থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়

থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়

থাইরয়েডের (thyroid) সমস্যা নারী এবং পুরুষ উভয়ই ভুগতে পারেন। বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি ১০০ নারীর মধ্যে অন্তত ১৫ জন ও এক হাজার পুরুষের মধ্যে অন্তত একজন করে থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত। আজকে আমরা থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করব। থাইরয়েড শরীরের এক বিশেষ গ্রন্থি।

এটি স্বরযন্ত্রের দুপাশে থাকে। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ হল শরীরের কিছু অতি জরুরী হরমোন উৎপাদন করা। শরীরের জন্য থাইরয়েড হরমোন এর একটি

নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলেই শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে শুরু করে। থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম ও বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েড। 

থাইরয়েড (thyroid) গ্রন্থি শরীরের বিপাকীয় ফাংশন এর জন্য দায়ী। তাই থাইয়েডের সমস্যা দেখা দিলে পুরো শরীরে তার প্রভাব পড়ে। একজন থাইরয়েড রোগী বিষন্নতা, ওজন বৃদ্ধি, ক্লান্তি, শরীরের তাপমাত্রা, কম চুল পড়া, দুর্বল আলোর সংবেদনশীলতা ও শক্তির অভাব অনুভব করতে পারেন। থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় এই সম্পর্কিত সকল তথ্য জেনে আসি এই পোস্টের মাধ্যমে। 

আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস

থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়

থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় যেমন- হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে ওজন বেড়ে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক দেখানো, ঠান্ডা সহ্য করতে না পারা, ক্লান্তির মত সমস্যা দেখা যায়। আর অন্যদিকে হাইপারথাইরয়েডে ওজন হঠাৎ করে কমে যায়।

নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলেই শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে শুরু করে। থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম হলে বলা হয় হাইপাথাইরয়েডিজম। হঠাৎ করে থাইরয়েডের (thyroid) মাত্রা বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া অনেকেই টের পান না।

চলুন বিস্তারিত জেনে থাইরয়েড বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার কয়েকটি লক্ষণ

১. দিনের মধ্যে শরীরে হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়াও থাইরয়েডের লক্ষণ। দেখা যায়, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কিংবা শরীরচর্চার পরও এক্ষেত্রে ওজন বাড়তে পারে।

২. গলার সামনের দিকে মাঝখানে কোন ধরনের ফুলা বা বুঝতে পারলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৩. নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনিয়মিত মাসিক। এক্ষেত্রে এক মাসে কয়েকবার মাসিক হতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় মাসিক একেবারেই বন্ধ হয়ে থাকে।

৪. থাইরয়েড এর ফলে তাপমাত্রার প্রতি সহনশীলতা কমে যায়। তাপমাত্রা সামান্য কমলেই বেশি ঠান্ডা লাগে আবার সামান্য বেড়ে গেলে অসহ্য গরম লাগে এবং অতিরিক্ত ঘাম হয়।

৫. প্রায়ই পেট খারাপ বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও থাইরয়েডের লক্ষণ। তাই একটানা এসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আসলে হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে ওজন বেড়ে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক দেখানো, ঠান্ডা সহ্য করতে না পারা, ক্লান্তির মত সমস্যা দেখা যায়। অন্যদিকে আর হাইপারথাইরয়েডে ওজন হঠাৎ করে কমে যায়। এক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য, গরম সহ্য করতে না পারা, অবসাদ, ঋতুস্রাব কম হওয়ার মতো লক্ষণ প্রকট হয়।

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম

থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় – করনীয়

থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় এবং হলে যা করা উচিত তা হচ্ছে,

>>নিয়মিত থাইরয়েড পরীক্ষা করতে হবে। চাইলে একটি গ্লাস বেসাল থার্মোমিটার দিয়ে ১০ মিনিটের তাপমাত্রা মেপে পরীক্ষা করতে পারেন থাইরয়েড।

