গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

 একজন নারীর মাতৃত্বের  প্রথম ধাপই হচ্ছে গর্ভধারণ করা। একজন নারী যখন গর্ভধারণ (pregnency) করে তার মধ্যে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। তবে এই লক্ষণ কিন্তু শুধু একটি -দুইটি না বেশকিছু লক্ষণ দেখা যায়। কেননা গর্ভাবস্থায় একজন নারীর মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই পরিবর্তনটা শারিরীক এবং মানুষিক দুইভাবেই আসে।

তবে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো শুরুর একসপ্তাহে ঠিক চোখে পড়ার মত হয় না। এমনকি প্রথম একমাসে একজন নারী পরিপূর্ণভাবে বুঝে উঠতে পারেন না তিনি গর্ভধারণ pregnency) করেছেন কিনা।

যদিও গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ তার মধ্যে প্রকাশ পাওয়া শুরু হয়ে যায়।  যাইহোক কোন কোন লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন একজন নারী গর্ভবতী কি না, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব পরের ধাপগুলোতেঃ

আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস

পিরিয়ড মিস হওয়া

একজন নারী যখন মাতৃত্বের সেই সুন্দর ধাপে প্রবেশ করেন তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য লক্ষণ দেখা যায়। গর্ভবতী হওয়ার যে অন্যতম লক্ষণটি একজন নারীর মধ্যে দেখা যায় সেটি হল তার পিরিয়ড মিস হওয়া। একজন নারী যখন গর্ভধারণ করেন তখন তিনি সর্বপ্রথম তার পিরিয়ড মিস করেন। তবে যদিও পিরিয়ড মিস হওয়াই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ নয়। গর্ভবতী হওয়ার আরো অনেক লক্ষণ রয়েছে। কিন্তু এটি একটি অন্যতম লক্ষণ যেটির মাধ্যমে একজন নারী ধারণা করেন তিনি গর্ভবতী (pregnency) কি না। একটি কথা বলে রাখা ভালো যে অনেকসময় অনেক নারীর বিভিন্ন শারিরীক পরিবর্তনের কারণেও পিরিয়ড মিস হয়। তাই পিরিয়ড মিস হলেই নিজেকে নিশ্চিতভাবে  গর্ভবতী মনে না করে টেস্ট করে অথবা ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিশ্চিত হওয়াই উত্তম।  

মর্নিং সিকনেস

মর্নিং সিকনেস গর্ভবতী হওয়ার আরেকটি অন্যতম লক্ষণ। যদিও এটি দিনে বা রাতে যেকোন সময় হতে পারে। কিন্তু প্রথম এক-দুই মাসে বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে এটি দিনেই বেশি হয়ে থাকে। এই মর্নিং সিকনেসটি আসলে অস্বস্তি অনুভব করা। সাধারণত  গর্ভধারণের চার থেকে ছয় সপ্তাহের মাথায় একজন নারী আস্তে আস্তে অস্বস্তি অনুভব করতে থাকেন। ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই একজন গর্ভবতী নারীর মাথা ঘুরানো, বমি বমি ভাব আসা অথবা বমি হওয়া, গা গোলানো এমন লক্ষণগুলোকেই মর্নিং সিকনেস বলা হয়ে থাকে। এইসব অ্যাস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনোর স্তর বৃদ্ধি্র কারণে হয়ে থাকে। তবে এই লক্ষণগুলো রাতেও দেখা যেতে পারে। অনেক নারীর ক্ষেত্রে পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে থেকেই বমি বমি ভাব, গা গোলানো ভাব দেখা যায়। একেক নারীর ক্ষেত্রে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো একেকভাবে প্রকাশ পায়। 

স্তনযুগল পরিবর্তিত হওয়া

অনেক নারীর ক্ষেত্রেই গর্ভধারনের (pregnency) সাত থেকে পনেরো দিনের মাথায় তাদের স্তন যুগলে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। একজন নারী গর্ভধারনের পর তার স্তন যুগল আস্তে আস্তে ফুলে যায়, ভারী হয়ে যায়, ঝুলে যায় এবং অনেক সময় স্তনে হালকা হালকা ব্যথাও অনুভব হয়। এই স্তনের পরিবর্তনও গর্ভবতী হওয়ার অন্যতম আরেকটি লক্ষন।

আরও পড়ুনঃ প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া

ঘন ঘন প্রস্রাবও গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন। গর্ভকালীন (pregnency) অবস্থায় একজন নারীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় যার কারণে কিডনি অধিক পরিমাণে তরল নিঃসৃত করতে শুরু করে।এর ফলে প্রস্রাবের মাধ্যমে তা শরীর থেকে বের হয়ে আসে।এর কারণেই গর্ভাবস্থায় একজন নারীর ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। 

ভ্যাজাইনাল রক্তরক্ষন

গর্ভকালীন (pregnency) সময়ে অনেক নারীরই ভ্যাজাইনাল রক্তক্ষণ হয়ে থাকে। এতে ভয় পাবার কিছু নেই ডাক্তারের কাছে গেলেই এর সহজ সমাধান পাওয়া যাবে। যদিও এটি একদম শুরুর সময়টাতেই হয়ে থাকে। ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং, স্পটিং ও ক্র্যাম্পস গর্ভবতী হওয়ার  লক্ষণ এবং এর পরিমাণ অল্প থেকে বেশি হতে পারে। আবার, অনেক নারীর ক্ষেত্রে ইনফেকশনের কারণে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হয়ে থাকে এবং এটিও গর্ভাবস্থায় প্রথম তিনমাসেই হয়ে থাকে।

