সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে

সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে 

কোনো নারী যদি মা হতে চায় অর্থাৎ গর্ভধারণ করতে চায় তাহলে একমাত্র উপায় হচ্ছে স্বামী স্ত্রী সহবাস করা। আমরা অনেকেই মনে করি সহবাস করলেই গর্ভধারণ হয়ে যায়। তবে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত পুরুষের শুক্রাণু নারীর ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে না।

আমরা জানি শুক্রাণু যখন ডিম্বানুকে নিষিক্ত করে তারপরেই মায়ের গর্ভে বাচ্চা জন্ম নেয়। অনেক মহিলাদের বিশেষ করে নতুন বিবাহিত মহিলাদের মনে একটি প্রশ্ন থাকে সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে? আসলে এই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে নারীর শারীরিক ক্ষমতার উপর।

প্রত্যেকটি নারীর পিরিয়ড সাইকেল একরকম হয় না। তেমনি শারীরিক ক্ষমতাও একরকম হয় না। আপনারা যারা জানতে চান সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে? তাদের জন্যই আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস

গর্ভধারণের পর্যায় 

সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে
সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে

সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে এই ব্যাপারে জানার আগে গর্ভধারণের (pregnency) পর্যায়গুলো সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরী। গর্ভধারণের পর্যায়গুলোকে চারটি ধাপে ব্যাখ্যা করা যায় :

১. ডিম্বস্ফোটন 

এটি গর্ভধারণের (pregnency) প্রথম ধাপ। এই ধাপে একজন মহিলার ডিম্বাশয় একটি পরিপক্ক ডিম্বাণু বের করে। পরিপক্ক ডিম্বাণু বের করার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিম্বস্ফোটন। একজন মহিলার মাসিক চক্রের (Period Cycle) মধ্যবিন্দুর চারপাশে (সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগে) এই প্রক্রিয়া ঘটে। 

২. নিষিক্তকরণ

গর্ভধারণ (pregnency) করার জন্য শুক্রাণু অবশ্যই ফ্যালোপিয়ান টিউব এর মাধ্যমে যাত্রার সময় ডিম্বানুর সাথে মিলিত হবে। একটি শুক্রাণু যদি সফলভাবে ডিম্বাণুতে প্রবেশ করে এবং শুক্রাণুটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে, তাহলে একটি এককোষী ভ্রুণ তৈরি হবে। 

৩. ইমপ্ল্যান্টেশন

নিষিক্তকরণ পর্যায়ের পর ভ্রুণ ফ্যালোপিয়ান টিউব থেকে জরায়ুতে চলে যায়। ভ্রুণ জরায়ুতে গিয়ে বিভিন্ন বিভাজনের মধ্য দিয়ে যায় এবং ব্লাস্টোসিস্টে পরিণত হয়। নিষিক্তকরণের প্রায় ৬-১০ দিন পর ব্লাস্টোসিস্ট জরায়ুর আস্তরণের সাথে সংযুক্ত করে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ইমপ্লান্টেশন। 

৪. গর্ভাবস্থা নিশ্চিতকরণ

একবার ইমপ্লান্টেশন প্রক্রিয়া ঘটে গেলে নারীদের শরীরে গর্ভাবস্থার হরমোন HCG (Human Chorionic Gonadotropin) তৈরি করতে শুরু করে। এটি গর্ভাবস্থা পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফলের জন্য দায়ী। মহিলাদের প্রস্রাব অথবা রক্তে এইচসিজি (HCG) মাত্রা সনাক্ত করতে সাধারণত ইমপ্লান্টেশনের কয়েকদিন সময় লাগে। 

উপরে বর্ণিত গর্ভাবস্থার পর্যায়গুলি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে মাতৃগর্ভে ভ্রুণের বিকাশ হতে থাকে। ভ্রুণের বিকাশ হওয়ার প্রক্রিয়াটি গর্ভধারণের তারিখ থেকে প্রায় ৩৮ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নেয়।

