৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া ও সচেতনতা

৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া

শিশুর নড়াচড়া টের পাওয়া গর্ভবতী অবস্থায় এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা।

গর্ভের শিশুর সুস্থতা শিশুর নড়াচড়ার উপর নির্ভর করে থাকে।

গর্ভবতী মায়েদের এই নড়াচড়া একেকজনের একেক রকম হয়ে থাকে।

মোটা দাগে সেটি বলেদেওয়া কঠিন যে নড়াচড়ার পরিমাণ ও ধরণ স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক।

অনেক সময় বিপদের লক্ষণ হতে পারে যে গর্ভের শিশুর নড়াচড়ার ধরনে কিছু বিশেষ পরিবর্তন। তাই এই বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনতে।

গর্ভাবস্থায় অষ্টম মাস গঠিত হয় ৩২ তম,৩৩ তম, ৩৪তম এবং ৩৫ তম এই চারটি সপ্তাহ নিয়ে।  ৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া  সবচেয়ে বেশি বুঝা যায়। অষ্টম মাসের শেষ দিকে কিংবা নবম মাসের শুরুর দিকে শতকরা ৫০ শতাংশ গর্ভবতী মা নিজের সন্তানের মুখ দেখতে পান।

আজকাল সিজারিয়ান সেকশানের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা শহর বন্দর এলাকায়,এমনকি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায়। তাই শেষ প্রহর বললে ভুল হয় না অষ্টম মাসকে। 

আরও পড়ুনঃ ৪ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া ও সচেতনতা

৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া – ৮ মাসে শিশুর বেড়ে ওঠা

৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া

গর্ভবতী মায়েদের মন বেশ বিচালিত এবং আনন্দ কাজ করে ৮ ম মাসে কারণ আর কিছুদিন পর সন্তানের মুখ দেখতে পাবেন। এ সময় গর্ভবতী  মেয়েদের চিন্তা করা খুব স্বাভাবিক যে ৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া কেমন হবে। নিম্নে  ৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া কেমন হবে তা আলোচনা করা হলো: 

১। গর্ভাবস্থায় যখন ৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া করেন তখন কিছু শাররীক সমস্যা দেখা দেয় যেমন: অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভাব এবং শ্বাসকষ্ট দেখা যায়।

২। গর্ভাবস্থায় পেট অনেক বেশি বড় হতে থাকবে তাই অস্তে আস্তে করে গর্ভবতী নারী নিচের দিকের চাপ অনুভাব করতে থাকে। অনেক সময় শিশুর মাথা নিচের দিকে  নেমে আসতে থাকবে।

৩। শিশুর দেহ মোটামোটি ভাবে গঠিত হয় ৮ মাস মূলত ২৯ থেকে ৩২ সপ্তাহের মধ্যে পড়ে।

৪। ১১০০ গ্রাম থেকে ১৭০০ গ্রাম পর্যন্ত ৮ মাসের শিশুর ওজন হতে পারে। ৮ মাস বয়সের সময় শিশুর চোখ খোলা এবং বন্ধ করতে শুরু করে।

৫। ৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাসের ক্রিয়া শুরু হয় না তবে বাচচার ফুসফুসের গঠন সম্পন্ন হয়।

৬। এ সময় শিশুর হার বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে তবে হার সম্পর্ণভাবে শক্ত হয় না। ৮ মাস বয়সে শিশুর চুল গজিয়ে থাকে এবং কিডনি গঠিত হয়।

৭। ৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া এবং বাচ্চা মাঝে মর্ধে লাথি ও মারে এই গুলো স্বাভাবিক। শেষের ১ মাস বাচ্চার নড়াচড়া কম হয়ে থাকে।

৮ মাসের শিশুর শাররিক অবস্থা 

৮ মাসের শিশু অথাৎ ৩২ তম সপ্তাহে শিশুর ওজন ১১০০ থেকে ২০০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং শিশু লম্বাতে ১৬ ইঞ্চির মত হয়ে থাকে। এই সময় মাথার চুল সম্পূর্ণ উঠে যায় এবং বেবির হাত ও পায়ের নখ বড় হতে থাকে।  ৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া বেশি করে থাকে।

আট মাসের শিশু কানে শুনতে পায় এবং চোখ বন্ধ বা খুলতে পারে।  এ সময় বেবির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। ৮ তম মাস তথা ৩৪ তম সপ্তাহে শিশুর ওজন ২ কেজি থেকে ১৫০ গ্রামের মতন হয়ে থাকে এবং লম্বায় ১৭ ইঞ্চির মতন হয়ে থাকে।

এই সময় শিশুর ওজন বাড়তে থাকে এবং শিশু লম্বায় বাড়তি বন্ধ করে দেয়। এই সময় শিশুর শরীরে গুরুত্বপূর্ণ্য ফেটেল লেয়ার তৈরি হয়ে থাকে। এই লেয়ারটি শিশুর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

গর্ভাবস্থায় লক্ষন কত দিন আগে দেখা যাই 

৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া করার মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েরা বেশি লক্ষণ বুঝতে পারে।   গর্ভাবস্থায় লক্ষণ কতদিন আগে দেখা যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১। এই সময় শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাথা হয় এবং স্বাভাবিকের চেয়ে এই সময়ে ব্যাথা বেশি অনুভাব করে।

