সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

সর্দি-কাশি রোগের সাথে পরিচিত নয় এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। অথবা এই রোগে  একবারের জন্য ও আক্রান্ত হয়নি এমন একজনকে যদি দেখাতে চাই তবে হয়তো আমরা কেউই না করতে পারবোনা। তাহলে চলুন আজ আমরা জানব, সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত সম্পরকে বিস্তারিত আরও অনেক কিছু।

সর্দি কাশি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ একটি রোগ হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। রোগ যায় হোক না কেনো একবার শরীরে তা প্রবেশ করলে তাতে ভুগান্তির সীমা থাকেনা।

বর্তমানে আমরা ও যেন রোগের সাথে পাল্লা দিয়ে ঔষধ এর ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে দিয়েছি দিগুন। যাতে আমাদের তাৎ্কখনিক শান্তি মিললেও অনেক ক্ষেত্রে পার্শ প্রতিক্রিয়া হিসেবে আরও অনেক রোগের কারণ হয়ে দাড়ায়। যা আমাদের  কারোরই কাম্য নয়। তাই আমাদের উচিত যতটা সম্ভব ঔষধ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা।

এর জন্য সবচেয়ে ভালো হয় ঘরোয়া পদ্ধতির প্রতি নির্ভরতা বাড়িয়ে দেওয়া। যাতে পার্শ প্রতিক্রিয়া তো নেই বরং আমাদের শরীরের জন্য অত্যান্ত কল্যাণকর। সব রোগের জন্য সম্ভব না হলেও কিছু রোগ আছে যা থেকে চাইলেই  ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুব সহজে সেরে উঠা সম্ভব। এর মধ্য সর্দি-কাশি অন্যতম। সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত, এক গবেষণায় দেখা গেছে মানুষ তার জীবন্দশায় প্রায় ২০০বার সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

তবে সব ক্ষেত্রে  সর্দি-কাশি সাধারন রোগ বোঝায় না। অনেক সময় ইনফ্লুএঞ্জা হলেও সর্দি-কাশির লক্ষণ গুলো দেখা যায়। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে এ লক্ষণ গুলো তীব্র আকার ধারণ করে। যায় হোক না কেনো সাধারন সর্দি-কাশির যে সকল লক্ষন রয়েছে সেগুলো দেখে আমরা সহজেই সনাক্ত করতে পারি। আসুন জেনে নেই সর্দি-কাশি রোগের লক্ষণ ও এ রোগের কিছু ঘরোয়া সমাধান।

আরও পড়ুনঃ অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

সর্দি কাশি রোগের লক্ষন

১। নাক বন্ধ হয়ে আসা

২। নাক দিয়ে পানি পড়া 

৩। গলা ও নাক জালা করা

৪। জ্বর জ্বর ভাব

৫। মাথা ব্যাথা

৬। মাংসপেশিতে তীব্র ব্যাথা 

৭। খুশ খুশে কাশি

৮। ক্ষুধা হ্রাস পায়

৯। গলা ব্যথা

১০। ক্লান্তিভাব ইত্যাদি,

এছাড়া ও ব্যক্তি বিশেষে আর ও বেশ কিছু লক্ষন দেখা দিতে পারে। সাধারণত জ্বর-সর্দি ৭-১০দিন পর্যন্ত স্থায়ীত্ব লাভ করে। তাই এ সময়ের মধ্যে আপনি চাইলেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে সেরে উঠতে পারেন।

সর্দি কাশি রোগের ঘরোয়া সমাধান

সর্দি-কাশি রোগের ঘরোয়া সমাধান

লেবু+মধু চা

এক্ষেত্রে আপনি লাল চায়ের সাথে কয়েক টেবিল চামচ লেবুর রস এবং ১ টেবিল চামচ মধু যোগ করে প্রতিদিন অন্তত ২বার পান করুন।   

তুলসি পাতা+মধু

যুগ যুগ  ধরে চলে আসা একটি অব্যর্থ ভেষজ হিসেবে পরিচিত তুলসি পাতা। আর তাই সর্দি-কাশি রোগে আক্রান্ত হলে তুলসি পাতার রস করে তাতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে কয়েকদিনের মধ্যই কাশি থেকে মুক্তি পাবেন।

আরও পড়ুনঃ  কাঠবাদাম এর উপকারিতা

আদা রস বা চা

 সর্দি-কাশি বা গলা খুস খুস থেকে রেহায় দিবে আপনার ঘরে থাকা আদা। যাতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, বি, ম্যাগ্নেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদি। আপনি চাইলে অল্প একটু আদা রস করে খেতে পারেন। যারা শুধু আদা খেতে পারবেননা তাদের জন্য চায়ের সাথে আদা যোগ করার পরামর্শ থাকলো।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া 

