বয়স্ক ভাতার আবেদন

বয়স্ক ভাতার আবেদন 

বাংলাদেশ সরকারের একটি আর্থিক কর্মসূচি হচ্ছে “বয়স্ক ভাতা”। বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির মাধ্যমে বয়স্ক, দুস্থ, স্বল্প আয়ের লোক এবং কর্মহীন লোকদের জন্য সরকার এই আর্থিক সহযোগিতা দেয়। ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম বয়স্ক ভাতা চালু করা হয়।

অভাবী এবং নিম্ন আয়ের বয়স্ক ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের উদ্দেশ্যে ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছরে প্রথম এই কর্মসূচি চালু করা হয়। প্রথমে দেশের সবগুলো ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ এবং ৫ জন মহিলা সহ মোট ১০ জন দরিদ্র বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে প্রত্যেক মাসে ১০০ টাকা করে ভাতার আওতায় আনা হয়।

বর্তমানে বয়স্ক ভাতার আবেদন অনলাইনে করা হয়। অনলাইনে আবেদন করার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আবেদন করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার বয়স্ক ভাতার অর্থ G2P (Government  to Person) পদ্ধতিতে পরিশোধ করার জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ এবং যাচাই-বাছাই করার পর সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সরাসরি বয়স্ক ভাতাভোগীর একাউন্টে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। বর্তমানে বয়স্ক ভাতা প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। আজকে আলোচনা করা হবে বয়স্ক ভাতার উদ্দেশ্য, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা এবং বয়স্ক ভাতার আবেদনের নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে।

আরও পড়ুনঃ ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও সুবিধা

বয়স্ক ভাতার আবেদন – লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য 

বাংলাদেশ সরকারের বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির রয়েছে কিছু লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। নিচে এগুলো দেওয়া হল –

  • বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করা। 
  • পরিবার এবং সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধি করা।
  • আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে ভাতা-ভোগীদের মনোবল বৃদ্ধি করা। 
  • চিকিৎসা এবং পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করা। 

বয়স্ক ভাতার আবেদন – শর্ত এবং যোগ্যতা 

বয়স্ক ভাতার আবেদন করলেই হবে না। বয়স্ক ভাতা পেতে হলে কিছু যোগ্যতা এবং শর্তের প্রয়োজন।  নিচে শর্ত এবং যোগ্যতা সমূহ দেওয়া হলো –

১. নাগরিকতা : প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। 

২. স্থায়ী বাসিন্দা : অবশ্যই প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। 

৩. জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র : ভাতা প্রার্থীর জন্ম নিবন্ধন (Birth Certificate) বা জাতীয় পরিচয় পত্রের (NID) নম্বর থাকতে হবে । 

৪. বয়স : পুরুষের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬৫ বছর বয়স এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬২ বছর বয়স হতে হবে। ( এক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক দেওয়া একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বয়স হতে হবে) 

বয়স্ক ভাতা প্রার্থীর বয়স নির্ধারণ করার জন্য জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার সার্টিফিকেট বিবেচনা করা হবে। তবে যদি কোন বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কমিটির সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। 

৫. বাৎসরিক আয় : গড় বাৎসরিক আয় ১০ হাজার টাকার কম হতে হবে বয়স্ক ভাতার আবেদন করতে হলে। 

বয়স্ক ভাতার আবেদন – অযোগ্যতা 

বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য যেমন রয়েছে কিছু শর্ত এবং যোগ্যতা। তেমনি রয়েছে কিছু অযোগ্যতাও কারণ। সকল বৃদ্ধরাই বয়স্ক ভাতা পায় না। বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির অযোগ্যতাসমূহ নিম্নে দেওয়া হলো –

১. পেনশন:  পেনশনভোগী সরকারি কর্মচারী। 

২.ভিজিডি কার্ড:  দুস্থ মহিলা হিসেবে ভিজিডি (VGD – Card) কার্ডধারী। 

৩. সরকারি অনুদান: অন্য কোন মাধ্যম থেকে নিয়মিত সরকারি অনুদান বা ভাতা প্রাপ্ত হলে। 

৪. বেসরকারি অনুদান:  কোন বেসরকারি সংস্থা বা সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হতে নিয়মিত আর্থিক অনুদান বা ভাতা প্রাপ্ত হলে।

আরও পড়ুনঃ টিন সার্টিফিকেট কি? ই-টিন (E-TIN)কী, কেন ও কীভাবে করতে হয়?

