ব্যান্ডউইথ কি, এর কাজ ও ব্যাবহারের নিয়মাবলী

ব্যান্ডউইথ কি

ব্যান্ডউইথ মূলত এমন একটি শব্দ যা ইন্টারনেট সংযোগ করার সময় প্রয়োজন হয়। সহজ কথায় বলা যায় ব্যান্ডউইথ হল এমন পরিমাণ ডাটা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে প্রেরণ করতে হয়।  ব্যান্ডউইথ দ্রুত ডেটা স্থানান্তর করার জন্য অনুমতি দেয়।

ফলে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ফাইলগুলি আপলোড এবং ডাউনলোড করার জন্য ব্যাবহার করে। এছাড়াও ভিডিও স্ট্রিম করতে, দ্রুত ও দক্ষতার সাথে ব্রাউজ করতে পারে ব্যান্ডউইথের মাধ্যমে। আজ এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব ব্যান্ডউইথ কি, ব্যান্ডউইথের প্রকারভেদ এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলি।

ব্যান্ডউইথ কি what is bandwidth
ব্যান্ডউইথ কি

আরও পড়ুনঃ

ব্যান্ডউইথ কাকে বলে

এক পার্সোনাল কম্পিউটার থেকে অন্য আরেকটি পার্সোনাল কম্পিউটার অথবা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডাটা স্থানান্তরের হারকে বলা হয় ব্যান্ডউইথ বা ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড। সাধারণত ব্যান্ডউইথ হিসাব করা হয় বিট পার সেকেন্ডে ( bit per second) এ।

একে ব্যান্ড স্পিডে বলা হয়ে থাকে অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণে বিট ট্রান্সমিট করা হয়ে থাকে তাকেই ব্যান্ডউইথ বা বিপিএস বলে। সাধারণত এটি bps বা বিটপার সেকেন্ড, কেবিপিএস বা কিলোবিট পার সেকেন্ড, এমবিপিএস বা মেগাবিট পার সেকেন্ড এ পরিমাপ করা হয়। ব্যান্ডউইথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ইন্টারনেট সংযোগ এর গতি এবং এর নির্ভরযোগ্যতা নির্ধারণে।

ব্যান্ডউইথ কি – ব্যান্ডউইথ এর প্রকারভেদ 

ডেটার ট্রান্সফার গতির ওপর নির্ভর করে কমিউনিকেশন গতিকে ভাগ করা যায় তিনভাবে। যথা –

  • ন্যারো ব্যান্ড 
  • ভয়েস ব্যান্ড 
  • ব্রডব্যান্ড 

ন্যারো ব্যান্ড 

সাধারণত ন্যারো  ব্যান্ড ৪৫ হতে ৩০০ বিপিএস পর্যন্ত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ডাটা স্থানান্তর হলে এই গতিকে ন্যারো ব্যান্ড Sub-Voice Band বলে। এই ব্যান্ড সাধারণত ধীরগতি ডেটা স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়। টেলিগ্রাফিতে তারের ব্যবহার বেশি হয় যার কারণে ডেটা স্থানান্তরের গতি কম হয়ে থাকে। 

ভয়েস ব্যান্ড 

এই ব্যান্ডের ডেটা গতি হয়ে থাকে ৯৬০০ bps পর্যন্ত। এই ব্যান্ডটি বেশি ব্যবহার করা হয় টেলিফোনে। এছাড়াও কম্পিউটারের ডেটা কমিউনিকেশন এর জন্য কম্পিউটার হতে প্রিন্টারের ডেটা স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে বা কার্ড রিডার হতে কম্পিউটারে ডেটা স্থানান্তর করার জন্য এই ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হয় এবং টেলিফোন লাইনেও এই ব্যান্ড ব্যবহৃত হয়। 

ব্রড ব্যান্ড 

ব্রড ব্যান্ড হলো উচ্চগতি সম্পন্ন ডাটা স্থানান্তরের ব্যান্ডউইথ। এর গতি মিনিমাম এক মেগা বিট পার সেকেন্ড বা এমবিপিএস থেকে অনেক উচ্চগতি পর্যন্ত হয়। সাধারণত অপটিক্যাল ফাইবারে এবং কোএক্সিয়াল ক্যাবল এ ডেটা স্থানান্তরের জন্য ব্রড ব্যান্ড ডেটা ট্রান্সমিশনের ব্যবহার হয়। এছাড়াও মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশন এবং স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনে এই ব্যান্ডের ব্যবহার হয়ে থাকে।