২। একজন গর্ভবতী মা ভালোভাবে অনুভাব করতে পারে যে এই সময় তার  শিশু অনেক বেশি নিচে চলে আসে। 

৩। এ সময় গর্ভবতী মায়ের জরায়ুর উপর চাপ পড়ে  তাই গর্ভবতী মায়েদের বার বার বাথরুম যাওয়ার প্রয়োজন হয়। এ সময় শিশু গর্ভ থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তার অবস্থানের চেয়ে অনেক বেশি নিচে চলে আসে যা গর্ভবতী মা ভালোভাবে বুঝতে পারে। 

৪। এই সময় প্রসাবের কিছুদিন আগ থেকেই ধীরে ধীরে জরায়ুর মুখ খুলতে থাকে। এ সময় জরায়ু প্রস্তুত হয়ে থাকে শিশু জন্মের জন্য। 

৫। গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের এ সময় ওজন খুব দ্রুত বাড়তে থাকেে এবং বাচ্চা জন্মের পর হঠাৎ করে ওজন কমে যায়।  

অষ্টম মাসের লক্ষণ

১। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া 

অষ্টম মাসে জরায়ু পেটের প্রায় সমস্ত জায়গা দখল করে নেয়। এর ফলে পাকস্থলীতে চাপ দেয় এবং পাকস্থলি আবার ফুসফুসের উপর চাপ দেয়। এই কারণে গর্ভবতী মায়েদের শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। অল্প পরিশ্রমেই গর্ভবতী মায়েরা হাঁপিয়ে ওঠেন।

২। হেমোরয়েডস 

হেমোরয়েডসকে বাংলায় বলা হয়ে থাকে অর্শ্বরোগ। হেমোরাইডস বলা হয়ে থাকে যখন রোগীর বায়ুপথ থেকে রক্তপাত হয়। অষ্টম মাসে অনেক মা এমন অভিযোগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে যে তাদের বায়ুপথ থেকে রক্ত যাচ্ছে। এই সমস্যায় ভয় পাবার কিছু নাই।

ডাক্তারের পরমর্শ অনুযায়ী আইস প্যাক কিংবা থিপ বাথ ব্যাবহার করা, বেশি বেশি পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খাওয়া যেন শরীরে হাইড্রেটেড থাকে, প্রচুর পরিমাণে আসযুক্ত খাবার খাওয়া ইত্যাদি খাওয়ার মাধ্যমে এ সমস্যার উপসম হতে পারে।

গর্ভবতী মাকে রোজ মিনিট দশেক একটি গামলায় কুসুম গরম পানি দিয়ে তাতে অল্প ভায়োডিন মিশিয়ে বসাথে বলা হয় এটিকে হিপ বাথ বা সিজ বাথ বলে।

৩। ভেরিকোজ ভেইন

গর্ভবতী মায়েদের রক্তের ভলিউম বেড়ে যাওয়ার কারণে পায়ুপথে পাইলস তৈরি করে এবং পায়ের শিরা ফুলে ওঠার কারণে ভেরিকোজ ভেইন নামক সমস্যা দেখা দেয়। 

ভেরিকোজ সমস্যার উপসম হতে পারে যদি গর্ভবতী মা শোবার আগে পায়ের নীচে বালিস দেয়, পা দুটো উঁচু করে বসে এবং পায়ের উপর পা তুলে বসা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে। ভেরিকোজ ভেইন নিয়ে দুশ্চিনার কোন কারণ নেই। ডেলিভারি হওয়ার পরে এ সমস্যা এমনিতে চলে যায়।

৪। বার বার প্রসাবের বেগ 

গর্ভাবস্থার প্রথম মাস থেকেই প্রস্রাবের বেগ হওয়া এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা শুরু হয়। গর্ভবতী ময়েদের দিন দিন এ সমস্যা বাড়তে থাকে এবং থার্ড ট্রাইমেস্টারে সেটা সবচেয়ে বেশি হয়। অষ্টম মাসে মূত্রাথলির ঠিক উপরে বাচ্চা অবস্থান করে থাকে।

সেই সময় মায়ের প্রস্রাব জনিত অস্বস্তিও বৃদ্ধি পায় সাথে সাথে বাচ্চা ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামতে থাকে। যেসব গর্ভবতী মহিলারা এই সময় বাড়ির বাইরে যান তাদের জন্য বিষয়টা খুব অস্বস্তিকর হয়। এ সময় গর্ভবতী মায়েদের প্যান্টি বা কোন ধরণের স্যানিটারি প্যাড ব্যাবহার করা উচিৎ কারণ হাঁচি কাশি বা হাসতে গেলে প্রসাব বের হয়ে আসে।