আরও পড়ুনঃ প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

সহবাসের কতদিন পর বাচ্চা পেটে আসে 

সাধারণত সহবাস করার সাথে সাথেই গর্ভধারণ করা সম্ভব নয়। গর্ভধারণ করার জন্য কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। গর্ভধারণ (pregnency) এর পর্যায়সমূহ ওপরে আলোচনা করা হয়েছে। সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে তা বিভিন্ন কারনের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। গর্ভধারণের সময় নির্ধারণ করার জন্য কিছু মূল বিষয় রয়েছে যা নিচে আলোচনা করা হলো :

১. শুক্রাণুর বেঁচে থাকা

পুরুষের শুক্রাণু মহিলাদের প্রজনন ট্রাক্টে ৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তার মানে হল, ডিম্বস্ফোটন হওয়ার কয়েকদিন আগে যদি আপনি সহবাস করেন তাহলে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার পরেও শুক্রাণু কার্যকর হতে পারে। যার ফলে গর্ভাবস্থার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

২. ডিমের জীবনকাল

ডিম্বস্ফোটন পর্যায়ের পর সাধারণত ডিম প্রায় ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার জন্য কার্যকর থাকে। এই সময়সীমার মধ্যে যদি ডিম নিষিক্ত না হয় তাহলে ডিম্বাণুটি ভেঙ্গে যাবে। যার ফলে সেই মাসিক চক্রের সময় গর্ভধারণ করা সম্ভব হবে না। 

৩. মিলনের সময়

ডিম্বস্ফোটনের সময় যত কাছাকাছি মিলন বা সহবাস হয়, গর্ভাবস্থার সম্ভাবনাও তত বেশি হয়। সাধারণত ডিম্বস্ফোটন পরবর্তী মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হওয়ার প্রায় ১৪ দিন আগে হয়। তবে সবার শরীরে এই প্রক্রিয়া একই দিনে ঘটেনা কারণ  একেক জনের শরীরের পিরিয়ড সাইকেল (Period Cycle) একেক রকম। মহিলা থেকে মহিলা এবং চক্র থেকে চক্রে পরিবর্তিত হতে পারে ডিম্বস্ফোটন ধাপ। 

৪. উর্বরতার কারণ

নারী এবং পুরুষ উভয়ের উর্বরতা গর্ভধারণের সময়কে প্রভাবিত করতে পারে। গর্ভাবস্থার সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে পুরুষের শুক্রানুর স্বাস্থ্য, নারীর ডিমের গুণমান এবং অন্তর্নিহিত উর্বরতার সমস্যাগুলির মত কারণ। উপরে আলোচনা থেকে লক্ষ্য করা যায়, প্রতিটি সহবাসের পর নিশ্চিত করা যাবে না যে আপনি গর্ভধারণ করেছেন কিনা।

এমনকি উর্বর কালেও সহবাসের পর নিশ্চিত করা যাবে না যে গর্ভধারণ (pregnency) করেছেন কিনা। সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে এর উত্তর বলতে গেলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সহবাসের ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে বোঝা যায় আপনি গর্ভধারণ করেছেন কিনা । তবে গড় হিসাব করলে একটি সুস্থ দম্পতির গর্ভধারণ করার জন্য বেশ কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এই সময়টা ব্যক্তি বিশেষে আলাদা আলাদা হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ থাইরয়েড কমানোর উপায়

গর্ভধারণের লক্ষণ 

উপরের আলোচনার মাধ্যমে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে এই সম্পর্কে। কিন্তু অনেকেই দ্বিধায় থাকেন যে গর্ভবতী হয়েছেন কিনা। গর্ভবতী হওয়ার অনেকগুলা লক্ষণ রয়েছে নিচে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

  • গর্ভধারণ করার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ হওয়া। 
  • মর্নিং সিকনেস অর্থাৎ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দুর্বল এবং ক্লান্তিবোধ অনুভব করা। 
  • বমি হওয়া অথবা বমি বমি ভাব। 
  • স্তনের নানা রকম পরিবর্তন এমনকি স্তনে হালকা ব্যথাও অনুভব হয়। 
  • শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। 
  • মুড সুইং অর্থাৎ মন মেজাজের উঠানামা করা। 
  • মাথাব্যথা এবং মাথা ভারী হওয়া। 
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা। 
  • সাদাস্রাব (ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ) এবং স্পোটিং (রক্তপাত) হওয়া । 
  • দুর্বলতা অনুভব করা। 
  • মুখের স্বাদের পরিবর্তন। গর্ভধারণ করলে দিনে বা রাতে যেকোনো সময় যেকোনো খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। 
  • হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এই সময় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। 
  • অনেকের আবার জ্বর এমনকি পেটে ব্যথাও হয়। 
  • খাবারের প্রতি অনীহা হয়। 
  • উক্ত রক্তচাপ এবং অনেকের আবার রক্তশূন্যতাও হয়। 
  • গলায় জ্বালাপোড়া করে। 
  • ওজন বৃদ্ধি পায়। 
  • অনিদ্রার মতো সমস্যা দেখা যায়। 
  • মুখে ব্রণ হয়। 

উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে অবশ্যই প্রেগনেন্সি টেস্ট করুন। অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আপনি যত আগে বুঝতে পারবেন প্রেগন্যান্ট (Pregnant) হয়েছেন কিনা ততই ভালো। কারণ গর্ভধারণ করলে মা এবং শিশুর জন্য বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। 

শেষকথা 

সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে অর্থাৎ গর্ভাবস্থা নিশ্চিতকরণের সময়সীমা নির্ভর করে নারীর মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য, ডিম্বস্ফোটনের সময়, ভ্রুণ ইমপ্লান্টেশনের গতিসহ পৃথক পৃথক কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থা (pregnency) পরীক্ষা গর্ভধারণ করার ১০-১৪ দিন পরে একজন মহিলার প্রস্রাব অথবা রক্তে HCG হরমোন এর মাত্রা নির্ভরযোগ্যভাবে সনাক্ত করতে পারে। শেষ মাসিকের প্রথম দিন (LMP) পরে প্রায় ২-৪ সপ্তাহের সাথে মিলে যায় এটি।

গর্ভধারণের তারিখ নির্ণয় সাধারন পদ্ধতি এটি। তবে কিছু কিছু মহিলার সাধারণ সময় ফ্রেম এর আগে অথবা পরে একটি ইতিবাচক গর্ভধারণ পরীক্ষা পেতে পারেন। সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে এই প্রশ্নের উত্তর আশা করছি বুঝতে পেরেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সহবাস করার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই বোঝা যাবে আপনি গর্ভধারণ করেছেন কিনা। বিভিন্ন কারণবশত এই সময়টা কম বেশি হতে পারে যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে।

সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s 

১. মিলনের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয় ?

উত্তর : গর্ভধারণের একদম শুরুর দিকে অথবা সহবাসের পর পরই এই টেস্ট করলে সাধারণত সেই হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। এজন্য সহবাসের পর কমপক্ষে ২১ দিন অথবা পরবর্তী মাসিকের সম্ভাব্য তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

২. সহবাসের কতদিন পর মাসিক বন্ধ হয় ?

উত্তর : সাধারণত প্রতি ২৮ থেকে ৩৫ দিন পর পর একজন নারীর পিরিয়ড বা মাসিক হয়ে থাকে। আপনার মাসিক নিয়মিত হলে হঠাৎ পরবর্তী মাস মিছ হলে বুঝে নিবেন আপনি প্রেগন্সেস আসা করি আপনার উত্তর পেয়েছেন। 

৩. সহবাসের কতদিন পর বমি হয়? 

উত্তর : সহবাস করার পর যদি নারীর পেটে বাচ্চা আসে তখন মূলত বমি হয় অথবা বমি বমি ভাব হয়। সহবাসের কতদিন পর বমি হবে এটার নির্দিষ্ট কোন সময় বলা যায় না। তবে আনুমানিকভাবে বলা যায়, সহবাস করার ২০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে বমি হয়।

৪. মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা উচিত ?

উত্তর : পিরিয়ড শুরুর প্রথম সাতদিন ও শেষের প্রথম সাতদিন সহবাস করা নিরাপদ৷ তবে, পিরিয়ড নিয়মিত না হলে এই পদ্ধতি কার্যকর হবে না৷ তবে এটা বলতেই হয়, কনডোম ছাড়া সেক্স করা মোটেও নিরাপদ নয়।

আরও পড়ুন-

ঢেকুর কমানোর উপায়

থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়

Leave a Comment