নোবেল বিজয়ী বিখ্যাত বিজ্ঞানী লিনাস পোলিং গবেষণার মাধ্যেমে প্রমান করেন যে ভিটামিন সি ঠান্ডাজনিত রোগ নিরাময়ে অত্যান্ত কার্যকরী ফলাফল বয়ে আনে। যেমনঃ লেবু,কমলালেবু ইত্যাদি।

তরল জাতীয় খাবার

সর্দি-কাশির সময় পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই এ সময় বেশি বেশি পানি পান করার সাথে অবশ্যয় তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।

অন্যান্য ভিটামিন

ভিটামিন ডি, বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদি ও শরীরকে সর্দি-কাশি থেকে উপশম দিতে পারে। আলু, মিষ্টি আলু, বিভিন্ন রকম কুমড়াই বিটা ক্যারোটিন উপস্থিত। বিটা ক্যারোটিন আমাদের দেহে ভিটামিন এ তে পরিণত করে।

দুধ+হলুদ 

রুপচর্চা কিংবা রান্না সবজায়গায় যেন হ্লুদের রাজত্ব। সর্দি-কাশি হলেও হ্লুদ তা থেকে মুক্তি দিতে পারে খুব সহজেই। এর জন্য এক গ্লাস দুধ অথবা উষ্ণ গরম পানির সাথে এক চামচ হ্লুদ গুড়ো মিশিয়ে খেতে হবে অন্তত দিনে ২ বার।

রসুন+পেয়াজ 

সর্দি-কাশির উপশমে পেঁয়াজ এবং রসুন এর ব্যবহার জানেননা অনেকেই। তবে রসুন এবং পেঁয়াজ ভাইরাস এর আক্রমন থেকে রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে। কারণ রসুনে থাকে অ্যালিসিন নামক উপাদান যা এই ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে প্রতিহত করে।

সর্দি-কাশির সময় শুধু চিকিৎসা নিলেই হবেনা বরং এটি যেহেতু ভাইরাস এর আক্রমণে হয়ে থাকে তাই কিছু ঘরোয়া বিষয় মেনে চলা জ্রুরি। যা আপনাকে এবং আপনার আশেপাশের মানুষদের এই ভাইরাসের আক্রমন থেকে বাচতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

সর্দি কাশি হলে যে বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি

সর্দি-কাশি হলে যে বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি
  • সর্দি-কাশি দেখা দিলে যথাসম্ভব ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • গবেষণায় দেখা গেছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম এবং বিশ্রাম এ রোগ থেকে খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি দিতে পারে।
  • তাই এ রোগে আক্রান্ত হলে আপনাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামের সাথে ঘুম ঠিক রাখতে হবে।
  • হাচি বা কাশি দিলে টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। যদি রুমাল না থাকে সেক্ষেত্রে হাতের কনুই ভাজ করে হাচি দিতে হবে।
  • এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য কাপড় বা তোয়ালে আলাদা করে দেওয়ায় ভালো। কারণ এ তে সুস্থ ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • অসুস্থতার সময়টাতে অনেকে প্যরাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেয়ে থাকেন, মাথা ব্যথা বা অন্যান্য ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে। এর পাশাপাশি সর্দি বা কাশির ঔষধ ও খেয়ে থাকেন অনেকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই  সর্দি কাশির ঔষধে প্যরাসিটামল জাতীয় উপাদান মেশানো থাকে। এ তে করে বাড়তি প্যরাসিটামলের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে যা আপনার শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এমনকি এর ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

পরিশেষ 

সর্দি-কাশি একটি ভাইরাস জনিত রোগ, যা রাইনোভাইরাস নামক শক্তিশালী ভাইরাস নামে পরিচিত যেটি নাক, মুখ ও গলার মধ্যে প্রবেশ করে। যা আমাদের জন্য অসহ্যকর অবস্থা তৈরী করে। তাই আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে যেন যথাসম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে দূরে থাকা যায়। তাছাড়া যদি কিছুদিনের মধ্যে ভালো না হয় অথবা রোগের মাত্রা বেড়ে যায় তবে অবশ্যই আমাদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত,তবে প্রথমেই মেডিসিনের দিকে না ঝুঁকে বরং ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করাই উত্তম। যা আমাদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। তবে যেকনো রোগের জন্য মেডিসিন নিতে হলে অবশ্যই আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রিয় পাঠক আশা করি, আপনি সর্দি-কাশি রোগ দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পরকে জানতে এবং বোঝতে পেরেছেন। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজ এ পর্যন্তই। আশা করি, আমাদের আর্টিকেলটি পরে  উপকৃত হবেন। “ধন্যবাদ” 

আরও পড়ুন-

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

ওজন কমানোর উপায়

Leave a Comment