৫। ব্রাক্সটন হিকস কনট্রাকশন

ব্রাক্সটন হিকস কনট্রাকশন অনেক মায়ের অষ্টম মাসের শুরুতে কিংবা সপ্তম মাসের শেষ দিকে এই সমস্যার অভিঙ্গতা হয়ে থাকে। এই সময় কনট্রাকশনের তীব্রতা বাড়তে থাকে এবং কনট্রাকশনগুলো নির্দিষ্ট সময় পরপর হতে থাকে। অনেক সময় পজিশন চেঞ্জ করলে বা একটু হাঁটাচলা করলে কনট্রাকশন বন্ধ হয়ে যায়।

অনেক সময় এই বিষয়ে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে পরমর্শ নেওয়া যেতে পারে। অষ্টম মাসে প্রসাব কালীন ব্যাথা শুরু হয় না হলে এটা অপরিণত প্রসাবের লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরমর্শ নেয়া উচিত।

৬। বেস্ট মিল্ক লিকেজ   

নবজাত সন্তানের প্রধান খাবার হলো মায়ের শাল দুধ। শিশুর জন্মদানের আগে থেকেই মায়ের শাল দুধ তৈরি হয়। অষ্টম মাসে এসে মায়ের স্তন থেকে হলুদ রঙের তরল পদার্থ বের হয় এক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই।

গর্ভবতী মায়ের সন্তান জন্ম দেওয়ার পর এ সমস্যা আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়া। এ সময় বেস্ট প্যাড ব্যবহার করা যেতে পারে যেন মায়ের জামা কাপড় ভিজে গিয়ে যেন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়।

অষ্টম মাসে মায়েদের কি সমস্যা হতে পারে

১। প্রি একলাম্পসিয়া

এই প্রত্যেকটি মায়ের উচ্চ রক্ত চাপজনিত সমস্যায় পড়তে হয়। এই সময় যদি প্রস্রাবের সাথে অতিরিক্ত প্রোটিন থাকে তবে তাকে প্রি একলাম্পসিয়া বলা হয়। এই সময় গর্ভের বাচ্চার রক্ত প্রবাহ কমে যায়। ফলে বাচ্চার বৃদ্ধি কমে যায়।

২। প্রিটার্ম লেবার

সময়ের আগে প্রসব বেদনা শুরু হলে তা প্রিটার্ম লেবার নামে পরিচিত। বাচ্চার পজিশন, কোন সিস্টেমিক ডিজিজের কারনে প্রসব বেদনা শুরু হতে পারে।

অষ্টম মাসে মায়ের কি কি করা উচিত

১। অল্প অল্প করে বার বার স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় এইজন্য আঁশজাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। তবে ভাজাপোড়া রিচ ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত এতে বাচ্চার ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট হবে।

২। এ সময় হাইড্রেটেড থাকাটা খুব জরুরি এ জন্য পানি এবং অন্যান্ন তরল খাবার খেতে হবে।

৩। নিয়মিত ব্যায়ম করতে হবে। কিগাল এক্সারসাইজ ব্যায়াম পেলভিক মাসলের জন্য খুব কার্য়কারী। ডাক্তারের পরমর্শ অনিুযায়ী ব্যায়াম করুন নাহলে আধা ঘন্টা হাঁটুন।

৪। গর্ভবতী মা এবং শিশুর জন্য ভিটামিন ডি কার্যকারী। এজন্য সমালের রোদ গায়ে লাগান অন্তত পনেরো মিনিট রোদে হাটাহাটি করুন। 

৫। হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে যেহিতু ডেলিভারির সময় এগিয়ে এসেছে। এ সময় মিল্ক পাম্প, স্যানিটারি প্যাড, ঢিলাঢ়ালা গাউন পরতে হবে। 

পরিশেষে  

৮ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া সর্ম্পকে লক্ষ রাখতে হবে। এ সময় গর্ভবতী নারীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম এবং পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াতে হবে। এ সময় নিয়মিত ডাক্তারের পরমর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। মা রক্ত শুন্যতায় যেন না ভুগে এই বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে।

গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। ৮ মাসের বাচ্চার নড়াচড়া বাড়ানোর উপায়?

উত্তরঃ শিশুরা খাওয়ার পরে বা আপনি যদি কিছু ক্যাফিন বা চিনি খেয়ে থাকেন তবে তারা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে।

২। কেন মনে হয় পেটে কিছু নড়াচড়া করছে এবং আমি গর্ভবতী নই?

উত্তরঃ পেট মন্থনের অনেক সম্ভাব্য কারণ রয়েছে, যার মধ্যে বদহজম, স্ট্রেস এবং উদ্বেগ এবং নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ । পেট মন্থন প্রায়ই চিকিত্সা ছাড়া সমাধান করার আগে শুধুমাত্র অস্থায়ী অস্বস্তি কারণ. যাইহোক, এই উপসর্গ কখনও কখনও একটি অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।

৩। কোন মাসে বাচ্চা নড়াচড়া করে?

উত্তরঃ আপনি সাধারণত গর্ভাবস্থার 16 থেকে 24 সপ্তাহের মধ্যে আপনার শিশুর নড়াচড়া অনুভব করতে শুরু করবেন।

আরও পড়ুন-

নাভি দেখে সন্তান বুঝার উপায় ও সঠিক পদ্ধতি

 ঠান্ডার ওষুধের নামসমুহের তালিকা ও ব্যবহারবিধি

Leave a Comment