লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম, দোয়া ও আমলসমুহ

লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম

লাইলাতুল কদর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। পবিত্র কোরআনুল কারীম ও একাধিক হাদিসের ভাবার্থ থেকে প্রমাণ হয় যে,

এ রাতে কোরআনুল কারীম নাজিল হয়েছে বলে এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম কি ও এই রাতে কিভাবে ইবাদত করতে হয় তা নির্দিষ্ট নয়।

লাইলাতুল কদরের রাতে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে সারা রাত নফল নামাজ আদায় করেন, কোরআন ও হাদিসের আলোকে জিকির করেন, কবর জিয়ারত এবং নিজেদের কৃত গুনাহের জন্য মহান রব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন।

কিন্তু রমজান মাসের কোন রাতটি লাইলাতুল কদরের তা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোরআন ও হাদিসে। তবে এ সম্পর্কে অনেকগুলো নিদর্শন উল্লেখ করা হয়েছে।

হজরত মুহাম্মদ (সা:) রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলেছেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক নিয়ম সম্পর্কে জানাবো ইনশাআল্লাহ। 

আরও পড়ুনঃ যাকাত হিসাব করার নিয়ম ও যাকাতের সঠিক পরিমান

লাইলাতুল কদরের তারিখ 

লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম

লাইলাতুল কদর নির্দিষ্টকরণে অনেক মতামত রয়েছে।  সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত হচ্ছে, মহিমান্বিত এই রাতকে আল্লাহ তাআলা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে সুপ্ত রেখেছেন।

তিনি এটাকে সুনির্দিষ্ট করেননি। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে এ রাতের অনুসন্ধান করতে বলেছেন। 

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো। (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

কিছু বর্ণনার ভিত্তিতে এ রাত রমজানের শেষ সাত দিনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসুল (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর তালাশ করতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ সাত রাতের মধ্য তা তালাশ করে। (বুখারি, হাদিস ২০১৫; মুসলিম, হাদিস : ১১৬৫)

লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়মকানুন

লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম হল নফল নামাজ দুই‘রাকাত করে যত বেশি পড়া যায় তত বেশি সওয়াব পাওয়া সম্ভব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাস, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরসী বা সূরা তাকাসুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক সওয়াবের কাজ।

এই ভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই ভালো। কেউ যদি উপরে উল্লেখিত সূরাগুলো পড়তে না পারেন তাহলে সূরা ফাতিহা পড়ার পর যে সূরাগুলো আপনি পড়তে পারেন তার মধ্য থেকে প্রতি রাকাতে একটি করে সূরা মিলিয়ে নিতে হবে।

এছাড়া সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন। পাশাপাশি রাতের শেষভাগে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার অবশ্যই চেষ্টা করবেন।

লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত

লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম, নামাজ পড়ার সময় আপনি যদি আরবি ভাষা জেনে থাকেন তাহলে আপনি আরবিতে নিয়ত করবেন এবং আপনার যদি আরবি ভাষা না জানেন তাহলে আপনি বাংলাতে লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত করতে পারেন। তাহলে চলুন আমরা এখন শবে কদরের নামাজের নিয়ত বাংলা ভাষা এবং আরবি ভাষায় জেনে নিই-

লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত – আরবি উচ্চারণ

“নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা‘আ-লা- রাক‘আতাই ছালা-তি লাইলাতুল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার”।

লাইলাতুল কদরের নামাজের বাংলা নিয়ত

“আমি ক্বিবলামূখী হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে লাইলাতুল কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম  আল্লাহু আকবার”।

নামাজের পদ্ধতি

লাইলাতুল কদরের রাতে বিশেষ কোনো নামাজ অথবা পদ্ধতি নেই। লাইলাতুল কদরের নামাজে বিশেষ সূরা পড়তে হবে,এমন কথা সমাজে প্রচলিত আছে, তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।

নামাজের আলাদা কোনো দোয়া বা মোনাজাত নেই। অনেকেই ৩ বার করে সূরা পড়েন। এগুলো শুদ্ধ পদ্ধতি নয়, ভীষণ জরুরি অথবা বাধ্যতামূলকও নয়।

নিজের মতো করে দোয়া করবেন, নামাজে সূরা কেরাত পড়বেন অন্য যেকোনো সময়ের নফল নামাজের মতো। বিশেষত এই রাতে মাগরিব ও এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা জরুরি।

তবে হাদিস অনুযায়ী লাইলাতুল কদরের ফজিলত লাভ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

হাদিসে এসেছে,”যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে ,সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।”

                                                                                                                       (মুসলিম:৬৫৬)

লাইলাতুল কদরের দোয়া

মাহে রমজানের শেষ দশকের যেকোনো রাত শবে কদরের হতে পারে। তাই প্রত্যেকটি বিজোড় রাতে ইবাদত করা উচিৎ। এই রাতে পাঠ করার জন্য হাদিসে বর্ণিত একটি দোয়া রয়েছে।

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসুল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দোয়া পড়বো? তখন তিনি বললেন, তুমি বলো

اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম; তুহিব্বুল আফওয়া,ফাফু আন্নি।

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)।

পরিশেষে

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’

অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)

নামাজ রোজা ছাড়াও লাইলাতুল কদরের এই মহিমান্তিত রাতে আমাদের বেশি বেশি করে সূরা এবং দোয়া ও যিকির করতে হবে।

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম ও নিয়ত কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে জানালাম। এ সম্পর্কিত আরও তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করে পাশেই থাকুন।ধন্যবাদ।

লাইলাতুল কদর সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১) লাইলাতুল কদরের নামাজ কত রাকাত?

উত্তর: রাতের নামাযের সুন্নত হওয়ায় ২ রাকাত অন্তরে সালাত আদায় করুন। যতক্ষণ ইচ্ছা রিপিট করতে থাকুন। মনে মনে নিয়ত করুন যে আপনি লাইলাতুল কদরের জন্য ২ রাকাত নফল সালাত আদায় করছেন।

২) কদরের রাতে কোন সূরার কত আয়াত নাযিল হয়?

উত্তর: কদরের রাতে নাযিল হওয়া সূরা হলো “সূরা আল-কদর”। এই সূরাটি কুরআনের ৯৭ তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫

৩) ২৭ রমজানে কি পড়তে হয়?

উত্তর: প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কদর ৩ বার এবং সূরা ইখলাস ২৭ বার পাঠ করে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের প্রার্থনা করুন। উপকারিতা: আল্লাহ ইচ্ছা (ইনশাআল্লাহ), মহান আল্লাহ তাদের পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন।

আরও পড়ুন –

লাইলাতুল কদর, গৌরবময় রাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা

ইসলামিক শিক্ষামূলক উক্তি, মূল্যবান বানী ও তথ্য

Leave a Comment