>>প্রচুর পানি পান করতে হবে। থাইরয়েড রোগীদের উচিত পাতিত পানি পান করা। এতে ক্লোরিন, ফ্লোরাইড ও ব্রোমিন এর মাত্রা খুবই কম থাকে। যা থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।

>>সেলেনিয়াম, টাইরোসিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। থাইরয়েড রোগীদের অবশ্যই ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।

>>দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুম অবশ্যক থাইরয়েড রোগীদের জন্য। এর মাধ্যমে থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

থাইরয়েড হলে যে সকল কাজ করা উচিত নয়

থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়, হলে যে সকল কাজ করা উচিত নয়, 

>>প্রথমত ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে।

>>চর্বি প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এমনকি ফ্যাটবিহীন বা ট্রান্সফ্যাট খাবার থাইরয়েড রোগীদের জন্য সমস্যা তৈরি করে।

>>চিনি ও ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকুন। অতিরিক্ত ক্যাফেইন খেলে পিটুইটারি গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত টিএসএইচ এর মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে।

>>বাঁধাকপি ও ফুলকপি খাওয়া যাবেনা। এতে থাইরয়েডের সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই থাইরয়েড থাকলে এগুলো খাবেন না।

>>ফাইবার জাতীয় খাবার শরীরের জন্য খুবই ভালো। এমনকি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। তবে থাইরয়েড (thyroid) হলে অত্যাধিক ফাইবার জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো।

>>বেশিরভাগ চিকিৎসকের মতে, দুগ্ধজাত খাবার শরীরে হরমোনের তারতম আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই দুধ, মাখন, চিজের মত খাবার এড়িয়ে যাওয়া ভালো।

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা 

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময় প্রতিটা মেয়েই তার অনাগত সন্তানকে নিয়ে কতই না স্বপ্ন দেখে। কিন্তু এই গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। 

এই সময় শরীরে হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বাড়ে অথবা কমে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু হরমোন লেভেল নরমাল রেঞ্জে না থাকলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। প্রেগনেন্সিতে থাইরয়েডের সমস্যা বেশ কমন। এই হরমোনের মাত্রা ঠিক না থাকলে গর্ভের শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। এমন কি হতে পারে অকাল জন্ম, গর্ভপাত অথবা মৃতপ্রসব।

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত দুর্বলতা বা ক্লান্ত লাগা, স্বাভাবিকের থেকে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, কোন কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া, খুদা কমে যাওয়া। এই ধরনের লক্ষণ যদি আপনার থাকে, তাহলে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের সাথে কথা বলুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টেস্ট করে নিশ্চিত হন আপনার থাইরয়েড লেভেল ঠিক আছে কিনা। রক্তে TSH, T3 ও T4 এর পরিমাণ দেখেই বুঝা যাবে এটা।

থাইরয়েডের চিকিৎসা পদ্ধতি 

থাইরয়েডের (thyroid) চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক সহজ। যদিও হাইপোথাইরয়েডের সারা জীবন ওষুধ খেতে হয়। হাইপারথাইরয়েডেড টিউমার এভুলেশন করলে আবার তা হাইপো হয়ে যায়। সেজন্য দেখা যায় দুই ক্ষেত্রে লম্বা সময় চিকিৎসা নিতে হয়। তবু এর খরচ খুব কম। প্রতিদিন মাত্র একটা বা দুইটা ওষুধ খেলেই সুস্থ থাকা যায়। সেই সাথে ফুড সাপ্লিমেন্ট তো নেওয়াই যায়।

থাইরয়েড (thyroid) রোগীদের ক্যালসিয়ামের অভাব, ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়া, সহজ কিছু ভিটামিন মিনারেলের অভাব হয়, বিশেষ করে রক্ত কমে যেতে পারে। এজন্য কিছু শাক সবজি যদি খাবারের সাথে রাখা যায় এটাও একটি চিকিৎসার অংশ হবে। আর থাইরয়েড রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি অবশ্যই খুবই সস্তা। 