বয়স্ক ভাতার আবেদন – নিয়মাবলি

অনলাইনের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতার আবেদন করতে হবে। এখন খুব সহজেই মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতার আবেদন করা যায়। সহজ কয়েকটি ধাপে ঘরে বসেই আবেদন করতে পারবেন। তবে যারা ভাতা পাচ্ছেন, তাদের নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। আবেদন করার নিয়মসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো –

১. আবেদন করার জন্য প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটিতে ঢুকতে হবে। (Google Chrome) 

২. বয়স্ক ভাতা (Boyosko Bhata) প্রোগ্রাম নির্বাচন করতে হবে। 

৩. এরপর ওয়েবসাইটে (mis bhata website) নতুন একটি পেইজ আসবে। 

৪. নতুন পেজটিতে ভাতা প্রার্থীর সম্পূর্ণ তথ্য পূরণ করতে হবে প্রোগ্রাম অনুযায়ী। 

৬. প্রয়োজনীয় সকল তথ্য যেমন নাম, পেশা, বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। 

৭. সমস্ত তথ্যপূরণ করার পর কোন ভুল আছে কিনা চেক করে নিন। এরপর সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করে আবেদনটি জমা দিতে হবে। 

৮.  বয়স্ক ভাতার আবেদন সাবমিট করা হলে প্রিন্ট করার অপশন আসবে। প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে PDF ফাইলে আবেদনটি ডাউনলোড করতে হবে। 

৯. এরপর স্থানীয় চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিয়ে সমাজসেবা মাঠকর্মী বা উপজেলা সমাজসেবা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিতে হবে। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য :  বয়স্ক ভাতার আবেদনের লিঙ্ক সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। কারিগরি কারণ বা সিস্টেম আপডেটের জন্য এটি বন্ধ থাকতে পারে। তখন সিস্টেম উন্নয়নের কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।” এই লেখাটি ওয়েবসাইটে দেখতে পাবেন। 

প্রার্থী নির্বাচন

বয়স্ক ভাতার আবেদন করার পর সঠিক ব্যক্তিদেরকে যাচাই-বাছাই করা হয় ভাতা প্রদানের জন্য। প্রার্থী বাছাই করার জন্য থাকে স্থানীয় একটি কমিটি। কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে বয়স্ক ভাতা প্রার্থী বাছাই করা হয়। নিম্নে বয়স্ক ভাতা প্রার্থী নির্বাচনের মানদন্ডসমূহ আলোচনা করা হলো –

১. নাগরিকত্ব : অবশ্যই প্রার্থীকে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে। 

২. বয়স : সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। 

৩. স্বাস্থ্যগত দিক : শারীরিকভাবে অক্ষম এবং সম্পূর্ণভাবে কর্মক্ষমতাহীন লোককে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। 

৪. আর্থিক অবস্থা : নিঃস্ব, ভূমিহীন এবং উদ্বাস্তুদের ক্রমানুযায়ী অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। 

৫. সামাজিক অবস্থা : তালাকপ্রাপ্তা, বিধবা, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের ক্রমানুযায়ী অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

৬. ভূমি মালিকানা : এক্ষেত্রে ভূমিহীন ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নিজের বসতভিটা ব্যতীত কোন ব্যক্তির যদি জমি বা ভূমির পরিমাণ ০.৫ একর বা তার কম হয় তখন তাকে ভূমিহীন বলে গণ্য করা হবে। 

শেষকথা 

আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে বয়স্ক ভাতার আবেদন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পেরেছেন। বর্তমানে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ৫০০ টাকা, যা বার্ষিক ৬০০ টাকা। তবে টাকার পরিমান পরিবর্তনশীল। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এই ভাতাভোগীর সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষ জন। ২০১০-১১ অর্থবছরে ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ ২৫ হাজার জনে বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতিবছর ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার জনকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে (জনপ্রতি) বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়। বয়স্ক ভাতা গ্রহণ করার জন্য অবশ্যই মোবাইল ব্যাংকিং থাকতে হবে। বিকাশ বা নগদ এর মাধ্যমে টাকা উঠানো যাবে। 

বয়স্ক ভাতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s

১। ন্যূনতম কত বছর হলে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হবেন?

উত্তর : বয়স পুরুষের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬৫ বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬২ বছর হতে হবে।

২. বয়স্ক ভাতা কত?

উত্তর : ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মাসিক বয়স্ক ভাতা ৫০০ টাকা হতে ৬০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। আর বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীর ভাতা ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। 

আরও পড়ুন –

Drop Shipping বিজনেস কী? ড্রপশিপিং ব্যবসা করার সুবিধা

দারাজ থেকে পণ্য কেনার নিয়ম

Leave a Comment