃত কিস্তি), পোস্টল সেভিংস সার্টিফিকেট, ডিপোজিট পেনশন স্কিম নিরাপত্তামূলক জমাকৃত অর্থের উপর যাকাত প্রদানকরতে হবে। 

শেষকথা

প্রতিটি মুসলমানকে অবশ্যই যাকাত প্রদান করতে হবে। যাকাতের মাধ্যমে মানুষকে তার সম্পদ পবিত্র করতে হবে। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি হলো নিসাব পরিমাণ যদি কোন ব্যাক্তি যদি সম্পদের মালিক হয়ে থাকে তবে তার উপর যাকাত ফরয। যাকাত দিলে আল্লাহ তার সম্পদ বৃদ্ধি করে দেয়। যাকাতা হলো ধনীদের সম্পদে গরীবের হক। 

যাকাত সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কী?

উত্তরঃ নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলেও ব্যক্তির ঋণমুক্ততা, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত। যদি সম্পদের মালিক এত পরিমাণ ঋণগ্রস্থ হন যা, নিসাব পরিমাণ সম্পদও মিটাতে অক্ষম বা নিসাব পরিমাণ সম্পদ তার চেয়ে কম হয়, তার উপর যাকাত ফরয হবে না। ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কেবল যাকাত ওয়াজিব হয়।

২। যাকাত আদায় করতে হয় কেন?

উত্তরঃ কোনো ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর চাঁদের হিসাবে পরিপূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে তার ওপর পূর্ববর্তী বছরের যাকাত প্রদান করা ফরজ। অবশ্য কোনো ব্যক্তি যাকাতের নিসাবের মালিক হওয়ার পাশাপাশি যদি ঋণগ্রস্ত হয়, তবে ঋণ বাদ দিয়েও নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে।

আরও পড়ুন-

যাকাতের হিসাব সম্পর্কিত সকল তথ্য ও প্রয়োজনীয়তা

ইসলামিক শিক্ষামূলক উক্তি, মূল্যবান বানী ও তথ্য

Leave a Comment