যাকাত কাদের উপর ফরজ
যাকাত ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি ইসলামি সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান।
যাকাত একদিকে দরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি। আবার অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।
ইসলামী শরীয়াহ মতে, প্রত্যেক বিবেকসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য যারা একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক। এটি নিসাব নামে পরিচিত।
যাকাত কাদের উপর ফরজ এই প্রশ্নে যার উপর যাকাত ফরজ হবে তাঁকে অবশ্যই সেই সম্পদের ২.৫% যাকাত হিসাবে দিতে হবে। যোগ্য মুসলমানরা বছরে একবার যাকাত প্রদান করেন এবং নিসাব (নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ) পূরণ করার পর থেকে এক চান্দ্র (ইসলামী) বছর অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথেই যাকাত প্রদান করতে হয়।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে যাকাত কাদের উপর ফরজ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। চলুন বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আবূ সুফইয়ান (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাত (প্রতিষ্ঠা করা), যাকাত (আদায় করা), আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ও পবিত্রতা রক্ষা করার আদেশ দেন।
আরও পড়ুনঃ যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি ও যাকাতের সঠিক হিসাব
যাকাত কাদের গ্রহন করা ফরজ
যাকাত আরবি শব্দ। যাকাত অর্থ পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধিক্য ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে যাকাত বলতে ধনীদের ধন সম্পদ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশকে বোঝানো হয়।
যাকাত সম্পদকে পবিত্র করে, ধনবিত্তশালীদের পরিশুদ্ধ করে, দারিদ্রতামোচন করে,যেকোনো পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, অর্থনৈতিক বৈষম্য কমায় ও সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনে।
وَقَوْلِ اللهِ تَعَالَى (وَأَقِيمُوا الصَّلاَةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ)
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘সালাত কায়িম কর ও যাকাত আদায় কর।’’ (আল-বাকরাহঃ ৪৩, ৮৩, ১১০)
যাকাত মূলত স্বাধীন,প্রাপ্তবয়স্ক , মুসলিম নর-নারী আদায় করবে, যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। তবে যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো :-
- সম্পদের ওপর পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে।
- সম্পদ উৎপাদনক্ষম ও বর্ধনশীল হতে হবে।
- নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।
- সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজনসমূহ মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকলেই শুধুমাত্র যাকাত ফরজ হবে।
- কারো উপর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অবশ্যই তাঁকে ঋণমুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।
- কারও নিকট নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই শুধু ওই সম্পদের ওপর যাকাত দিতে হবে।
যাকাত কাদের উপর ফরজ নয়
যাকাত কাদের উপর ফরজ নয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
১.অমুসলিমদের উপর।
২.পরাধীন ক্রিতদাসের উপর।
৩.উন্মাদ (পাগল)উপর।
৪.অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালেগ থাকলে।
৫.নিসাবের চেয়ে কম পরিমাণে সম্পদের অধিকারী হলে।
৬.যৌথসম্পত্তিতে এককভাবে নিসাব পরিমাণে সম্পদের মালিক না হলে।
৭.নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ একবছর মালিকানায় না থাকলে তার উপর যাকাত ফরজ হয়না।
নিসাব পরিমাণ কি
ক)সোনা ৭.৫ তোলা=৯৫.৭৪৮ গ্রাম প্রায়।
খ) রুপা ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম প্রায়। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৩৯৪, আল ফিকহুল ইসলামি – ২/৬৬৯)
দেশী ও বিদেশী মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে ফকির ও মিসকিনদের জন্য যেটি বেশি ভালো হবে, সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরীয়তের নির্দেশনা।
তাই মুদ্রা ও পণ্যের বেলায় বর্তমানে রুপার নিসাবই পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে। একারণে যার কাছে ৫২.৫ তোলা সমমূল্যের দেশী ও বিদেশী মুদ্রা বা ব্যবসায়িক পণ্য মজুদ থাকবে, তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে।
যে সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ (২.৫০ শতাংশ) যাকাত দেওয়া ফরজ। সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা ২.৫ টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও যাকাত আদায় হবে।
(আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৭২; সুনানে তিরমিজি, হাদিস :-৬২৩)
পরিশেষে
ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে ৩য় টি হচ্ছে যাকাত। ঈমানের পর নামাজ ও তার পরই যাকাতের স্থান। কোরআনুল কারীমের ৩২ জায়গায় যাকাতের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে ২৮ জায়গায় নামাজ ও যাকাতের কথা একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
যাকাত প্রদান করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরজ করা হয়েছে যারা সামর্থ্যবান তাদের উপর। এতে করে দরিদ্র তার হক আদায় হয়ে যায়। বিত্তবানদের সম্পেদের পরিশুদ্ধি হয়।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা যাকাত কাদের উপর ফরজ এসম্পর্কে জানতে পেরেছেন।এতক্ষণ ধৈর্য্যসহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
যাকাত সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর /FAQ
১) যাকাত কত শতাংশ?
উত্তর: প্রত্যেক বিবেকবান, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য যারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি সম্পদের মালিক – যা নিসাব নামে পরিচিত – তাকে অবশ্যই সেই সম্পদের 2.5% যাকাত হিসাবে দিতে হবে।
২) যাকাত শব্দের অর্থ কি?
উত্তর:’যাকাত ‘ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ – বৃদ্ধি, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় ধনী ব্যক্তিদের নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ থাকলে নির্দিষ্ট অংশ গরিব ও অভাবী লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়াকে যাকাত বলে।
৩) টাকায় যাকাত হিসাব?
উত্তর: জাকাতের নির্ধারিত তারিখে আপনার সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, বর্তমান a/c বা FD অ্যাকাউন্টে সমস্ত নগদ ব্যালেন্স এবং ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের উপর 2.5% যাকাত দিতে হবে।
আরও পড়ুন-
যাকাত হিসাব করার নিয়ম ও যাকাতের সঠিক পরিমান
যাকাতের হিসাব সম্পর্কিত সকল তথ্য ও প্রয়োজনীয়তা