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আপনার প্রয়োজন মত ওষুধ খেয়ে নিবেন। আর প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে ট্যাবলেটের পরিমাণ একটু বেশি প্রয়োজন হয়। এটা সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। এই ট্যাবলেটগুলো খুবই সহজলভ্য।গ্রাম থেকে শুরু করে সব জায়গায় সহজেই পাওয়া যায়। এই ট্যাবলেট গুলো আমাদের দেশেই তৈরি হয়।

পরিশেষে

মনে রাখবেন, থাইরয়েড (thyroid) বেশিরভাগ সমস্যা থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে বিচ্যুতি ঘটার কারণে হয়ে থাকে। এটি বড় কোন রোগ নয়। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে বেশিরভাগই কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। হাইপোথাইরয়েড এর ক্ষেত্রে লিবোথাইরক্সিন নামে হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। থাইরয়েড এর ক্ষেত্রে ১-২টি ট্যাবলেট প্রতিদিন খেতে হয়। ১-২ টি থেকে বেশি ট্যাবলেট খাওয়া উচিত নয়। হাইপো বা হাইপার দুইটির ভারসাম্যহীনতাই মেডিসিনের মাধ্যমে ব্যালেন্স করা যায়। 

থাইরয়েডের সমস্যা হলে দ্রুত ট্রিটমেন্ট নিন। ভয়ের কিছু নেই, তবে সচেতনতা জরুরি। থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে, রান্নাতে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় এবং থাইরয়েড নিয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য। থাইরয়েড সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। 

থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় এই সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১. থাইরয়েড রোগের কারণ কি? 

উওর :- আপনার ইমিউন সিস্টেম থাইরয়েড গ্রন্থকে যখন আক্রমণ করে তখন বেশিরভাগ প্রকার ঘটে, এটি প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং থাইরয়েড কোষের ক্ষতি করে। আক্রমণের কারণ একটি অটোইমিউনের রোগ যেমন হাশিমোটো। অন্যান্য নির্দিষ্ট ঔষধের ব্যবহার থেকেও ঘটে।

২. থাইরয়েডের সমস্যায় কোথায় চুলকানি হয়? 

উত্তর :- থাইরয়েডের সমস্যায় ফুসকুড়ি ঘাড়, বুক,পিঠ মুখ ও নিতম্বে চুলকানি হতে পারে। 

৩. থাইরয়েড কত বড়? 

উত্তর :- থাইরয়েড হরমোন সংশ্লিষ্ট এবং শারীরবৃত্তি। আয়োডিনের ঘাটতি ছাড়া সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণ একটি থাইরয়েড গ্রন্থি প্রায় 4 থেকে 4.8×1 থেকে 1.8×0.8 থেকে 1.6 সেমি আকারের হয়,গড় সোনোগ্রাফিক আয়তনের সাথে। 7 থেকে 10 মিলি এবং ওজন 10 থেকে 20 গ্রাম।

৪. হাইপারথাইরয়েডিজম হলে কি চুল পড়ে? 

উত্তর:- হাইপারথাইরয়েডিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৫০% এবং হাইপোথাইরয়েডিজম সহ ৩৩% ব্যক্তিদের চুল পড়া পরিলক্ষিত হয়। 

৫. থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে কি কি লক্ষন দেখা যায়? 

উত্তর :- থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে শরীরে যেসব উপসর্গ দেখা যায়, ওজন কমে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, গরম সহ্য করতে না পারা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, ঘুম না হওয়া, সব সময় গা গরম হওয়া, হাতে কাঁপুনি, ঘন ঘন পায়খানা হওয়া, চোখ বড় বড় হওয়া, অতি উদ্বেগ ইত্যাদি।

আরও পড়ুন-

মাসিক না হওয়ার কারণ ও মাসিকের ঔষধ

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জানা জরুরী

Leave a Comment