সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম – ক্রয় ও মুনাফার হার

সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম

সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম দেশের সাধারণ জণগণের জন্য নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত অর্থ বিনিয়োগের এক মাধ্যমের নাম হলো সঞ্চয়পত্র বা সেভিংস সার্টিফিকেট। দেশের প্রত্যেক নাগরিককে আরো বেশি সঞ্চয়ি হওয়ার পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র সঞ্চয়সমূহ জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের

আওতায় নিয়ে আনার জন্যেই সরকার সঞ্চয়পত্র (savings account) দিয়ে থাকে। সরকার ২০২৩ সালে সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম চালু করেছে। জমানো অর্থ দীর্ঘ সময়ের জন্য অযথা ফেলে না রেখে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে মুনাফা লাভ করা যায়।

বিনিয়োগের এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বৈধ, নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। এছাড়াও সঞ্চয়পত্র (savings account) হতে প্রাপ্ত অর্থ সরকারও বিভিন্ন খাতে কাজে লাগায় এবং জাতীয় বাজেট ঘাটতি দেখা দিলে এই অর্থ দিয়ে তা পূরণ করা হয়।

তবে সরকার কর্তৃক সঞ্চয়পত্রের (savings account) কিছু নতুন নিয়ম জারি করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রে অর্থ বিনিয়োগের আগে এসব নতুন নিয়মসমূহ সম্পর্কে অবহিত হওয়া খুবই জরুরি। সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম এ কি কি পরিবর্তন এসেছে তা সঠিকভাবে জেনে নিয়ে তবেই এই খাতে অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত।

সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের নতুন নিয়ম

সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের আগে আমাদের জেনে নিতে হবে কত ধরনের সঞ্চয়পত্র (savings account) রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক চার ধরণের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে। এগুলো হলো:

  • পাঁচ বছর মেয়াদি পারিবারিক সঞ্চয়পত্র
  • পারিবারিক সঞ্চয়পত্র
  • তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
  • পেনশনার সঞ্চয়পত্র

এর মধ্যে নাম শুনলেই বোঝা যায় যে পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ হলো পাঁচ বছর। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের পাঁচ বছর পর আপনি আপনার প্রাপ্য মুনাফা আহরণ করতে পারবেন। 

এছাড়া পারিবারিক সঞ্চয়পত্র এবং পেনশানার সঞ্চয়পত্রও যথারীতি পাঁচ বছর মেয়াদি। তবে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র হলো তিন বছর মেয়াদি। 

আরও পড়ুনঃ Drop Shipping বিজনেস কী? ড্রপশিপিং ব্যবসা করার সুবিধা

পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের (savings account) সুদ মাসিক ভিত্তিতে উত্তোলন করা যায়। অন্যদিকে পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদ প্রতি তিন মাস পরপর উত্তোলন করা যায়।

কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আপনি চাইলেই নিজের ইচ্ছেমতো যেকোনো সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন না। আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য উপযুক্ত হয়ে থাকেন তবেই আপনি সঞ্চয়পত্রটি কিনতে পারবেন।

পাঁচবছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র 

পাঁচবছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র (savings account) ক্রয়ের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বললেই চলে। ১৮ বছর বয়সের উর্ধ্বে যেকোনো নারী অথবা পুরুষ এই সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবে। আপনি চাইলে এককভাবে অথবা যুগ্মভাবেও এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ পারবেন।

পারিবারিক সঞ্চয়পত্র 

পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সঞ্চয়পত্রটি (savings account) ক্রয় করার সুযোগ তেমন একটা নেই বললেই চলে। কারণ এই সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার অধিকার দেওয়া হয়েছে ১৮ বছর বয়সের উর্ধ্বে যেকোনো বাংলাদেশী নারীকে। সেইসাথে শারীরিক প্রতিবন্ধি নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর বয়সের উর্ধ্বে সকল নারী ও পুরুষকে এই সঞ্চয়পত্র (savings account) কেনার অধিকার দেওয়া হয়েছে। 

পেনশনার সঞ্চয়পত্র 

পেনশনার সঞ্চয়পত্র (savings account)কেনার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরকারি, অর্ধ-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, অর্ধ-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এছাড়াও মৃত কর্মকর্তার পেনশনভোগী স্বামী, স্ত্রী অথবা সন্তানরা এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। 

তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র

পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মতো এই সঞ্চয়পত্রটিও যেকোনো বাংলাদেশী নারী অথবা পুরুষ ক্রয় করতে পারবে যাদের বয়স ১৮ বছর অথবা ১৮ বছরের উপরে।

সঞ্চয়পত্রের (savings account) নতুন নিয়ম অনুসারে ক্রয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুবিধা ও অসুবিধা যুক্ত হয়েছে। পূর্বে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত টিন সার্টিফিকেট দরকার হতো না। বর্তমানে এই সীমা আরো বাড়ানো হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুসারে টিন সার্টিফিকেট ছাড়া যে কেউই সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারবে।

আরও পড়ুনঃ Quora মার্কেটিং কি? কিভাবে কোরা (Quora) মার্কেটিং করবেন

তবে সঞ্চয়পত্রের (savings account) নতুন নিয়ম অনুসারে, আপনি যদি ৫ লক্ষ টাকার অধিক বিনিয়োগ করেন তবে শুধুমাত্র টিন সার্টিফিকেট দিলেই হবেনা, এর পাশাপাশি আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণও জমা দিতে হবে। নতুন নিয়ম অনুসারে কোনো ব্যক্তি সকল ক্যাটাগরি মিলিয়ে সঞ্চয়পত্রে ৫০ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে না। যৌথভাবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে।

সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম – মুনাফার হার

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী ৪ ধরণের সঞ্চয়পত্রের জন্য মেয়াদভেদে আলাদা আলাদা রেটে মুনাফা প্রদান করা হয়।

পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে

  • ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১.২৮%
  • ১৫ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১০.৩০%
  • ৩০ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ বিনিয়োগসীমা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ৯.৩০%

তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে

  • ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১.০৪%
  • ১৫ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১০.০০%
  • ৩০ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ বিনিয়োগসীমা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ৯.০০%

পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে

  • ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১.৫২%
  • ১৫ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১০.৫০%
  • ৩০ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ বিনিয়োগসীমা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ৯.৫০%

আরও পড়ুনঃ ক্রেডিট কার্ড কি? ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

পেনশনার সঞ্চয়পত্রে

  • ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১.৭৬%
  • ১৫ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১০.৭৫%
  • ৩০ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ বিনিয়োগসীমা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ৯.৭৫%

শেষকথা 

দেশের সাধারণ নাগরিকদের ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের এক ভরসাযোগ্য নাম হলো সঞ্চয়পত্র। উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্যও সঞ্চয়পত্র অর্থ বিনিয়োগের এক যুগান্তকারী মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। সরকার কর্তৃক জারিকৃত সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম অনুসারে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি হলেও নাগরিক সুবিধার বিষয়টিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ করে টিন সার্টিফিকেট ব্যতিত বিনিয়োগের সীমা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি করার ফলে বিনিয়োগকারীরা আরো বেশি উৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ভোগান্তিহীন গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সরকার কর্তৃক নির্দেশনা আরোপ করা হয়েছে। নিজের কষ্টার্জিত অর্থের উপযুক্ত বিনিয়োগের জন্য এই খাতটি তাই অনেকেরই পছন্দের তালিকায় রয়েছে।

সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম সম্পর্কিত আরো কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১। সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে কি কি প্রয়োজন??

উত্তর: সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে গ্রাহকদের আগে এ ফরম পূরণ করতে হয়, সঙ্গে দিতে হয় গ্রাহক ও নমিনির দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি। গ্রাহকের ছবি সত্যায়িত করতে হয় প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর মাধ্যমে। তবে নমিনির ছবির সত্যায়ন করতে হয় গ্রাহককে। গ্রাহক ও নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিও এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক। 

২। ২০২৩ সালে সঞ্চয়পত্রের সীমা কত?

উত্তর: একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বা যৌথ নামে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পাঁচ বছরের বাংলাদেশ সেভিংস সার্টিফিকেট, ৩ মাসিক মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পরীবার সঞ্চয়পত্র একসঙ্গে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।

৩। পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কত?

উত্তর: পাঁচ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এখন এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার কমিয়ে করা হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার সাড়ে ৯ শতাংশ।

আরও পড়ুন- 

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও সুবিধা

Leave a Comment