শরীরে ক্লান্তি অনুভব করা

শরীরে ক্লান্তি অনুভব করাও গর্ভবতী হওয়ার উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। এই লক্ষণটিও গর্ভকালীন (pregnency) সময়ে একদম শুরুর দিকে প্রকাশ পায়। এ সময়ে একজন নারীর শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এর কারণেই শরীরে ক্লান্তি অনুভব হয়। এই সময়টাতে গর্ভধারনের শুরুর দিকে অনেক দূর্বলতা অনুভব করে থাকেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য

গর্ভবতী হওয়ার  লক্ষণগুলোর মধ্যে আরও একটি লক্ষণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য।কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার জন্য হরমোনকে দায়ী করা হয়ে থাকে। পিরিয়ড মিসের পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে গর্ভধারণ হয়েছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া  

গর্ভবতী (pregnency) হওয়ার আরও একটি লক্ষণ হলো শরীরের তাপমাএা বৃদ্ধি পাওয়া। এ সময় নানা কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।সাধারণত গর্ভকালীন অবস্থায় প্রোজেস্টেরোনের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনটি হয়ে থাকে।

মুড সুইং হওয়া

গর্ভাবস্থায় (pregnency) মুড সুইং ও মাথা ঘোরা খুবই সাধারণ লক্ষণ। গর্ভকালীন  সময়ে একজন নারীর  হরমোনের নানা ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। এই হরমোন পরিবর্তনের  কারণে আকস্মিক কান্না করা, হঠাৎ করে রেগে যাওয়া, আনন্দিত হওয়া, আবার অতিরিক্ত এক্সাইটেড হয়ে যান একজন গর্ভবতী নারী।

খাবার টেস্টের পরিবর্তন হওয়া

অবাক হলেও কথাটি সত্যি যে গর্ভাবস্থায় (pregnency) একজন নারীর খাবারের টেস্টের অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। এমনকি তার সবচাইতে পছন্দের খাবারটিও অনেক সময় তার অপছন্দের খাবার হয়ে যায়। কেননা এইসময়টাতে একজন গর্ভবতী নারীর খাবারের রুচির অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকে। অনেক সময় অনেক খাবার খাওয়ার রুচি হয়। আবার পরক্ষণেই সেই খাবারের রুচি নষ্ট হয়ে যায়। হঠাৎ করেই অনেক অদ্ভুত সময়ে তার অনেক অদ্ভুত ধরনের খাবার খেতে ইচ্ছে হয়। আবার অনেক সময় অনেক খাবারের গন্ধে গর্ভবতী নারীর বমি বমি ভাব এবং বমিও হয়।

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায়, গর্ভবতী হওয়া একজন নারীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এইসময় একজন নারীর ভিতর নানারকম পরিবর্তন আসে।এইসব পরিবর্তনকেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সব নারীর ক্ষেত্রে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ একরকম হয় না। একেকজন নারীর ক্ষেত্রে একেকরকম লক্ষণ দেখা যায়। সব নারীর মধ্যে গর্ভবতী (pregnency) হওয়ার সব লক্ষণ একই সময়ে দেখা যায়না। তাই আরেকজনের লক্ষণ দেখে আপনার কেন সেই লক্ষণ হয়নি সেটি নিয়ে ঘাবড়ে না যাওয়ায় ভালো। এমনকি অন্য কারো পরামর্শে কোন ওষুধ খাওয়া, নিশ্চিত না হয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া খুবই বিপদজনক হতে পারে। তাই আগে ডাক্তারের কাছে যেয়ে নিশ্চিত হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১।গর্ভবতী হওয়ার পর পিরিয়ড হওয়া কি সম্ভব ? 

উত্তরঃ  নিয়মিত ঋতুচক্র (মাসিক) হয় এমন নারীদের জন্য ঋতুচক্র (মাসিক) হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া হ’ল গর্ভাবস্থার প্রথম লক্ষণ । কখনও কখনও রক্তস্রাব হতে পারে। এতে হাল্কা ঋতুচক্র (মাসিক) বা দাগ কাটার মতো রক্ত দেখা যায়। তবে এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।

২। কত দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যাই?

উত্তরঃ  সহবাসের কমপক্ষে ২১ দিন পরে আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন।

 ৩।গর্ভধারণের কতদিন পর থেকে বমি হওয়া শুরু হয়?

উত্তরঃ  গর্ভধারণের ৬ষ্ঠ সপ্তাহ থেকে গর্ভবতী নারীর বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া শুরু হয় এবং ১২ সপ্তাহে গিয়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। 

৪। গর্ভবস্থায় অতিরিক্ত বমি হলে কোন ঔষধ খাওয়া উচিত? 

উত্তরঃ গর্ভকালীন অবস্থায় বমি হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু বমি যদি বেশি হয় তবে ঔষধ গ্রহণ করে যেতে পারে সেটি অব্যশই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। কেননা, এই সময়টাতে একজন নারীর জন্য খুবই নাজুক সময় তাই ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা না করে কোন ঔষধ গ্রহণ করা একেবারেই উচিত নয়। 

আরও পড়ুন-

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

Leave a Comment