নেটওয়ার্ক ক্ষমতা 

ব্যান্ডউইথ শব্দটি অনেক সময় নেট বিট রেট,  ইনফরমেশন রেট,পিক বিট রেট বা ফিজিক্যাল লেয়ার ইউস বিট রেট ‘ ডিজিটাল কমিউনিকেশন সিস্টেম বা চ্যানেল ক্যাপাসিটি ফিজিক্যাল কমিউনিকেশন  লজিক্যাল পাথের সর্বোচ্চ থ্রুপুট কে সংজ্ঞায়িত করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,  একটি কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক এর সর্বোচ্চ থ্রুপুটকে পরিমাপ করে ব্যান্ডউইথ পরীক্ষাগুলি। স্যানোন হার্ডলি চ্যানেলের মাধ্যমে একটি  লিংকে গিয়ে সর্বোচ্চ হার টিকে রাখা যায় সেটি সীমিত এই যোগাযোগ ব্যবস্থায় এবং হার্জ এর ব্যান্ডউইথ ও চ্যানেলের গোলমাল এর ওপর নির্ভরশীল। 

নেটওয়ার্ক খরচ 

সেকেন্ডে বা বিট খরচ করা ব্যান্ডউইথ, গুড পুট বা প্রাপ্ত থ্রুপুটের সাথে মিলে যায় অর্থাৎ বলা যায় যোগাযোগের মাধ্যমে যে সফল ডেটা ট্রান্সফার হয় তার গড় হার, খরচ করা ব্যান্ডউইথের আকৃতি, এই ব্যান্ডউইথের ম্যানেজমেন্ট, ব্যান্ডউইথ ক্যাপ, ব্যান্ডউইথ থ্রটলিং, ব্যান্ডউইথ এলোকেশন ( ডায়নামিক ব্যান্ডউইথ এন্ডুকেশন এবং ব্যান্ডউইথ এলোকেশন প্রটোকল)  ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে থাকে। একটি বিট স্ট্রিম ব্যান্ডউইথের অধ্যায়নকৃত  সময়ের মাঝে হার্জ এবং এর গড় খরচ সংকেত হল ব্যান্ডউইথের সমানুপাতিক।

ব্যান্ডউইথ এবং ডাটা ট্রান্সফার রেট 

একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে নেটওয়ার্ক সংযোগের মাধ্যমে সর্বাধিক পরিমাণ ডাটার প্রেরণ করা গেলে সেটি ব্যান্ডউইথ বলে বিবেচিত হয়। ইন্টারনেটের সংযোগ গতি এবং এর কর্ম ক্ষমতা নির্ধারণ করতে ব্যান্ডউইথ কি বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রতি সেকেন্ডে বিট 

ডিজিটাল ডাটার ক্ষুদ্রতম একক হল একটি বিট। বিপিএস বা বিট পার সেকেন্ড হচ্ছে এক সেকেন্ডে কতগুলো বিট প্রেরণ করা যায় এর একটি পরিমাপ। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি একটি ১০ এমবিপিএস সংযোগ প্রতি সেকেন্ডে দশ মিলিয়ন বিট প্রেরণ করে থাকে বা করতে পারে। 

প্রতি সেকেন্ডে মেগাবিট

ব্যান্ডউইথের একটি বেশি ব্যবহারকৃত পরিমাপ হলো প্রতি সেকেন্ডে মেগাপিট বা এমবিপিএস। ১০০ এমবিপিএস বা প্রতি সেকেন্ড মেগা বিটের  ব্যান্ডউইথের একটি সংযোগ  প্রেরণ করতে পারে প্রতি সেকেন্ডে 100 মিলিয়ন বিট। অনলাইন গেমে এবং ভিডিও স্ট্রিমিং এর মত কাজের জন্য উচ্চ পরিমাণের ব্যান্ডউইথ খুবই প্রয়োজন এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রতি সেকেন্ডে গিগাবিট

ব্যান্ডউইথের সর্বোচ্চ পরিমাপ হলো জিবিপিএস গিগাবিট পার সেকেন্ড। এক বিলিয়ন বিট সমান এক গিগাবিট। ১ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ এর সঙ্গে একটি সংযোগে প্রতি সেকেন্ডে প্রেরণ করতে পারে ১ বিলিয়ন বিট। এটি বড় সেন্টার এবং বড় ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এগুলির জন্য প্রচুর পরিমাণ ডেটার উচ্চগতির ডেটা স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়।

ব্যান্ডউইথ থ্রটলিং

ব্যান্ড উইথ থ্রটলিং হচ্ছে আইপিএস দ্বারা ইন্টারনেটের সংযোগের গতি কমিয়ে দেওয়া ঐচ্ছিকভাবে। এর অর্থ হল ব্যবহারকারীর সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান অনুযায়ী সর্বাধিক ইন্টারনেটের গতি অর্জন করতে পারে যেটি সীমিত। এটি ব্যবহারকারীদের গ্রুপ কর্তৃক বা সাধারণত নির্দিষ্ট ব্যবহারকারী হতে ব্যবহারকৃত নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইথের পরিমাণ আইএসপি দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। ব্যান্ডউইথ থ্রটলিং এর কাজগুলি-

ব্যান্ডউইথ টেস্ট 

ইন্টারনেটের সংযোগ গতি এবং এর গুণগান পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত একটি সরঞ্জাম হলো ব্যান্ডউইথ পরীক্ষা। নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে নেটওয়ার্ক সংযোগের মাধ্যমে ডেটার পরিমাণ পরিমাপ করে প্রেরণ করা যায়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য এই তথ্যগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি তাদের সাহায্য করে  ইন্টারনেট গতি সঠিকভাবে পাচ্ছি কিনা যে কারণে তাদের অর্থ প্রদান করতে হয় এই বিষয়টি নির্ধারণে। 

জনপ্রিয় টুল

ব্যান্ডউইথ টেস্টের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুল হচ্ছে ওকলা দ্বারা স্পিড টেস্ট। এটি এমন একটি বিশ্বব্যাপী ব্রডব্যান্ড যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সঠিক ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে। এটি আপলোড এবং ডাউনলোড উভয়ের গতি  পরিমাপ করে এছাড়াও ডিভাইস হতে সার্ভার এবং পিছনে যে সিগন্যালের জন্য যতটুকু  সময় লাগে এবং পিং টাইমের জন্য। 

প্রথমত তাদের ওয়েবসাইট দেখতে পারেন স্পিড টেস্ট ব্যবহার করে ব্যান্ডউইথ পরীক্ষা করার জন্য অথবা আপনার ডিভাইসেই তাদের অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন। এরপর ‘যাও’ বোতামে ক্লিক করতে হবে এবং টুলটি সঠিকভাবে পরীক্ষা করে ব্যবহার করার জন্য একটি উত্তম সার্ভার খুঁজে পাবে। এই পরীক্ষাটি শেষ হওয়ার পরে একটি সহজ বিন্যাসের মাধ্যমে ফলাফলগুলি প্রদর্শন করবে যার মধ্যে আপলোড এবং ডাউনলোডের গতি এমবিপিএস বা মেগাবিট প্রতি সেকেন্ড এবং মিলি সেকেন্ড  পিং টাইম সহ। 

তবে খেয়াল রাখতে হবে যে ব্যান্ডউইথের পরীক্ষার ফলাফল গুলি বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তন হতে পারে যেমন নেটওয়ার্ক কনজেশন ও নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন ডিভাইসের সংখ্যা। আপনার ইন্টারনেট গতি সঠিকভাবে পেতে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয় একাধিকভাবে পরীক্ষা করার জন্য। এটি ব্যান্ডউইথ পরীক্ষায় একটি দরকারি টুল. কেননা ইন্টারনেট সঠিকভাবে ও সঠিক গতি পাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে তারাও অর্থ প্রদান করে থাকে। ওকলা স্পিড টেস্ট একটি নির্ভরযোগ্য টুল ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই সঠিক ফলাফল পাবেন।

উপসংহার 

সংক্ষেপে ব্যান্ডউইথ কি বলতে আমরা বুঝে থাকি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নেটওয়ার্ক সংযোগ এর মাধ্যমে বা সর্বাধিক পরিমাণ ডেটার পরিমাপের মাধ্যমে প্রেরণ করা যেতে পারে। ব্যান্ডউইথ প্রকাশ করা হয় সাধারণত প্রতি সেকেন্ডে মেগাপিঠ বা গিগাবিট বা বিট।

বিভিন্ন বড় ফাইল অনলাইন গেমিং ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি স্থানান্তরের মতো কার্যো গুলির জন্য ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করতে হয়। ব্যান্ডউইথ এই কাজগুলির জন্য দ্রুত ডেটা স্থানান্তর হার অনুমতি দিয়ে থাকে। এতিম সাধারণত ইন্টারনেটের গতির মতো হয় না তবে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য সামগ্রিকভাবে কর্ম ক্ষমতা প্রভাবিত করতে পারে।

ব্যান্ডউইথ কি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ 

২. ইন্টারনেটের সংযোগের ধরন কি? 

উত্তর: ইন্টারনেট সংযোগের বিভিন্ন ধরন রয়েছে এর মধ্যে বেতার, তারযুক্ত, ওয়াইফাই এবং 5g। ব্যবহারকারীদের এবং তাদের চাহিদার উপর নির্ভর করে সব রকমের নিজস্ব সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। 

 ১.ব্যান্ডউইথ কাকে বলে? 

উত্তর: এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়, এক পার্সোনাল কম্পিউটার থেকে অন্য আরেকটি পার্সোনাল কম্পিউটার অথবা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডাটা স্থানান্তরের হার কে বলা হয় ব্যান্ডউইথ বা ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড।

৩. ব্যান্ডউইথ থ্রটলিং কি?

উত্তর:  ব্যান্ড উইথ থ্রটলিং হচ্ছে আইপিএস দ্বারা ইন্টারনেটের সংযোগের গতি কমিয়ে দেওয়া ঐচ্ছিকভাবে।

আরও পড়ুন-

শেয়ার বাজার কি? বিনিয়োগের নিয়ম

সফটওয়্যার কি ও সফটওয়্যারের প্রকারভেদ

Leave a Comment